চাণক্য বাড়ৈ
স্কুলদিন
বালিকা, তোমার স্কুলদিন হালোটের পথ ধরে চলে যায়। কাগজসাদা স্কার্ফ ওড়ে ঘুড়িছেঁড়া উদ্দাম হাওয়ায়। বাতাসের কবলে আজ তুমি; বাতাসের কবলে আজ অপরিণত স্তনের লাজুক সম্ভ্রম।
সহপাঠীর অজস্র দৃষ্টিব্যূহ ভেঙে সবুজ খেতের আলে তুমি এক টিয়েরঙ পরি অথবা সফেদ পারাবত হয়ে ওড়ো; তোমার ওড়ার পদ্ধতি অভ্যাস করে অসংখ্য তিলরঙ ডানার চিল।
তোমার স্কুলদিন টেন্স, অ্যালজেব্রা-আতঙ্কিত; গরিব পিতার ঘরে প্রেমচিঠি লুকানোর গুপ্ত সিন্দুক খুঁজে হয়রান-
কাঙ্ক্ষিত বাসনায় কল্পিত; তরুণ শিক্ষকের সুন্দরী গৃহিণী, বয়স্কা শিক্ষিকার লাজুক পুত্রবধূ, স্কুলের প্রধান ফটক থেকে বাড়ি অব্দি জীবনের ভোমরা হাতে দাঁড়ানো অসংখ্য যুবকের শিশ্নতোষ অলীক ফ্যান্টাসি— কামনার জল।
তোমার স্কুলদিন স্বপ্নপুষ্পকরথে চড়ে আসা প্রার্থিত পুরুষে কল্পবিভোর— অগণন অনাম্নী নক্ষত্র-আগুনে মিট মিট জ্বলে...
বালিকামৌসুম
নিভৃত পদ্মপুকুর আর জলঢোঁড়া সাপের বন্ধুতা— এই ছাড়া কী থাকে সবুজ বালিকার— আমি তবু লালঠোঁট টিয়ের মতো বুকের গভীরে পুষে রাখি ভিনগ্রহপ্রেম। কেননা ঠিকানা হারিয়ে ফেলা আগুনের সরোবর খুঁজতে আসা যে যুবক বলেছিল, বেঁচে আছি এক খণ্ড পোড়া কাঠের যন্ত্রণা নিয়ে— সে থাকে নেপচুন অথবা ইউরেনাসে— আর খসে পড়া আলোর চিঠিগুলো হাওয়ার পিয়নের কাছে পৌঁছে দেয় সিনীবালী রাতে—
সেই যুবকের দিকে একবার চেয়ে ফিরিয়ে নিয়েছি চোখ— আজ তাই ইজেলের সামনে দাঁড়িয়ে, ক্যানভাসে আঁচড় কেটে দেখি, ভুলে গেছি তার মুখ আঁকা— অথচ সেই দিন একটি বন্ধ্যা যুগ মরে গিয়েছিল—আর তার মৃতদেহ থেকে বেরিয়ে আসা লালের সংকেতে জেনেছিলাম— আমি— ভিনগ্রহচারী— রক্তজবা ফোটা আমারও রয়েছে এক আশ্চর্য মৌসুম—
তাই রোজ, নিজেকে বিম্বিত করি পদ্মপুকুরের জলে— নিজেরই নিটোল ত্বক বাহু নিতম্ব নাভি স্তনের দিকে চেয়ে মুঠো মুঠো বিস্ময় কুড়াই— মাংসের সৌষ্ঠব ছাড়া ধাতুর চিহ্নমাত্র নেই— তবু আমাকেই টানে কেন অলীক চুম্বক?
আমার কিউরিওসিটি, কল্পযানে চড়ে পৃথিবীর প্রেম নিয়ে প্লুটোর প্রেমিকের কাছে যাই— আর দেখি— আমি— অসহায় দেবযানী— প্রিয় কচের কাছে হারিয়ে যাওয়া আগুনের হ্রদ ফিরিয়ে দিতে গিয়ে নিজেই কখন এক খণ্ড চুম্বক হয়ে গেছি!
অলৌকিক অশ্বারোহী
সবাই নক্ষত্রের মালিকানার কথা ভাবে, আমি তার আভাটুকু চাই— কেউ কেউ বলে, এ অসুখ কবিতাবাহিত— মেনে নিয়ে চলে যাই, যেদিকে মুখ করে ফুটে আছে রক্তজবাগুলো— পথের সন্ধান দেয় শীতনিদ্রা থেকে উঠে আসা পিঁপড়ের সারি— তাদের নির্দেশনা শিরোধার্য মানি—
যদিও নাবিক নই, ধ্রুবতারার আলোক দেখে চলি— কম্পাসে বিশ্বাস নেই— সে শুধু মেরুপ্রীতি জানে—
আমি যে ঘোড়ার সহিস, তাকে দিই স্বপ্নমোড়া ঘাস— তামাম গ্যালাক্সিতে তার অগম্য কোথাও নেই— ফলত, মুহূর্তে চলে যেতে পারি নেপচুন ফকল্যান্ড জাঞ্জিবার; ভানুয়াতু অথবা শাকিরার গোপন বেডরুমে— আমি তাকে কল্পনা-অশ্ব বলি—
পালাবার সময় হলো আজ— আলো ফেলো ধ্রুববতারা, পুনরায় উল্কাপতনের আগে পবিত্র পাহাড়ের দিকে যাই—
কবি আমিনুল ইসলাম মুল্যায়ন প্রবন্ধ পড়ুন এখানে
ড. আলী রেজার প্রবন্ধ পড়ুন এখানে ক্লিক করে
ইমদাদুল হক মিলনের নুরজাহান উপন্যাস নিয়ে প্রবন্ধঃ পড়ুন
এই রাত
রাত নেমে এল উঁচু উঁচু গাছেদের গ্রামে― অনেক ওপর থেকে যেভাবে রিলিফ ফেলে ত্রাণের কপ্টার, এই রাত, সেইভাবে চোখে চোখে ছড়িয়ে দেবে ঘুম― আমি শুধু একা, অন্ধকার ভালোবাসি বলে, ঘুমোতে যাইনি আজ― বিস্ময়ে দেখে নিতে চাই, কী সাংঘাতিক যৌন-আবেদনময়ী এই রাত, রাতের শরীর―
ওই তো, ছন্দিত সঙ্গীতের সুর রটে গেছে ঝিঁঝিঁদের পাড়ায়― দুটো গেঁয়ো তালগাছ জেগে আছে― হাওয়ার উসকানি পেয়ে আরও বেশি জেগে ওঠে তারা― মনে হয়, সারা রাত কথা কবে, শুকনো পাতার খরখরে গলায়― কয়েকটি লাজুক তারা ফুটে আছে আকাশে, চ্যাটবক্সে জ্বলে থাকা গোল গোল সবুজ আলো যেন সব―
বহুদিন যাইনি আমি ওই চেনা নদীটির কাছে― আজ, এই বিমুগ্ধ অন্ধকারে তার শরীরের দিকে চেয়ে থেকে ভাবি, কে― রাতের অপেক্ষায় থাকি আমি, নাকি আমার অপেক্ষায় থাকে রাত?
| |||||||||||||||
| |||||||||||||||
সব কবিতা দারুণ।
উত্তরমুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thanks