তাইজুল ইসলাম এর
গুচ্ছ কবিতা
একটি রোবটের চিৎকার
এই যে হুটহাট ধেয়ে আসা ঝড়ের মতো
আমার মনে তীব্র ব্যথা আসে,
ডাক্তার,
ঔষধপত্র,
ফার্মেসি,
কবিরাজি,
জরিবুটি,
পাতা-লতা,
ঝাড়ফুঁক,
তাবিজ-কবজ,
মসজিদ,
মন্দির,
সিন্নি,
প্রসাদেও যখন কোনো উপশম মেলে না—
এই অসহ্য ব্যথায়, মস্তিষ্কের ডোপামিন তখন একটা নামের তসবি জপে—
তুমি,
তুমি এবং তুমি।
তোমার এই অবহেলিত যন্ত্রটার মাঝে মাঝে যন্ত্রণা হলে,
তোমার মেকানিকাল হাতের ছোঁয়ায় সহজেই
ক্রুটি-বিচ্যুতি ভালো হয়ে যেত।
আজ বহুদিন হয়ে গেছে—
তুমি নিজেকে সঁপে দিয়েছো কোনো এক কর্পোরেট বুদ্ধুর কাছে।
পৃথিবীর সবচেয়ে শান্ত এবং শৃঙ্খল মানুষটাকে করে দিয়েছো রোবট।
শুধু এটুকু দূরত্ব সৃষ্টি করেছো—
এই যেমন
শরীর-মন-মননে ব্যথা হলে
তোমার সেই দুটো হাতে নিজেকে রিপেয়ার করার জন্য
আমাকে পাড়ি দিতে হবে চৌত্রিশ হাজার যোনি—
হয়তো আরও বেশি।
আমাকে গুছিয়ে রাখার পণ করেও
তুমি আমাকে ভেঙে চূড়ে রূপান্তরিত করেছো
একটি জলজ্যান্ত রোবটে।
এ দায় তোমাকে নিতে হবে না, প্রিয়তমা।
আমি নিজেকে অবশেষে বিকিয়ে দেবো নিলামে—
যত সস্তায় পারে কিনে নিবে কেউ,
নয়তো মৃত্যু।
তোমার নিজ হাতে গড়া যন্ত্রটার খোঁজ নিও,
তারও মাঝে মাঝে যন্ত্রণা হয়।
প্রেমের নাবিক
বিশাল জলরাশি পূর্ণ কূলকিনারা হীন সমুদ্রের নাবিক হইয়া নৌকা নিয়ে ঘাটে ফিরতে পারলেও
তোমার মন সমুদ্রে ডুইবা মরতে ইচ্ছে হয়।
বৈঠা হাতে নিলে যেমন নাবিক হওয়া যায় না
প্রেমে পড়লেই প্রেমিক হওয়া যায় না,
নাবিক হয়তে গেলে জলের মন পড়তে হয়, আকাশের অবস্থা দেইখা বুঝতে হয় কহন ডেউ উঠবে, কহন শান্ত থাকবে, কহন তুমুল বেগে সুনামি আসবে, আর কহন মাছ ধরা পরবে জালে
প্রেমিক হয়তে গেলেও নারীর মন পড়তে হয়
কিছু হয়নি বলার পড় ও দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের মত ধ্বংস হওয়া হৃদয় টারে বুঝতে হয়, বুঝতে হয় না বলা কথার আড়ালে প্রেমিকার অভিযোগ।
আমি না ভালো নাবিক হয়তে পারলাম
না হয়তে পারলাম প্রেমিক
তবে বৈঠা হাতে তোমার প্রেমের গাঙ্গে আমার নাও
প্রেমিক আমি মন বুঝি না সখি কিনারায় ভিড়াও।
টাকার প্রেম
উড়চণ্ডি ঝরে উড়ে আসা রাস্তার ধুলোগুলো
এলোমেলো চুলের বেহাল ধসায়,
স্পর্শ পায় যে হস্তের, তা আর সংরক্ষিত নাই।
ভীষণ রকম ব্যথা, বহু খুশকি জমে,
মাথা ভারভার লাগে,
সাবান-শ্যাম্পুতে ও কমে না।
কিন্তু স্পর্শের হাত দু’টির অধিকার কেবল
এসি মোটরযানে চড়ে বেড়ানো
কোনো এক তীব্র ত্বকওয়ালা
ঘড়ির কাঁটার গোলামের দখলে।
ওই বারবিলাসিনী মেয়ে
আমার মাথার চুলে হাত বুলিয়ে
প্রশংসা করতে করতে
টাক মাথায় ঝুলে পড়েছে।
মাথায় হাত বুলানো যদি এতই বিড়ম্বনা হতো,
হতচ্ছাড়া, আমাকে বলতিস!
সমস্ত চুল বিক্রি করে কিনে নিতাম
এক পসরা জমি কিংবা বিশাল এক চাকরি।
তোর নাগরের বিশাল গাড়ির ভেতরে
সূর্যের আলো পড়ে
ওই টাক মাথায় কি প্রতিক্রিয়া দেখা যায়?
অবশ্য, কয়েকশো স্বর্ণমুদ্রা থাকলে
তোদের মতো মতলবি ললনার
চুলের দরকার কী!
কি টাক, আর কি চুল!
বলি রে, সব নব্য প্রেমিক—
ওই সব চুল-টুল ছেড়,
টাকা ছাড়া প্রেম করা
মস্ত এক ভুল!
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন