পোয়াতি ধানের কবিতা ও অন্যান্য।। সাহাব উদ্দিন হিজল।। poems by sahab uddin hizol


সাহাব উদ্দিন হিজলের কবিতা




গুচ্ছকবিতা
সাহাব উদ্দিন হিজল

                সবুজ-তরঙ্গ

কবিতার মই বেয়ে চলে শস্য-কাব্য
সবুজ-তরঙ্গ জাল ফেলে হলুদ সময়
সাঁতার কাটে নিসর্গ-রঙ থমি পরে—
রজত-কাস্তে ছড়ায়হাসি; ভরামাঠে।
প্রজাপতি-রঙশাড়ি পরা পল্লীবালা
সরিষা-ফুল ঘুঙুরপায় কবিতা বোনে
নিকোনো উঠোন খোঁজে বৃষ্টি ফোটা—
ভেজা বক কূলপায় দখিনা সমীরে।
জ্যৈষ্ঠে সোনা-বর্ণ ধানে মুগ্ধ বাবুই ঘুুঘু
ধুপছায়ায় বাসা বোনে খই-নেচে
আম-কাঁঠালের মধুছন্দে পিঙ্গল সময়— 
নববঁধূ সাঁতার খেলে লজ্জানম্র ডানায়।

       পোয়াতি ধানের কবিতা

হেমন্তে শিশির জমা ঘাসে রোদ হাসে
ওতে প্রেমিকার হাস্যোজ্জ¦ল আভা ভাসে
সবুজ পোয়াতি ধানের কবিতা-কাব্য
কৃষকের ঘরে নেমে আসে নদী-নাব্য।
মনের জানালা ছড়ায় আবির আলো
ভাটিয়ালি গান বিহার-তরঙ্গে মেলো
কার্তিকের কান্না ঝরেপড়ে দূর্বাঘাসে
আলোর নাচন ফুটে ওঠে পূর্বাকাশে।
অঘ্রানে সোনালী ধানের ঝালর দোলে
কৃষকের মুখে নবান্ন আলোক জ¦লে
নববধুর টিকলো নাকে নদ ফোটে
মলয় বাতাসে গোলাপ সুঘ্রান ছোটে।
ভোরের জানালা খোলে দোয়েলের শিসে
কৃষকের ভরামাঠে কাস্তে খেলে হেসে।

       পাখির গানে রাত ভোর হয়

এই জঙ্গল বাঙ্কারে শশব্যস্ত ক’জন প্রতিস্বিক প্রাণী
জলাতঙ্কগ্রস্ত কুকুর দলের অপেক্ষায়—
গুমোট হাওয়া হালকা হবে
        মাছের মায়া ছেড়ে যাবে।
মশা পিঁপড়ে জোঁক মহব্বতে আছে
দুলাভাইয়ের ঘাড়ে চেপে—তাই
সম্পর্কের খাতিরে সোহাগ দেখিয়ে সরিয়ে দেই।
লিডারের নির্দেশ— 
শব্দহীন সময় নির্ঘাৎ সনেট কবিতারূপে
গাইতে থাকে হৃদয়ের গান,
শত্রু নিধনের অবিচল পরিণতি বেলায়
বিনাশী কোরাস বাদ্য বাজে।
মরা খেকো পেটফাপা কুকুরেরা শিশা খেয়ে
ফাটাবল-রূপে পড়ে থাকে পথের মোড়ে
অবশেষে বনের শৃগাল শকুন জঞ্জাল সরিয়ে
পবিত্র করে মা’র কোল—পাখি ডাকে,
        এভাবেই পাখির গানে রাত ভোর হয়।

               উজবুক বেকার

সন্ধানী পর্যটকের দীর্ঘশ্বাস
অচিরেই সূর্যাস্ত হবে!
উপত্যকা থেকে দেখা যায়—
সাগরের তলায় কেবল প্রাণহারি
স্ফুলিঙ্গ-কাদা পড়ে আছে।
যেখানে বাঁচার কোনো অক্সিজেন নেই
কেবল মানুষকে পাকড়াও করার জন্য
বিশাল বিশাল ফাঁদপেতে আছে
অজস্র হিংস্র ফানুস-যন্তু।
গলা শুকিয়ে ওঠে
ক্রমান্বয়ে—
রক্ত শুকাবে
সাংস শুকাবে
হাড্ডি পড়ে রবে অকালে।
ক্রমে হাড্ডি ক্ষয়েক্ষয়ে জৈবসার হবে
সেখানে সদম্ভে দাঁড়িয়ে যাবে পৃথিবীর
ভারসাম্য রক্ষার ঐরাবত অশ্বন্থ বৃক্ষ। 
তখন পর্যটক লিখবে—
প্রয়াত উজবুক বেকার দাঁড়িয়ে আছে
তোমাদের পাশে—ছায়া হয়ে।



        হারানোর কিছু নেই

পাখির কলকাকলীতে আস্থা হারানোর কিছু নেই
কদাপি সেখানে হয়নি মিথ্যে বুলিরপ্ত শুরু
কারো ঘর ভেঙে নিজ আসন পোক্ত করতে
লাঠালাঠি খুণখারাবি করেনি কখনো
আকাশের নীল খেয়ে বাতাসের ভেলা
ভাসিয়ে বাসরঘরের আঙিনায় নেচেগেয়ে
অবিকল কাটিয়েছে হিরন্ময় সময়
হাপিত্তেস কখনও ঠেকাবার অবসর পায়নি
উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের ডামাডোল
সানকিভরা মরিচ-পেঁয়াজ পান্তা খেয়ে
দেদারছে জন্মায় সোনার বাংলার সোনালী ফসল
রাতে চন্দ্র-তারা আর জোনাকির আলোখেলা
দেখতে দেখতে রাজনিদ্রা অকৃপণ তড়পায়
সীমানা ছাড়িয়ে যাবার ভয়ে তস্করের যতো শঙ্কা
বাদকের আঙ্গুলে ততো আনন্দের বন্যা।


পাখির ঠোঁটে কাব্য নাচে

কবিতাি লখবো—তাই দুবলায় হাঁটুগেঁড়ে বসে আছি
পাশদিয়ে পাখি উড়ে যায় অনুরাগ বুনেবুনে
তাতে সিক্ত হয়ে বাছুরটি কাছে ঘেঁষে শুয়ে
কানেকানে বলে—চটুল কবিতা ঐ আকাশের গায়।
রঙধনু ঝুলে আছে পূর্বাকাশের গায়ে ক্যানভাস সেঁটে
আঁকবে কবিতা-ছন্দে ধানমাড়ায়ের মুক্ত গদ্য
কৃষকের গার প্রতি ফোটা ঘাম কবিতার হয়ে
ঝিরিঝিরি বাতাসে সুঘ্রাণ ছড়ায় কর্ষণ-কাব্য পাখা মেলে।
আমার কবিতা দুবলায় হুটোপুটি খায় আমারই চারিপাশে
তাবৎ গুছিয়ে গুছিয়ে গাঁথলাম জুম-চাষ কাব্য-মালা
চূড়ায় চূড়ায় জ্যোসনা হাসে জলকেলিরঙ-মেখে
তাতেই কবিতা পাই—বর্ণিল ক্যানভাসে পাহাড়ের গায়।
ওপরে তাকাই আরও ওপরে নীলের গায়ে আকাশপাড়ে
সাদাসাদা মেঘ ভাসিয়ে নিচ্ছে কবির আঙিনায়
হাত বাড়ালেই কুহুতানে চলে বর্ণমিছিল
বাবুই পাখির কণ্ঠ-পালক-ঠোঁটে কাব্য নাচে—অবিরত।


তোমার ইতিহাস

তোমার সামনে তখন রঙ্গিন আলো
চোখ ঝলসানো বেসামাল পদভারে
মাটি দেবে যায় মাটির নিচে
তাই যন্ত্রযানে হয় উঠতে—উড়তে।
পাখায় পাখা লাগিয়ে শূন্য ওজনে
উর্ধ্বে আরও উর্ধ্বে উঠতে উঠতে
প্রেমের আলো জ্বলে উঠলে—তুমি
অঙ্গার আলোক ছড়ালে পথের ধারে।
এই তো তোমার মাটিতে পড়ার ইতিহাস
এখন আর ঘৃণা লাগেনা কোনো মাটি
পা-যাবেনা বর্ণবাদের নোংড়া কাদায়
টেনে তুলতেও হাত বাড়াতে হয়না।
বোধের জানলা খোলা থাকলেও, তবু
শূন্যে উড়তে দুন্দুভি কেঁপে ওঠে—উঠবেই।


সেই সাইনবোর্ড

ওদের বিদায় বার্তা ছুটে আসে
অবিরাম মর্মস্পর্শী চীৎকার—
রক্তাক্ত পাহাড়ের ওপারে
রঙধনু হারিয়ে গেল অতলে।
ওরা অন্ধকার ছিঁড়ে চলেছে
ফরহাদের পাহাড় কাটার মতো,
একদিন ধরা দিল আলো
খুঁজে পাওয়া মায়ের প্রথম কান্নাহয়ে।
হাসির হাটে ফুরোবে কান্না
সোনার কাঠির স্পর্শে;
কিন্তু, ব্যর্থ—তবুও ব্যর্থ
পাহাড়ের গায়ে আবারও সেই সাইনবোর্ড।

english poem's here read
দুরুত্বের অদেখা প্রাচীর পড়ুন এখানে
শারদুল সজল এর কবিতা পড়ুন এখানে
নকিব মুকশি'র কবিতা পড়ুন এখানে
ভাবুক মাস্টারের পাথর পড়ুন এখানে
কবিতার বরপুত্র আসাদ চৌধুরি এখানে পড়ুন
english article here
poem by timur khan here
বাস্তুহারা তারার ইশতেহার পড়ুন এখানে
সুশান্ত হালদারের কবিতা পড়ুন এখানে
মায়াপথিক এখানে
নয়ন আহমেদ এর কবিতা এখানে 
article of law and literature : click here
লতিফ জোয়ার্দারের কবিতা পড়ুন এখানে
nobel prizev:2025 on litterature here
ইসলাম তৌহীদের কবিতা পড়ুন এখানে
মহসিন খোন্দকারের কবিতা পড়ুন এখানে
গল্প বরফের ছুরি পড়ুন এখানে
প্রবন্ধ,উত্তরাধুনিক কাব্যধারার যাত্রাঃ মতিন বৈরাগী-এখানে
প্রবন্ধঃ রাজনীতি ও সাহিত্য পারস্পরিক সম্পর্ক পড়ুন এখানে
কবি মজিদ মাহমুদের গুচ্ছকবিতা পড়ুন এখানে
প্রবন্ধ,নজরুলের রহস্য,পড়ুন এখানে
লিসেল মুলারের অনুদিত কবিতা পড়ুন এখানে
ভিন্ন স্বাদের গল্প,কফি হাউজের ওয়েটার' পড়ুন এখানে
নজরুলের রহস্যময়তা নিয়ে প্রবন্ধ পড়ুন এখানে
চৌধুরী মো.তারিকের কবিতা পড়ুন এখানে

                দৃশ্যপট

কাহিনী পরিবর্তন হওয়ার সাথে সাথে
দৃশ্যপট সরিয়ে ফেলাহলো—  
এখন আকাশে কালো মেঘ নেই
নেই অযথা মেঘগর্জন
নেই বজ্রপাতে প্রাণনাশের দন্দুুভি।
শরৎ মেঘের সাদাঅশ^ অবিরাম
ছুটে চলে অনুকূল হাওয়ায়—
অথবা শরতে আর আষাঢ় নামেনা
সারমেয় অসময়ে কেঁউকেঁউ করেনা
বেজে চলে সর্বদা মন্দ্র মন্দিরা।
কবিতা-ছন্দ দরজায় এসে কড়ানাড়ে
শব্দ-জট খুলতেই—
কবিতা ঝর্নার ন্যায় পাখামেলে ছুটেচলে
উচ্ছল সাগরের বুকে ছন্দের বিহারে
যবনিকাপটে কবিতা-ছন্দ ব্যঞ্জনাময় কাব্য।


        উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের কলতান

সবুজের সমারোহ—উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের কলতানে
কবির কলম লিখে চলে সুবাসিত কুহুতান
অজস্র প্রজাপতি ডানা মেলে খেলা করে
তাই তট বরাবর মেঠো পথ ছেয়ে গেছে স্বর্ণলতা।
পাতারা হাতে হাত রেখে সৃষ্টি করে ছায়াপথ
প্রকৃষ্টরা কলকন্ঠে নৃত্যগীত উৎসবে মাতে
অপচ্ছায়া পরাস্ত করতে পারেনা
সাদাসাদা পালকের সোহাগী শুদ্ধস্বর।
পরাক্রমশালী নরখাদকরা ভেসেযায় খরস্রোতে—
মাছের মায়ের পুত্রশোকের কোলে কোলে
সজীব নিঃশ্বাসের দাপট এখানে কবিতা লেখে
পাহাড়ের জুমচাষ, দোয়েলের চক্ষু-চঞ্চু-পালক।

Post a Comment

Thanks

নবীনতর পূর্বতন