সাফওয়ান আমিন এর পাঁচটি কবিতা।। poems by safwan amim__kuasha

 


সোনাতলা 

সেদিনের সেই দিন সেই সোনাতলা
কুঁচি কুঁচি করে দিতো মন ফালা ফালা
প্রতিদিন মনে হতো আসে যেই ট্রেন
তুমি উঠে চলে আসো, এই ভাবে শ্যাম!
তোমার পরশ লাগা সেই সোনাতলা
গেছি তো কয়েকবার ছুঁতে সেই জ্বালা
পাইনি কিছুই পরে, তুমি নেই বলে
আমার সকল প্রকাশ ভেসে যেতো জলে
হাতে রেখে দুই হাত নানা অযুহাতে
রঙিন ফুল আমার মরে অপঘাতে
প্রেমের পিদিম জ্বেলে, শত ছলবলে
যে পথে ইশারা এঁকে ফেলে গেছ রোজ
সেই পথ আমি খুঁজে পাইনি তো খোঁজ
জল তাই জলে মেশে করুণ কৌশলে!


বোকা মন, মনে রেখো আত্মসাবধান


ধারা ধারা করে কবে রাধা হবা মন?
হয়ে কৃষ্ণ, গৌর হবা, সেই সহধারণ? 

পতন শিখেছ বহু, আরও শেখা বাকি?
জীবন দাবার কোটে চেলে বহু দান
পেয়েছ কী জানা কথা? মূল সমাধান?
সহজ ভাষায় ডাকে শুঁয়া চান পাখি;
অপার ইঙ্গিত জেনো জগৎ-সংসার,
বারে বারে দেখা দিয়ে মুখ ঢাকে আবার!
তবে কেন পড়ে পড়ে পতন নিচ্ছ মেনে?
গৌর কী সবিনয়ে, করে না ডাকাডাকি?
কান পাতো, ডাকে রোজ, প্রহর নহর গুণে
সদয় বিনয় হও, ধ্যাণে ঢেকে আঁখি...

বোকা মন, মনে রেখো আত্মসাবধান
'জানি না কিছুই' জেনো, গূঢ় সমাধান!



যতই আড়াল করি ফাঁক তবু থাকে 


তোমার শহরে আসি চলে যাই ফের
তোমাকে দেখার সাধ মনে নিয়ে ঢের
চোরাচালানের মতো এই যাওয়া আসা
দিন দিন বাড়ে ঋণ, সেই ভালোবাসা
পাথরে পাথর ঘেঁষা ফুলকির মতো
উড়ে উড়ে ওঠে প্রেম বুকে নিয়ে ক্ষত
কিভাবে যে জানো তুমি, সব হয় জানা
খোঁজ রাখো সব পথ, শুনে হই ফানা
যতই আড়াল করি ফাঁক তবু থাকে
ভালোবাসা ঢাকা যায়? ঢাকে রাখঢাকে?




ভাঙন 


নৌকা চলে যাচ্ছে। শ্যালোমেশিনের শব্দ 
দূরে গিয়ে শোনাচ্ছে কোথাও আগমনী গান
পতনমুখী সূর্যের পথ ধরে চলে যাচ্ছে
কারো আঁচল যেন ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে জল
জলের সূর্যটি তখন ব্যর্থ কারো ফুল 
বেতালে ভাসছে
ওই তো ঢেউয়ে ঢেউয়ে নৌকা চলে যাচ্ছে
আর আমি অসহায় 
এ-নদীর পাড়, কাঁপছি ভাঙন ভয়ে...


খয়েরী টিনের ঢেউ তোলা বাড়ি


খয়েরী টিনের ঢেউ তোলা বাড়ি। মেঝে পাকা-শান
উদাম বৃষ্টির দিনে মনে হয়, দুধ-পুলি পিঠার উঠান
হাতের বাঁপাশ ঘেঁষে মান্ধাতার পুরোনো পুকুর পাড়
চুলের বিনুনি যেন, জলে নেমে গেছে সব ঝোপঝাড় 
উত্তরের কোণে আদিম গোয়ালঘর, খড়ের ছাউনি
খড় চুয়ে ঝরে যায় রঙিলা যৌবন, কখনো দেখোনি।
শৈশব, কৈশোর চিরদিন চলে যায়, ভেজা গাছের গন্ধ
তবু দেখি জলের ভিতর পাগলা মাছের বুদবুদ খণ্ড
আমার সেদিন ঝরতে ঝরতে বৃষ্টি, খড় চুয়ে বিয়ে হলো
তুমিও নাইওর খেতে এসেছিলে, হেসেছিলে, এই ভালো
মনে মনে সান্ত্বানা দেই, ভাগ্যিস তুমি চোখে তাকাওনি!
ঘরের পিছনে ফুল, ঝরে গেছে কত, সুগন্ধি পাওনি
শিউলিগাছ বুড়িয়ে যায়, ঝরে কত অদরকারি অচ্ছুৎ পাতা
আলগা বিছানো পাড়াগাঁর পথে শহরের কত পথ আঁকি
প্রতিদিন চিরদিন বাড়ে, বাড়ে শাদা শাদা মেঘ, বন্য ধূসরতা
বুঝি, এতদিন পরে, পাতিল কখনো মাছের মৃত্যু বোঝেনি
রঙিলা যৌবন ঝরে, পাকঘর কখনো কদমফুল খোঁজেনি!  
তবু পলাশের গায়ে বসন্ত লেগেছে কিনা খুঁটে খুঁটে দেখি...

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন