গল্প।। ইয়ার্কির প্রেম।। অনন্য রাসেল।। story by anonno rasel__কুয়াশা

গল্প।। ইয়ার্কির প্রেম।। অনন্য রাসেল।। story by anonno rasel__কুয়াশা

 



ইয়ার্কির প্রেম।। অনন্য রাসেল


একটা কিছু কর।
বাসা থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে।
 
প্রতিদিন দেখা হলেই পারু এই কথা বলে। জীবনে স্বপ্নের সাথে আপোষ করব না বলে মনে মনে জেদ পোষণ করি।নপারুর সাথে দেখা হলেই আমার সেই স্বপের উপর প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি হয়। স্বপ্ন আমার আঘাতে  জর্জরিত হয়। আমি স্বাপ্নিক মানুষ,কিছুটা স্বাধীনচেতা। এ দেশ স্বাপ্নিক মানুষ আর স্বাধীনচেতাদের রওজা মোবারক। বাবা মা গত হওয়ার পর হাজার মানুষের মতো আমিও হতাশায় আচ্ছন্ন হই।হতাশার ছায়া ফেলে, আমার কায়া সেই ছায়াতে হারায়।নতখন আমি বুঝতে পারি আমার বুদ্ধি বিনাশ হচ্ছে।চারিদিকে শূন্যতা নেমে আসে।
 
আমি একা হওয়ায় আমার মুরব্বি অনেক।গন্ডায় গণ্ডায় মুরব্বি। একেকজন একেক রকম পরামর্শ দিয়ে আমার মাথায় ধানের ভ্যাড়ের মত ভরাট করে ফেলেছে। আমি ট্যাপা মাছের মত দিশেহারা হয়ে যায়। সে সময় আমার চেয়ে দু বছরের বড় কিন্তু আমার সহপাঠী পারভিন আকতার পারু।আমাকে সঙ্গ দেয়।তার মানসিক  আমাকে সঙ্গ যেন বাতাস  দেয়। আস্তে আস্তে আমার  গোলাভরাট মাথা শুন্য হতে থাকে।কিছুটা সম্বিত ফিরে পাই। পারু আমার আত্মীয় না কিন্তু বাবার পারিবারিক। সম্পর্কটা এমন লোকে শুনলে নিন্দা করবে কিন্তু ধর্মীয় বিধি নিষেধ নেই বিবাহের ক্ষেত্রে।আমি তাকে খালা ডাকতাম। শুন্যতার দিনে পারুই ছিল পূর্ণতা।চলতে চলতে বলতে বলতে এক সময় খালার বাঁধন হারিয়ে যায়। কেবল পড়ে থাকে  পারু। শুধু পারু।ডালিমের মত মিষ্টি রসাল পারু।
 
আমার নাম হারুন। আমি এখন এম এ পড়ছি। এম এ পড়ার কাল হলো পুরুষদের অর্জন আর বর্জনের কাল।স্বপ্নকে ছুতে হলে প্রিয় অনেক কিছু হারাতে হয়।। ছোট বেলা থেকে একটা কথা বিশ্বাস করি। জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আপনার ক্ষুদ্রতর স্বার্থ ত্যাগ করতেই হবে। যাই হোক খালা আমাকে হারু বলে ডাকত। আমাদের কথাবার্তা শুনে কেউ বিশ্বাস করবে না যে আমাদের মধ্যে কালিন্দী প্রবাহিত হচ্ছে।চলাফেরা দেখে বোঝার উপায় নেই   যে আমরা যমুনায় হাবুডুবু খাচ্ছি। কেউ বুঝতে পারবে না এ যমুনায় সিক্ত হচ্ছে বাঙালি।  আপনারা হয়ত জানেন না বাবা মারা যাওয়ার পর আমার জন্য বিঘা দশেক জমি আর বাড়ি রেখে যায়।উচ্চমাধ্যমিক এ পড়ার সময় বাবা মারা যায়। মাস দুয়েক ব্যবধানে মা তার পিয়ারের কাছে ফিরে যায়।তাদের বন্ধন খুব মধুর ছিল। তাই দুজনে তাড়াতাড়ি আবার এক হয়।আর আমি তাদের পুষ্প হয়ে মরুতে পড়ে থাকি।
 
জমি কট লাগায় আর পড়ি।এ পৃথিবীতে আমি পড়া ছাড়া কোন কাজ পারি না। জমি কট লাগায় আর পড়ি।
ভর্তি কোচিং করতে যায় ঢাকায়।আমি জানি ঢাকা আমাকে ফাঁকা করবে তবুও আমি সাহস সঞ্চয় করে ঢাকাতেই পাড়ি জমায়।নআমি পরীক্ষা দিয়েই ভর্তি হই।রেজাল্ট এর পর পারু আমার কোচিং এ ভর্তি হয়।এসময় পারু আর খালা থাকে না। সম্পর্ক প্রেমে এসে দাঁড়ায়। কোচিং এবং প্রেম চলতে থাকে।দুজনে ম্যাচ এ বিল্ডিং আর ও বিল্ডিং ।ভালোবাসা জমে ক্ষির। আমি ঢাবিতে আর পারু ববদরুন্নেসায় ভর্তি হয়।এ সময় প্রেম প্রায় দাম্পত্যের রুপ নেয়।কেবল রাত্রি যাপন ছাড়া।দুপুরের খাবার পারুর হাতেই খেতাম।বিশ্ববিদ্যালয়, রাজনীতি, পারু আর বই পড়া চলছে  তো চলছেই।কিন্তু এক সময় রাজনীতি হাতছাড়া হই।বই পড়ার কারনে এক সময় মনে হয় রাজনীতি আমার জন্য না।আমি রাজনীতিকে সার্ভাইভ করতে পারব না।রাজনীতিই একমাত্র পথ যে পথে চলতে গেলে আপনাকে রাজার মতো দৃপ্ত পদভারে চলতে হবে।অন্য পথ আপনাকে পরিত্যাগ করতে হবে।
 
এদিকে জমি লাগান শেষ। বছর তিনেক হলো  বিক্রি শুরু হয়েছে।অনার্স ফাইনাল দেয়ার সময় বিঘা চারেক জমি ছিল।গত মাসে সর্বশেষ সম্বল ভিটে বিক্রি করে টাকা নিয়ে এসেছি।সামনে মাসে এম এ পরীক্ষা। পরের মাসে সিভিল সার্ভিসের লিখিত পরীক্ষা। আমি জমি বিক্রি করে পড়ি কিন্তু আপনারা দেখলে বলবেন জমিদারি করে পড়ি।আমি পারি না শারিরীক পরিশ্রম করতে। হয় না কঠোর শ্রম।রআমার এম এ পরীক্ষা শেষ হলো। হঠাৎ পারু বলল। হয় তুমি আমাকে বিষ দাও , না হয় মুক্তি দাও। বাড়ির প্যারা আর সহ্য করতে পারছি না। আমি সাত দিনের সময় নিলাম। অনেক ভাবনা চিন্তা করে দেখলাম ইচ্ছে করলে আমরা দুজন বিয়ে করতে পারি কিন্তু সামাজিক জীবন দিতে পারি না।নসাত দিন পর পারুকে বললাম আমি এখন একটা কাজই করতে পারি সেটা হলো  তোমাকে ত্যাগ করা।এ ছাড়া কোন কিছু করার আর উপায় নেই।আমি তোমাকে ভালোবাসি পারু কিন্তু আমার স্বপ্নের চেয়ে বেশি না।আমি একটা স্কুলে চাকুরি নিয়ে তোমাকে বিয়ে করতে পারি কিন্তু তাতে আমার স্বপ্ন অধরা থেকে যাবে।যা আমার পারিবারিক অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।নবুঝলাম পারু মর্মাহত হলো। ভীষণ কষ্ট পেয়েছে।নকথাগুলো বলে আমি চলে এলাম।নসেদিন ছিল আমার ক্যাম্পাস যাপনের শেষ দিন। আমি আজমপুরে চলে এলাম। এসে আমার একটুও কষ্ট লাগালো না।নিজেকে সীমার মনে হলো। কোন অনুভূতি নেই।কেবল মনে হতে লাগলো আমি কেবল পারুর সাথে অভিনয় করেছি।মেয়েটির সাথে প্রতারণা করেছি।যে আমি প্যাকেট প্যাকেট সিগারেট খেতাম। সেদিন একটা সিগারেট খেতেও  মন চাইলো না। আমি কি নষ্টামি করছি।আমি আমার প্রেমের ইতিহাসের দিকে তাকালাম দেখলাম, হৃদয়ের গভীরে প্রবেশ করলাম। দেখলাম কোথাও পারু নেই। এত বড় নিষ্ঠুর আমি! ছি! ভেতর থেকে উত্তর এলো তুমি নিজেকে ভালোবাসো। নিজেকে ছাড়া বাকী সব অনুষঙ্গ মাত্র।তোমার প্রেম হলো ইয়ার্কির প্রেম।সামনে থাকলে পোড়ে না থাকলে ও ড়ে।


এক যুগ পরে আমার অফিসে বসে আছি।বিকাল হচ্ছে হচ্ছে ভাব। ক্লানিতে নুইয়ে পড়ছি। পিয়নকে বললাম এখন কাউকে ভিতরে আসতে দেবে না। একটু ঝিমিয়ে নিলাম। প্রায় ঘন্টা খানেক পর।
 
পিয়ন বলল,
স্যার মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা অপেক্ষা করছে। 
 
বললাম ভিতরে পাঠাও
 
ভেতরে একজন প্রবেশ করল। দেখে চোখ চড়ক গাছ।
 
কেবল বললাম ,
পারু তুমি---


1 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন