মঙ্গলবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৭

গল্পঃ তিতলীর ১৬ই ডিসেম্বর ।। দ্বীপ সরকার

গল্পঃ তিতলীর ১৬ই ডিসেম্বর


১৬ই ডিসেম্বর। বিজয় দিবস। সকাল থেকেই ঝকঝকে আবহাওয়া। তিতলীর বাবা নাসির উদ্দিন শহরে যাবার জন্য রেডি হচ্ছে। নাসির উদ্দিন শিক্ষা দিক্ষায় বেশিদূর না হলেও তার ভেতরে ৭১,র চেতনা প্রখর। প্রতি বছরই এই দিনটিকে তিনি পালন করে থাকেন গুরুত্বের সহিত। শহরে যায়।শহিদ মিনারে যায়। স্মৃতিসৌধে ফুল দেয়।

এবারও নাসির উদ্দিন সাহেব সকালের নাস্তা সেরে শহরে যাবার জন্য প্যান্ট শার্ট পড়ছে। তিতলী তার ছোট মেয়ে। বয়স পাঁচ ছয় বৎসর হবে। সে বায়না ধরলো বাবার সাথে শহরে যাবে।
ঃ আব্বু আমিও তোমার সঙ্গে যাবো
ঃ না বাবা ছোটোদের যেতে হয়না
ঃ না বাবা, আমিও ফুল দিতে যাবো
নাসির উদ্দিন তিতলীর বায়না ফেলে দিতে পারলোনা। চল্লো মেয়েকে নিয়ে শহরে।

সকাল আট্টার আগেই নাসির উদ্দিন শহরে পৌঁছলো। পাঁচশ টাকা দিয়ে ফুলের তোড়া কিনলো। তোড়ার গায়ে সাদা কাগজে লিখলো " তিতলীর পক্ষ থেকে,,

এবার তিতলীর পা থেকে জুতা জোড়া খুলতেই তিতলী রেগে গেলো।
ঃ আব্বু জুতা খোলো কেনো?
ঃ ওখানে খালি পায়ে যেতে হয় বাবা, না হলে মানুষে খারাপ বলবে।
নাসির উদ্দিন ইনিয়ে বিনিয়ে তিতলীর জুতা খুললো এবং নিজের পায়ের চামের সেন্ডেলও খুলে খালি পায়ে হেঁটে হেঁটে স্মৃতিসৌধে আসলো।

শত শত লোক দেখে তিতলী খুশি হলো। ভাবছে বৈশাখি মেলা। নাসির উদ্দিন মেয়েকে নিয়ে ধিরে ধিরে ভির কেটে স্মৃতিসৌধে পা দিলো।মেয়ের হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে বললো
ঃ তুমি এটা ওখানে দিয়ে আসো বাবা।
তিতলী হেঁসে হেঁসে ফুলের তোড়া দিতেই সামনে দাঁড়ানো এক ভদ্র লোক তিতলীর হাত ধরলো এবং অবাক হয়ে বললো
ঃ আরে, বাবু তোমার নাম কি বলতো?
ঃ তিতলী
ঃ কার সাথে এসেছো?
ঃ আব্বু
ঃ কোথায় তোমার আব্বু?
ওখানেই নাসির উদ্দিন দাঁড়ানো ছিলো। নাসির উদ্দিন এগিয়ে এসে বললো
ঃ এই তো আমি ওর বাবা।
লোকটি তিতলী এবং তিতলীর বাবার ছবি উঠালো ক্যামেরায়। তিনবার ক্যাপচার করলো। তাতে তিতলীর দাঁত ক্যালানো এবং ভেঙচিকাটা হাঁসিটি ফুটে উঠেছে বেশ।

নাসির উদ্দিন তিতলীকে নিয়ে ধিরে ধিরে জায়গা ত্যাগ করলো। বাপ মেয়ে হাঁটছে খালি পায়ে। পা জুড়ে লাল নীল সবুজ রঙের সমারোহ ফুটে আছে। 

পরের দিন সকালে স্থানীয় বাজারে হকাররা দোকানে দোকানে পত্রিকা বিলি করছে করতোয়া, প্রথম আলো, ইত্তেফাক, যায়যায় দিন। আরো অন্যান্য।

দৈনিক প্রথম আলো,র প্রথম পাতায় কালুর চোখ পড়তেই থমকে গেলো। "আরে, এ তো দেখছি আমাদের তিতলীর ছবি,, কালু তিতলীর বান্ধবী আইরিনের বাবা। ওখানে আইরিনও দাঁড়িয়ে ছিলো। আইরিন দেখছে পেপারে তিতলীর দাঁত ক্যালানো চমৎকার হাসি।সাথে ওর বাবা নাসির উদ্দিনের ছবিও। সঙ্গে সঙ্গে কালু ওর মেয়ে আইরিনকে নিয়ে ওই পেপার নিয়ে তিতলীদের বাসায় আসে। আইরিন দৌড়ে গিয়ে তিতলীকে পেপারে ছাপানো ওই ছবি দেখালো। তিতলী খুব খুশি হলো। কালু ওর বাবা নাসির উদ্দিনকে জিজ্ঞেস করলো
ঃ কি ঘটনা নাসির ভাই, কিভাবে ঘটলো এসব?
ঃ আমি তো কিছুই বুঝতে পারলামনা। তবে ওখানে এক ভদ্রলোক ছবি উঠাইছে। মনে হয় উনার কাম।

আইরিন ওর বাবা কালুকে বললো
ঃ বাবা এর পর থেকে আমাকেও তুমি ১৬ই ডিসেম্বরে শহরে নিয়ে যাবে।
কালু মূর্খ। অশিক্ষিত। ১৬ই ডিসেম্বর সম্পর্কে ওতোটা বোঝেনা। নাসির উদ্দিন সাহেব কালুকে এই দিনের তাৎপর্য বুঝালো এবং বললো
ঃ এর পর থেকে আমরা সবাই এক সাথে এই দিনটিকে পালন করবো। আইরিন ফুল দেবে।
 তিতলী ফুল দেবে। ওরা মানুষকে শিখাবে।ওরাই ৭১,র চেতনাকে লালন করবে। 

লেখাঃ ১১/১২/১৭ইং

1 টি মন্তব্য: