দশটি কবিতা।। জিল্লুর রহমান শুভ্র।। poems by zillur rahman shuvro



দশটি কবিতা
জিল্লুর রহমান শুভ্র



পুনর্জন্ম

পাহাড়ের ঘুম ভাঙেনি, আকাশও ভেঙে পড়েনি,
নেই বাতাসের গর্জন; তবু কেন পিছুটান?
হে যৈবতী কন্যা আমাকে বিশ্বাস করো--
জলের তিলক পরে লখিন্দর সেজেছি।
মৃৎপাত্রে দুধের নহর, ভিরকুটি মেরে থাকা
চন্দ্রবোড়া যদি আসে; ঘুরঘুট্টি অন্ধকারে যদি
দংশায় তোমাকে; ভাসাব তোমার ভেলা।
মুখর নদী কথুকী রূপে জাগবে তোমার পাশে;
অন্তর্জল যাত্রা চিত্রময় হবে ভাষার কারুকাজে।
সকালের আলোয় হারিয়ে যাওয়া ১০১টা নক্ষত্র
সায়ংকালে ফিরবে আত্মরতী ঢংয়ে;
মেঘজল মকশো করে আনবে জিয়ন কাঠি।
আশ্চর্য ঝাড়বাতির নিচে পুনর্জন্মের ঠিকুজি
লিখব বৃহস্পতির হরফে; অতঃপর--
বংশবীজ বুনব অস্তির বীচতায় মজনু-বাতাসে।

উত্থানপর্ব

গোধূলি নিঃশেষ; আকাশের গম্বুজে নিষণ্ন এক বিষণ্ন জাদুকর
তুমি চলে এসো তোমার লুকুনো পৃথিবী ছেড়ে এখানে;
তাঁবুতে লাল হরিণের ঝলসানো মাংসের চমক।
ভুলে যাওয়া পারদের  স্মৃতিগন্ধ শুঁকতে শুঁকতে
আরো তীব্র হব নিজস্ব স্বরে; পাখিদের অন্তর্বিলাপ
মুছে দিতে অরণ্যের খিদে হব বিরান প্রান্তরে।
এসো না ঘুরপথে, --বাতাসে কস্তুরির দুর্বিনীত সুঘ্রাণ
বসন্তবাউরি কারচুপি করে শিরীষ ঘুম, আর
চন্দ্রকলার আয়োজন প্রত্যাখাত হওয়ার পরের দৃশ্যসমূহ।
পতনবিলাসী প্রলয়ের নাচঘরে  চণ্ডালনৃত্যের আভাস পাও, তবে
এখানে, এইখানে এসে চৈত্রের শেষ রাত হও; অন্তর্দহনের
বারোমাসি মুখরতার মোরগফুল হোক ঝড়ের মুদ্রাদোষে...
চলো উজানে; যেখানে এলোমেলো পাথর শিস ফোটায়, হাওয়ারা
গুটানো আস্তিন খোলে, ব্যস্তসমস্ত নদীরা বিক্ষুব্ধ মেঘপুরাণ শোনে,
আর কামগন্ধে শিহরিত মীন সম্প্রদায় জলের দেহতত্ত্ব খোঁজে।
অতঃপর, তোমার উত্থানপর্বের শিলালিপি তীব্রতা ছড়াক...

নাহিদ হাসান রবিন এর গল্প পড়ুন এখানে ক্লিক করে
ইমদাদুল হক মিলনের নুরজাহান উপন্যাস নিয়ে প্রবন্ধঃ পড়ুন
চানক্য বাড়ৈ এর কবিতা পড়ুন এই লিংক এ

নমিতা

নমিতা! উপন্যাসের পাতার মতো ফরফর করে উড়ে
গেল অজস্র দিন-রাত। ’তুমিবিহীন’ বিবর্ণ সময়
কেবলই বিষাদের গভীর ঘুম। নিরন্তর আচ্ছন্ন করছে
আমাকে; যেন দড়ি বেঁধে টানছে নিঃসঙ্গ খাদের
দিকে। এরপর শুধুই শরবিদ্ধ হরিণের দীর্ঘশ্বাস
স্মৃতির দড়াবাজ বিভ্রান্ত দড়িতে টলটলায়মান, ক্রমশ
ছিপছিপে অন্ধকার থেকে গাঢ় অন্ধকারে, অচেনা দিগন্তের
দিকে বিপন্ন বিস্ময়ের মতো হেঁটে যাচ্ছে। তুমি আসো!
একবার চোখ মেলে দেখো! বেড়ালের  স্বভাব চুরি করে
আমি কেবলই ঘুরঘুর করছি তোমার সুগন্ধি স্মৃতির
ছায়ার চারপাশে। ধ্বনিময় বাতাসের চাপরাশি পুষ্পশোভিত
উদ্যানে অপেক্ষা করছে, তোমাকে  স্বাগত জানাতে। নিস্তরঙ্গ
রাতের বেখেয়াল নক্ষত্ররাজিও তাদের দুয়ারে ভালোবাসার
রুমাল হাতে, শুধু তোমাকে  স্বাগত জানাতে। হাওয়ায় সাঁতার
কাটা মরুভূমির হাড়কিপ্টে মেঘ খুলে দেবে বৃষ্টির দরজা,

আর প্রপঞ্চময় প্রাসাদের ঘুমকাতর প্রহরীরাও তাদের
চোখকে শাসন করছে যতক্ষণ তুমি না আসো নরম
ঘাসে পা টিপে টিপে শিশিরের পথ ধরে। ফিরে আসো
একবার! শুধু একবার! প্রিয় নমিতা! করোনা-দানব তোমাকে
ছিনিয়ে নিয়েছে, নিতে পারেনি তোমার প্রতি আমার বাতাবি
লেবুর মতো নির্ভেজাল গন্ধের ভালোবাসা। হেমন্তের ভিজে
সন্ধ্যায় দুয়ারে দাঁড়িয়ে কতকাল থেকেছ একজোড়া দুলের
অপেক্ষায়; তাই নূহের নৌকা থেকে এনেছি ভালোবাসার
দুল। শিশুদের বড় ভালোবাসতে তাই ব্যাবিলন থেকে শিশুদের
চুম্বন। সুচিত্রা সেন তোমার প্রিয় নায়িকা; তাই গান্ধার থেকে
দারুচিনি দ্বীপ খুঁজে এনেছি তার অদ্ভুত মুখের খুনবাজ
হাসি। চেয়েছিলে মুক্তোর গেঁড়ুয়া, তাই সমুদ্রমন্থন করে
ঝিনুকের জঠর থেকে এনেছি কত মুক্তো! এসে দেখো
এই আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি! জানি তুমি
আসবে না। ধরিত্রীর সমান তোমার অভিমান। কোন
অর্বাচীন ভাঙাতে পারো বলো! নীড়ে ফেরা পাখিদের
গভীর ঘুমের মতন ধ্যানস্থ রাত। কষ্টের নৃত্যগুলো
জিপসিদের মতো উন্মাতাল! হাহাকার গোরখোদকের
মতো কেবলই খুঁড়ছে নিঃস্ব হৃদয়! যদিও বেদনার মানচিত্র
আর শোকের খান্ডব দাহন ছাড়া সেখানে আর কিছুই নেই।
অচেনা আঁধারের প্রতি তোমার অকাল বোধন, আমার
চেতনার সমস্ত স্তরে এনেছে কবরের নিস্তব্ধতা। কাঁদতেও
পারছি না আর। দিকচক্রবাল, আকাশের তারায় তারায়,
ল্যাম্পপোস্ট ও পোস্টারে তোমাকে দেখি। কোনো এক
অদৃশ্য জাদুকরের কারসাজিতে মিলিয়ে যাও অন্ধকারে,
সুদূরে। অজস্র নাফাম বোমায় বিধ্বস্ত শহর থেকে আহত
যোদ্ধার মতো পলাতক আমি ’তুমিবিহীন’ মানুষের এই
কোলাহল থেকে নত মস্তকে, ত্রস্তপদে, ভেজাচোখে। বার্চ
বনে পাতাঝরা সন্ধ্যায় নিঃসঙ্গ পাতা কুড়ানি হাঁটবে, চাঁদের
অমাবস্যায় নদীভাঙন তীব্র হবে, সমুদ্রফেরত বাতাসের নাভিতে
বসে দুষ্ট ডলফিন শিস ফোটাবে, পৃথিবীর সমস্ত ঘরে ফেরা নদী
মেঘের ডানায় আবার ফিরবে, সুন্দর মুখের রমণীরা পার্কের বেঞ্চে
বসে তাদের সঙ্গীর হাত ধরে খোশগল্প করবে, শুধু তুমিই
নেই; চলে গেছ হিম শীতল গভীর গোপন পথে অন্ধকার পতনে!

ঘোর 

আমার জন্মসনদে অতলান্ত ঘোরের ঘ্রাণ।
নদীকূলে মাছরাঙা ধ্যানের পালক খসালে
কী এক অলৌকিক মায়াচিহ্ন এসে
লাজুক এবং সংশয়ী  স্তব্ধতার চিলেকোঠায়
উবু হয়ে বসে;
অমানুষি ঘোরে হাজার নারীর স্তন কেটে
উপগত হই তার পানে!
সায়াহ্ন ও সারঙের যুগলবন্দি ফ্রেমে
মায়াচিহ্ন বন্দি হলে
বেরেষের কাঠে মাথা ঠুকি অবশেষে;
বলে উঠি, হায়! 

কিম্পুরুষের জন্মসনদেও ঘোর অফুরান।
গ্যালিলিও’র বমি গিলে মুখ ব্যাদান করে
দাঁড়িয়ে থাকে সে ঘোড়দৌড়ের মাঠে;
ত্রিকোণ বাতাসে হঠাৎ জ¦লা অগ্নিরূপ,
অশ্বমেঘের ক্তমাখা সপ্তর্ষি’র মুখ,
যে পাষাণ গ্রহ করেনি আজও জোস্নাস্নান
তার নিতম্বে মহাতিমির লেখে মহাকালের পুরাণ--
এসব ঘোরক্রিয়া কঠিন পোড়ায় তাকে।
১+২
আমি ও সে কোথাকার কে?
অথচ উভয়েই নতজানু ঘোরের চাবুকে। 


পানপাত্র হাতে একা

কতটা নিখুঁত হলে তুমি আসবে পানশালায়
বিশ্বাসের ধ্বংসস্তুপে খুঁজি অগণন ইতিহাস
সমস্ত মুছে দিয়ে পানপাত্র হাতে একাই সরব।
কোথাও হিসহিস নেই, পড়ে আছে শুধু
কাঁটা চামচের লাশ। দূরে হাই তোলে ঘুমপিয়াসী
চাঁদ; খোঁজে আঁধারের লাশকাটা ঘরে আলোর গরব।
দেয়ালে ছায়া পড়ে যে পীত হরিণের, কতকাল
স্বপ্ন ছিল তার কোনো এক হরিণীর ফুলশয্যা--
চোখে অভিশাপের বুদ্বুদ, বিভ্রম তার অন্তেবাসী।
এক থুড়থুড়ে নগরে যে নরখাদক ছিল শবযাত্রায়,
খেয়েছে তার রমণীয় মজ্জা। হেঁটে চলে রাত মাথা
অবনত, সম্ভ্রম হারা যেন এক বিবস্ত্র ক্রিতদাসী।
ক্রমশ দূরে চলে যায় সূর্যের আলিঙ্গনে; আমি এইখানে
একা--পানপাত্র হাতে। দেরি নেই পাখিদের ষড়যন্ত্র,
কস্তুরির ঘ্রাণ দমবন্ধ হাওয়ায় বন্দি তুমি নেই বলে।
তোমার অনাবাদি শরীর থেকে খসে না কালক্ষেপণের সুতো,
সত্যিই জানোনা কি অভিসারের মন্ত্র? উজানে হাঁটুভাঙা জল,
তবুও আসোনা; তবে আসবে কী পাহাড়ের মৃত্যু হলে?


জীবনানন্দ

জীবনানন্দ দাশ, যতবার পান করি
তোমাকে
বেহুঁশ হয়ে শুনি নর্তকীর ঘুঙুর,
দূর সমুদ্র থেকে ভেসে আসা
নাবিকের গান, আর
শৈশবের পাঠশালা থেকে
ধারাপাতের অজস্র ভুল উচ্চারণ।
নদী ও কুয়াশার সঙ্গমে যখন
বিভ্রম খেলা করে
চাঁদের নাগরদোলায় তোমাকে দেখি
জীবনানন্দ
এক অদ্ভুত ভঙ্গিতে, তেজারতির গন্ডশৈল থেকে দূরে, 
বসে আছ খরস্নায়ু রূপকের খোঁজে।
যারা পানশালায় অহংকারের চুম্বনে
ভরিয়ে দিত গ্লাস, ঠুংঠাং শব্দে
আকাশ কাঁপাত, তারা আজ কোথায়?
বড় বেশি মনে পড়ে তোমাকে
জীবনানন্দ
আজ সবাই পিয়ানোবাদক
প্যাঁক প্যাঁক এদের সিম্ফনি।
এই সমস্ত সিম্ফনি থেকে
এই সমস্ত মাছিদের থেকে
দূরে--মৃতপ্রায় কোলাহলের গ্রীবার কাছে
বিষণ্ন ল্যাম্পপোস্টের নিচে
...আমি একা, বড় একা;
অনুচ্চারিত শব্দের মতো পান করে চলেছি
ধূসর জীবনানন্দ
--শুধু তোমাকে!


সপ্ত সুর
 ১
ভাঙা চাঁদের দেবদাস
ক্রমশ নুইয়ে পড়ে বাসি ভাতের মৌতাতে।
 ২
পরাস্ত মানুষের সূর্যাস্ত বিষণ্নতার মই বেয়ে নামে
নামতে নামতে পৌঁছে যায় মৃত্যুর নিলাম ঘরে। 

সেঁটে আছে ব্লাউজ
বগলের নিচে নুনের খুড়তুতো ভাই। 

হু হু করে ঢুকছে অন্ধকার করোটির ভেতর
নির্বাসন থেকে ফিরে এসো হে গণমুখি সুন্দর! 

শরীরের ভেতর শরীর অন্ধ জোছনায়
ভোরের দরজা খুলে ডেকে ওঠে
কান্নার  স্বরে
হৃদয় দেয়া-নেয়া হয়নি
তবুও হৃদয়ের দাবি নিয়ে এসেছে । 


রতিক্রিয়ার শুদ্ধ ব্যাকরণ চর্চা করে না বানর
তবুও ন্যাড়া বেলতলায় যায়; সবাই প্রেমকাতর। 

নীতিশাস্ত্রের কপাল পুড়েছে
যখন পেয়েছি আলাদিনের চেরাগ
দু’মুঠো ভাতের লক্ষ্মী পায়ে ঠেলে
গিয়েছি আরামবাগ।


স্তব্ধতা

ডিসেম্বর, জেঁকে বসা কুয়াশারাত, কোলাহল কবরস্থ;
কবরের সুনসান স্তব্ধতায় যেন ঘানি টানছি 
আমার গ্লানি ও দুরাশার।
দূরে, ওই দূরে, অজস্র চকিত শোভন
স্থির হয়ে আছে কিংবা ঘানি টানছে
তাদের কৃতকর্মের ফল, আমারই মতন;
তাদের আড়ালে যে-সমস্ত ভোজবাজি দেখেছিল মহাকাল
সেসমস্ত ভোজবাজিও আজ স্তব্ধতায় নাকাল।
ঘানিটানা হলে শেষ
যতসব উড়ালদৃশ্য, মুখ হা করে আসা বেড়ালের শ্বাস
নিখুঁত তরবারির কলাকৌশলে ফালি ফালি হলে 
চলে যাব চুম্বনের প্রহরে
তোমার মায়াবী স্পর্শ থেকে দূরে আরেক স্তব্ধতায়।
কাছে কিংবা দূরে যেখানেই থাকো
তোমার নাকফুল খুঁজে পাও আর না পাও
অপাপবিদ্ধ অস্তিত্বের নেকাব পরে
আমার স্তব্ধতা মুখরিত করো তোমার বুকের পাঁজরে। 


