দূরত্বের অদেখা প্রাচীর।। অন্যান্য।।poems by tarifa hyder..kuasha

তারিফা হায়দার।। কবি।। কবিতা


গুচ্ছকবিতা
তারিফা হায়দার

দূরত্বের অদেখা প্রাচীর

কড়া নেড়েছি বহুবার 
ভেতর থেকে কেউ দরজা খুলে দেয়নি 
চিরকাল অপাংতেয় হয়েই রয়ে গেলাম।
কেউ বলেনি 
তোমার চোখ দুটো  এতো লাল কেন?
চতুর্পাশে শূন্যতা গিলে খেতে চায় 
শরীর থেকে একে একে খসে পড়ে 
আত্মাভিমানের বল্কল,
শীতের রাত্রির মতো কাঁপন জাগে অন্তরে 
বিবাগী সুরে বেজে ওঠে শেষ বিদায়ের গান। 
তবু ভেদ করা যায় না 
দূরত্বের অদেখা প্রাচীর 
পাশাপাশি বিছানায় শুয়ে কাঁদে 
দূরত্ব আর অভিমান।


ফাঁদ

সুখ ছুঁতে গিয়ে 
বারেবারে দুঃখকে ছুঁয়ে ফেলি,
আলো আসবে ভেবে 
আলেয়ার ফাঁদে পা ফেলি।
নির্জন মেহগনি বনে পেঁচাদের ডাক শুনে ভেবেছিলাম লন্ঠন হাতে ভালোবাসা এসেছে 
আসলে ওটা ছিল ফাঁদ। 
ভালোবাসা এতো সহজ নয়
বসন্ত আসলেও সব ফুলে হয়না পরাগায়ন,
কিছু কিছু গুল্ম ও বৃক্ষ 
চিরকাল বন্ধ্যা থেকে যায়।


শেষ বলে কিছু নেই

ক্ষয় হতে হতে সময়ের ধারাপাত 
যখন শূন্যের কোটায় পৌঁছায় 
পুনরায় শেষ থেকে শুরু করি
যদিও শেষ বলে কিছু নেই, থাকে না।

যা কিছু হারিয়ে যায় 
যা কিছু মিলিয়ে যায় পথে প্রান্তরে,
সেসবের হিসাব প্রাপ্তির খাতায় লিপিবদ্ধ হয় না 
তাই সেসব ভেবেও কাঁদি না।
 
বর্তমানে বেঁচে থাকি
উনুনে ফুটতে থাকা টগবগে জলের ন্যায়, 
জীবনে শতভাগ স্ফুটনাংক না এলে
অতৃপ্ত হৃদয় নিয়ে মরে যেতে হয়।


হাওয়াই মিঠাই 

যা কিছু ভালোলাগার 
চিরকাল কাছে থাকে না কখনো 
কেবলই থেকে যায় তার সুবাস।
মাতাল জোৎস্না ধরে রাখতে পারিনা
শিশিরের শুভ্রতা ক্ষণস্থায়ী, 
মোহনায় নদী এসে মিলে গেলে 
জলের প্রবাহ থাকে না পূর্বের ন্যায়।
ঠিক যেমন সবটুকু জানা হয়ে গেলে 
মানুষ দূরে চলে যায়
একটা হাওয়াই মিঠাই স্বপ্ন 
বুনে দেয় দুচোখে।


অনল

পোড়াবেই যদি আগুন হলে না কেন 
পৃথিবীর তিন ভাগ জল 
নেভাতে পারেনা যে অনল,
তুমিও পুড়ে যাও সে অনলে
পুড়ে পুড়ে খাঁটি হও
তারপর শিখে নাও 
প্রনয়ের পাঠ।
মোহ কিংবা মরিচীকায় নয়
ভানিতা কিংবা বিভ্রমে নয়,
তোমার পুড়ে যাওয়া ছাই থেকে 
পুনরায় জ্বলে উঠুক 
বিশুদ্ধ প্রেমের স্ফুলিঙ্গ 
অন্তিম যাত্রায় যেমন শুদ্ধ হয়
চিতায় পোড়া চন্দনের কাঠ।


খুব ভালো আছি

ধরেই নিলাম--
একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে 
অন্ধজন আলো ফিরে পাবে 
নিরন্ন পেয়ে যাবে উদরপূর্ণ অন্ন,
পৃথিবীর ক্ষয়ে যাওয়া পথের রেখাগুলো 
পুনরায় ফিরে পাবে তাদের অবস্থান।

ধরেই নিলাম -
একদিন মুছে যাবে সব বিভেদের দেয়াল
সমান্তরাল রেখায় মিলিত হবে 
উঁচুনিচু ভেদাভেদ,
এক নদীতে এসে জল পান করবে 
বাঘ ও হরিণ শাবক।

আর সেদিন আমরাও ভুলে যাবো 
কারক ও বিভক্তির চিহ্ন, 
সমোস্বরে বলে উঠবো
ভালো আছি, খুব ভালো।


নষ্টালজিয়া

থমকে যাওয়া বিকেলের উঠোনে 
ছায়া নেমে এলে 
বিদায়ের পদধ্বনি শুনতে পাই।
দু'একটা ঝরা পাতার কম্পন
কিছু অগোছালো বাতাস 
ভীষণ এলোমেলো করে দেয়।
এইসব ফেলে আসা মুহুর্তরা 
বড় নস্টালজিক করে ফেলে 
কখন যে আনমনে ঘুমিয়ে পড়ি জানিনা।
শুধু জানি এমন অনেক হারিয়ে যাওয়া মুহুর্ত 
হাতের মুঠোয় বন্দী করে রেখেছিলাম 
তোমার হাতে তুলে দেবো বলে।।
এমন অনেক কথাই বলবো বলে ভেবে রেখেছিলাম, অথচ, সময় গুলো কখন যে বুড়ো হয়ে গেল 
টেরই পেলাম না।

অপেক্ষা 

কেউ থাকা অথবা না থাকায় 
কিচ্ছু এসে যায় না, 
ভোরের আলো ফুটতেই 
ইচ্ছে গুলো পাখি হয়ে উড়ে যায়।
একটা অবশ হৃদয় তবু 
ঝুলে থাকে স্মৃতির কার্ণিশে,
সন্ধ্যা নেমে এলে একে একে 
জমিয়ে রাখে আলোহীন দিনের সমাচার।
অলিখিত গন্তব্যের জন্য অপেক্ষা
কখন ভোর হবে আবার ?
নিদ্রাহীন স্বপ্ন ভঙ্গের রাতগুলো 
আজকাল বড্ড দীর্ঘ মনে হয়।

শারদুল সজল এর কবিতা পড়ুন এখানে
নকিব মুকশি'র কবিতা পড়ুন এখানে
ভাবুক মাস্টারের পাথর পড়ুন এখানে
কবিতার বরপুত্র আসাদ চৌধুরি এখানে পড়ুন
english article here
poem by timur khan here
বাস্তুহারা তারার ইশতেহার পড়ুন এখানে
সুশান্ত হালদারের কবিতা পড়ুন এখানে
মায়াপথিক এখানে

অপারগতা 

জানতে চেওনা 
আমার চোখ দুটো লাল কেন? 
কি করে বলি-
পৃথিবীর এক আকাশ মেঘ ভর করেছে এই চোখে।

জানতে চেওনা 
আমার ঠোটঁ যুগল এতো শুষ্ক কেন 
কি করে বলি-
জলহীন মরুভূমির মতো চুম্বনের অভাব 
খরা ডেকে এনেছে এখানে।

জানতে চেওনা
আমার হৃদয় আজ অনুভূতি শূন্য কেন 
কি করে বলি- 
অভিমান জমে জমে হৃদয়টা 
হিমঘরে পরিণত হয়ে গেছে 
দূরত্বের পাহাড় ডিঙিয়ে 
জোৎস্না দেখা হয় না অনেককাল।
 
নেই আলো বাতাসের আনাগোনা  
হিমাগারে জমিয়ে রাখা মৃত মাছের মত
অপলক তাকিয়ে থাকা ছাড়া 
আর কিছুই করার থাকে না আমার।

কবি আমিনুল ইসলাম মুল্যায়ন প্রবন্ধ পড়ুন এখানে 
ড. আলী রেজার প্রবন্ধ পড়ুন এখানে ক্লিক করে
মোহাম্মদ জসিমের ভিন্ন রঙের কবিতা পড়ুন এখানে
জিল্লুর রহমান শুভ্র'র ভিন্ন স্বাদের কবিতা পড়ুন এখানে
ওপার বাংলার বিখ্যাত কবি রবীন বসুর কবিতা পড়ুন ক্লিক
ওপারের কবি তৈমুর খানের কবিতা পড়ুন এখানে

অভিনয়

অভিনয়ে ভীষণ পরিপক্ব আমরা 
নিজের ভেতরই জন্ম দেই নতুন আমিকে,
দূর্বোধ্য মুখোশের আড়ালে 
লুকিয়ে রাখি নিজের পূর্বজন্ম  
যেন নিজেই নিজের হন্তারক।

যদিও অভিনয় একপ্রকার শিল্প-
তথাপি একে সহজে আয়ত্ত করা যায় না, 
পোঁড় খাওয়া মানুষ যেমন 
বিশ্বাসের কাছে সঁপে দেয় নিজেকে 
তারপর ঠকতে থাকে। 

অন্ধকার গলির ভেতর হারিয়ে ফেলা 
আধুলি খুঁজতে খুঁজতে পার করে একটা জীবন 
শুধু অভিনয় দক্ষতা নেই বলে।

Post a Comment

Thanks

নবীনতর পূর্বতন