স্যার ।। মুহাম্মদ নাজমুল হক


স্যার বিড়ম্বনা


আমার মনে আছে গত কয়েক সাল আগে আমি সিলেট গিয়েছিলাম। কুশিয়ারা'র পাড়ে মুলত বেড়ানোর উদ্দেশ্যে। ছিলাম বেশকিছুদিন। পুরা জকিগঞ্জ এলাকা চষে বেড়িয়েছিলাম ও বটে। জকিগঞ্জ স্থলবন্দর, ডাকবাংলো, প্রয়াত ইমন ওরফে নায়ক সালমান শাহ্ এর গ্রামের বাড়ি, মাধবকুন্ড জলপ্রপাত সহ ছোট বড় টিলা পাহাড় কি দেখিনি।
যদিও কুশিয়ারার অপর পাড়ে অবস্থিত ইন্ডিয়ার করিমগঞ্জ যেতে পারিনি অনেক সাধের পরেও, কেননা আমার পাসপোর্ট ছিলনা।
এবার আসি মুল কথায়। একবার আমি ঘুরতে ঘুরতে কালিগঞ্জ বাজার পর্যন্ত গিয়েছিলাম। তখন প্রায় সন্ধ্যা, আর এলাকাটা একেবারেই মফস্বল। বলাবাহুল্য এশার পর রাস্তায় হঠাৎ বিড়াল ডেকে উঠলেও শরীরের লোম শিওরে ওঠবে।
আমি যেহেতু এলাকায় নতুন তাই বাজার থেকে ফিরে আসার পথ মনেহয় আওলিয়ে ফেলেছিলাম। তাই বাধ্য হয়েই এক মুরুব্বীকে জিগ্যেস করেছিলাম -
 "আসসালামু আলাইকুম স্যার, আমি এখান থেকে জকিগঞ্জ হাসপাতালে (উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স) যাওয়ার CNG কোথায় পাবো?
এটা শোনার পর উনি আমার মুখের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিলেন।
আমি আবার জিগ্যেস করলাম - চাচা, আমি জকিগঞ্জ হাসপাতাল কোথা থেকে যেতে পারবো।
উনি এরপরে উনাদের অর্ধেক আঞ্চলিক ভাষায় উত্তর দিলেন - পিছনদিক হাতের বামে গেলে একটা মোড় পাবে, সেখানেই অনেক CNG পাবে।
আমি উনাকে ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসার সময় দেখেছিলাম উনি আমার দিকেই তাকিয়ে ছিলেন। হয়ত আমি আসার পর উনি নিজে নিজে অনেক হেঁসেছিলেন। আর ততক্ষণে আমিও বুঝে গিয়েছিলাম উনি কতটা সহজ সরল আর কিছুটা শিক্ষাজ্ঞ। পরে এটাও জেনেছিলাম এখানকার মানুষেরা পানের বাক্স হাতে রাখতে কতটা শিক্ষিত (দক্ষ)।
আরেকবার রাজশাহীতে আমার একবন্ধুর রুম্মেটকে বলেছিলাম - সাঈদ স্যার কেমন আছেন?
জবাবে উনি যা বলেছিলেন তা অন্তত আমি আশা করিনি। - তুমি জাননা আমি কাউকে পাড়াইনা(টিউশনি)।হয়ত উনি কিছুটা রেগে গিয়েই বলেছিলেন। যদিও তখন সমাজবিদ্যা নিয়ে স্নাতকোত্তর পড়ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
আমি কিছুটা অবাক হয়েছিলাম উনার কথায়। পরবর্তিতে আমি শুধু উনাকে বলেছিলাম - ভাইয়া স্যার শব্দের অর্থ কিন্তু ওরকমটা নয়!
যাইহোক, আমি নতুন কোন তথ্য পেলে এটা নিয়ে এতটুকু হলেও জানার চেষ্টা করি। তো গতকিছুদিন আগে বাংলাদেশের একজন নতুন লেখকের বই প্রকাশ হয়েছে, আর বইটা নাকি প্রশংসনীয়। তাই আমার আরেক বইপ্রেমী বন্ধুকে বললাম - দোস্ত অমুক স্যারের একটা নতুন বই বের হয়েছে, চল কিনি?
তো বন্ধুটার মুখমন্ডলের ছবি দেখে আমি নিজেই আশ্চর্য!
ও কিছুমুহুর্ত আমার দিকে দেখে বলল - অমুক? ওই মালটা আবার স্যার কবে থেকে হলো?

অথচ, আমরা সবাই টুকটাক ইংরেজি বলি। আর অতটুকু ইংরেজি বলেও আমরা যেন কতখানি তৃপ্তি পাই। - আর গর্ববোধ করি ইংরেজি বলতে পারায়। যা হয়ত বাংলাতে পাইনা! অথচ, আমরা কাউকে এই ইংরেজিতে সম্মানপূর্ণ সম্মোধন টুকুও করতে পারিনা। আবার কেউ করলেও আমরা অস্বীকার করি কিংবা লজ্জাবোধ করি।
 যাইহোক, আমরা বাংগালিরা কতটুকু শিক্ষিত হচ্ছি এটা আমার হয়ত না জানলেও চলবে। অথচ আমরা প্রায় সবাই বিদ্যানের মুখোশ পরে আছি! 


Post a Comment

Thanks

নবীনতর পূর্বতন