গুচ্ছকবিতা
আশরাফুল কবীর
বিবর্তন
অনেক খুঁজাখুঁজি করেও
কোনো রাস্তার দেখা মেলে না আজ
কেবলি পথ ভুল হয়ে যায় —
ভুল পথে ধাবমান হই ঝলকানো আলোয়
হুঁশ হারিয়ে ছুটি ত্রস্ত পায়ে, নেশাধরানো
আলোর পিছু পিছু
এক প্যাঁচানো কাল্পনিক পথে
শেষ বিকেলে ছুড়ে দেয়া প্রশ্নগুলো
হায়ারোগ্লিফিক্স হয়ে ধরা দেয়
অচেনাভাবে উড়ে বেড়ায়, আমি বড্ড আনমনা হই
মনে জুড়ে বসে কথঞ্চিৎ ভাবনার আড়ালে
তবুও একই পথে ঘোরাঘুরি হয় বারবার
সাম্পান নাও ভাসানোর ইচ্ছে জাগে যখনতখন
নতুন পাড়ের সন্নিকটে কোথাও নোঙ্গর তুলি
ইচ্ছেমতন হাল ঘুরাই উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিম
চষতে থাকি আমান্ডসেন হয়ে
শুধু মনের মেরুতে জুড়ে থাকে এক কঠিনময় ব্রত
পথেরা আজ যেন সব রংচটা হয়েছে
গজিয়েছে শ্যাওলা, বুনো উঁচু ঘাস
হেলে দুলে জীর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে
দিন বয়ে যায়, রাত বয়ে যায়, অনন্তকাল প্রতীক্ষায় —
আবিষ্কারে ক্লান্ত পথ শুধু উভচর হয়ে যায়
শেফালিকা
মনের ভাবনাগুলো কখনো আসেনি এমন করে! মাঝেমধ্যে
কলতলার রাধাচূড়াগুলো ফ্ল্যাশব্যাক করে নিয়ে আসে
ধূসর হয়ে যাওয়া অনিন্দ্য ভোরের স্বপ্ন
দুপুরের বাষ্পায়নে নিঃশেষ হয় লুকোচুরি করা
স্বপ্নিল ঢেউয়ের সকল উচ্ছল চপলতা
চপলতা!
শিহরণ-জাগানিয়া বৈকি
চৈতালী দাবদাহে খোলনলচেতে ঢুকে পড়েছিল
সাবকনশাস মন
ডুব দিয়েছিল টলটলে স্বচ্ছসলিলে
মাঠের ওপর ক্রমাগত দৌড়ঝাঁপ দিয়ে
সোজা বৃন্দাবন
গ্রীষ্মের দুপুরের জলতৃষ্ণায় এক কৃষ্ণ-দাঁড়কাক
সহাস্যে কুঞ্জবন তোলপাড় করেছিল
থৈ-আঁধারের প্লাবন ভেদ করে হাতড়েছিল শ্যাওলাগুচ্ছ
করেছিল শীতলপাটির সন্ধান
উত্তপ্ত মন নিংড়ে নিতে চেয়েছিল
হিমপরশ শীতলতা
তীর্থে পৌঁছানো কিংবা না পৌঁছানোর প্রশ্নটি তাই
অনেকটাই আপেক্ষিক
মিইয়ে যাওয়া ফ্যাকাশে চাঁদ কখনো কখনো
অবসাদে চমকে ওঠে
ঘুরেফিরে হাওয়াতাড়িত ভাবনাগুলো
আনমনে ইমেইল হয়ে আসে
একিলিস হিল
জেনে যাই রহস্যসূত্র
উথলানো স্রোতের
মল্লযুদ্ধের ক্ষেত্র
অনাবিষ্কৃত সেই
ঘর্মাক্ত দেশ
ধারালো বেশে
তিরতির কম্পন
জানান দেয়
দুয়ারবিহীন
ভেঙ্গে নামা
অঘোর শ্রাবণ
উন্মোচিত রাতে
দ্বাদশীর পুরাণ
বিটোফেন অর্ঘ্য
শেষ ভাঁজে রচিত হয়
মিলনাত্মক সর্গ
রহস্যসূত্রের বয়ে চলা
কিছু কিছু রহস্য ফিল
প্রজাপতির ডানা মেলা
পুরোটাই একিলিস হিল
ওলিয়েন্ডার উপাখ্যান
এক.
রোদ্দুর হারিয়ে গেলেই ঝাপটা দেয় আঁধার
চেপে বসে শানবাঁধানো ঘাটে
নিক্বণ তুলে পাড়া বেড়াতে বের হয়
কিছু যাযাবর প্রহেলিকা
এক লহমায় —
অবারিত বন্দরে ভেড়ে কত জাহাজ
তীক্ষ্ণ ঠোঁটের বৈঠকী আওয়াজে ভেসে আসে
আগামেম্ননের পদধ্বণি!
দেশলাই জ্বেলে আহবান জানায়
এক দৌবারিক
কালের খোলা-দরোজার প্রতিশ্রুতিতে
দেবী-বোধন কিছুটা প্রলম্বিত বলে
অপ্রাপ্তির সম্মেলন ঘন হতে থাকে
আশ্বিনের শেষবেলায়
দুই.
রসায়নের গলি-ঘুপচিতে আটকে পড়ে
পিয়াসী শরীর; নিয়মকানুনের
অবসন্নতায় ভোগে
এক আতঙ্কিত দাঁড়কাক
পিছু হটেছিল যে পেগাসাস
পৌষের শীতে গা কুঁকড়ায়
পূজোর অর্ঘ্যে মন্ত্র আওড়াবে বলে
পুরোহিত শূন্যবেদীতে কেবলি
হুটোপুটি খায়!
তিন.
জলে ডুব দেয় পানকৌড়ি
মিশে যায় স্বাস্থ্যবান মাছদের সাথে
চা পানের ছলে টংঘরে জমে যায়
কিছু ধূমায়িত চিত্র, অজানাই থেকে যায়
মাইকেলেঞ্জোলোর নাম; যে গড়েছিল
ডেভিড এক!
বেয়ারারা ছুটে চলে সারারাত, নির্ঘুম
নতুন বউ কাঁধে তোলার অভিপ্রায়ে
চার.
আগুন জিইয়ে রাখে চারকোল
বর্ষণে ভিজে, শীতের ওশে কেমন নিভু নিভু
একফালি প্রাণ!
শাওনের কোলে কে খোঁজে এলিয়টগুচ্ছ
পড়ো-জমিনের গান?
এ শহরের চিরস্থায়ী রাতে
সাদা-রশ্মিদের আজ বড়ো দু:সময়!
ঝটিকা আলোয় চষে বেড়ায় অসুরের দল
পৃথিবী এখনো খোঁজ করে চলে
এক নতুন অবতার!
পাঁচ.
কখনো কখনো হাত বাড়ায় গিরিমল্লিকা
মেঠোপথ, সৌরভ ছড়ানো করবীর দল
জোৎস্না-অবসরে ছড়িয়ে দেয় লালদীঘিটার স্বপ্ন
ছায়ায় বসে হেসেই চলে অস্থির সময়
ঘুমন্ত এ চরাচর!
রাতের শেষ ট্রেন ছুটে চলে
কতো নাম না জানা বন্দরে
তবুও ঘিরে রাখে কিছু উপাখ্যান
ভৌতিক সময়ের উঠোনে
thnks
উত্তরমুছুনthnks
উত্তরমুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thanks