দশটি ছড়া।। শাহীন খান।। rhym by shahin khan



দশটি ছড়া
শাহীন খান



ও টোনা

ও টোনা গান শোনা ও আমার ভাইরে
তোর গানে খুব মজা আমি সোনা পাইরে। 

এই  ডালে ঐ ডালে কেন তুই ঘুরছিস
ইতিউতি অকারণে কেন সখা উড়ছিস? 

গনগনে  রোদ্দুর গা কি তোর পোড়ে না
ঘোর তাপে বল তোর মাথা কি গো ঘোরে না?

আয় কাছে খেতে দেবো ভাত মাছ আর ডিম
খেতে দেবো দধি চিড়ে বরবটি লাউ সিম। 
 
সোনা  দেবো রূপো দেবো দেবো কিনে গয়না
ছুটে আয় তড়িঘড়ি আর দেরি সয় না। 


খুব বেশি ভালো লাগে 

ফুলপাখি প্রজাপতি দখিনা বাতাস
খুব বেশি ভালো লাগে সুনীল আকাশ।

চাঁদ তারা স্রোতধারা নদনদী কূল
বড় বেশি ভালো লাগে শেফালি বকুল।

ঝিঁঝিদের পালাগান,কোয়েলের সুর
কোকিলের মিঠেগান সকাল দুপুর।

কবিদের লেখাজোখা গল্প ও গান
রূপকথা শুনে শুনে ভরে যায় প্রাণ।

সবুজের সমারোহ মাঠ আর ঘাট
ভালো লাগে কি যে আহা শিশুদের পাঠ।

গ্রাম ভালো লাগে আর হাট ক্ষেত গঞ্জ
বৈশাখীমেলা, বাঁশি, পুতুলের মঞ্চ।

বৃষ্টি ও ভালো লাগে শ্রাবণ ভাদর
বোনের সোহাগ যতো ভাইয়ের আদর। 

ছড়া লেখা ভালো লাগে লিখে লিখে যাই
অনাবিল স্বপ্নীল ছোঁয়া তার পাই।

সব ভালো লাগা এই বুকে তুলে  রাখি
সাতরঙা রঙ মেখে  ছবি তার আঁকি। 

গুজব 

গুজবে ছেয়ে গেছে দেশ
জানি না তো কবে হবে শেষ! 
পথেঘাটে গুঞ্জন 
চা দোকানে আলাপন
ভয়ে কাঁপে কতো জন
ভেঙ্গে যায় শত মন! 
কারো নেই ঘুম
বাড়ে" বাথরুম "! 

কেউ করে হাহুতাশ 
আসে না তো সুবাস 
হতাশায় গিলে খায়
কেউ করে হায় হায়! 

আসলে তা সব ভুয়া
শোন ভাই, শোন বুয়া। 

শ্বশুর বড়ি গেলে 

শ্বশুর বাড়ি গেলে 
ভাবের পাখা মেলে
বুকের মাঝে ছন্দ এসে 
আপন মনে খেলে। 

বউকে শুধাই বউ
তুমি আমার চাঁদনি প্রহর
মৌচাকেতে মৌ। 

তুমি আমার বসন্তদিন কাব্য লেখা ক্ষণ
এখান থেকে বাড়ি যেতে চায় না আমার মন। 
এই খানেতে আরাম করে দিনটা কেটে যায়
তোমার বোনে আমার দিকে পিটিসপাটিস চায়। 
হেসে বলে মধুর কথা দেয় সে খাবার ভালো
এই খানেতে থাকবো আমি মুখ করো না কালো। 

শুনে সকল কথা আমার 
মুগুর নিয়ে শশুর
আসছে তেড়ে মেজাজ করে 
ব্যাটা  যেন অসুর! 
বললো আমায় যাবি কি না
  এখান থেকে ওঠ্
তড়িঘড়ি বউকে নিয়ে 
বাড়ির পানে ছোট্। 

নইলে মদন মুগুর খাবি
লেজ তুলে তুই, ঠিক পালাবি। 

শশুর বাড়ি মধুর হাঁড়ি 
নিত্য র' লে ঝাঁটার বাড়ি ! 
মিথ্যে কয় নয়
নিজের বাড়ি আপন বাড়ি
দারুণ মধুময় । 

নাহিদ হাসান রবিন এর গল্প পড়ুন এখানে ক্লিক করে
ইমদাদুল হক মিলনের নুরজাহান উপন্যাস নিয়ে প্রবন্ধঃ পড়ুন
চানক্য বাড়ৈ এর কবিতা পড়ুন এই লিংক এ

আম 

আম, তোমার  কে দিয়েছে নাম
দিকে দিকে শুধু শুনি তোমারই সুনাম। 

দেখতে তুমি মনের মতো জৈষ্ঠ্য দিনে পাকো
সাবার হৃদয় জুড়ে তুমি আসন পেতে থাকো। 

রসালো তুমি কাঁচামিঠা দারুণ তোমার স্বাদ
তোমায় যারা খায় না কভু জীবনটা বরবাদ। 

ঝুলে থাকো গাছের পরে বাতাস দিলে নাড়া
মাটির উপর পড়ো তুমি মাতাও সকল পাড়া। 

তোমায় পেতে ছেলে মেয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে
মিষ্টিমধুর ঘ্রাণটি ছড়াও বাংলার প্রতি ঘরে। 

কুটুম এলে ত্বরা করে কেটে তোমায় দিই
শ্বশুর বাড়ি থলে ভরে আমরা সবে নিই। 

তা না হলে গোসসা করে মা বোন আর বউ
সম্প্রীতিতে অটুট করে ছড়াও সুখের  মউ।

লে হালুয়া 

লে হালুয়া লে
 বাঘে এখন ছাগল মশাইর  
পা চাটিয়ে দে। 
করে সে যে গুজুরগুজুর
একটু হলেই হুজুর হুজুর
কথায় কথায় যখন তখন
হাজার সেলাম দে। 
 লে হালুয়া লে। 

ছুঁ মন্তর  ছুঁ
পেঁদানিটা আচ্ছা দিলেও   
করে না হায় উঁ! 

দিন গিয়েছে বদলে এখন 
তাই ভালো না আমার এ মন
শোন রে  "ঝুমু"  বু।  

জোছনা ধোয়া এই রাতে

হাতছানি দেয় ভোরের পাখি 
ফুলে ছড়ায় গন্ধ যে
মনটা জুড়ে ভাবের উদয় 
আসলো ধেঁয়ে ছন্দ যে।

পলাশ বনে দোয়েল ডাকে
দিন প্রতিদিন দিনান্তে
ইচ্ছে করে ঘুরে বেড়াই
হিজল তলির সীমান্তে। 

প্রজাপতি মেলছে পাখা
ভ্রমর কেবল গুঞ্জরায়
গাঁয়ের নিটোল ছবি দেখে 
হৃদয় এবং প্রাণ জুড়ায়।

কি আর করি খুলে খাতা 
কলম নিয়ে এই হাতে
লিখতে থাকি কাব্য খানি 
জোছনা ধোয়া এই রাতে। 

বাদলা দিনে

বাদলা দিনে মন থাকে না ঘরে
ঘরের ভেতর মনটা কেমন করে
উদাস উদাস লাগে আমার সবই
এমন সময় মন হয়ে যায় কবি। 

বাদলা  দিনে টুপটুপাটুপ ধারা
ভিজে ভিজে গাছগাছালি সারা
পাখপাখালি গায় না কোন গান
কাদাজলে অতিষ্ট হয় প্রাণ! 

বাদলা  দিনে ব্যাঙেরা গায় গান
প্রাণটা সবার করে যে আনচান
জানলা পাশে মাদুর পেতে শোয়া
হিমেল  বাতাস সহসা দেয় ছোঁয়া। 

বাদলা দিনে জমে মজার গল্প
কেউ বা বলে  স্বপ্ন নামক কল্প 
ছাতা নিয়ে পথিক চলেন হাটে
সূর্য উধাও গেলো বুঝি পাটে। 

বাদলা দিনে ইলশেগুঁড়ির খেলা
খোকন সোনা ভাসায় গাঙে ভেলা
পাশের গাঁকে দূরের মনে হয়
চলতে পথে সাপ বিচ্ছুদের ভয়! 

বাদলা দিনে উদাস লাগে সব
ডোবায় শুনি পাখির কলরব
ছাগল গরু ক্ষণে ক্ষণে ডাকে
হৃদয় হারায় দূর অজানার বাঁকে। 

দেখতে চমৎকার 

তিনটে  ছানার জন্ম হলো ঘরে
তাই দেখে গো এ মন গেলো ভরে! 

আনন্দেতে মিষ্টি কিনে আনি
মা বেড়ালকেও নিলাম কাছে টানি। 

খেতে দিলাম মাংস পোলাউ ভাত
তার শরীরে বুলালাম এই হাত। 

আদর পেয়ে লেজটি কেবল নাড়ে
ভীষণ ভালোবাসি আমি তারে। 

চিঁউচিঁউচিঁউ ডাকে কেবল ছানা
হৃদয় মাঝে বাজে খুশির গানা। 

ক' দিন পরে খেলবে মায়ের সাথে 
সন্ধ্যা সকাল  কিংবা দুপুর, রাতে। 

বিড়াল ছানা দেখতে চমৎকার 
আমার কথায় বলো অমৎকার?

বলছি মিছে ? চলেই এসো বাড়ি
দেখলে তাদের হৃদ নিবে ঠিক কাড়ি! 

অতীত নির্বাচনে

অতীত  দিনে "চাটা" খেতাম নির্বাচনে
এখন ও সব চলে গেছে নির্বাসনে! 

টানতো নেতায় বুকের ভেতর খুব যতনে
মৃদু হাসি থাকতো তাহার রূপবদনে। 

পোলাপানে চিল্লাচিল্লি করতো শুধু
মার্কা নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরতো "দুদু"। 

গল্প হতো দোকানপাটে অফিসপাড়ায়
কেউ বা আবার ডেকে নিতো চোখ ইশারায়। 

বাপদাদারা থাকতো না তো ঘরে বসে
সমস্ত পথ যেতো তারা কেবল চষে। 

মাইক আওয়াজে কানটি হতো ঝালাপালা 
ভোটটা চাইতে আসতো বাড়ি আসমা খালা। 

রাতবিরাতে নেতা মোদের রাখতো খেয়াল
পোস্টারেতে ছেয়ে যেতো ঘরের দেয়াল। 

পেতাম মুড়ি আর বাতাসা দু'হাত ভরে
কি যে দোলা লাগতো আহা মনঅন্তরে! 

ভোটের রাতে টিভি দেখা হতোই হতো
কে ভোটেতে জিতলো সবে খবর পেতো। 

সাঙ্গ হলে ভোটের হাওয়া ঘুম পড়িতাম
এক পৃথিবী  স্বপ্ন নিয়ে প্রাণ ভরিতাম! 

Post a Comment

Thanks

নবীনতর পূর্বতন