প্রবন্ধ।। খেলারাম খেলে যা উপন্যাসের বিশ্লেষণ।। ইলিয়াস মাহমুদ ।। article by illius mahmud

প্রবন্ধঃ
ইলিয়াস মাহমুদ।। প্রবন্ধ।।



খেলারাম খেলে যা’ বাবর আলীর চরিত্রের অর্ন্তদ্বন্ধ  ও নিয়তির জটিল ঘটনা প্রবাহ

ইলিয়াস মাহমুদ

 খেলেরাম খেলে যা বাংলাদেশের সাহিত্যের উপন্যাস আর রচনাকাল ১৯৭০-১৯৭৩। উপন্যাস রচনার এই সময়টা বাংলাদেশের জন্মমুহূর্ত। তো ওই সময় পর্যন্ত বাংলাদেশের সাহিত্যে এমন যৌনতাভিত্তিক চরিত্র নিয়ে সাহিত্যে কাহিনি নির্মাণ হয় নি। সৈয়দ হক সে সময়ে এটা যৌনতা ও ইতিহাসের সংমিশ্রনে উপস্থাপন করলেন তার ব্যতিক্রমি  আলোচিত উপন্যাস  খেলেরাম খেলে যা ।

হক নিজেই বইয়ের মুখবন্ধে আমাদের জানিয়েছেন যে, মনসুরদা’র কাছে শোনা এক পলাতক দাদা আর ছোটো বোনের গল্পটিকে নিজের করোটির মধ্যে নিয়ে বহুদিন ঘুরেছেন তিনি। হক-ও যেনো পলাতক দাদা হিসেবে বারবারই শুনেছেন দাদা দাদা ডাক। সেই ডাককে অনেক দিন নিজের মধ্যে নিয়ে ঘোরার পর তিনি রচনা করলেন খেলারাম খেলে যা ।

সৈয়দ শামসুল হক তাঁর ‘শ্রেষ্ঠ উপন্যাস’ গ্রন্থের ভূমিকায় ‘খেলারাম খেলে যা’-কে ‘এদেশের সবচেয়ে ভুল বোঝা উপন্যাস’ হিসেবে অভিহিত করে লিখেছিলেন এই উপন্যাসের জন্য  সৈয়দ হক যতটা আলোচিত হয়েছেন তারচেয়ে বেশি হয়েছেন সমালোচিত। উপন্যাসটির পরিমার্জিত ইত্যাদি সংস্করণের ভূমিকায় এ প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, ‘এই সেদিন নিউইয়র্কে গিয়েছিলাম সেখানে মুক্তধারার বইমেলায়। মাঝবয়সী বহু মহিলা এসে আমার সঙ্গে আলাপিত হলেন আর ঈষৎ সলজ্জ হয়ে জানালেন তাঁদের কিশোরী বয়সে চুরি করে খেলারাম পড়বার ইতিহাস। এবং তাঁরা প্রায় সবাই বললেন, কই! এখন তো আর তেমন অশ্লীল বলে মনে হয় না খেলারাম-কে! আবার এ রকমও হয়েছে- এখনো এই যে, মাত্রই কয়েক বছর আগে ঢাকায় ফরাসি দূতাবাসের এক পার্টিতে গেছি- খোলা বাগানে সমাবেশ, কথা বলবার মতো কাউকে না পেয়ে আমি বাগানের এক প্রান্তে একা দাঁড়িয়ে পানীয়ে চুমুক দিয়ে চলেছি, হঠাৎ এক নারীকণ্ঠ! বলছে, এই সরে আয়! ওই লোকটা অসভ্য বই লেখে! আলগোছে তখন পেছন ফিরে দেখি- শুভ্রকেশী সত্তরোর্ধ্ব এক মহিলা তাঁরই বয়সী আরেক মহিলাকে আমার থেকে নিরাপদ দূরে সরিয়ে নিচ্ছেন ওই কথাটি বলে।’

এয়াপোর্টের বাথরুমে দেখে কে লিখে রেখেছে লাল পেন্সিল দিয়ে বড় বড় হরফে – খেলারাম খেলে যা।… বাক্যটি আজ পর্যন্ত ভুলতে পারেনি বাবর। যে লিখেছে জগৎ সে চেনে। যে লিখেছে সে নিজে প্রতারিত। পৃথিবী সম্পর্কে তার একটি মাত্র মন্তব্য বাথরুমের দেয়ালে সে উৎকীর্ণ করে রেখেছে – খেলারাম খেলে যা  আখ্যানের প্রধান চরিত্র বাবর আলী খান দিয়েই শুরু করা যাক। বাবর আলী খান-কে ঘিরেই আখ্যানের নির্মিতি। তার চরিত্রের বিষয় আশয়ে দুইটি ব্যাপার লক্ষ করা যায়। একটি হলো উপরিতল আরেকটি হলো গভীরতল। উপরিতলে পাওয়া যাবে তার যৌনতার খবর কিংবা আরও খোলাসা করে বললে খেলারাম কীর্তি। আর গভীরতলে পাওয়া যায় চেতনা প্রবাহের  খবর। উপরিতলে এটা যৌনতা নির্ভর উপন্যাস হিসেবে উপস্থাপিত হয় যখন আখ্যানের প্রধান চরিত্র বাবর আলী খান কেবলই যৌনতা দ্বারা তাড়িত হয়।
বাবর আলী। সুন্দর নিপাট গোছানো মানুষ। কথার মায়াজাল বুনায় তার জুড়ি মেলা ভার। জীবন নিয়েও আপাত অর্থে তার কোনো টানাপোড়েন নেই। ব্যাবসার টাকায় বেশ আয়েশে, নিশ্চিন্তিতে দিন কাটে তার। নিজের বাড়ি, গাড়ি, টেলিভিশনে অনুষ্ঠান করার সুবাদে সমাজের কাছে পরিচিতি— সবই আছে তার। ফলে, বলা যায় নির্ভার আনন্দময় জীবন ।বাবরের  শিক্ষিত, সুন্দর অবিবাহিত, সুকথক, সমাজের অন্য দশজনের থেকে বিত্তবান, মাঝবয়সী এই বাবরের যেন কোনো দুঃখ নেই। পিছু টান নেই। মনে হয়, যেন নিজের শরীরের সুখের জন্যই, যৌন চাহিদা চরিতার্থ করবার জন্যেই সে কেবল উদগ্রীব।
নিজের বন্ধুর মেয়ে লতিফা, যার সাথে তার শরীরের সম্পর্ক, সেই লতিফাকে ঢাকায় নোটিশবিহীন অনুপস্থিত দেখে তার খোঁজ নিতে সে ময়মনসিংহে গিয়ে হাজির হয়। সেখানে গিয়ে লতিফার বাবার সামনে বাবরের ভাবটি এমন যে, লতিফা যেন তার মেয়েরই মতন। আবার রাতের বেলায় সেই বাড়িতেই লতিফার মধ্যে প্রবেশ করার জন্য ব্যাকুল হয় বাবর। লতিফাতে সে প্রবেশ করতে পারে না। অপমানিত হয় ফিরে আসে ।শুধু এই ফিরে আসা পর্যন্ত পড়েই অবশ্য পাঠকের ধারণা হবার কথা নয় যে বাবর “লম্পট” কিসিমের একজন মানুষ। বাবরের লাম্পট্য দর্শকের কাছে উন্মোচিত হয় বাবলীকে দিয়ে। বাবরের হাঁটুর বয়সী মেয়ে বাবলী। এই বাবলীকে পাবার জন্যই বাবর উতলা হয় কেবল বাবলীর নামের ধ্বনিতেই “ বাবর টের পায় আবার তার দুপায়ের মাঝখানে উত্তাপ বাড়ছে। বড় হচ্ছে। তার দেহকে ছাপিয়ে উঠছে আয়তনে। বাবর উপুড় হয়ে শুল। শাসন মানল না। তবু বড় হতে লাগল। উত্তাপে উত্তেজনায় যেন সেখানে ছোট ছোট ড্রাম বাজানোর কাঠিতে বাড়ি পড়তে লাগল। সৃষ্টি হতে লাগল একটা দ্রুত লয় ছন্দের। লয়টা দ্রুত থেকে আরো দ্রুত হতে লাগল। চোখের ভেতরে বাবলিকে সে দেখতে পেল স্পষ্ট। নির্বাক। নগ্ন। কাছে, আরো কাছে। সমস্ত অস্তিত্ব দিয়ে তাকে অনুভব করতে লাগল বাবর। আরো কাছে।বাবলি এখন তার দেহের সঙ্গে এক। আর যুগলে যেন বাজছে সেই ছোট ছোট ড্রাম। দোকানে দেখা খেলনা ড্রাম। নীল রং চারদিকে। মাঝখানে একটা উজ্জ্বল লাল রেখা। বৃত্তাকারে ঘুরছে নীল, লাল, নীল। আবার নীল, আবার লাল, আবার নীল। ঘুরতে ঘুরতে রং দুটো একাকার হয়ে গেল। বাজনার দ্রুত লয় যেন বাবরের অস্তিত্বকে অতিক্রম করে এখন হঠাৎ শেকলকাটা পাখিব মত উড়ে গেল উর্ধে আকাশে, শূন্যে। উজ্জ্বল রোদে পুড়ে যেতে লাগল বাবরের চোখ। সে দুহাতে সজোরে চেপে ধরল। তার উত্তপ্ত অধীর দ্রুত স্পন্দিত শিশ্ন। এবং তৎক্ষণাৎ এক বহু আকাঙ্গিক্ষত, মন্ত্ৰোচ্চারিত, খরচৈত্রের বৃষ্টির আবেগে আকাশ বিদীর্ণ হয়ে নেবে এলো অন্ধ, অজস্র শাস্ত্রে বর্ণিত চল্লিশ দিন-রাত্রির প্রান্তর পাহাড় ডোবান মুখর জলধারা। বাবর ভেসে যেতে লাগল স্থলিত একটা  সবুজপাতার মত। 

ঢাকায় জাহেদাকে উত্তরবঙ্গে নিয়ে যাবার জন্য তার প্রায় অসম্ভব চেষ্টা দেখে অবাক হতে হয়। সঙ্গমের জন্য তার এত তৃষ্ণা? জাহেদা যেহেতু কলেজ ছাত্রী এবং হোস্টেলে থাকে, ওখানকার কড়া নিয়মবদ্ধতা থেকে ছাড়িয়ে নেবার জন্য বাবর চট্টগ্রাম উড়ে গিয়ে একটি বানোয়াট টেলিগ্রাম পাঠায়। বিস্মিত হতে হয় – শুধু সঙ্গমের জন্য এতকিছু? সে তো বাবর সহজেই করতে পারে। টেলিভিশনে অনুষ্ঠান করার সুবাদে সে সর্বত্রই পরিচিত মুখ, তারকাই বলা যায়। আকর্ষণীয় বাচনভঙ্গী, মনোহর কথামালা, দুর্দান্ত স্মার্টনেস তাকে স্বভাবই কাম্য পুরুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে। চাইলেই সে বহু নারীকে শয্যায় নিতে পারে, মিসেস নফিস যাদের একজন। কিন্তু তার চাই কেবল সদ্য কৈশোরোত্তীর্ণ তরুণী, অন্য কোনো কিছুতে তার রুচি নেই। তাকে যেন ঠিক চেনা যায় না, জগৎ যে চেনে, যার নিজস্ব কিছু দার্শনিক চিন্তা মাঝে-মাঝে চমকে দিয়ে যাচ্ছে পাঠককে, তার এসব কীর্তিকলাপের বাবর জাহেদাকে নিয়ে বেরিয়েছে উত্তরবঙ্গের উদ্দেশ্যে, যেতে যেতে বলছে নানারকম কথা, আর সেইসব কথার ভেতরে রয়েছে এমনই এক রাগি মানুষের ছবি যে সমস্ত প্রচলিত নৈতিকতা, মূল্যবোধ আর সংস্কারকে ভেঙে ফেলতে চায়। একসময় উত্তরবঙ্গে পৌঁছে যায় তারা, প্রথম রাতে সঙ্গম করতে গিয়ে অপ্রত্যাশিত বাধা পায় বাবর, দ্বিতীয় রাতে অবশ্য সেই বাধা আর থাকে না এবং অবশেষে জাহেদা-সুধা পান করে ফেরার পথ ধরে সে।  যে বাবর জগৎ চেনে, ‘খেলারাম খেলে যা’ দর্শনটি আর কৈশোরের দুঃসহ স্মৃতি যার নিত্যসঙ্গী, সেই বাবর জীবন ও পৃথিবীকে, আমাদের দৈনন্দিন সংস্কার, বিশ্বাস আর রীতিনীতিকে কী চোখে দেখে সে বিষয়ে কয়েকটি উদ্ধতি ‘আমি তোমাকে বিশ্বাস করি’ – জাহেদাকে এই বাক্য বলার পর –

‘বিশ্বাস না কচু। চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করল বাবরের। দু’পয়সার দাম দিই না। আমি যা চাই তা এমনি তোমার পাজামা ছিঁড়ে ভেতরে যেতে। কি ক্লান্তিকর এই অভিনয়, এই সহাস্য মুখ তৈরি করা; এই কথার মালা গাঁথা।’

‘বিয়ে করবেন না নাকি?’ জাহেদার এ প্রশ্নের উত্তরে –

‘বাবর ভাবল যা সত্যি তা বললে ও বুঝতে পারবে না। বিয়ে সে করবে কেন? শরীরের জন্যে? সে প্রয়োজন বিয়ে না করেও মেটান যায়। বরং তাতে তৃপ্তি আরো অনেক। … বিয়ে করবে সন্তানের  জন্যে? সন্তান সে চায় না। চায় না তার উত্তরাধিকার কারো উপরে গিয়ে বর্তাক। আমার জীবনের প্রসারণ আমি চাই না। মৃত্যুর পরেও আমি বেঁচে থাকতে চাই না। আমার এমন কিছু সম্পদ নেই, অর্জন নেই, উপলব্ধি নেই যা যক্ষের মতো আগলে রাখার স্পৃহা বোধ করি ভবিষ্যত বংশধরের জন্যে। এ জীবন আমি চাইনি, অতএব কারো জীবনের কারণও আমি হতে চাই না। বিয়ে করব ভালবেসে? ভালবাসা বলে কিছু নেই। ওটা একটি পন্থা। পন্থা কখনো লক্ষ্য হতে পারে না। নিবৃত্তি নেই তাতে। ভালবাসা একটা অভিনয়ের নাম।

বিশেষ সময়ে শরীরের বিশেষ অংশ “দপদপ” করে ওঠার বর্ণনা, বাবরের “তারাবাতি” জাহেদার হাতে ধরিয়ে দেবার বর্ণনা, “তারপর হঠাৎ সচল হয়ে দুই ঠোঁটে ব্যগ্রতার সঙ্গে সবুজ একটা অশ্বথ পাতার মতো স্তন মুখে তুলে” নেয়ার বর্ণনা, শিশ্নের মাথায় লাল লিপস্টিক মেখে দেয়ার বর্ননা পড়ে?

অবশেষে আমরা দেখি বাবর জাহেদাকে নিয়ে ঢাকায় ফিরে আসছে। তার কাজ শেষ, জাহেদাকে সে এবার ব্যবহৃত টয়লেট পেপারের মতো ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে অন্যত্র মনোনিবেশ করতে চায়। কিন্তু জাহেদা নাছোড়বান্দা, হোস্টেলে সে ফিরবে না, বাবরের সঙ্গে তার বাড়িতে যাবে। তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে, পথিমধ্যে বাবর গাড়ি থামিয়ে দিলে দুর্ঘটনাটি ঘটে। কয়েকজন লোক এসে তাদের ঘিরে ফেলে সন্ধ্যার ঘনায়মান অন্ধকারে; বর্ধমানের সেই সন্ধ্যাটি যেন ফিরে এসেছে আবার – যে সন্ধ্যায় বাবর হাসনুকে হারিয়েছিল ।

লতিফা বা বাবলী বা জাহেদাই শেষ নয়।  টুনি, রিক্তা, জলি, পপি, সুষমা, মমতাজ, আয়েশা, ডেইজি— সব মেয়েকেই তার এক মনে হয়। মনে হয়, প্রেম-টেম কিছু নয়। পাজামা খোলাটাই মূল কথা। কত সহজে কত বিশ্বাসযোগ্যভাবে পাজামাটা খোলা গেলো সেটিই বাবরের লক্ষ্য। সেজন্যই বাবরের এতো শ্রম-সাধনা।

অবশ্য একটি জায়গায় মেয়েতে-মেয়েতে পার্থক্য খুঁজে পায় সে। পার্থ্যক্যটি হলো শরীরের গন্ধের বিচিত্রতা। বাবরের মতে “কারো গায়ে লেবুর গন্ধ। কারো গায়ে দৈয়ের। খবরের কাগজের। বন্ধ সবুজ পানির। মিষ্টি কফ সিরাপের। পনিরের। কী করে যে ঐ বিচিত্র বিভিন্ন বস্তুর গন্ধ ওরা সংগ্রহ করেছে কে জানে। রিক্তার পিঠে মুখ রাখলেই তার মনে হতো সদ্য খোলা খবরের কাগজে সকালবেলা নাক ডুবিয়ে আছে সে।”

লতিফ জোয়ার্দারের কবিতা পড়ুন এখানে
nobel prizev:2025 on litterature here
ইসলাম তৌহীদের কবিতা পড়ুন এখানে
মহসিন খোন্দকারের কবিতা পড়ুন এখানে
গল্প বরফের ছুরি পড়ুন এখানে
প্রবন্ধ,উত্তরাধুনিক কাব্যধারার যাত্রাঃ মতিন বৈরাগী-এখানে
প্রবন্ধঃ রাজনীতি ও সাহিত্য পারস্পরিক সম্পর্ক পড়ুন এখানে


অল্পবয়সী মেয়েদেরকে কথার মায়াজালে মুগ্ধ করে, কৌশলে উরু ছুঁয়ে দিয়ে, চকিতে ছুঁয়ে দিয়ে কাঁধ, কারো সাথে কথার পিঠে কথা বলার ছলে যৌনতার প্রসঙ্গ টেনে এনে বাবর তৈরি করে সহজ সম্পর্ক। শুরুতে সে সুঁতো ছাড়ে, সুঁতো ছাড়ে। তারপর মোক্ষম সময়ে লাটাইয়ে দেয় উল্টো টান। তখন আর মেয়েটির ফেরার পথ নেই। বাবরের উদ্দেশ্য হয় তখন জয়।

বাবর শরীর চায়। কিন্ত সম্পর্কের বন্ধন চায় না। “বিয়ে সে করবে কেন? শরীরের জন্য? সে প্রয়োজন বিয়ে না করেও মেটান যায়। বরং তাতে তৃপ্তি আরো অনেক। বিবাহিত বন্ধুদের কি সে শোনেনি স্বীকারোক্তি করতে? বৌয়ের সঙ্গে শুয়ে সুখ নেই। বন্ধুরা কি তাকে বলে নি, দে না একটা মেয়েটেয়ে যোগাড় করে?”

বিয়ের বন্ধন চায় না বাবর। নতুন আরেকটি জীবন তৈরি করে তার উত্তরাধিকারও রেখে যেতে চায় না। সে ভালোবাসে অবাধ যৌনাচার। কচিকচি মেয়েদের সাথে বিছানায় যাবার জন্যে সে ব্যাকুল হয়ে থাকে। কিন্তু ধর্ষণ সে করে না। বহু বুদ্ধি খরচ করে, সময় খরচ করে, অর্থ খরচ করে কচি মেয়েদের মন জয় করে সে। কেননা বাবর জানে, মন জয় হলে শরীরটা জয় করা সহজ হয়; হয় আনন্দময়।

মানে খেলারাম খেলে যা তো আসলে এক বাবরের আড়ালে দুই বাবরের গল্প। এক বাবর ইনোসেন্ট। ট্রামাক্রান্ত। কাতর। ব্যাথাতুর। স্মৃতির দুনিয়ার বাসিন্দা। নিজের জন্মভিটে, জন্মগ্রাম, চেনা বাতাস, চেনা ঘ্রানের জন্য যে কাঙাল। আরেক বাবর কামকাতর। সুচতুর। নারী তার কাছে প্রেমময়ী নয়, যৌনাচার আনন্দের উৎসমাত্র।

এমনি হীন, কামুক, লম্পট, দূরাচারী যে, তার কেন মাঝে মাঝে খুব একা একা লাগে? কেন তার কান্না কান্না পায়? কেন তার মনে হয় কী জানি কী নেই! কী যেনো কী এক অদ্ভত হাহাকার, শূন্যতা কেন তাকে আমূল গ্রাস করে নেয় বারবার ?

কামকাতর বাবরের নিজে যখন বলে “আজ বড্ড একা একা লাগছে তার। অনেকদিন এরকম মনে হয় নি। মনে হচ্ছে, তার ভীষণ একটা কিছু হতে যাচ্ছে; সেটা ভালো না মন্দ তা বোঝা যাচ্ছে না।”— হঠাৎ করে তার এই একা একা লাগার ব্যাপারটা পাঠক মাত্রই খটকা লাগার কথা। অপ্রত্যাশিত মনে হলেও  এটাই বাস্তব। থাকতেই পারে তার কোনো নিজস্ব নির্জনতা বা হয়তো সহসা এরকম একা একা লাগতেই পারে মানুষের।
তার মধ্যে দেশভাগ মানে ভারতভাগ আর ব্যক্তি বিচ্ছিন্নতা অন্যতম। একটির সঙ্গে আরেকটির সম্পর্ক রয়েছে এই আখ্যানে। বর্ধমানে জন্ম নেওয়া বাবর আলী খান দেশভাগের কারণে ঢাকার বাসিন্দা হন। বাবর আলী খান বর্ধমান ছেড়ে আসলেও বর্ধমান তাকে ছাড়ে না। দেশভাগের ফলে তার মনে যে-ক্ষত তৈরি হয় সেটার বিনির্মাণ চলে চেতনা প্রবাহের মধ্যে দিয়ে তার হারিয়ে যাওয়া ছোট-বোন হাসনুকে বহন করার চিহ্নে।

‘কোথায় গিয়েছিল দুজন, মনে নেই। মনে রাখার কোনো প্রয়োজনও নাই। যেন জন্মের পর থেকেই সে আর হাসনু অবিরাম দ্রুত পায়ে সেই অন্ধকার ভাঙতে ভাঙতে চলেছে। কে যেন পেছনে আসছে। কই না। আবার তাকিয়ে দেখল বাবর। কাউকে দেখল না, তবু মনে হলো কেউ তাদের অনুসরণ করছে। তার হাত ক্রমশ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে ধরবার জন্যে। চট করে হাসনুকে টেনে সে পোলের পাশে ঝোঁপের মধ্যে লুকাল। ...হাসনুর মুখ চেপে ধরে বাবর কান পেতে রাখল শব্দের ঐ উৎসের দিকে। তার মেরুদণ্ড দিয়ে হঠাৎ ঠান্ডা তরল কী যেন নামছে অতি দ্রুত। তারপর হঠাৎ উরুর ভেতরটা ভিজে গেল উষ্ণতায়। ঘড়ঘড় একটা শব্দ হলো সেই মুহূর্তে, ওপারে। ফিসফিস গলায় কে যেন জিজ্ঞেস করল, বল শালা, হিন্দু না মুসলমান? উত্তরে দ্বিতীয় লোকটা হিহি করে হেসে উঠল যেন। বল? চাপা গলায় গর্জে উঠল প্রথম। আঁ করে একটা শব্দ করল দ্বিতীয়। তারপর শোনা গেল, হি হি না, হি হি না না। চুপ শালা। ... বাবর হাসনুকে টেনে তুলে দৌড় দিতে যাবে, একবারে সামনে পড়ে গেল লোকটার। হাতে রক্তমাখা ছুরি। গলায় একটি মাদুলি চকচক করছে। আর কিছু চোখে পড়ল না তার। আর কিছু মনে নেই বাবরের। কেবল মনে আছে বাবর মাঠের ভেতর দিয়ে প্রাণপণে দৌড়ুচ্ছে। আর পেছনে হাসনুর আর্তচিৎকার আকাশে বাতাসে হা হা করছে—দা-দা।………..

সৈয়দ হক লিখেন : “এখন আরো একা লাগলো বাবরের। রক্তের সঙ্গে যাদের সম্পর্ক তাদের কথা মনে পড়তেই এই বোধটা বিরাট হয়ে উঠেছে যে এখন তার চারপাশে এ দেশে কেউ নেই। আপন কাকে বলে সে ভুলে গেছে বলেই যারা আপন তারা তাকে এমন একা করে যাচ্ছে।”যখন দেখলাম, একটা অভিমানী শিশুর মত বাবর নিজেকে বলছে “আমার কেউ নেই। কেউ নেই। কোনো কিছু আমার নয়। না মাটি, না মন, না মানুষ।” বাবর যখন বর্ধমানে ফেলে আসা লেবু গাছটার কথা ভাবে, কানা ফকিরটা বেঁচে আছে না মরে গেছে বলে হাসনু নামের কারো কাছে জানতে চায় তখন বাবরের ব্যাথা স্পষ্ঠ  হয়ে উঠে । । একাকীত্ব, বিচ্ছিন্নতাও হাহাকারের ভেতরে গোপনে কাতড়াতে থাকা বাবরকে লক্ষ করে আমরা জানতে পারি, এটি কামুক বাবরের গল্প নয়। এটি সব হারানো, অভিমানী, নিজের থেকে পলাতক কোনো এক বাবরের গল্প— যে বারবার একা হয়ে যায়, যে ভোগে বিচ্ছিন্নতায়, হাজারজনের মাঝে থেকেও যে বাস করে নিজের ভেতর। তারপর আমরা জেনেছি হাসনুর কথা। জেনেছি, সেই মেলার বিকেলের গল্প। দাঙ্গার ভয়ে মেলা ভেঙে যাবার গল্প। মেলা থেকে সন্ত্রস্ত দুই ভাই-বোন বাবর ও হাসনুর ত্রস্ত বাড়ি ফিরে আসার গল্প। বাড়ি ফেরার পথে মাঝপথে হাসনুকে দাঙ্গাকারীদের তুলে নেবার গল্প। হাসনু যখন দাদা দাদা বলে তারস্বরে ডাকছে দাদাকে, জেনেছি, প্রাণভয়ে সেই দাদার পালিয়ে আসার গল্প। জেনেছি, দেশহারা, মাটি হারা, বাবরের আর্তনাদ। জেনেছি, ট্রামাক্রান্ত বাবরের উলটপালট হয়ে যাওয়া মনোজগত ।


খেলারাম খেলে যা একটি রাজনৈতিক উপন্যাস। রাজনৈতিক কারনে, সমাজ-বাস্তবতার ঘাতে মানুষের মনোজগতে যে ঘূর্ণিপাক তৈরি হয়; হয়েছে সাতচল্লিশে দেশ বিভাগের সময় দাঙ্গামুখর সেই রক্তস্নাত বিশ্বাসহীনতার দিনগুলোতে, সেই সব কথা তিনি কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য খরচ না করেই তুলে এনেছেন কামুক এক চরিত্রের ভেতর দিয়ে। সৈয়দ শামসুল হক অবশ্য খেলারাম খেলে যা-এর গায়ে কোনো বিশেষ বিষয়ের লেবেল এঁটে দেননি। তিনি বলেননি যে, বিরাট ট্রমা নিয়ে সাতচল্লিশে দেশান্তরিত হওয়া এক মানুষের মনোভূমি তিনি এঁকেছেন। বলেননি যে, তিনি মনস্ত্বাতিক বিশ্লেষন করেছেন দাঙ্গাহত, দেশহারানো এক ভিকটিমের। কোনো কিছু না বলেই হক আমাদের টেনে নিয়েছেন ইতিহাসের মধ্যে। সব থাকার পরেও সব হারানো এক মানুষের মনোজগতের শূন্যতা, অস্থিরতা, অসুস্থতা ও বিকৃত প্রকাশের মধ্যে।

খেলারাম খেলে যা  আখ্যানে কিছু কিছু ঘটনা লেখক পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তুলে ধরেছেন। আর এখানেই পাঠকের সঙ্গে যোগসূত্র তৈরি হয়েছে। আখ্যানের প্রধান চরিত্র বাবর আলী খান নারীদের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়ানোর জন্য যে-কৌশল বা ফাঁদ তৈরি করেন সেটার বর্ণনার চেয়ে নারীদের সঙ্গে তার যৌনতার সময়ের বর্ণনাকে বেশি  বলা হয়েছে। বিশেষ করে জাহেদার সঙ্গে কাটানো সময়ের ক্ষেত্রে এটা বেশি ঘটেছে। আর তখন পাঠকের মনে ওইসব বর্ণনা পড়ার সময়দৃশ্যটার একটা দৃশ্যপট তৈরি হয়েছে। আর তাতে আখ্যানের গভীরে না গিয়ে কাহিনির চেয়ে উপরি কাহিনিটাই পাঠককে আখ্যান নিয়ে ভাবাচ্ছে এবং আখ্যানের  বিষয়বস্তু  হিসেবে যৌনতাকেই বেছে নিচ্ছে। আর পাঠক মন যখন এই প্রেক্ষিতের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যায় তখন আখ্যানে বাবর আলী খানের যে-সংকট সেটা পাঠক মনকে নাড়া না দিয়ে কিংবা ভাবনার মধ্যে না এনে তার খেলারাম ভাবটাই ক্রিয়া করে। ফলে হাসনুকে নিয়ে যে চেতনা প্রবাহে আক্রান্ত হয় বাবর আলী খান এবং আখ্যানের শেষে জাহেদাকে বাঁচানোর জন্য যে চেষ্টা সেটা আখ্যানের কাহিনির মূলভাবকে খোলাসা করলেও পাঠক সেটাকে কতটুকু গ্রহণ করেছে সেটাই ভাবার বিষয়। যদিও বাবর আলী খানকে আখ্যানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হাসনুকে বাঁচানোর জন্যই লেখক তাড়িত করেছেন। ‘জাহেদা অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। তাকে মাটির ওপর টেনে হেঁচড়ে নিতে নিতে বাবর বলে, হাসনু আয়। হাসু আয়।’ এইখানে সকল অশ্লীলতা ঘুচে আখ্যান হয়ে ওঠে মানবিক। তখন থাকে না কোনো অশ্লীলতার লেশ ।

সৈয়দ শামসুল হককে  অদ্ভত মুন্সিয়ানায়, অসাধারণ আকর্ষনীয় ভাষায় ও বর্ণনায়, বিচ্ছিন্ন এক মানুষের মনোজগতে তিনি ঘুরিয়ে এনেছেন পাঠকদের। উপন্যাসের শেষটিও দূর্দান্ত। একেবারেই অপ্রত্যাশিত।‘জাহেদাকে ওরা নিয়ে যায় কোলের মধ্যে ছাগলের বাচ্চার মতো। সমস্ত ঘটনা ঘটে মাত্র আধ মিনিট কিংবা তার কম সময়ে। চোখের একটা পলকে মাত্র। এর জন্যে তৈরি ছিল না বাবর। কিন্তু আশ্চর্য, তার কোনো দুঃখ হচ্ছে না, রাগ হচ্ছে না, বরং মনে হচ্ছে, এই-ই দরকার ছিল। মনে হচ্ছে, জাহেদার হাত থেকে সে এবার অতি সহজে বাঁচতে পারবে। তার হাসি পেল ভেবে যে লোকটা অহেতুক তাকে এত শক্ত করে ধরে রেখেছে। তাকে ছেড়ে দিলেও সে চেচাঁবে না, পাল্টা আক্রমণ করবে না। যুবক দু-চারটে ঘা লাগাল বাবরকে।  প্রায় ঘৃণা উৎপাদন করার মতো মনোভঙ্গি তার। কিন্তু সেসব নিয়ে ভাবার সুযোগ পাঠকের হয় না। অচিরেই জাহেদার আর্তচিৎকার ‘বা-বা’ ভেসে এলে বাবর শুনতে পায় ‘দা-দা’ (এ যেন হাসনুর আর্তনাদ) এবং ‘কোথা থেকে দানবের মতো শক্তি এলো বাবরের।’ অবশেষে সে ছুরির আঘাত খেয়েও উদ্ধার করে জাহেদাকে। জাহেদাকে? নাকি হাসনুকে? আমরা অবাক হয়ে দেখি বাবরের যেন স্মৃতিভ্রম ঘটেছে। জাহেদাকে সে ক্রমাগত সম্বোধন করছে হাসনু বা হাসু বলে – ‘সরে যা, হাসু, পালিয়ে যায়, পালা, পালা! হাসু, তোকে আমি বাঁচাবো। ভয় নেই হাসু।’ -‘চল হাসু, চল, চল চলে আয়।’ – ‘হাসনু  আয়। হাসু আয়।’ – ‘ভয় নেই হাসু, আমি এসে গেছি হাসু, আমি এসে গেছি।’ – ‘বাবর স্বপ্নাবিষ্টের মতো বলে, হাসু তোকে আমি ফিরিয়ে এনেছি। আর ভয় নেই। বাড়ি এসে গেছি।

শেষ দৃশ্যে জাহেদাকে যখন ধর্ষণ করতে জঙ্গলের ভেতর টেনে নিয়ে গেছে গ্রামবাসী কয়েকজন, জাহেদা যখন প্রাণপনে আর্তনাদ করছে, বাবর সেই আর্তনাদে সাড়া দেয়নি। তার এই সাড়া না দেয়ায় পাঠকের রাগ আরো বেড়েছে বাবরের প্রতি। কিন্তু বাবরের অচেতনের ভেতর ছিল আরেক বাবর। যে ছিল ব্যাথাতুর, তীব্র অপরাধবোধে ছিল লজ্জিত, ছিল বোনকে ছেড়ে পালিয়ে আসার মর্মযাতনায় মরা। তো, সেই বাবর— যে কি-না থাকে সচেতন, সুচতুর, সুদর্শন বাবরের গহীনে গোপন, সন্তর্পনে সকল হতে লুক্কায়িত সবসময়— সেই বাবর হঠাৎই বেরিয়ে আসে জাহেদার ডাক শোনে।

মূলত জাহেদার ডাক নয়, হাসনুর ডাক শোনে এক ছোট্ট কিশোর। শোনে ডাক আসছে— দাদা দাদা। বাবর ছুটে যায় সেই ডাকের দিকে। যায় তাকে উদ্ধার করতে।-এর কোপ খেয়ে আহত হয়ে, অতীত ও বর্তমানের দোলাচলে সবকিছু গুলিয়ে ফেলে গাড়ী চালাতে গিয়ে টাল সামলানো মুস্কিলই বটে। অতএব, সে সময় যে অ্যাক্সিডেন্টটা হয়, গাড়ীটা যে নদীর মধ্যে নেমে যায় সেটিও অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু চকিতে আমার জানতে ইচ্ছে হলো, হাসনুর এই উদ্ধার কি বাবরেরও উদ্ধার ? যে বাবর জাহেদাকে উদ্ধার করে এই বাবর সেই বাবর নয়। এই বাবর বর্তমানে নেই। তার শরীরটা বর্তমানে। আর ভেতরটা অতীতে। অতীত থেকেই সে জাহেদার শরীর দিয়ে উদ্ধার করেছে হাসনুকে।

এখন  কথা হল কার ওপর প্রতিশোধ নিতে চায় বাবর? উপন্যাসটি আপাতদৃষ্টিতে রাজনৈতিক নয়; হলে, আমরা বলতে পারতাম – সে প্রতিশোধ নিতে চায় তাদের ওপর যারা তাকে শেকড়-ছাড়া হতে বাধ্য করেছে, যারা সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়িয়ে একটি দেশকে ভেঙে দু-টুকরো করেছে, আর সে তার বোনকে হারিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ঘটনা সেটিই। বাবরের প্রতিশোধস্পৃহা আসলে তাদের প্রতিই। আর এখানে এসেই যেন আপাত-অরাজনৈতিক উপন্যাসটিও হয়ে ওঠে ভীষণভাবে রাজনৈতিক। কিন্তু ইঙ্গিতটা এতটাই প্রচ্ছন্নভাবে দেয়া হয়েছে যে, বোঝাই কঠিন – এই জটিল ঘটনাপ্রবাহ সম্বন্ধে লেখকের রাজনৈতিক ভাষ্যটা কি!। এ-ও সত্য যে, একজন লম্পট, কামুক, বিকৃত মানুষের যৌনতাড়িত আচরণের বিপুল বর্ণনায় যে উপন্যাস এগিয়ে চলছিল, কখনো মনে হয়নি – একে রাজনৈতিকভাবে দেখবার প্রয়োজন হতে পারে। কোনোকিছুই তো আসলে রাজনীতির বাইরে নয়। একান্ত ব্যক্তিগত যে জীবন, প্রতিমুহূর্তে সেখানেও ঢুকে পড়ছে রাষ্ট্র ও রাজনীতি। ভয়াল এই রাজনীতি, যা দেশকে ভেঙে ফেলে; একটি জাতিকে বিভক্ত করে ফেলে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতায়।

আর এসব কিছু নিয়ে বাবর হয়ে ওঠে বাংলা সাহিত্যের এক আশ্চর্য জীবন্ত চরিত্র; সবচেয়ে আধুনিক ও প্রগতিশীল, দার্শনিক ও দ্বন্দ্ব-বিক্ষুব্ধ ট্র্যাজিক এক চরিত্র ।















Post a Comment

Thanks

নবীনতর পূর্বতন