বুধবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৭

উপন্যাসঃ স্বপ্ন ও শেষ অধ্যায় ।। তৈমুর মল্লিক

স্বপ্ন ও শেষ অধ্যায় 
                   ( খণ্ড ৫) 

কে-কে ওখানে? 
ছায়ার মত কিছু একটা দেখেছে সাগর । কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে গুটি গুটি পায়ে সাগর এগিয়ে যায় বই রাখারা আলমারির পাশে । এদিক ওদিক তাকিয়ে কিছুই দেখতে পায়না সে। তাহলে কি ভুল দেখেছে ? না ভুল দেখার কথা নয়। কিছু একটা ছিলো ওখানে । তাহলে গেলো কোথায় ? জানালার দিকে চোখ পড়তেই দেখতে পায় জানালা খোলাই আছে ।
কিছুদিন থেকে একটা ছায়া সাগরকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। তার কেবলি মনে হচ্ছে কেউ একজন অনুসরণ করছে তাকে। এই ভাবনা সাগরকে প্রতিনিয়ত তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে । আজ পাঠাগারে এসেও সেরকম মনে হয়েছে তার । কিছুটা উৎকণ্ঠা , কিছুটা ভয়ের সংমিশ্রণে সাগরের অবয়ব কেমন একটা হয়ে গেছে । শ্বাস নিতে বেশ কষ্ট হচ্ছে এখন । হাটতে হাটতে জানালার কাছে এগিয়ে যায় , বুক ভরে বাতাস নেবার চেষ্টা করে। কেন যেন ফুসফুস বাতাস গ্রহন করতে অপরাগতা স্বীকার করছে । অনেকটা জোর করেই বাতাস গ্রহন করতে হচ্ছে 
হটাৎ করে সাগরের চোখ জলতে থাকে। কপাল বেয়ে ঘাম চোখের মধ্যে প্রবেশ করেছে কখন বুঝতেও পারেনি। 
পকেট হাতড়ে টিশুপেপার বের করে মুখটা মুছে নেয় সে । ঘামযুক্ত পেপারটা জানালা দিয়ে বাহিরে নিক্ষেপ করতেই নিজের দিকে ফিরে আসে পেপারটি। 
ভালো করে খেয়াল করতেই দেখতে পায় জানালা বন্ধ। আস্তে আস্তে হাত দিয়ে জানালা ধরে বুঝতে পারে পরিস্কার কাঁচ লাগানো। 
পরিচ্ছন্ন একটি দ্বিধার মধ্যে পড়ে যায় সে। পাশে পড়ে থাকা একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসে পড়ে। আপন মনে ভাবতে থাকে---
ক্যাম্পাসের দুইতলায় লাব্রেরিতে যখন প্রথম সে প্রবেশ করে তখন শুধু একজন মানুষকে দেখতে পেয়েছে। একটা কম্পিউটার নিয়ে প্রবেশ গেটের পাশে নিজের কাজ করছিল সে । আর কাউকে সে দেখতে পায়নি । কেউ থাকলে অবশ্যই তার উপস্থিতি বুঝতে পারতো । এভাবে লাইব্রেরী কখনও মানুষ শূন্য থাকে আজ প্রথম দেখলো সে। 
কিন্তু আমি এখানে কেন এসেছিলাম – নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করে সাগর । মাথার চুল টানতে টানতে মনে পড়ে , জরুরী একটা বই দরকার ছিল তার। বইটা নিয়ে ক্লাসে যাবে। খুব গুরুত্ত পুর্ন ক্লাস ছিল আজ। আর অপেক্ষা করেনা সাগর । এতক্ষনে ক্লাস শুরু হয়েগেছে , দ্রুত প্রয়োজনীয় বই নিয়ে কদম বাড়ায় ক্লাসের দিকে।
আসবো স্যার? 
রফিক স্যার দরজার দিকে তাকাতেই দেখে সাগর দাঁড়িয়ে আছে। 
সাগরকে দেখে রফিক স্যারের উত্তেজনা কমে জায়।
এই ব্যাচের সবচেয়ে ভাল ছাত্র সাগর। মানুষ হিসাবে রফিক স্যার সাগর কে খুব ভালবাসে। 
রফিক স্যারের ধারনা একজন মানুষের যে সব গুণাবলী থাকার কথা, সাগরের মাঝে তার সব কিছু আছে। হাসি মুখে সাগরকে আসার অনুমতি দেয় সে। 
রফিক স্যার আবার শুরু করে তার ক্লাস।
সাগর কিছুতেই ক্লাসে মনযোগ দিতে পারছে না । স্যার কি পড়াচ্ছেন শুনছে ঠিক কিন্তু তার মাথার মধ্যে পাঠাগারের ঘটনা উঁকি দিয়ে চলেছে । রফিক স্যারের মুখের কথা গুলো মনে হচ্ছে অনেক দুর থেকে ভেসে আসছে । 
কি ছিল ওই লাইব্রেরীতে? কেন সে বার বার ছায়া মুর্তি দেখছে? এ সব ভাবতে ভাবতে সাগরের কপালে চিন্তার রেখা আবার ভেসে ওঠে । তাহলে কি ----- ঐ ঘটনাই এর জন্য দায়ী?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন