পৃষ্ঠাসমূহ

পুরনো সংখ্যা

সোমবার, ১৪ মে, ২০১৮

রুপা সাধুখা এর তিনটি কবিতা
















প্রথম প্রহর

বৈশাখ প্রান্তের পড়ন্ত বিকেল
আকাশ জুড়ে মেঘের রাজত্ব
আবছা আলোয় দখিনা বাতাস
দোলা দিয়ে যায় এলো-চুল;
ছাঁদের কোণে একা দাড়িয়ে থাকা,
উদাসীনতার মায়ায় গ্রাস করা
নাম অজানা খোলাচুলো মেয়েটির।
মেঘ-কেশেরা ভর করে নীরবে
ক্ষণিকের তরে হাওয়ায়
কখনো মুখ বেয়ে চোখের উপর।
মেহেদী রাঙা দখিনা হস্ত-
ক্ষণ-ব্যস্ত আঁখি উন্মুক্তে।
দৃষ্টি তার আঁখির অজান্তে
দূর দিগন্ত পেরিয়ে
ঈশান কোণের আকাশ প্রান্তে।
জুড়ে উড়ন্ত যেন-
লাল সবুজের পতাকা
কাঁধে ঝুলানো কারুকার্য পূর্ণ
গোলাপী উড়নার আঁচল।
স্বপ্নহীন বেড়ে উঠা-
দূরন্তপনা দৃষ্টির ছেলেটি
থমকে দাঁড়িয়ে দেখে-
আজ বৈশাখের প্রথম প্রহর।


আমি নারী বলে

প্রশ্নটা নিরন্তর আমার কাছে বুকের কাঁটা
সুদূর নীলের পুরনো রেডিওর গানটা মনে পরে।
পাখিটার বুকে যেন তীর মেরো না ওকে গাইতে দেও
কে আমি।
সমাজের আর পাঁচটা মেয়ের মত
ঠিক আমি একজন নারী।

শৈশবে খেলতাম স্বপ্নের খেলনাবাতি,ঘরকন্না
যৌবনে দেখতাম একটা পুরুষালি লোমশ বুকের স্বপ্ন।
একটা সুখের নীড়, আশ্রয় গভীর প্রেমে
সবটাই সত্যি এই সমাজে।
আর পাঁচটা মেয়ের মত বেড়ে ওঠা
সবার কাছে শোনা তুই বড় হচ্ছিস শান্ত হ।
তারপর বিয়ে স্বপ্নের রাত্রি রজনীগন্ধা কিছু মুহূর্ত
সবটুকু কেটে যাওয়া চলে যাওয়া বদলানো দিন।
ঠিক আমি একজন নারী
কিন্তু কেন আজ আমি আবারও একলা।

পৌরুষের অহংকারে পুরুষ সমাজের শ্রেষ্ঠ জীব
সকল সমাজপতিকে প্রশ্ন?
আজ এগারমাস আমি বাপের বাড়ি আছি
কেস চলছে ,দিনান্তে কোর্টের দরজায় নিজেকে বড় ছোটো লাগে।
লজ্জা করে নিজেকে নারী ভাবতে
আচ্ছা লাথি,কিল ,চড় এগুলো কি নারী হবার উপহার।
আচ্ছা দিনান্তে উপহাস ,অবহেলা এইগুলো আমার প্রাপ্য
আচ্ছা কেন প্রতিমুহুর্তে নিজেকে কুঁড়ে খাওয়া একলা দিন।
কেন আমি নারী বলে আমার অস্তিত্বে পুরুষের অধিকার
সকল সমাজকে ধিক্কার আমার এই জীবিত মৃত্যুর।

জানি খুশি হবেন সমাজপতিরা আমি মরে গেলে
জানি আরো খুশি হবে সেই পুরুষটা যাকে দেখেছিলাম টোপর পরে।
কিন্তু আমার মৃত্যু নেই আমি ফিরে আসবো বারংবার মায়ের যোনিতে
অপেক্ষা করবো সুদিনের যেদিন ছিটিয়ে দেব থুথু পুরুষতান্ত্রিক সমাজের মুখে ।
যতদিন প্রশ্নটা নিরন্তর আমার বুকের কাঁটা হয়ে থাকবে
কেন আমি নারী বলে।


অনুক্রম

সব কিছুর একদিন হয় শেষ
জানি এ প্রতীক্ষার হবে না ইতি।
ওই যে পথের কিনারে ,
একাকিনী সদ্য জন্মানো কামিনীর চারা
একদিন এ গাছটিও যৌবনবতী হবে
ছড়াবে রূপের মহিমা নিসর্গের বুকে
সুতীব্র গন্ধে মাতাল হবে যুগলেরা
প্রতি ভোরে মিশে যাবে নরম ঘাসের বুকে
ওর ইচ্ছেগুলো পাবে পূর্ণতার ছোঁয়া
সময় পেরিয়ে যাবে সিঁড়ি কেটে কেটে
কিন্তু আমাদের প্রতীক্ষার হবে না শেষ
আমরা রয়ে যাব দেয়ালের দু'পাশে
হয়ত এটাই নিয়ম , এটাই অনুক্রম।

জানি এ অনুভূতির হবে না পরিমিতি
এই যে স্রোতসিনীর ছোট্ট ঢেউটি
একদিন জন্মেছিল পাহাড়ের খসখসে দেহে
তারপর ছুটে চলেছে অবিরাম
অতঃপর পার হয়ে যাবে সহস্র পল ,
ক্ষণ একদিন সাগরের উতলা বুকে
মিলে মিশে হবে একাকার , উন্মাতাল ।
কিন্তু আমাদের গোলাপী ইচ্ছেগুলো
ক্রমাগত দূর থেকে দূরে চলে গিয়ে
ধূসর থেকে ধূসরতর হয়ে যাবে
চলে যাবে দৃষ্টির অগোচরে
মিশে যাবে অজানা কোনো নক্ষত্রে
আমরা শুধুই দেখবো চেয়ে চেয়ে ।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন