বৃহস্পতিবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০১৮

গল্পঃ রাত দূপুরে ।। অনির্বাণ চক্রবর্তী



রাত দূপুরে 

যখন তখন যেখানে সেখানে চলা নিলয়ের আজ নৈমিত্তিক অভ্যাস।পাঁচ ছয় বছরের অভ্যাসে নিলয় ভুলেছে এখন রাতের ভয়।কিন্তু আগের সময়টায় দশটার পরেই ঘর থেকে বের হতে অনেক কিছুই লাগতো।পাঁচ ব্যাটারীর টর্চলাইট সহ অনেক কিছু।তার পরেও পিছনে সামনে আশে-পাশে লাইট মেরেই তাকাতো।জোড়ে জোড়ে হাটতো কত কিছু।যাই হোক আসল কথায় আসি।

রাত সারে বারোটার সময় এক চিরচেনা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল নিলয়।হঠাৎ করেই রাস্তার পাশের বাড়িটার বাগান থেকে একটা ছোট্ট কান্নার সুর ভেসে এলো।নিলয় থমকে দাড়ালো।একটা চেনা পথ,চেনা দরজা,চেনা মানুষগুলোরই একটা পরিচিত সুর এটা।কিন্তু বহুদিন যাওয়া হয়নি ও বাড়িতে।বাড়ির সদর রাস্তাটা ভুলে বসেছে আজ নিলয় কে।কত না সাজে পাতাবাহার সেজেছে আজ রাস্তার দু'ধারে।হেটে চলা পুরাতন মাটি আজ নেই পায়ের নিচে।নতুন মাটিতে চাপা পরে গেছে রাস্তার পুরোনো স্মৃতি।আর মানুষগুলো,তারাতো কবেই ভুলেছে নিলয়কে।তারপরে কত না  সুখের স্মৃতি কত শতবার দোলা দিয়ে গেল, ওপরিবারের প্রতিটি মানুষকে,তা শুধু ভগবানই জানেন।

নিলয় এতকিছু চিন্তা করেও আস্তে আস্তে পৌছালো কান্নার কাছে।চৈত্রের কৃষ্ণাপক্ষের অষ্টমীর রাত।পায়ের তলায় হালকা মর্মর শব্দ শুনেই কাছে যেতে না যেতেই কান্না থেমে গেল।ছোট্ট মোবাইলের মৃদু আলোয় নিলয় দেখতে পেল, পরিচিত এক মুখ।অপরিচিত যার শরীর।মুখটির মলিন চেহারা।ত্রিশউর্ধ এক মহিলা।মেয়ের মতই লাগছে নিলয়ের কাছে।মোবাইলের আলোয় দুজনের চোখাচোখি হলেও,কোন কথাই বললো না নিলয়।কি করবে ও এখন ভেবেও পাচ্ছে না।তখনই মেয়েটি বলে উঠলো, আপনি এখানে?

------তুমি এখানে কি করছো?

আমি যা করি না কেন আপনি চলে যান এখান থেকে।

------না।আমি যাবো না।

কেন যাবেন না শুনি?

-------মনে নাই কিছু? তোমার কারনেই আমি আজ ছন্নছাড়া।

আমি জানি।কাল সকালে সব মিটিয়ে দেব।

--------কি হিসাব মিটাবে তুমি? কিভাবে মিটাবেই বা এতদিনের হিসাব।

আমি মরে যাচ্ছি।আপনাদের হিসাব মিটে যাবে।

-------আমাদের হিসাব মানে? কি এমন ক্ষতি করছিলাম আমি? যে আজও তোমার আমার উপর রাগ?এই বলেই নিলয় কষায়ে একটা চড় দিতে চাইলো মেয়েটিকে।কিন্তু মেয়েটি আজ অন্য এক জনের বিবাহিত স্ত্রী।পারলো না।

আপনি আমার কোন ক্ষতি করেন নি।ক্ষতি করেছি আমি আপনার।আর নিজেকেও সুখি নেই আজ।তাই আমি মরে যাচ্ছি।শান্তি চাচ্ছি আজ নিজেকে।

-------বেশ তো! আমার হাতেই হবে আজ তোর মরণ।আয় এদিকে।তোকে আমি তিলতিল করে মানুষ করেছি,ভালোবেসেছি,আজ নিজের হাতেই তোকে মেরে প্রতিশোধের সাধ নেবো।

এই আপনার ভালোবাসা? সারা জীবনের তুমি থেকে আজ মরার কালে তুই? ভগবান আমাকে মরার আগে আপনাকে দেখা করিয়ে ভালোই করেছে।মৃত্যুর আগে দেখতে পেলাম আপনার অন্য একটা রূপ।যার কখনো আশায় ছিলাম না।আর আমাকে আপনি মারলে আপনার জেল হাজতও হতে পারে।তার থেকে আপনি চলে যান।আমারর জন্যে আপনি জেলের ভাত খাবেন,এটা অন্তত আমি আশা করবো না।

-------তুই আমাকে রেখেছিস যেভাবে,এ থেকে চৌদ্দশিকের ভাত অনেক ভালো।আয় তোরে মেরে শান্তি পাই আমার জীবনের।এই বলে মেয়েটিকে টান দিল নিলয়।জোড়ে টান। মনে হয় এই টানেই ছিড়ে যাবে মেয়েটির হাত।

মেয়েটি এবারে....,সারাক্ষণ স্বামীর সংসারে থেকেও আপনাকে আমি দেবতার আসনে বসিয়ে পূজা করেছি।স্বামীর সোহাগের গোপন মূহুর্তেও আমি আপনাকে স্বরণ করেছি।সেই আপনিই আজ আমাকে মেরে ফেলতেছেন।বাহ্,আপনার ভালোবাসা।

-------যত যা কিছুই বলো না কেন,তোর বাঁচার অধিকার নাই পৃথিবীতে।তোর জন্যেই আরও অনেক মেয়ে কষ্ট দেবে আরও অজস্র ছেলেকে।

এই বলেই নিলয় মেয়েটিকে টেনে নিয়ে এল রাস্তার উপরে।আধো-আধো জোছনা পরছে ওদের শরীরে।নিলয় অগ্নিমূর্তী।মেয়েটিকে টেনে নিয়ে এবার পকেটে হাত দিল।হয়তো ছুরি কিংবা অন্য তেমন কিছুই বের করবে নিলয়।ভাবছে মেয়েটি।আসলেই ওর সাথে অন্যায়ের সীমানা রাখে নি মেয়েটি।এবার মেয়েটি কাঁপছে,কাঁদছে আগের মতই।

নিলয় এবারে পকেটে মোবাইল ফোনটা রেখে।হাতটা বের করে জরিয়ে ধরলো মেয়েটিকে।আর বললো,তুমি মরলে, আমি বাঁচবো কেমনে।তোমাকে দূর থেকে একটু দেখতে পারছি বলেই তো আমি আজও বেঁচে আছি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন