পৃষ্ঠাসমূহ

পুরনো সংখ্যা

বৃহস্পতিবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৮

প্রবন্ধঃ কবি সালু আলমগীরের কবিতায় 'শূন্যের শূন্যতা, ।। কবির মুকুল প্রদীপ



কবি সালু আলমগীরের কবিতায় 'শূন্যের শূন্যতা,



মানুষ অস্তিত্বহীন,কিন্তু এই সত্যকে আমরা কিছুতেই মেনে নিতে পারি না,ভাবতেই পারি না মৃত্যুর পরে কিছু নেই।তাই বিভিন্ন তত্ত্ব ছেনে ছেনে কল্পনা করতে থাকি,কল্পনায় সাজাতে থাকি এক অলৌকিক জগত।এই জগতকে কেন্দ্র করে কিছুটা স্বস্তি,কিংবা জীবনের ব্যর্থতার উপশম নিয়ে এক নিরন্তর বাঁচার প্রয়াসের নামই হয়ত জীবন।অথচ আজ বিজ্ঞানের ক্রম অগ্রগতি সেই ভাবনার ছেদ টানে,দর্শন মানুষকে আরও বেশি শক্ত করে,কর্মে বেঁচে থাকার প্রেরণা যোগায়;তারপরও আমরা ভাবতে থাকি ভাবতেই থাকি,নিঃসংগ হই নিঃসঙ্গতার ভেতরে বাঁচতে থাকি,সুখ দুঃখ কুড়াই।এবং শেষতক আমরা বুঝতে পারি যে সেই শূন্যের দিকেই এগোচ্ছি আমি বা আমরা।শূন্য কী?সেখানে কী কিছু আছে?এই প্রশ্নেরও কোনো সমাধান আজও পাওয়া যাচ্ছে না।তবে গণিতের শূন্য (০) অর্থ আমরা জানি যেমন, 'সহজ ভাবে বলা যায় শূন্য হচ্ছে -১ এবং ১ এর মধ্যবর্তী একটি সংখ্যা ।গণিতে শূন্য পরিমাপ করতে এর ব্যবহার হয়ে থাকে !ধরুন,আপনার কাছে দুটো কলম আছে, আপনার কোন বন্ধুকে এই দুটো কলম দিয়ে দিলেন ।এখন আপনার কাছে কতটি কলম বাকি রইল?এর উওর হবে শূন্য ।এই শূন্য সংখ্যাটি ধনাত্মক সংখ্যাও না এবং ঋণাত্মক সংখ্যাও না ।আর শূন্য অন্যান্য সংখ্যার একটি স্থানধারক ডিজিট হিসেবে ব্যবহৃত হয়(যেমন২০,২০৪,২৮০)উদাহরণস্বরূপ:২০৪ = ২ × ১০০+০×১০+৪×১এটা স্পষ্ট যে শূন্য ধনাত্মক বা ঋণাত্মক সংখ্যা নয়।

তাহলে আমরা বুঝতে পারি শূন্য (০)মূলত শেষ অথবা শুরু।কিন্তু শূন্যতা অন্য বিষয়,শূন্যতা মানুষকে স্থিরতার দিকে নিয়ে যায়,পথভ্রষ্ট করে,আমরা ক্লান্ত হই,উপশমহীন বেদনার অনুভব মৃত্যুতেই মুক্তি খোঁজে।যাকে এক কথায় অটোসাইকোগ্রাফ বলা যেতে পারে।আমরা এই প্রবনতা বিভিন্ন সময়ের কবিদের মধ্যে লক্ষ করেছি,দেখেছি অনেক কবিই উশৃংখল জীবনযাপন করেছেন,কেউ মাদকাশক্ত,কেউ কেউ করেছেন আত্মহত্যা।এর কারণ খুঁজতে দেখতে গেলে দেখা যায় মুনুষ্যজাতির ইতিহাসই প্রকৃতিবিরোধী,প্রকৃতি থেকে বেরিয়ে নান্দনিক জীবনবোধই মানুষের মনে জন্ম দিয়েছে এই শূন্যতার,অপ্রাপ্তির।তবে এই শূন্যতার থেকে মানুষ বেরিয়েও-ছে তাইতো আমরা পেয়েছি আধুনিক পৃথিবী,কিন্তু শূন্যতামুক্তি ঘটেনি,ঘটবেও না কোন কালে।অহর্নিশ মানুষের এই শূন্যতার সাথেই লড়াই চলছে চলবে।যুক্তি দিয়ে এই শূন্যতাকে দমিয়ে যে জীবন,সেখানে নান্দনিকতা নেই,আছে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি আরো না’নান মতবাদ।আর কবির যে জীবন সে জীবন এই শূন্যতাকে লালন করেই,শূন্যতার মধ্যে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে নিরন্তর তার রহস্যসন্ধান করে যাওয়া কবির কাজ।শূন্যতার ভেতরে কি আছে?নাকি কিছু নেই?যদি বলি নেই;সেটা মেনে নেয়ার ক্ষমতা মানুষের নেই।যদি বলি আছে,তবে কি আছে?যেমন জীবনানন্দ লিখেছেন, ‘থাকে শুধু অন্ধকার মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন’ (বনলতা সেন)কি এই অন্ধকার?এক কথায় জানি না।কিন্তু নিঃসঙ্গতায় খুঁজতে বসি,কিছু নেই জেনেও খুঁজতে ভালো লাগে,দুঃখে,কষ্টে,একাকিত্বে আমরা এই শূন্যতার দ্বারস্ত হই;ভাঙ্গিগড়ি।হয়ত এই খেলার অপর নামই জীবন।

ব্যক্তি বিশেষ এই শূন্যতার ধরণ আলাদা,তার মধ্যেই আমরা একে অপরের সাথে মিল খুঁজি।আর বিজ্ঞানের কন্ট্রাম গবেষণা বলে মিল আছেও;সেখান থেকেই তৈরি হয় মানুষে মানুষে মিথক্রিয়া।আর তখনই ব্যক্তি চেতনা সামগ্রিকতায় মিশে যায়,যা আমরা দেখেছি কবিতায়,নাটকে।কি রাজা ইডিপাস,অথবা রক্ত করবী,টি এস এলিয়েট,শেলি কিংবা এগডার এলান পো থেকে জীবনানন্দ।কবি সালু আলমগীরের কবিতায়ও আমরা দেখতে পাই এই শূন্যতার।হয়তো এর পেছনে কাজ করে কবির বেড়ে ওঠা,সামাজিক রাষ্ট্রীক রাজনীতি,অর্থনীতি,ধর্ম,মিথ মূলত এই সবকিছু মিলিয়ে কবির জীবনযন্ত্রণা,আর এর পেছনে থাকতে পারে প্রিয়জন হারানোর বেদনা,প্রজন্মের জন্য হতাশা,অসুখ।যেমন কবি সালু আলগীর লিখেছেন,-

লিখেছো যথার্থ পঙক্তি-
রৌদ্রদিন,স্পর্শ আর হতাশার
এইবার বিদায়ের পালা
দিঘল দিনের বিকিকিনি হয়েছে অনেক।

দিঘল সূত্র(কফিন কাঠের ঘুম)

এখানে আমরা বুঝতে পারছি কবি কোন বিদায়ের কথা বলছেন।নিশ্চিত সেই মৃত্যু খুব কাছেই আমাদের।এই সত্যকে মেনে নিতেই হবে,এই বেদনাকেও মেনে নিতেই হবে,যেনো নিয়তি নির্ধারিত হয়ে আছে।কিন্তু কেউকি এই বিদায় সহজ ভাবে মেনে নিতে পারেন!বলা সহজ,তবে মোটেই সহজ নয়।এখান থেকেই শুরু হয় খোঁজ,যাঁরা ধার্মিক তাঁদের মতে এরপর আছে সেই জগত,যাকে বলে স্বর্গ,সেখানে মৃত্যু নেই;শুধু সুখ আর সুখ।কিন্তু ধার্মিকের মতেই সেখানে পৌঁছানো সহজ নয়,আছে পাপ-পুণ্যের সিঁড়ি সে সিঁড়িও মানুষের পক্ষে অতিক্রম সম্ভব নয়।তাহলে বোঝা যায় ধার্মিকও এই শূন্যতাকে অস্বীকার করতে পারেন না।আর বিজ্ঞান আজ যেখানে এসেছে সেখানে মৃত্যুপরবর্তি কিছু নেই,শুধু শূন্য ছাড়া।এর কোনোটাকেই মানুষ সহজ ভাবে নিতে পারে না,নিজের ভেতরে নিরন্তর খোঁজে খুঁজেই চলে;আর তৈরি করে শূন্যতার জগত।

আবার এই শূন্যতা আছে জৈবিকতায়ও যেমন কবি সালু আলমগীরের লেখা আর একটা কবিতার আংশে দেখি তিনি লিখেছেন,-

পাঞ্জেগানা মনু ভাই ওজু ধরে রাখে
দিনি মেহনতে আবারও চিল্লায় গেলো
এবারে একশ বিশ

কীসের আশায় ভাবী দরজা ভিড়িয়ে রাখে
খুলে রাখে সুরক্ষা কপাট?

পড়শি(কফিন কাঠের ঘুম)

কি গেলো কিংবা কেন ভাবী খুলে রেখেছে সুরক্ষা কপাট?এই প্রশ্নের উত্তর আমরা খুঁজি,অনুভবও করি কিন্তু প্রকাশ করতে পারি না;এও এক শূন্যতা।মানুষ জীবনে যত কিছু পাক তবুও মনে হবে পাইনি কিছুই।এই সূত্রে কবি অরিন্দম গাঙ্গুলীর একটি প্রবন্ধের কথা মনে পড়েছে, ‘আকাশ ছোঁয়া ইমারত অতলান্ত হতাশা’।তবে আমরা জানি এই পৃথিবীতে মানুষ কেন,কোনো কিছুই চির অবিনশ্বর নয়;যেমন নগ্ন হয়ে এসেছি ঠিক সেভাবেই ফিরতে হবে।আবার এমন নয় যে মানুষ একা বলেই একাএকা বাঁচতে পারে,না তাও পারে না বরং সামগ্রিকতায় বাঁচার মাঝে এই শূন্যতা কিছুটা আড়াল হয়।কবি সালু আলমগীরেই এই চেতনা কিছুটা রোমান্টিকতার লগ্ন,রোমান্টিক কবিতায় আমরা দেখি এই শূন্যতাকে ঈশ্বর রূপে কল্পনা করা হয়;তবে রোমান্টিক ধারার যে দাসত্ব তা নেই কবি সালু আলমগীরের কবিতায়।বরং বলা যায় আধুনিক দর্শনের মাঝে যেনো কিছুটা রোমান্টিকতা উঁকি মারছে।এই প্রসঙ্গে কবি সালু আলমগীর বলেন,- ‘রোমান্টিকতাকে অস্বীকার করে কবিতা হয় না’।যাই হোক এখন খুঁজে দেখার বিষয় এই যে,কবি সালু আলমগীর রোমান্টিকতার শূন্যতার থেকে কীভাবে মুক্তি খুঁজেছেন;নাকি খোঁজেননি!সেই হতাশা, শূন্যতার মাঝে বিলিন হওয়াই সার কথা এই বোঝাতে চেয়েছেন?কিন্তু আধুনিক মানুষতো এর থেকে মুক্তি খুঁজবে,নেই জেনেও খুঁজবে।তাহলে আমাদেরও বুঝে নিতে হবে যে,কবি কি মুক্তি খুঁজেছেন,না খোঁজার গতি বাড়িয়ে দিতে চেষ্টা করেছেন তাঁর কবিতার মাধ্যমে,নাকি শূন্যতার মাঝে বেঁচে থাকার সাহস যুগিয়েছেন।

হয়তো এর কোনোটাই কবির কাজ না,তাঁর কাজ কবিতা লেখা।আর পাঠকের কাজ কবিতাকে নতুনরূপে আবিস্কার করা।কবিতায় একসময় শুধুই রসের কারবার চলতো ,আজও চলে;কিন্তু বর্তমান আধুনিক উত্তরাধুনিক কবিতা শুধু রস সর্বোস্বে চলে না,অর্থময়তারও দাবী করে।কবি সালু আলমগীরের কবিতায়ও অন্তর্নিহিত অর্থ আছে।এখন বিষয়টা হোলো,বাস্তব,পরাবাস্তব,অধিবাস্তব,অতিপ্রাকৃত,ব্যাপারগুলি এক নয়;এর প্রত্যেকের আলাদা আলাদা বৈচিত্র আছে।বাস্তবতা কী?অনেকের খুব সহজে বাস্তবতার যে সংজ্ঞা দাঁড় করেন,তা আসলেই বাস্তবতা নয়,শুধু ক্ষণিকের জন্য মনে হয় যেনো এই বাস্তব;পরে নিজের ভেতরেই সে প্রশ্নবাণে আপেক্ষিক হয়ে যায়।তাই বাস্তবতা কী এই দ্বন্দ্বের আজও শেষ হয়নি।আবার পরাবাস্তবতার অপ্রয়োজনীয়তা নিয়েও অনেক আলোচক আলোচনা করেন,কিন্তু আমি মনে করি পরাবাস্তব মানেই বাস্তব বহীর্ভূত কিছু নয়;সমকালীন অস্থিরতার অভিঘাতেই কবি মনে পরাবাস্তবতা,বা কল্পনা আসে।কেউকি এমন স্বপ্ন দেখেছেন যা আপনি কোথাও দেখেন নি,বা কল্পনা করতে পারেন নি?কল্পনা ততটুকুই যা বাস্তবেরই অংশ।আর বুস্তুবাদী বাস্তবতাই যে কেবল বাস্তবতা তা কিন্তু নয়,বস্তুর প্রয়োজনীয়তা ফুরায়,চাহিদাও পালটায় তাই বলা যায় এর বাস্তবতা স্থির বা চিরস্থায়ী কিছু নয়।তবে এই নিয়েও কবিতা লেখা হয়,তার প্রয়োজনও আছে,আবার সেই পরম মুক্তির খোঁজের কবিতাও দরকার আছে,কারণ বস্তুজগতের প্রয়োজনীয়তা ফুরাবেই;আর তাই মানুষ আত্মিক মুক্তিও খুঁজবেই।পরম মুক্তি বলতে ঈশ্বর সন্ধান না,বরং আমরা কোথা থেকে এলাম কোথায় যাব এই প্রশ্ন আজ নিশ্চিত হয়ে আছে।কিন্তু মানব দেহের ভেতরে যে প্রাকৃতিক রহস্য সেই রহস্যকে উপলব্ধি করাই এর মূলে,যা করে গেছেন লালন।এই খোঁজে যে আত্মশুদ্ধি দরকার,সেখানে পৌঁছোতে নিজের সাথে নিজেকে লড়তে হয়,লড়তে হয় রিপুর সাথে।মৃত্যুর পরে এই সাধনা হয় না,বা জন্মের আগে।

কবি সালু আলমগীরের কবিতায়ও আমরা এই খোঁজের প্রয়াস লক্ষ করি যেমন,-

সুগন্ধরাতের কাছে
নারী আর ঘর উভয়ে গোপন
মূলত প্রতিটি নাভির নিচেই
হিম পাহাড়ের ধস সফল মৃত্যুর অন্ধকার

পাহাড়ধস(কফিন কাঠের ঘুম)

এই অন্ধকার যে শূন্যতার,এটা উপলদ্ধি করা খুব কঠিন নয়,তবে এ যেমন বুস্তুবাদী বাস্তব,তেমনই শুধু বস্তুবাদী বাস্তবতায় এর বিশ্লেষণও সহজ না;তাই ফ্রয়েডিও মনোবিকলন তত্ত্বে প্রভাবিত বেঁত দ্বারা নির্ধারিত পরাবাস্তবতার কাছে যেতে হয়।আর তখনই বুঝতে পারি এই কবিতা শুধু বস্তুবাদী বাস্তবতা নয় বরং বাস্তব আর কল্পনার সংমিশ্রণ যা আমাদের সেই শূন্যতারই অনুভব করিয়ে দেয়।

কিন্তু ব্যাপারটা এমন নয় যে,কবি সালু আলমগীর তাঁর কবিতায় শুধু এই নির্বেদ শূন্যতার মায়াজাল রচনা করেছেন,বরং বলা যায় তিনি তাঁর কবিতায় জীবন বোধের না’নান দিক,বহুমূখি জটিলতা এক কাতারে বাঁধতে স্বক্ষম হয়েছেন।আমার আলোচ্য বিষয় যেহেতু এককেন্দ্রিক শূন্যতা তাই আমি এর বাইরের ভাবনাকে মূখ্য হিসেবে দেখাতে চাইছি না,কারণ তাহলে আলোচনা ঘোলাটে হয়ে যাবে,অন্য রসদ নিয়ে অন্য কেউ আলোচনা করবে নিশ্চয়ই পরে।এই তো শেষ নয়,বরং শুরু।

আর কবি সালু আলমগীরের সাথে কথাসূত্রে বহুবার এই আলোচনা হয়েছেও যে,তাঁর শরীর দীর্ঘ কঠিন কর্কট রোগে আক্রান্ত থাকার দরুন,মৃত্যুচেতনা বা তার শূন্যতা বারবার বহুভাবে স্বতঃস্ফূর্ত এবং ভিষণ সাবলীল উপলব্ধির মধ্যে দিয়েই এসেছে যেমন,-

সৃষ্টি ও লয়ের মধ্যে প্রাত্যহিক ঝুলে আছি
জন্মমুহূর্ত থেকেই
মৃত্যু পেছনহাঁটা কুকুর
ঘ্রাণ চিনে চিনে
ঠিক তার লক্ষ্যবস্তু স্থির রাখে

গন্তব্য(কফিন কাঠের ঘুম)

আমি এর আগে কয়েকটা প্রশ্নের উল্লেখ করেছিলাম যেমন,কবি কী এই শূন্যতার থেকে মুক্তি খুঁজেছেন?না খোঁজের ব্যাপারে পাঠককে উস্কে দিয়েছেন?কিংবা খোঁজার চেষ্টাই করেন নি?তো শেষপর্যন্ত এসে যেটা বুঝতে পারি তা হোলো,কবি তাঁর অভিজ্ঞতা দিয়ে এটাই পরিস্কার করতে চেয়েছেন যে,বেঁচে থেকে শুধু শারীরিক যন্ত্রণার কাল্পনিক মুক্তি খোঁজা ছাড়া মানুষের আর উপায় নেই।আর তা সেই শূন্যতার অন্ধকারে আটকে থাকে,যার থেকে পাঠক তাঁর অভিজ্ঞতা অনুযায়ী রস আস্বাদন করে;এই রস বোধোর মধ্যে বিশেষত করুণ রসই বেশি প্রবল হয় আর তাকে বীর রসের দ্বারা জয় করার প্রবনতা লক্ষ করি আমরা।যেমন,-

তোমার লোভের তাবৎ ইশারা
নিয়তই গুঁড়িয়ে দিই
পায়ের উচ্ছ্বাসে
সুপ্রকাশ হই নিকট দূরত্বে
চুপকথার আলিঙ্গনে বলি
মৃত্যু দিয়েই আমি পেতে চাই
জন্মের পূর্ণ স্বাদ

জন্মস্বাদ(কফিন কাঠের ঘুম)

কিংবা

অনেকেই হেরে যায় জেনেও
বারবার হেরে যাবে কোনো বেকুব জুয়াড়ি
আর এইসব বিষণ্ণ উৎসব শেষে
ঝরাপাতায় মুদ্রিত হবে কেবলই চলে যাওয়া
চলে যাওয়া...

মুদ্রিত প্রস্থান(কফিন কাঠের ঘুম)

অনেক পাঠক এই শূন্যতাকে পরম বা স্রষ্টা কিংবা সত্তা হিসেবে ব্যাখ্যা করেন;ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ তো বহু ভাবে করাই যায়।কিন্তু কবি সালু আলমগীরের সাথে দীর্ঘ আলোচনা সূত্রে জেনেছি তিনি মৃত্যুপরবর্তী কোনো সত্যতে বিশ্বাস রাখেন না,তিনি খোঁজেন প্রকৃতির রহস্য মনব মনের গহিনে বাসরত সেই পরম সত্তা।এতে করে কবি সালু আলমগীরের কবিতা পাঠ করে জীবন আরও অর্থবহ হয়ে ওঠে,বারে মূল্যবোধ,সংবেদন।আর বেঁচে থেকে মৃত্যুকে জয় করার সাহস যা কবি নিয়তই জুগিয়ে চলেছেন।যে ভাবনা আজ আমাকেও পালটে দিয়েছে অনেকখানি।






কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন