মঙ্গলবার, ১৩ মার্চ, ২০১৮

অণুগল্পঃ তুমি পাপ কলেথো ।। সুধাংশু চক্রবর্ত্তী





তুমি পাপ কলেথো 

বিগত পনেরো বছর ধরে মাংসের কারবার করার সুবাদে রত্নাকর কসাই দেখেছে পাঁঠার গলায় চপারের কোপ বসানো মাত্র ধড় থেকে মুণ্ডু আলাদা হয়ে যায় এবং মুণ্ডুহীন ধড়টা বেশ কিছুক্ষণ ছটফট করতে থাকে হাত-পা ছুঁড়ে । এই হাত-পা ছুঁড়ে ছটফট করাটাকে এতকাল মৃত্যু-যন্ত্রণা বলে জেনে এসেছে । আরও জেনেছে যে, ইহজগতের তাবৎ জীবজগতকেই একদিন এই যন্ত্রণা ভোগ করতে হয় ।

একটু আগে যে-পাঁঠাটাকে বলি দিয়েছে তার মুণ্ডুহীন ধড়টা এখনো ছটফট করছে চার-পা ছুঁড়ে । এবার পাঁঠাটার ছাল ছাড়াতে হবে, নাড়িভুঁড়ি কেটে সাফ করে ঝুলিয়ে দিতে হবে দোকানের সামনে । এখনো ছটফট করতে থাকা ধড়টার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে শিশ্যুকন্যা কিন্নরীর বলা সকালের কথাগুলো ওর মনে পড়ে যায় । ও যখন দড়িতে বাঁধা কচি পাঁঠাটার দিকে লোভাতুর চোখে তাকিয়ে চপার ধার দিচ্ছিলো পাষানে ঘষে শিশুকন্যা কিন্নরী তখন ওকে ডেকে বলেছিলো, “ওকে তুমি মেলো না বাবা । তোমাল পাপ হোবে । মালতে হোলে আমাকে মালো তুমি ।” কর্ণপাত করেনি কন্যার কথায় । 
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে শক্ত মুঠোয় ধরে থাকা রক্তমাখা চপারের দিকে তাকাতেই রত্নাকরের মনে হয় চপারটা যেন ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে । সহসা ওর ধারণা হয় রক্তাক্ত চপারটা যেন ওর শক্ত মুঠোর বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে কারও ঘাড় লক্ষ্য করে ছুটে যেতে চাইছে । এরপরই দেখে চপারটা ওর হাত থেকে ছিটকে বেরিয়ে গিয়ে ওরই শিশুকন্যা কিন্নরীর মুণ্ডুটাকে এক কোপে ধড় থেকে আলাদা করে দিলো । চোখের সামনে ঝুলে থাকা অদৃশ্য পরদায় এতকিছু ছবি পরপর ঘটে যেতে দেখে ভয়ভীত রত্নাকর উন্মাদ হয়ে যায় ।

রক্তমাখা চপারখানা দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে সে উন্মাদের মত চিৎকার জুড়ে দেয় – “পাপ, ঘোর পাপ । আমি পাপ করেছি । এতকাল পশু হত্যা করে যে পাপ করেছি তার কোনো ক্ষমা নেই । সকালে কিন্নরীমা ঠিকই বলেছে , “ওকে তুমি মেরো না বাবা । তোমার পাপ হবে ।” 
  
রত্নাকরের চিৎকার শুনে স্ত্রী কৌমুদি এবং শিশুকন্যা কিন্নরী ছুটে আসে বাইরে । এসে কিছু বুঝতে না পেরে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে সেখানে । কচি কিন্নরী বাবার অবস্থা দেখে কান্না জুড়ে দেয় – “তুমি পাপ কলেথো । তুমি পাপ কলেথো ।” 
স্ত্রী কৌমুদির হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে । তার মুখে কথা সরে না । ওদিকে রত্নাকর কসাইয়ের পাগলামো চলতে থাকে সমান তালে । 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন