লতিফ জোয়ার্দার এর বিশটি কবিতা
ড্রাগন ফুল
ড্রাগন ফুল দেখে দেখে-- একটা সকাল দুপুরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বারান্দায় বসে থাকার আকাক্সক্ষাগুলো সিঁড়ি বেয়ে উঠে যাচ্ছে- দূর আকাশের নীলসীমানায়। হয়তো মোবাইল ফোনের ওপাশে-আজ প্রিয় কবিতা পড়ছে কেউ। বিষণœ রাস্তার মন খারাপ হলে-- জানালায় উঁকি দিয়ে যায় সাদাকালো সময়গুলো। অথচ এককাপ চায়ের অপেক্ষায় বসে আছে-- মৌ নামের মেয়েটি । আর বাড়ির সামনের মাঠে-- একটা একটা করে ড্রাগন ফুল থেকে- লাল টকটকে ফল হয়ে যাবার রহস্য হতে না পারার ব্যর্থতা নিয়ে-- হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের গ্রামের ফলচাষীদের কেউ কেউ।
অপেক্ষা
যে আসতে চেয়েছিলো। যে একদিন সন্ধ্যার রূপালী আলোয় মুখোমুখি দাঁড়িয়ে হাত ধরতে চেয়েছিলো। মামুলি অযুহাত দিয়ে সে আর কোনদিন আসেনি। অতঃপর অনেক রাত। অনেক রাতের আঁধার পারি দিয়ে একটা সকাল চেয়েছিলাম। জীবন কী এমনি হয়। বিষাদমাখা রঙতুলির আঁচড়ে আঁকা ছবি। ক্লান্তিমাখা মুখ। অথচ এক আধুলি দিয়ে কেনা আমাদের সময়গুলো একদিন কীভাবে যেন বদলে গেল। আর দেখা হলো না আমাদের। সেই যে হাত ধরাধরির অভিলাষ আজও চোখ বন্ধ করলেই টের পাই আমি। শুকনো মরা নদীর মতো বেঁচে আছি আজো। কত পথের বাঁক হারিয়ে গেল। কত বসন্ত ফুরিয়ে গেল। অথচ আমাদের আর দেখা হলো না।
কৃতদাস
যা কিছু দেবার ছিলো। দিতে না পারার ব্যর্থতা নিয়ে বেঁচে আছি। জীবনের সহজতম পঙক্তির ভিতর। এভাবেই মাছজীবন, এভাবেই গাছজীবন আর এভাবেই একদিন শস্যজীবন আমাদের হয়ে যায়। বৃত্তের ভিতর থেকে লড়াই। বৃত্তের ভিতর থেকে সংগ্রাম। সেই যে যুদ্ধ জয়ের ইতিহাস নিয়ে পৃথিবীতে এসেছিলাম। স্বপ্ন ফেরি করে দেখেছি, এখানে আমিত্ব বলে কিছু নেই। এখানে আমরা কৃতদাস। মহাজনের কৃত্বিতের বাইরে আমাদের কোনো ইচ্ছে নেই। অতঃপর আদিম আর্যগণ যেমন শিলালিপিতে নিজেদের অস্তিত্ব একেঁছিলো। আমরা পরম্পরায় শস্যবীজ। নতুন সৃষ্টির জন্য আমরা মৃত্যুর কাছে ঠিকানা খুঁজি।
শরৎ সন্ধ্যার বৃষ্টি
বারান্দায় দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে শরৎ সন্ধ্যার বৃষ্টি ছুঁয়ে দেখেছি। শরীরের ওমগুলো- ভিজে যাচ্ছে কীভাবে! বৃক্ষের পাতার দিকে তাকিয়ে আছি- কত দিনÑÑ কত সময়। অতঃপর- সবুজ আলোর ঝলক ছিটকে এসে- আমার চোখের নদী চমকে গেলো। ভেজাপথের দুরত্ব মাড়িয়ে চড়ুই পাখিগুলো ঝাঁক বেঁধে ছুটে যাচ্ছে দিগন্তের দিকে। আর আমি ফিরে আসি- আবার ফিরে যাই দুরন্ত রাঙা কৈশোরে। যেখানে মুত্যুর কোনো হাতছানি নেই। ভাবনার আকাশে মেঘের কোনো গর্জন নেই। কেবলি তাকিয়ে দেখেছি- অদ্ভুত বিষ্ময়ে- তোমার চুলের গোছা থেকে কিছু চুল উড়ে যাচ্ছে নির্মল বাতাসে আবার। আর তুমি হাত বাড়িয়ে তাকিয়ে আছো আমার দিকে। যেন আমি হঠাৎ শরৎ সন্ধ্যার বৃষ্টির মতো- হারিয়ে যাব কোনো একদিন!
তাদের কেউ হয়তো কবি ছিলো
দুঃখকে পূঁজি করে কষ্টের বিপনি বিতান দিয়েছিলো যারা। রোদে পোড়া সুবর্ণ মুখ। প্রতিদিন বিষণœ ভগ্নহৃদয় নিয়ে যারা কথা বলে। ফেরারী আসামির যেমন অনিশ্চিত গতিবিধি। একদিন বহুতল ফ্ল্যাটবাড়ির ছায়া যেমন উপস্থিত পথচারীদের চোখের আড়ালে ডুবে থাকে। আমিও ডুবে আছি ফটো ফ্রেমে তৈলচিত্রের ভিতর। অলৌকিক আলোয় যন্ত্রণার বিজলী বাতির সাদাটে রঙের পাগলামি নিয়ে এনজয় করেছিলো বয়ঃসন্ধি পেরোতে যাওয়া বালকেরা। তাদের কেউ হয়তো কবি ছিলো।
নস্টালজিক ভাবনাগুলো
কখনও কখনও মনে হয় নিজেকে ছাড়িয়ে যাই। দেহ থেকে মন থেকে সর্বোপরি চেনাপথ মাড়িয়ে যাই। পিছনে পরে থাকুক যত অভিমান।নগন্ধভাদালের বন চেয়ে দেখুক। খাঁচায় বন্দী পাখির পালক হবো না কোনদিন আর। বাঁশবাগান আর ইউক্যালিপটাস বনে হাত বাড়িয়ে আকাশে ফিরে যাওয়ার নাম, সবুজের খাতায় লেখা হবে না কোনদিন আর। দুরন্ত রাঙা অভিসারে মেতে উঠুক নস্টালজিক ভাবনায় সব প্রেমিকারা। তুমি শুধু একদিন জানবে, তোমাদের কোষ তরঙ্গে আমি গেছি মারা।
nobel prizev:2025 on litterature here
ইসলাম তৌহীদের কবিতা পড়ুন এখানে
মহসিন খোন্দকারের কবিতা পড়ুন এখানে
গল্প বরফের ছুরি পড়ুন এখানে
প্রবন্ধ,উত্তরাধুনিক কাব্যধারার যাত্রাঃ মতিন বৈরাগী-এখানে
প্রবন্ধঃ রাজনীতি ও সাহিত্য পারস্পরিক সম্পর্ক পড়ুন এখানে
কবি মজিদ মাহমুদের গুচ্ছকবিতা পড়ুন এখানে
নির্লিপ্ত আশার চোখে এখনো তাকিয়ে থাকি
কতদিন-কতবার-ভেবেছি,বছরের শেষ দিনেটাতে হলেও স্মরণ করবে আমায়। শীতের কুয়াশাভেদী সূর্যোদয়ের মতো- হঠাৎ করে-সামনে এসে দাঁড়াবে অথবা প্রথম লেখা কবিতার মতো- বারবার কাগজের ভাঁজ খুুলে দেখবে আমায়। মলিন ছবির মতোÑÑ কতটা বদলে গেছি আমি। কতদিন কোথাও তুমি নেই-বারান্দা-বেলকনি- তোমার বাড়ির ছাদবাগান অথবা প্রিয় কবিতা আড্ডায়। অথচ নির্লিপ্ত আশার চোখে- এখনো তাকিয়ে থাকি। কোনো একদিন-আবার ফিরে আসবে তুমি।
নূপুর
বেসিনের ভাঙা আয়নায় মুখ দেখে ফিরে যেতে যেতে, আর একবার পিছনে তাকিয়ে দেখি। আয়না নয় ভেঙে পড়েছে আমার মুখ। সকল উচ্ছ্বাসে কুয়াশা মেখে বারান্দায় ঝুলন্ত টবগুলো জেগে ওঠে আবার। সাদা দেওয়ালে দূরন্ত ক্যানভাসে তাকিয়ে দেখি মধ্যরাতে ডুবে যাচ্ছে চাঁদ। আলপিন নিরবতায় বেডরুমে রাখা বইয়ের পাতা থেকে উড়ে যাচ্ছে ধুলিকণাগুলো। বর্ষার বিয়োগান্তক দুপুর। অথচ আজ কখন কীভাবে তুমি, পা থেকে হারিয়ে ফেলেছো রূপার নূপুর।
আয়না
আয়না আবিষ্কারের পূর্বে আমাদের পরিচয় পর্ব ঝুলে ছিলো দীর্ঘদিন। তবুও ইদানীং মনে হয় আমরা এখন লাশ। একদিন আমাদের ময়নাতদন্তের পর কবরস্থানে পাশাপাশি থাকার বন্দোবস্ত করলো আদালত। অতঃপর হাত ধরাধরি করে হেঁটে বেড়াই আমরা। এক নক্ষত্র থেকে আরেক নক্ষত্রে ঘুরে বেড়াই। নিজেদের আয়না ভেবে মুখ দেখাদেখি পর্বটা সেরে নতুন করে সময়ের কাঁটা অতিক্রম করি।
করাতকল
অবিরত ক্ষয়ে যাচ্ছি বলে, আজকাল নিজেকে নদী সংলগ্ন ভূমি মনে হয়। নদীর মতো আমিও ভেঙে যাই। শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করি। কৃষকের মতো তুমিও একদিন হাত বাড়িয়ে বলো। এ জমি আমার। এ সম্পদ নিয়ে নদীরও অহংকার আছে কিছু। ইচ্ছে মতো পাজর ভাঙে। আবার বিন্দু বিন্দু বালি দিয়ে গড়ে তোলে চর। অবিরত ক্ষয়ে যাচ্ছি বলে, আজকাল নিজেকে বুড়ো বৃক্ষ মনে হয়। পাতা ঝরে। শরীর থেকে চামড়া খসিয়ে রান্নার আয়োজন করে কেউ। করাতকল তাকিয়ে থাকে। চেরাই করে খ--বিখ- করার জন্য। ক্ষয়ে যাওয়া মানুষ বলে, কেবলি তাকিয়ে থাকি আকাশের দিকে। আমাদের এই বেঁচে থাকা কবেই হয়ে গেছে ফিকে!
নাদেরা বেগম
আমি আর নাদেরা বেগম পাশাপাশি থাকি। কখনও তার বাড়ির ছাদের কাপড় শুকানোর রশিতে ঝুলন্ত কাপড় হই। কখনও অন্তবাসের আগুন। অশ্বত্থের ছায়ার মতো বিকেল হই। মায়ার ফাঁদ হয়ে তাকিয়ে থাকি নাদেরার চোখে। বিলম্বিত স্পর্শগুলো বারবার জ¦লে ওঠে ঘমহীন রাতে। আমাদের সম্পর্কগুলো যেন রঙধনুর রঙ। আলো ছড়িয়ে আবার হারিয়ে যায়। কখনও তাঁর ভেজাচুলে, কখনও খোঁপায় গোজা ফুলে আমি আমাকে আবিষ্কার করি। আমি বারবার নাদেরা বেগমের প্রেমে পড়ি। বারবার নাদেরা বেগমের প্রেমে মরি।
ঘোর
ঘুম থেকে জেগে আকাশের মতো বিষণœতায় কিছু সময় ডুব দিয়ে থাকি। ফুলের টব যেমন বর্ষার জলে ভিজে ভিজে সতেজতা হারায়। অস্থিরতায় কিছু সময় যেমন ভাবনার ঘোর নিয়ে ফিরে আসে। এভাবেই ভেজা সংসারের কান্না শুনে আমিও ভিজে যাই। একটা মৃত্যু সংবাদ পাঠ করা পাখির কাছে যেমন মৃত্যুর কোনো কাতরতা নেই। বৃক্ষের যেমন পাতা হারানোর কোনোই বেদনা নেই। আমার সকালগুলো এমনই হয়। বিবর্ণতায় আমাকে ঢেকে রাখি নিষ্ঠুরতম সময়ের কাছে। কেউ কাছে এসে ফিরে চলে যায়। আর কখনও যে ফিরে আসে না। তবুও সে জীবনব্যাপি চোখের নদীতে ভাসে।
আমার কবর
আমার বাবার মত আমাকেও হয়তো, আমাদের পারিবারিক কবরস্থানে ঘুমুতে হবে একদিন। আমি মাঝে মাঝে এখন বাবার কবরের কাছে যাই। জ্যোৎস্না ফুটেছিল যে রাতে। নিজের সাথে নিজে কথা বলি। ঘাসের জমিন দেখি। আর চেয়ে দেখি, মেহগনি গাছের শেকড় কীভাবে আঁকড়ে ধরে আছে তাকে। দেখি পাতাবাহারগুলো কীভাবে উঁকি দিয়ে তাকিয়ে আছে। পৃথিবীর এই ছোট্ট ঘরটার আকুতি শুনে, আর্তচিৎকারে আমার বুকের পাঁজর ভেঙে যায়। আমি আমার বাবার কবরে আমাকে দেখি। সাদা কাফনে মোড়ানো মাটির খাটে ঘুমিয়ে আছি আমি। আর কখনো ফিরে তাকাবো না আমাদের ঘর গেরস্থালীর দিকে। এভাবেই একদিন আমার কবরের পাশ দিয়ে হেঁটে যাবে কত শতাব্দীর মানুষ । কত সভ্যতার ইতিহাস বিলিন হবে। কেউ জানবে না! কেউ একবারও ফিরে তাকাবে না কোনদিন । আমার বাবার কবরের মত আমিও একদিন একা হয়ে যাব !
ঘোর-২
যেতে যেতে এভাবেই একদিন বিচ্ছিন্ন জনপদের কোথাও দেখা হবে আমাদের। অতঃপর চোখ তুলে তাকিয়ে থাকবো এক হাজার বছর। কাঁপা ঠোঁটে মুচকি হাসি দিয়ে বলবো, কেমন আছো? অভিবাদন জানাবো। দূরে কোথাও কোনো এক সেনানিবাস থেকে ভেসে আসবে তোমার উদ্দেশ্যে স্যালুটের ধ্বনি। বুটজুতোয় মাড়ানো ঘাসের কলরব হারিয়ে যাবে ধীরে ধীরে। এভাবেই এক সময় শুধু তোমার জন্য এক'শ লাল গোলাপের বহর এসে উপস্থিত হবে। তখন মৌমাছির গুঞ্জন শুনতে পাবে তুমি। বৃক্ষের পাতায় পাতায় অসংখ্য পতঙ্গের দলগুলো তোমাকে চাই গান গাইতে থাকবে। অথচ আমি এখনও প্রতিটি সকাল বেলায় ঘুম থেকে জেগে, এ রকম একটি দিনের জন্য আশ্চর্য রকম ঘোরের মধ্যে লুকিয়ে থাকি।
কামারশালার গন্ধ
কামারশালার লোহা পোড়ানো কিছু গন্ধ এসে আজ বলে গেল সভ্যতার জেগে ওঠার ইতিহাস। রোদের পিঠে চড়ে কিছু কথার রঙ বদল হয়। রাত্রির আকাশে উড়ে যায় একটি হতুম পেঁচা। স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে জ্যোৎস্নার একাকী প্লাবন যৌবন আসে চুপিসারে ভালোবাসায় মত্ত ঢুলু চোখ। কে জানে আনন্দ অথবা গ্লানি মুখোমুখি বসে আছে আজ। মুদ্রণযন্ত্রের কাছে সব লিপি রেখে পাঠযোগ্য ভাষার ভেতর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে হৃপি-ের কোলাহল।দিন দীর্ঘ হতে হতে থেমে যায় সন্ধ্যার ঘোরের ভেতর। পা-ুলপির সব আয়োজন চর্যাপদ থেকে ধাবিত হয়। উত্তর আধুনিক কবিতায়...
ডুবে যাচ্ছে হেমন্তের চাঁদ
অক্ষরবৃত্ত অথবা মাত্রাবৃত্ত ছন্দ থেকে বের হয়ে টানাগদ্যে হেঁটে চলেছি মাইলের পর মাইল। হৃদয়ের সব টান উপেক্ষা করে বলেছি আর কখনও কোনদিন ফিরবো না। যে শ্যামলিমায় প্রতিদিন এখনও চোখের নদী বয়ে যায়। ঝিঙেফুলের রেণুর দিকে তাকিয়ে কতটা বিকেল হারিয়ে যায় অজান্তে। আর রাতের আকাশে ডুবে যায় হেমন্তের চাঁদ। অতঃপর নতুন দিনের সাথে কত কথপোকথন । আরও কিছু সময় পর হয়তো উঁকি দিবে কোনো এক মেঠোপথের ধারে রঙকরা দুপুর। চলে যাচ্ছি রেখে যাচ্ছি কৈশোরের ডুব সাঁতার দেওয়া সেই দুরন্ত পুকুর।
ইয়াকুব ফুল
উৎসর্গ: আমার বাবা হাজী ইয়াকুব আলী জোয়ার্দার
সংসারে বাবা না থাকলে মা তখন পান্তা ফুরানোর গল্প হয়ে যায়। তেল নুনের মত প্রতিদিন এখনও বাবার অভাব টের পাই আমি। বাবা যেন আকাশের উজ্জ্বল চাঁদ। আমরা এখনও জ্যোৎস্না কুড়িয়ে খাই। এখনও বেশ মনে পড়ে, নবম শ্রেণিতে পড়াকালীন ক্লাস টিচার একদিন উদ্ভিদবিদ্যা পড়াতে গিয়ে ,আমাদের ফুলবিদ্যা পড়িয়েছিলো। ফুল আমিও ভালোবাসি। তবে বাবার চেয়ে বেশি নয়। কেন জানিনা খুঁজে খুঁজে একটি ফুলের নামও পুরুষবাচক পাইনি আমি । টগর নামটার মধ্যে এক প্রকার দ্বীধা ছিলো আমার। আর এভাবেই একদিন পথের ধারের একটি বনফুলের স্থান হলো আমাদের বাগানে। আমি তার নাম দিলাম ইয়াকুব। সেদিন থেকে আমার বাবার নামে একটা পুরুষবাচক ফুলের নাম হলো। অতঃপর আমি ভাবতাম, প্রতিদিন আমার বাগানে ইয়াকুব নামে ফুল ফুটুক আর আমি চেয়ে চেয়ে আমার বাবার মুখ দেখি।
খতিয়ান
উৎসর্গ: মৃত আব্দুর রহিম জোয়ার্দার
বাজার থেকে দশ টাকায় এক দিস্তা সাদা কাগজ আর একটা বল পয়েন্ট পেন নিয়ে ফেরার পথগুলো দীর্ঘ হলো। নলখাগড়া বনের মত পথ আটকালো বড় ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদ। ইদানীং কবিতা লেখা ছেড়ে দিবো ভাবছি। সব সাদার উপর ব্যথার চিহ্ন আঁকা। তা কাগজ হোক অথবা কাফনের কাপড়। কাঁশবনেও কিছু সাদা ব্যথার প্রদীপ জ্বলে থাকে। কামরাঙ্গা বাগানে নিস্তব্ধতার ফুল । হিসেবের খাতায় লিখেছি সরল অংক। কোথাও লিখতে পারিনি জীবন আর মৃত্যূর দুরত্বের খতিয়ান।
ডাকপিয়নের ভোর
তোমার শরীরের প্রতিটি ভাঁজ খুলে বিজ্ঞানবালক হতে ইচ্ছে হলো আমার। ইচ্ছে হলো যুগল স্তনে দু-চোখের ক্যামেরায় ফটোসেশন করতে। প্রতিদিন চরম মুহূর্তের স্পর্শ নিয়ে, প্রতিটি আর্ট গ্যালারির ফ্রেমে ফ্রেমে ভেজাকান্নার শবমিছিল হয়ে প্রেম ও প্রণয়ের প্রত্যাখান জ্বলে উঠুক অমৃত ধূলোয়। আর আমি সেদিনই প্রথম শিলালিপি হবো গুহামানবের। তোমার আমার প্রাত্যহিক ভালোবাসার রোজনামচা পড়ে যে সম্ভাবনা, যে দীর্ঘশ্বাস, বেঁচে থাকার প্রবল ইচ্ছে আমরা লালন করেছিলাম বুকের অন্তরালে। ভালোবাসার শীতলতায় ওম খুঁজে খুঁজে আমাকে যেদিন প্রথম ভোরের চিঠির ডাকপিয়ন বানালে। সেদিনই আমি হয়ে গেলাম এক সম্ভাবনার উঠোন। হলাম কলাবতি ধানের শীষ, উড়নচ-ি মেঘডুবুরি। আর পদ্মার দু’কূল হয়ে ছড়ালাম বিশাল চরাচরে...
ভুল ঠিকানা
হয়তো অচেনাই রয়ে গেলাম। তোমার যত সকাল সন্ধ্যা বিকেল ছিলো। তোমার যত ঘুমভাঙা মধ্যরাত ছিলো। অচেনাই রয়ে গেল তোমার দীর্ঘশ্বাসগুলো। বারান্দায় বসে বসে হয়তো কোনদিন খুঁজবে না আমায়। অথচ আমি তোমায় খুঁজেছি-- দীর্ঘচুলের দেবীর মতো। টানাচোখের কাজলের মতো। কতদিন পেরিয়ে-- কত শরৎ-- কত বসন্ত-- হারিয়ে শহরের ওলিগলি তন্নতন্ন করে। অথচ তুমি-- সিনেমা হলের কেবিনে-- অস্পষ্ট যুবতীর মতো-- বাদামের খোষা এড়ানোর শব্দ শুনে--রং নম্বর হয়ে তোমার ফোনে বেঁজে দেখেছি--সকল আবেগ উচ্ছ্বাসে! তোমার কোনো অপেক্ষায় অথবা ঘৃনায় হয়তো আমি নেই। হয়তো কোনদিন আমি--তোমার আমি ছিলাম না। ভুল ঠিকানার চিঠির মতো--

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thanks