গোলাম
অনন্য রাসেল
জন্মদিনে কাউকে স্মরণ করার ভিতর লুকিয়ে থাকে স্বার্থ অভিলাষ কিন্তু মৃত্যু দিনে স্মরণ করার মাঝে লুকিয়ে থাকে গভীর গভীরতম ভালাবাস,প্রেম। বিগত প্রাণ লোকের কর্মের মূলায়ণ হয়ে যায় এর ভিতর।তার জন্ম কতটা সার্থক করে তুলতে পেরেছিলেন।হতে পেরেছিলেন কি অনন্য মানব!
আজ রায়হানের জন্মদিনে এসে কেমন যেন এমন অনুভূতি জাগল রোহানের। রায়হান কেউ না, কোন পরিজন নয়, তবু তাকে আসতে হয়েছে, নিজের বেতনের প্রায় ত্রিশ ভাগ খরচ করে।বসকে খুশি করার জন্য।একটু সুনজর কেড়ে নিতে।যেন নিশ্চনতে নির্ভাবনা চাকুরীটা করে যেতে পারে। প্রমোশন যেন হয়।
আচ্ছা আমরা মানুষ কিন্তু কুকুরের স্বভাব কেন আমাদের। প্রভু ভক্তি না করলে কি চলে না,চলে হয়ত,
কিন্তু আজকাল যেদিন যাচ্ছে এসব না করলে চলে না
এই গত শনিবারের কথায় ধরা যাক না কেন?
তার একমাত্র মেয়ের জন্মদিন ছিল। একটা কিছু কিনতে পারিনি। ম্যানাজারের ম্যারেজ ডে ছিল।
মেয়ের কেক জামা কেনার টাকা দিয়ে উপহার কিনে নিয়ে গেলাম।বউটা খুব মন খারাপ করেছিল।মেয়েটার মুখের দিকে তাকাতে পারিনি।
রোহান তুমি কি দিন দিন গোলাম হয়ে যাচ্ছ।কত স্বাধীনতার কথা বলেছিলে। স্বাধীন জীবন যাপন করবে। নিজের ইচ্ছা মত ঘুরবে ফিরবে কই গেল সব।
স ভাঁওতাবাজি ছিল তোমার আসলে তুমি একটা গোলাম। মাঝে কিছুকাল স্বাধীনতার মুখোশ পরেছিলে।বুঝতে পারনি।
বজলু ভাইয়ের জন্য তুমি কত কিনা করেছ।হলের নীরিহ ছেলেগুলোকে ধরে নিয়ে যেতে মিছিল করতে।
তাদের পরীক্ষার কথা শুনতে না,কেউ যদি বলত
ভাই আমি যেতে পারব না। শরীর খারাপ।
এসব ভড়ং বাদ দে। মিছিলে গেল সব ঠিক হয়ে যাবে
সেদিন কি কান্ডটা না হলো
আসর মিছিলে মাথা ঘুরে পড়ে গেল। তুমি ফিরেও তাকালে না।
বরং আরো জোরে বলতে থাকলে
বজলু ভাইয়ের কিছু হলে
জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে।
পুলিশের চামড়া
তুলে নিবআমরা।
শনিবারে কি করেছ ভুলে গেলে
একটা ছেলে থার্ড ইয়ারে পড়ে তার বাদ্ধবী এসেছে হলের গেস্ট রুমে বসেছিল তাকে জোর করে ধরে মিছিলে নিয়ে গেলে।
তার সিট দেয়ার জন্য কত জনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছ।
ল
কত জনের থেকে ধার করেছ।কোনদিন শোধ দাওনি।
তবে তোমার একটা ভালোগুন ছিল। কোন বান্ধবী সাহায্য চেয়ে নিরাশ হওনি।
তোমার এক বন্ধু আজমল,তোমার রুমমেট ছিল। যে ভালোবাসত তোমার ডিপার্টমেন্ট এর বান্ধবী শিউলি কে ভালবাসত।
কি ভিলেনগিরী না তুমি করে ছিল। তোমার কারণে তাদের আর প্রেম হয়নি।তুমি ভেবেছিলে সে কিছু বোঝে নাই, বুঝেছিল কিন্তু কিছু বলে কারণ তুমি বজলু ভাইয়ের লোক।
আসলে তুমি তোষামোদি করে ক্ষমতার কাছাকাছি থাকতে চাও। তুমি --
এই রোহান! জি স্যার তুমি খাবে না।
চলো সবাই টেবিলে বসে আছে।
হঠাৎ আত্মকথনে ছেদ পড়ল।
অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি যাবে বলে পা বাড়াল।কেমন যেন তার বাসে উঠতে মন চাইল না।
বাসের সারি সারি করে দাঁড়ান দেখে মনে হল এটা রাস্তা না পাকিং গ্যারেজ। কখন থেকে বুড়া অসিমতের মত ঠায় বসে আছে।
রোহান ধানমন্ডি লেকা গিয়ে বসল। আজ কেমন জানি মন্টা বিগড়ে গেছে।
ফোন বন্ধ হয়ে গেছে।
তুমি পারবে না রোহান তুমি পারবে না।তুমি লক্ষণ সেনের মত বেচে আছ।এ কে জীবন বলে না,বলে জীবাশ্ম বহন।
যদি স্বাধীন হতে চাও তাহলে চাকরগিরি ছাড়।নিজেকে চেন আর কত কাল বজলু ভাই, বস, ম্যানাজারের পতুল হয়ে থাকবে।সবাই তোমাকে টিস্যুভাবে। প্রয়োজন ফুরালে ফেলে দেবে।নিজের মেধাকে কাজে লাগাও, নিজে কিছু কর।
পপির জন্য দিয়ানা হয়েছিলে সেও লাথি মেরে চলে গেছে।
কিন্তু চাকুরী ছাড়লে কি কিভাবে চলবে? মেয়ে বউ সংসার এদের কি হবে?
নিজের ভাবনায় জ্ঞানির কাজ।
দরকার নাই আমার জ্ঞানি হওয়ার।
বলে রোহান বাসার দিকে পা বাড়ল।
মাথাটা টন করছে। মনে হচ্ছে লাটিম যেন মাথার ভিতর ঘুরছে।সোবাহান বাগ পার না হতেই পড়ে গেল।
এই রোহান তুমি বিড় বিড় করে কি বল।
ডাক্তার বলেছে টেনশন করার কিছু নাই। তোমার কিছু হয়নি পেশার বেড়ে গিয়েছিল হঠাৎ
টেবিলে দেখে অনেক ফুল।ফুলের সুবাস সমস্ত ঘরে ছড়িয়ে পরেছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন