গুচ্ছকবিতা
রোখসানা ইয়াসমিন মণি
রোখসানা ইয়াসমিন মণি
গোপন চাষ
তুমি এলে, যেনো বহু যুগ পরে পেলাম আলোর খোঁজ,
আমার নিঃস্ব ভান্ডে রেখে গেলে প্রথম সবুজের ভোজ।
এখানে সমস্ত জুড়ে ছেয়ে আছে যে তোমার জাদুকর্ম,
যা এক নারীর বুকে জাগায় নতুন প্রেমের দুষ্কর্ম।
আমি তো খুঁজিনি কখনো আকাশের অলৌকিক হাত,
তোমার উষ্ণ পাঁজরে জমে আছে আমার সমস্ত রাত।
মনে হয় যেনো পাশে আছো তুমি, তবু হয় নাকো দেখা,
ব্যাথার নিঃশ্বাসে রেখে গিয়েছো দীর্ঘ প্রতীক্ষারই রেখা।
এ শহরে রাত নামে, নিয়ন আলোতে বিষাদ ঢেলে
সেখানে তোমার কথারা আজও যায় অন্য বাঁকে চলে,
নারী কি কেবলই নারী? সে তো প্রথম কবিতার জন্ম
তোমার চোখের কোণে দেখি আজ সব যে নিষিদ্ধ কর্ম,
ভেতরের প্রবল ব্যথার কথা কোনোদিন হয়নি বলা
তোমাকে পেতে গিয়ে আজ সনস্ত ভুলেতেই পথ চলা।
সোনালী ধান ও জলের ইশারা
আমার নৌকোর পালে তুমিতো আজো সেই ধানের রোদ,
মাছের আঁশের মতো লেগে আছে যে পুরোনো প্রতিশোধ।
তোমার উঠোনে দেখি বুলবুল পাখির মতোন ঝিলিক,
যেন জল-ভাঙ্গা শীতে জেগে ওঠে পথ হারানো পথিক।
তোমার শরীর জুড়ে আজো বয়ে যায় যমুনার জল,
আর আমার ভেতরে বাজে ঘাটের নৌকোর কোলাহল।
আমি ফিরিনি এখনো সেই সোনালী শাকের বন থেকে,
যেখানে তোমার হাসি ছুঁয়ে দিত আকাশের রেখাটাকে।
তুমি আমার পুরুষ-জমিন, যেখানে জন্মেছি বারবার,
বুকের মাঝারে দেখি তাই গোপন চাষের অন্ধকার।
তোমার সামর্থ্য পৌরুষেতে যেন সোনালী ধানেরা ঝোলে,
ভোরের পাখিরা তাই আজও যে তোমারই নাম বলে।
শোনো হে পুরুষ তারা আজ এক, তারা জীবনের মূল,
জেনো, তুমি আমার সবকিছু , তুমিই ভুলের মাশুল।
অনাগত জনমের ভুল
তোমার শরীরে লেগে আছে অন্য কারো ঘ্রাণ, আমি জানি,
এই জন্যে বুকে নষ্ট ফলের মতো জমেছে
অভিমান-ই।
যেন কোনো গৃহহারা পাখি, ফিরতে চায় ভস্মীভূত নীড়ে,
অথচ এ আগুনে শুধু ছাইদানি ভর্তি পোড়া সুখ ভিড়ে।
তোমাকে বোঝার আগে এখন ক্ষয়রোগে আক্রান্ত শরীর
মৃত্যুর বিভ্রমে আজ খুঁজে ফেরে আকাশের সেই নীড়।
তুমি তো এসেছিলে এক অসময়ে— এ বড় ভুল ক্ষণ,
সেখানে মরেছে আমার স্বপ্নেরা যেনো নিহত স্বজন।
এইবার ফিরে যাবো, যদি নতজানু হই— ঘৃণা কোরো প্রিয়,
তোমার চোখের জলে মেশা আমার রক্তবীজ দেখে নিও।
ললাটের মাঝে লিখে দিও— আমি পরাজিত, দূষিত জন্ম,
তবুও তোমার কাছেই ফিরে আসে এ নিরুদ্দেশ কর্ম।
জানি,এ যে ভালোবাসা নয়— কেবল হৃৎপিণ্ডের বিদ্রোহ,
তবুও তোমার হাতে রেখে যাই নিঃসঙ্গতার মোহ।
বিস্ময়কর খিলান
তোমার হাঁটার ছন্দে শুনি প্রাচীন মুদ্রার শব্দ,
এ শহরে তুমি হলে এক গোপন খিলান-স্তব্ধ।
তোমার চোখের গভীরতা যেন কোনো গুপ্ত কুয়ো—
যেখানেতে গল্প বলে যায় সুয়োরানী আর দুয়ো।
এখানে আসিনি আমি শুধু ফুল বা কবিতা দিতে,
এসেছি নরম শরীর থেকে আঁধার কিনে নিতে।
তোমার বুকখানি যেন সেই প্রথম শস্যের ঢাল,
যা তোমার পৌরুষকে বাঁচায় কাল থেকে মহাকাল।
তোমার আমার স্মৃতিগুলো হয়েছে পুরোনো ছবি,
যেখানে আকাশ লেপিয়েছে তার নীল রঙ সবি।
এই রক্তের শিরায় ছিলে অনন্য রক্তের ঢেউ,
তোমাকে বোঝার সাহস দেখায়নি আর অন্য কেউ।
আমাদের প্রেম ছিলো যেন যে হৃদয় ছেঁড়া শ্রম,
তুমি ছিলে নিষিদ্ধ ভূমি, তুমিই প্রথম জনম।
সময়ের ওপারে ভালোবাসা
তুমি এলে, থেমে গেলো এক মহাকালের দুরন্ত স্রোত,
তোমার স্পর্শেই ভালোবাসারা পেলো দুরন্ত উৎসব।
এ পৃথিবীর ধুলো,আর নক্ষত্রের যত নীরব রাত,
তোমার কারণে আজ পেয়েছে এক অমলিন প্রভাত।
আমার ভিতরের জটিল জ্যামিতি যে ছিলো নিরুদ্দেশ,
তোমার চোখের তারায় সে তো পেলো সুনির্দিষ্ট রেশ।
ভালোবাসা শুধু দুটি দেহের মিলন নয়— তা এক সেতু,
যা পার করে নিয়ে যায় অন্ধকারের যত অজানা হেতু।
জানি, সব রঙ একদিন মুছে যাবে, মুছবে নশ্বর এ সৃষ্টি,
তবু তোমার কাছেই ফিরে আসবে জীবনের যত বৃষ্টি।
তুমি আমার সেই গোপন কবিতা, যা কোথাও লেখা নাই,
তাকে এ নিঃশ্বাসে ধরে রেখে তোমার প্রেমের গান গাই।
যদি এই পথে থাকে কোনো অবান্তর শেষ ঠিকানা,
তুমিই আমার যাত্রা শুরুর ও শেষ প্রেমের ঘোষণা।
ভিজে শালিখের মতো প্রেম
তবুও তো তুমি এলে, যেন নক্ষত্রের নিভে যাওয়া ডানার মতন,
আমার এ ভেজা শালিখের মতো একাকী জীবনে রাখলে চুম্বন।
এই শহরে এখন হলুদ পাতার গন্ধ, আর পুরোনো শীতের সুর,
তোমার শরীর যেন কোনো বিস্মৃত শান্ত নদীর গভীর দুপুর।
আমরা হেঁটেছি দুজন, সেই আলো-আঁধারের মাঝে ফসিলের পথে,
যেখানে হারানো রোদেরা ঘুমিয়ে আছে যে আজো বিকেলের শেষ রথে।
আর সব প্রেমিকের মতো আমাদের হৃদয় জ্যামিতির মতো নয় সরল,
এ তো কেবলই ঘাস আর শিশিরের বুকে নীরবতার কোলাহল।
তুমি কি কেবলই পুরুষ? নাকি হাজার বছর ধরে খোঁজা স্মৃতি?
যার জন্য ঝরে গেছে শুধু অগণন শাদা চাঁদের জ্যোতি!
মৃত্যু এসে ডেকে গেলে— যদি ফিরে যাই আবার সেই সবুজ নির্জনে,
তবুও তোমার নামটি আমার লেগে রবে ফাটল-ধরা এই মনে।
সব পাখি নীড়ে এলে তবে তুমি কি হবে অন্ধকারের শেষ তীর?
যদি হও তবে আমার বিষাদ-দীঘিতে রবো একদম শান্ত স্থির।
রক্ত ও মজ্জার আকাঙ্ক্ষা
তুমি শুধু স্বপ্ন নও— তুমি রক্তের ভেতরে থাকা গান,
যার অভাবে স্তব্ধ হয় আমার শ্বাস, আমার প্রাণ।
ক্ষুধা যদি হয় এই শরীরের আদিম শেষ সত্য,
তবে তুমিই আমার সেই ক্ষুধা— অনিবার্য, অব্যর্থ!
তোমাকে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা আজ নগ্ন শিখার মতো জ্বলে,
সমস্ত পবিত্রতা ভেঙে, বন্য হরিণীর মতো চলে।
যেন আমি প্রাচীন কোনো ঈশ্বরের অভিশাপ-পীড়িত,
তোমাকে গ্রাস করতেই আমি হয়েছি মনোনীত ভৃত্য।
তোমার অধর নয়, চাই সেই তীব্র অমৃত ভাঁড়ার,
যা এই তৃষ্ণার্ত দেহে বয়ে আনে প্রলয়ের অঙ্গীকার।
তুমি এসে মিশে যাও এই শিরা-উপশিরা মজ্জায়,
যেমন মাটি মিশে যায় তার প্রথম জলের লজ্জায়।
না-পাওয়ার যন্ত্রণা মনে হয় যে কালো সাপের ছোবল,
তুমি হলে আমার আদিম পিপাসা, তুমি শেষ সম্বল।
যে তুমি মনে মনে
তোমার হাসির রেখা রৌদ্রের জালে বোনা রূপকথা,
তোমার দু'চোখে ভাসে অনাদি তারার শূন্য ব্যথা।
যেন ভোরের শিশিরকণা, মরকতের মতো জ্বলে,
তোমারই কারণে আজ স্বপ্নরা সুদূরে যায় চলে।
তোমার কণ্ঠের কুহুতান যেন কাঁচপোকার সুর,
যা শুনে এই মন হারায়, ভাঙে যুগান্তের যত দূর।
তোমার নিঃশ্বাসে ভাসে দুর্লভ স্বর্ণমুদ্রার ভার,
যা সঞ্চয় করে আনি, ভুলি পৃথিবীর অন্ধকার।
তোমার স্পর্শে জাগে ঝিনুকের ভেতরের মুক্তো,
এই ভালোবাসা যেন স্বর্গীয় স্থাপত্যেরই সূত্র।
যা বুঝে নিতে পারে না কোনো কালের পুস্তক-তত্ত্ব,
তুমি আমার চেতনায় রয়েছো আদিমতায় মূর্ত।
তুমি এই প্রাণের অক্লান্ত বসন্তের ধ্রুব ধাপ,
তুমি অরূপের রেশ, তুমি রূপের শেষ আলাপ।
মতিন বৈরাগীর কবিতা এখানে পড়ুন
মাসুদ মুস্তাফিজের কবিতা পড়ুন এখানে
অমিত চক্রবর্তীর কবিতা পড়ুন এখানে
বড় ও বিখ্যাত কবির কবিতা পড়ুন এখানে
জিয়াবুল ইবন এর কবিতা পড়ুন এখানে
কাজুও ইশিরোগুরের উপন্যাস বিশ্লেষন প্রবন্ধ পড়ুন এখানে
শূন্য ও আকাশের প্রতি পড়ুন এখানে
অনলাইন সাহিত্যের গুরুত্ব পর্যালোচনা পড়ুন এখানে
এমরান হাসানের কবি পড়ুন এখানে
পোয়াতি ধানের কবিতা পড়ুন এখানে
দুরুত্বের অদেখা প্রাচীর পড়ুন এখানে
শারদুল সজল এর কবিতা পড়ুন এখানে
নকিব মুকশি'র কবিতা পড়ুন এখানে
সময়ের খেলা
তোমার চোখের কোণে পুরোনো দিনের কষ্টিপাথর,
যেখানে রোদেরা আজো আনাগোনা করে বানাতে ঘর।
আমার হৃদয়ে তুমি এক নিষিদ্ধ গোপন খিলান,
যার ভেতরে হতেছে সৃষ্টি প্রেমেরই অমর উত্থান।
তুমি যেন সময় ভেঙে নেমে আসা সবুজ কাঁচপোকা,
তোমাকে ছুঁতে না পেয়ে অজানাতে হাত রেখে ঘ্রাণ শোঁকা।
এই প্রেম চায় না শুধু দেহের সহজ সরল দাবি,
এ যে এক অমিল সংকেত, যা শুধু মিলনে মেলে চাবি।
তবু কেন এই খেলা? কেন ছায়ারা লুকোচুরিতে রয়?
কেন এই স্পর্শগুলি অন্ধকারে শুধু বাঁচে নির্ভয়?
তুমি এক নীরব সংকেত, আমি তার বিমূর্ত শ্রোতা,
এই রহস্যেই বাঁচে আমাদের গোপনো - গোপন বার্তা।
যদি একদিন সব পর্দা সরিয়ে আলো আসে তবে কাছে,
জানবে, এই অদেখা প্রেমের কোনো অন্য রঙ নেই আর পাছে।
English article read here
english poem's here read
english article here
poem by timur khan here
article of law and literature : click here
nobel prizev:2025 on litterature here
poem by p.francis click here
ডিলিট হওয়া ডেটা
তুমি নেই— এই শূন্যতা এখন হাই-রেজোলিউশন ট্রমা,
আমার স্ক্রিনে শুধু ফোর-জিরো-ফোর-এর নিরেট জমা।
রিফ্রেশ করি বারবার, তবুও অদৃশ্য তোমার প্রোফাইল,
যেন মুছে যাওয়া ডেটা, আজ শুধু বাফার করে ফাইল।
এই হাহাকার নয় শুধু হারানো রোমান্টিক কোনো ভুল,
এ হলো কসমিক গ্লিচ, অস্তিত্বের ইনকমপ্লিট রুল।
আমি তাকেই চেয়েছি, যে শুধু অ্যাভেলেবল নয় কোনো স্টোরে,
যেন ফ্ল্যাশব্যাক মোমেন্ট, যা বারে বারে আঘাত করে জোরে।
এই দূরত্ব আজ আমার র্যান্ডম অ্যাক্সেস মেমোরি,
সেখানে তোমার ছবি স্থায়ীভাবে হয় স্টোরি।
সবচেয়ে দামি আর্টওয়ার্ক— যার কোনো ট্যাগ বা শিরোনাম নেই,
এই অপ্রাপ্তিই আমার অ্যান্টিক আর্ট, যেখানে রোমান্স থাকবেই।
তবু এই ওয়াইফাই সিগন্যাল খুঁজে ফেরে তোমার আইপি অ্যাড্রেস,
তুমি আমার গোপন পাসওয়ার্ড, যার নেই কোনো অ্যাক্সেস।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thanks