মৃতজীবী তুমি ও অন্যান্য কবিতা ।। সৌপর্ণ মাছুম।। poems by sauporna masum--kuasha



সৌপর্ণ মাসুম।। কবি

গুচ্ছকবিতা
সৌপর্ণ মাছুম 


শক্তির নিত্যতা

একদিন কোনো এককালে
কোনো এক মানব জন্মে
এসেছিলাম বদ্বীপ পলির দেশে ।

অটল সন্ন্যাসী বাল্মীকির মতো
তোমাকেই গেছি চেয়ে,
কোনো এককালে
নিভৃতে নিস্তব্ধ সিদ্ধধ্যানে।

এরপর মিশে গেল দেহ-মন-প্রাণ
দো-আঁশ বিস্মৃত-এই পলিদ্বীপদেশে.....

একদিন তুমিও কোনো এককালে
আসবে এ জলাঙ্গীর সবুজ ঢেউয়ে
দিনশেষে সায়াহ্নের ঘাটে
কর্মক্লান্ত তুমি অবগাহন শেষে
নীরব হবে মহাশান্তির ঘুমে।

ছেড়ে যাবে সবাই; তখন কেবলি এ আমি
সমাধির পলি হয়ে যাব ও বুকে
মর্মর প্রস্তরে র'ব আভরণে !


সূর্য-প্রোটন

তোমাকেই ঘিরে সূর্য-প্রোটন
জড়ময় সংশয়
স্থির অরবিটে নিরন্তর ঘুরি
নেতি- ইলেকট্রন প্রায়।

আমি চিরজড়, নিথর দেহ
পড়ে দেখ এই প্রাণ
প্রতি পরমাণু তোমাকে তওয়াফ
করে চলে অবিরাম।

স্থিতিজড়তায় স্থিতিশীল নয়
বিচ্যুতিহীন জ্যোতি
নব অবয়বে মূর্তময় তুমি
ধ্রুব বিমূর্তগতি !


হরমোনের মন

তুমি আমি গড়া একই উপাদানে
তবুও ভিন্ন খেয়াল
হরমোনের মন দেহমনে গড়ে
সূক্ষ্ম প্রভেদ-দেয়াল ।

ক্লিনিক্যাল টেস্ট রিপোর্টে হলো
রহস্য উন্মোচন
ইস্ট্রোজেনে ধনবান তুমি
প্রকৃতির প্রয়োজন।

যে তোমার ধারক রূপ-লাবণ্যের
চিন্তা ও চেতনার
মাতৃপেলব প্রেয়সী গড়নে
শুধু অবদান তার।

তুমি নও তোমার, তুমি শুধু তার
প্রাণরসে জাগে শ্যেন
চির সহচর তোমার প্রেমিক
ক্ষরিত ইস্ট্রোজেন !


মৃতজীবী তুমি

তোমার ফর্সা ফ্রুটবডি আজ
আভিজাত্যের প্রতীক।
ধার ধারো নাকো তাই
তুমি সূর্যের।

রতনে রতনে চেনে
বিয়োজক তুমি
জন্মই যেন তোমার কর্মের লিপি।

লালনে ভোজ্য তুমি
মানি এগারিকাস
অনাদরে বেড়ে ওঠো
ব্যাঙের ছাতায়।

মাশরুম হলেও
তোমার সুপ্ত পরিচয়
মৃতে দেহ পুষ্ট
মৃতজীবী তুমি।

লতিফ জোয়ার্দারের কবিতা পড়ুন এখানে
nobel prizev:2025 on litterature here
ইসলাম তৌহীদের কবিতা পড়ুন এখানে
মহসিন খোন্দকারের কবিতা পড়ুন এখানে
গল্প বরফের ছুরি পড়ুন এখানে
প্রবন্ধ,উত্তরাধুনিক কাব্যধারার যাত্রাঃ মতিন বৈরাগী-এখানে
প্রবন্ধঃ রাজনীতি ও সাহিত্য পারস্পরিক সম্পর্ক পড়ুন এখানে
কবি মজিদ মাহমুদের গুচ্ছকবিতা পড়ুন এখানে

প্রত্যাবর্তন

এখন হয়তো তুমি ঠেলে দিবে দূরে
আসবে না কাছে অস্পৃশ্য-ঘৃণায়।
অথচ জানো নাকো তুমি; বহুকাল আগে-
যখন ছিল না এই রবি-পরিবার
গ্রহতারা নীহারিকা, এ আকাশগঙ্গা
অসীম বিস্তৃত এই মহাবিশ্ব।

'হাজার বছর ধরে' তখন তোমার বুকে
কত ঘুম ঘুমিয়েছি, গেছ সব ভুলে ?
এরপর মহাবিস্ফোরণকালে
শুরু হলো গতির প্রথম স্ফূরণ।
তুমি-আমি ছুটিলাম পরস্পর হতে
যোজন যোজন দূরে মেরু-বিপরীতে।

তারপর কোনো এক বসন্তে
প্রাণ পেয়ে জাগলাম চকোরতৃষায়
তোমাকে প্রেমার্ঘ্য করি সমর্পণ,
বিস্মৃত তুমি; ফিরালে অসীম ঘৃণায় !

ভেবো না; আবারও কোনো এককালে
উদ্ভবের বিপরীত ক্রিয়ায়
বিতাড়িত আমি করব ও কোলে
মধুর প্রত্যাবর্তন।


প্রিজমপ্রণয়চোখে

একবার শুধু আমাকে দ্যাখো
অনাসক্ত বিশ্বাসে
দ্বিউত্তল লেন্সে নয়
প্রিজমপ্রণয়চোখে ! 

ল্যাক্রিমাল হতে নিঃসৃত
অ্যাকুয়াস হিউমারে
দেখ এ হৃদয় রংধনুসম
সাজানো বর্ণচ্ছটায়।

রোডোপসিনের উদ্দীপনায়
যেই রডকোষ জাগে
তার মায়াজালে বন্দী তুমি
রোজ আসো স্বপনলোকে।

আয়োডপসিন কোণকোষে সাজে
জীবনের গাঢ় রঙে
রঞ্জিত হয় দশদিক যেন
তীব্র আলোর স্রোতে।

জোড়া আইরিশ রন্ধ্র পেরিয়ে
এসো এ মানসলোকে
আপনার প্রতিবিম্ব কেবলি
দেখবে রেটিনাপটে ! 


চাকা

চলনঘূর্ণন গতির মিথস্ক্রিয়ায়
সভ্যতা যেন মহাবেগে বহমান
ঘর্ষণরোধে তোমার গঠনশৈলী
যুগে যুগে তোমাকে করেছে অমর ।

মেসোপটেমিয়া হতে তোমার স্পন্দন
বিস্তারে মহাবেগে দিক-বিদিকে
রন্ধ্রে রন্ধ্রে বাজে সে জয়ধ্বনি
পরবশ অনুনাদে।

কোটি রঙ-মানুষের স্বপ্নমহল
কাঁধে বয়ে চলছ নিরন্তর তুমি
বেলা অবেলায়।

যে গতি করলে দান নব প্রেষণায়
সম সমত্বরণে তা চলে অবিরাম
মসৃণ কপিকলে যুগ যুগ ধরে।


মিথস্ক্রিয়া

তবে কি আমার কোনো স্বাধীনতা নেই ?
কেবল তোমার বেদবিধিতেই হবে চলতে ?

প্রত্যাখ্যান কিংবা ঘৃণা করারও
আমার নেই আজ অধিকার,
অন্যকে ভালোবাসারও নেই অপশন ।
গঙ্গাজলে আর কতকাল চলবে গঙ্গাপূজা ।

শুভ্র শান্তির পায়রা উড়িয়ে
সন্ধিকাফননিশান ছড়িয়ে
বিপরীত দ্বান্দ্বিক মিথস্ক্রিয়ায়
দুজনার চাওয়াই আজ বিজিত ।

কথার কারুকার্যে চলুক
তোমার বিষম স্তুতি
সমান্তরালে হৃদয়ে ফুটুক
নিখাদ সিরিশ ঘৃণা !


সান্দ্রতরল

সান্দ্রতা গুণে প্রবাহী তরল
তরলের ঐশ্বর্য
রেতঃসান্দ্রতা জাইগোট জ্বলে
আদি স্পন্দনধারা ।

পুষ্পরসের সান্দ্রতা যশ
দেশে দেশে কালে কালে
প্রাশনে সে যায় মহা সমাদরে
নিত্য আপনগুণে।

তাপে নিংড়ায়ে তরল সোনা
লব্ধ যে অবশেষ
সান্দ্রতাময় বিটুমিনে থাকে
চরণদানির তলে !

কলসে বালির কাঁথা

নক্ষত্রের বিচ্ছেদনামায়
সজ্জিত অবনিকলস
পরতে পরতে যার বাসাবাঁধে 
নিস্তব্ধ ব্লাকহোল ।

ঘটনাদিগন্তের বিস্তৃত ঘটে
সব আলো সব রঙ করে বিশ্রাম
নগ্নশরীরে কেবল জড়ানো থাকে
সভ্যতা বিস্মৃত ইতিহাস ।

বাতাসে আগুন কাঁদে
ছোটে গগনহরিৎ
জ্বলে যায় বৃক্ষকাল
চেতনার আচ্ছাদনে ।

শুভ্র পেলব বুকের অরণ্য-পীযূষ
তারি ভস্মেই ওড়ে নগরচিতা
ঊষর মরুতে কাঁদে তিনভাগ জল
পড়ে থাকে, কলসে বালির কাঁথা !

Post a Comment

Thanks

নবীনতর পূর্বতন