শামীম নওরোজ
১
সূর্যকে গোপন করছে একখণ্ড মেঘ
অসুখের ভেতরে সুখ। সুখের ভেতরে অসুখ। মৃত্যুকে বোঝে না কেউ
এখানে শ্মশান। ওখানে গোরস্থান। যার জন্য রাত্রি জাগি, সে ঘুমায় অচেনা আঁধারে
তুমি বিশ্বাসী। আমি অবিশ্বাসী
কেউ-কেউ পোশাক পরে। কেউ-কেউ পোশাক খোলে
মেঘের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসছে সূর্যের সাহস
২
একজন হেঁটে যাচ্ছে হয়তো কোথাও
বুকের ভেতর দাউ-দাউ করে আগুন জ্বলছে
নিজে পুড়ছে
অপরকেও পোড়াচ্ছে
মন্ত্রসাধিত বাগানের মালিক এই পথে গেছে
লোকান্তরে লোকজ জীবন
লোকধর্মে অনন্ত আশ্রয়
লোকটি খুঁজছে মনের মানুষ
সামনে আখড়াবাড়ি
৩
পুকুরের পাড়। কতিপয় রাজহাঁস
শীতের সকাল। খেজুরের গুড়
বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার নবাব
হীরাঝিল। বেগম বিলাস। লুৎফুন্নেসা
জোয়ার-ভাটা। বন্ধু ও বান্ধবী
যাত্রা নাস্তি। কাক ও কোকিল
শীত রাত্রি। এ ওকে। সে তাকে
জানালায় ভোরের আলো। রতির মমতা
ভালোবাসা আছে। বেদনা বাড়ছে
পুকুরের পাড়। বিশাল আকাশ
৪
কবর থেকে ভেসে এলো মৃত কোকিলের গান
এক টুকরো সুতো উত্তর দিক থেকে বুকের উপর দিয়ে
পিলপিল কোরে নেমে যাচ্ছে দক্ষিণ দিকে
সন্ধ্যার আলোয় মৃতরা পুলকিত হয়
হলাহল ডেকেছিলো
যাইনি
কবর খুঁড়তে একদল মানুষ কোদাল মারছে মাটিতে
উড়ে যাচ্ছে প্রাণবন্ত কোকিলের গান
৫
সূর্য তার নিজস্ব নিয়মে উত্তপ্ত করছে
মাটি ও মানুষকে
মৃতদের সঙ্গে আঁধারের সখ্যতা অনেক
আত্মীয়রা আসেনি কেউ
রোদ্দুরে শুয়ে আছে যে যার উদ্যানে
আকাশ কিছুটা ভারী
মেঘগুলো শিশুর মতো কান্নারত
কেউ-কেউ গোরস্থানের দিকে যাচ্ছে
কেউ-কেউ শ্মশানের দিকে যাচ্ছে
মুগ্ধতার কোনো শেষ নেই
৬
আকাশ বিমুখ
সূর্যটি পুড়ছে
রাত্রির তারাগুলো অনুরাগে মুগ্ধ
মানুষেরা নদীকূল ছেড়ে অন্য কোথাও যাচ্ছে
তাদের সঙ্গে পরিচিত কুকুরটিও আছে
নদীর সঙ্গে মানুষের সখ্যতা প্রাচীন
জীবনের সঙ্গে শত্রুতার কোনো শেষ নেই
রাত্রি ভীষণ নিঃসঙ্গ
জোছনা বিমুখ
চাঁদটি পুড়ছে
৭
ধূসর রঙের ঘুঘু আজো ডাকে রাত্রিরে
ঘুমিয়ে পড়েছে বিষখালী নদী
জঙ্গলে অস্থির কালাচের বিষ
জলের উপরে ভাসে কাচকির ঝাঁক
জীবনের পাশে শুয়ে আছে চতুর শিয়াল
সবুজ রঙের ঘুঘু আজো ডাকে রাত্রির নির্জনে
লীলাবতী প্রয়োজনে কাঁদে
চোখ মোছে মসলিনের আঁচলে
কালাচ পালিয়ে গেছে
রেখে গেছে বিষ বেদেনির ঠোঁটে
৮
কঙ্কাল কবর থেকে উঠে একা-একা হাঁটছে
গোরস্থানের অন্ধকারে কাক ও কোকিল
এদিকে আসে না কেউ
পথগুলো ভেসে গেছে মৃতদের লালায়
কাক ও কোকিল এসে জটলা পাকায়
ভয়হীন কুকুরেরা ঘেউ-ঘেউ করে
কঙ্কালের পাশ দিয়ে অন্ধকার আগে চলে যায়
কাকটি এসেছে
কোকিল আসেনি
গোরস্থানের ঘাস মৃতদের নিরাপদ আশ্রয়
৯
এদিকে ভাতের থালা
ওদিকে ভাতের হাঁড়ি
মাঝখানে বিস্তর ব্যবধান রেখে
চিত্রার জলে ভেসে যায় দু' কুলের জীবন-যাপন
শব্দহীন একটি রাস্তা লোকালয়ের দিকে আসছে
ঘাটে কোনো নৌকা নেই
অসুস্থ মাঝিরা বাড়ি ফিরে গেছে
ভাত ও ক্ষুধার মাঝখানে ভালোবাসা অস্থির
নদীর প্রযত্নে লেখা ঢেউগুলো জলে মিশে যায়
ভাত নেই, হাঁড়িও নেই
গভীর শূন্যতা
১০
জামদানিতে আনন্দিত তরুণীর ইচ্ছা
তরুণ বোঝেনি আজো সবজির চাষ
সূর্য নিভে গেলে অন্ধকার প্রিয় হয়ে ওঠে
মাঝখানে ছায়া ও রোদ্দুর সহবাস করে
একটি কবিতা আজো লিখিত হয় তুলসিপাতায়
একটি ছবিতে আজো হাস্যোজ্জ্ব এলাচের দানা
করতোয়া নদীর প্রযত্নে কাকাতুয়া যায়
গোমতী নদীর জলে ডুব দেয় পশুরের জল
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thanks