যে আছে গভীর নীরবে

বৃক্ষরা বনবাসে গেলে তাতে কী যায় আসে! তারাদের অন্তর্ধান রহস্য খুঁজুক তারা। হৃদয়বল্লভা! আমি খুঁজি তোমাকে--শুধু তোমাকে। মাস্তুলে লেগেছে হাওয়া, তবুও যারা পড়ে আছে বন্দরে আমি তাদের মতো নই। চোখের পাপড়িতে। ভারাক্রান্ত হাওয়া; তাতেই ছুটে চলেছি বন্দর থেকে বন্দরে।  নীল নদ পেরিয়ে প্রেতযোনিদের গুপ্ত ডেরায়, কখনও বা উরাল পর্বতমালা ডিঙিয়ে। বাণকাড়া দুধের মতো সেই সমস্ত নারীদের দরজায়; যারা হৃদয় খুইয়ে নির্বাক, চেয়ে থাকে নির্নিমিখ; কবে স্বপ্নবাড়ির বন্ধ ঘড়ির কাঁটায় ফিরবে প্রাণ?

নগ্নবক্ষা চাঁদ উঁকি দিলে, জলের পিঁড়িতে বসে সমুদ্রের গান শোনাব প্লুতগতির ধাবমান সময় স্থির করে রাখব তোমার পৃথিবীর’পর।  হিরে-জহরতের বালাই নেই, নেই অপর্তস্নেহের মতো গভীর  আলিঙ্গন। তবুও কোন মায়াজালে নীরবতার খনিতে নীরব রেখেছ তুমি তোমাকে!


জট

দাঁত-কপাটি সন্ধ্যা, জট খুলছে না কিছুতেই। কোথায়
গেলে আমার ভালোবাসা বেহালার সুরে? বুনো গ্রীষ্মফুল
পান করে সুরের হাহাকার, বিধ্বস্ত নীলিমা পরে বেদনার
সাতনরি হার, নামফলক বিহীন নক্ষত্রের দরোজায় বেচারি
পোস্টম্যান! তোমার ভারাক্রান্ত শূন্যতা মহাকালের ক্রন্দনধ্বনি
হয়ে ফিরে আসে অপেক্ষার জতুগৃহে; যেখানে আকাঙ্খার মেঘ
ও মেঘরাশি তুমুল উৎকণ্ঠায়। বিষাদের দুরবিনে দেখি
দূর সমুদ্রে দুঃস্বপ্নের মাস্তুল। দেখিনা তোমার দিঘল চুলের
ঝড়ো হাওয়া, চোখের তারায় সূর্যাস্তের আগুন, হাওয়ায়
ভেসে ওঠা শাড়ির বেশরম আচরণ। পানশালায় শূন্য পেয়ালা,
পাথুরে দেয়ালে নগ্নবক্ষা নারীদের ঘুমচিত্র; তরবারি চুইয়ে
পড়া ফোঁটায় ফোঁটায় রক্তের মতো তুমি আসবে বলে
থরহরি কম্পমান বাদক দল! তুমি আসোনি, বেহালা বিভ্রমে
চলে গেছ কী সময়কে সংহার করে সময়হীন অন্ধকারে!
পাহাড়ি পথে অশ্বখুরের জাদুময় শব্দের মতো কতকাল
শুনিনি দরোজায় ঠক ঠক শব্দ, জানালার পাশে ছিনাল
বাতাসের মাতাল শিস, আর কামনার বালিয়াড়িতে শুয়ে
দেখিনি তোমার সমুদ্রস্নান! রাত জাগি, অপেক্ষা করি, এই
পোড়া মনের নাট্যশালায় কবে মঞ্চস্থ হবে তুমি? তোমার
অভিমানের আকাশ কবে ভেঙে পড়বে? পাখিরাও অভিমান
করে, হয়ত বৃক্ষরাও। তবে কী তারা কাঁদায়? কেঁদেই বা কী
লাভ? তবুও কাঁদি। কেঁদে যাওয়াই তো কারও জীবন।

Post a Comment

Thanks

নবীনতর পূর্বতন