আসহাবে কাহাফ এর ৬টি কবিতা ।। poem by ashabe kahaf কুয়াশা।। kuasha

আসহাবে কাহাফ এর ৬টি কবিতা ।। poem by ashabe kahaf কুয়াশা।। kuasha

 









আসহাবে কাহাফ এর পাঁচটি কবিতা



পাখির ডানার মত দুহাত মেলে

পাখির ডানার মত দুহাত মেলে— দাঁড়িয়ে ছিলো একটি ছেলে
পুলিশের ইট-পাটকেল, রাবার বুলেট, উপেক্ষা করে;
খুলনার পার্ক মোড়ে
বুকের ভেতরে তার সে-কি দহন, আহা স্বপ্নের নিরব নিষ্পেষণ
গায়ের সেই হাফ স্লিভ— ধূসর ক্লান্ত ঘামাক্ত কালো টিশার্ট
ভেদ করে কয়েকটি রাবার বুলেট নিয়ে গেল প্রাণ
ক্ষতবিক্ষত হৃদয়ের আকুতি উত্তাপ এবং আর্তনাদ শেষে, 
কবর পটে সে লিখেগেছে—
আমি কে? তুমি কে?
রাজাকার রাজাকার! 
কে বলেছে? কে বলেছে?
স্বৈরাচার স্বৈরাচার!
তোমাদের কখনো মনে পড়বে কি? 
উত্তাল স্লোগানের এসব দিনরাত্রি, রক্তঝরা রাজপথের কোটা সংস্কার আন্দোলন
হে আগামীর তরুণ ছাত্র-ছাত্রী, মেহনতি মেধাবী মুখেরা
তোমাদের কখনো মনে পড়বে কি?
পাখির ডানার মত দুহাত মেলে— স্বাধীনতার স্বাদ পেতে চেয়েছিলো একটি ছেলে
স্বাধীন পতাকা তলে...
যার পরনের ধূসর ক্লান্ত ঘামাক্ত কালো টিশার্ট
রঞ্জিত হয়েছে পতাকার লালে
ক্ষমতার মসনদে বসা কোনো এক রাক্ষুসির কালো জাদুয়!

তোমাদের কখনো মনে পড়বে কি? 
সে শহীদ আবু সাঈদের নাম— আরও যারা হয়েছে শহীদ,
ঝরিয়েছে রক্ত মুক্তির শ্বাশত পথে পথে
তোমাদের কখনো মনে পড়বে কি?...

 বেশ্যাবাড়ির আঙিনা

দয়াময় সব জানে, স্বাধীনতা অর্জনের আগেও—
বুলেটের সামনে বুক পেতে গাইতাম বিপ্লবী গান
পরাধীন দেশেও আমরা স্বাধীন নির্ভীক বীরপুরুষ
এভাবেই আন্দোলন সংগ্রাম যুদ্ধ অতঃপর পেলাম— দেশের স্বাধীনতা, স্বাধীন দেশ!
স্বাধীন দেশে, সকালে ঘুম থেকে উঠে যাকে দেখতে চাইতাম না; সে বেশ্যা!
যে পথ দিয়ে হাটতে চাইতাম না; সেটা বেশ্যাবাড়ির আঙিনা
এখন মোড়ে মোড়ে অসংখ্য প্রভুফাঁড়ি,
অলিতে-গলিতে রাজনৈতিক খানকা, 
স্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো বেশ্যার কোচিংসেন্টার
যেখানে ঝুলে আছে বেশ্যার ঈশ্বর!
সেখানে আমি কীভাবে অধিকার চাই? কার কাছে চাই?


জবাব

বোতদ্দিন হাইয়ু আর ন-হাইয়ু,  সেদিনও বলতে চেয়েছি —
যখন তুমি বললে, দেখতে দেখতে পনেরো বছর,
সামনে আরও পাঁচ বছর— মানুষ বাঁচে কয় বছর?
হে রাজনৈতিক ব্রোকার, তবে তুমি জেনে রাখ;
মানুষ একদিন মরার জন্যই প্রতিদিন বাঁচে।

( বোতদ্দিন হাইয়ু আর ন-হাইয়ু এর অর্থ অনেক দিন খেয়েছো, আর খেয়ো না।)

চব্বিশের তারুণ্য

উত্তরে তোমাকে দেখি— দেখি দক্ষিণে
পূর্বেও তুমি শুয়ে আছে, এবার যাবো তবে পশ্চিমে
গণভবনের কাঁটা তারের বেড়া— আমাকে পারবে না আর আটকাতে
আমি শহীদ মিনারের পাদদেশ হতে, পায়ে হেঁটে এসেছি
মিছিলের ঘাম শুকাতে এখনো অনেক দেরি—
আহা তোমার সে দুঃশাসনের দণ্ডবেড়ি; 
আজি আমি নাহি পাই ভয়!
চেয়ে দেখ, রাজপথে চাঁদের আলো; মেঘেরা গিয়েছে ছুটি
দেশপ্রেমিকের হাতে, নেই ভিনদেশী মদ-রুটি
স্বৈরাচারের উন্মাদ ভ্রুকুটি, সেও উবে গেছ- তারুণ্যের উদাসী হাওয়াই।

যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

একুশ শতকে এমন দিন দেখতে হবে, ভাবিনি
এপাড়ের কথা ওপাড়ে যায় না শোনা; ওপাড়ের কথা এ-পাড়ে! 
যোগাযোগ নেই আপন-পর কারও সাথে,
এমন দুর্বিষহ দিনে, মায়ের কথা মনে পড়ে— মনে পড়ে বাবার কথা
আমার পাঁচ বছরের ছোট্ট মেয়েটার কথাও খুব করে মনে পড়ে
আর মনে পড়ে, আমার স্ত্রীর কথা— যাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি
যার কাছে গেলে ভুলে যায় পৃথিবীর সকল ক্লান্তি, দুঃখ, কষ্ট; অভাব-অনটন
সে এখন কেমন আছে? কেমন আছে আমার সে পরিবার?
ভাই, বোন ভাবী; আমাদের বাচ্চাগুলো 
কার কাছে এ উত্তর? কে দিবে?
যোগাযোগ হীন এ দিনে, কে দিবে আমার মাটির খবর? মাঠের খবর?
আমাদের যে সাহসী সন্তানগুলো— বুক চিতিয়ে নেমে এসেছিলো রাজ পথে
তারা এখন কে কোথায় আছে?
যারা গুলি খেয়ে শহীদ হয়েছে; তাদের দাফন-কাপন হয়েছে ত?
আহা সময়, আহা দেশ, আমার দেশ মাতৃকা, আমাকে ক্ষমা কর, আমাদের ক্ষমা কর
তোমার জন্য, তোমাদের জন্য কিছুই করতে পারিনি!
দিনে দিনে হেরে যাচ্ছি  নিজের কাছে, নীতির কাছে,  বিবেকের কাছে;
সময়ের কাছেও হেরেছি, সে ত অনেক আগে
হে আমার দুঃসময়, কালরাত্রি,  তুমি মনে রেখ, আমিও এর প্রতিশোধ নিবে! 
একদিন— আমার সন্তানেরা এর প্রতিশোধ নিবে!

আজব সরকার এক ( প্যারোডি কবিতা) 

আজব সরকার এক শাসন করছে— এ বাংলাদেশে আজ,
যারা সরকারে সব থেকে বেশি অন্যায় করে তারা;
যাদের মননে কোনো বোধ নেই- বিবেক নেই- মানবিকতার ছিটেফোঁটা নেই
বাংলাদেশ চলে আজ তাদের যৌথ সিদ্ধান্তে
যাদের গভীর টান আছে আজো এ দেশের জন্য
এখনো যাদের কিঞ্চিত বিবেকবান মনে হয়
মমতা- সততা বা নীতিতে,কিংবা উন্নয়ন নতুবা সেবায়
প্রতিহিংসার রাজনীতি ও আইনি নিপীড়নের জালে আজ তারা বন্দি।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন