গুচ্ছকবিতা।। রানা জামান।। poems by rana zaman--kuasha



গুচ্ছকবিতা
রানা জামান

শরৎ শশীর রমণীয় স্পর্শ 


শরৎ শশীর রমণীয় স্পর্শে সতত উদ্বেল

নগ্নতার ভাব নিয়ে হয়ে যাই কোলাব্যাঙ 

দুদিকে বিস্তৃত বাহুদ্বয়ে কাশ ফুলের সুবাস

সুড়সুড়ি লাগায় শিমূল তুলোর


পেঁজা তূলো মেঘ নিজ স্বকীয়তা হারিয়ে রঙিন

অবয়বে আর্য কালের সারস বিলের কিনারে

গোপন লকার আপনা-আপনি খুলে

উন্মোচন করে কস্তুরির ঘ্রাণ আমার কলমে


জ্যোৎস্নার সায়রে নাসিকা ডুবিয়ে 

উৎপ্রেক্ষার গায়ে নীমিলিত চোখে ঠোঁট বুলানোর

শীৎকার ধ্বনিতে পূর্ণতায় আসতে থাকে 

এক কালজয়ী কবিতার আদ্যপান্ত


সাদা অভ্রগুচ্ছ ক্ষণকালে পোয়াতি হয়ে

অমোঘ জাদুর স্পর্শে ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি 

নাকেমুখে আর পুরো দেহে চুমু দিতে থাকলে

বীর্যপাতের আরাম দেয় প্রশান্তির ঝর্ণাধারা


বৃষ্টিতে শরীর পুরোপুরি না ভিজলেও

শরৎ শশীর লুকোচুরি খরগোশ-কচ্ছপের রেস

বিরক্ত না করে নাসারন্ধ্রে নস্যি ঠেসে

চেপে রেখে চোখ শোয়ায় পরীর নগ্ন বক্ষে।


গাঁয়ের স্মৃতির মেয়াদি সঞ্চয় 

 

শহরে হর্ণের অত্যাচারে কিংবা জ্যামে বালুঘড়ি

স্তব্ধ হয়ে গেলে ক্ষেতের আইলে 

দুই হাত মেলে হাঁটি লুঙ্গি তুলে হাঁটু অব্দি 

আধাপাকা ধান্য শীষ ঘিরে মাকড়সার জালে 

শিশির কণায় আপন চেহারা

দেখতে না পেয়ে ভ্রু কুঁচকে ঢুকি নিজের গভীরে

 

শহুরে চাবুক প্রত্যেহ পিটিয়ে মুখ রোবোটিক 

করে ডিজিটাল জঞ্জালের মধ্যে

অস্তিত্ব সমূলে ডুবে ম্যাট্রিক্সের অতল গভীরে 

ঝুমুর বৃষ্টির মাঝে কর্দমাক্ত মাঠে ফুটবল খেলার

আনন্দ বাবার পিটুনি সমুদ্র তটে

গোষ্পদ অথবা নির্বিষ পিঁপড়ের দংশন মাত্র

 

যখন ছেলেটা ছাদে গিয়ে ড্রোন উড়ায় রিমোট

হাতে অনাবিল খুশি নিয়ে মুখে

প্রতিদ্বন্দ্বিহীন যোদ্ধা ছড়ায় আকাশে শব্দের দূষণ 

আমার নাটায়ে মাঞ্জাদেয়া সূতা একে একে শত্রু 

নাশে মত্ত হয়ে আকাশ দখলে

নেবার আনন্দে বেখেয়াল ক্ষণে নিজেই ভোকাট্টা 

হলেও খুশির পায়রাগুলো উড়ে

দুটো ডানা মেলে সুনীল আকাশে ঢোলকের তানে

 

গাঁয়ের স্মৃতির মেয়াদি সঞ্চয়পত্রের মুনাফা

চুন-সুরকির মাঠে বানিয়েছে আমাকে ক্যাক্টাস

ইটের দেয়ালে বন্দি থেকে শুনি খড়মের শব্দ

হাই হিল জুতো পায়ে থাকা কারো পদশব্দে

কল্পনায় কিংবা স্বপ্নের বোরাকে চড়ে

যে মূহুর্তগুলো কাটাই পল্লীতে, সেগুলো পোকায়

খাওয়া আসবাবে প্রশান্তির চুমু দিয়ে

ছায়াতলে রাখে নিবিড় নিদ্রায়।


যুদ্ধ বুঝে অস্ত্র বিক্রেতার জিভ


 

যুদ্ধ কেনো বুঝে অস্ত্র বিক্রেতার তেজারতি বুদ্ধি 

সর্পিল স্বভাবে জলে অন্তরীক্ষে স্থলে

লাশের সংখ্যার জ্যামিতিক বৃদ্ধি অস্ত্রের ক্ষমতা

প্রদর্শনে দেখায় কারিশমা অহর্নিশ

মিসাইল হোক ব্যালিস্টিক কিংবা স্কাড 

ড্রোনে সওয়ার হয়ে ধ্বংসযজ্ঞ শূয়রের খেলা

 

আয়রন ডোম উড়ানোয় খর্চা পেটের নাড়ীতে

ক্ষত সৃষ্টি করে সক্ষমতা বৃদ্ধি করে কার?

তুড়িতে সিজ্জিল কিংবা হোভেইজ মিসাইল 

মারণাস্ত্র হয়ে কাঁপায় ইজরেল 

হায়দার অথবা খাইবার মিসাইল অপ্রতিরোধ্য হয়ে

মুসলিম বিশ্বে ফুটায় খুশির বাজিপটকা

 

আমেরিকা বাঙ্কার ব্লাস্টার বোমা কিংবা 

টমাহক মিসাইল মেরে তৃপ্তির কুইনাইন গিলে

আত্মতৃপ্তির ঘুণপোকা ঢোকায় মগজে

ঘাতন বিক্রির সাথে যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালিয়ে 

বাহবা কুড়ায় টেবিলের নিচে অর্থ নিয়ে

অস্ত্র বিক্রেতারা নিঃস্বার্থে করে না কোনো কাজ

লাভের চা-পাতা তুলে তাজা তাজা

 

কবরের সংখ্যা বৃদ্ধির পৌনপুনিকতা, তা শিশুর 

কিংবা অশীতিপর বৃদ্ধের, তাতে জেদ

বাড়ে প্রতিপক্ষ নিধনে যে কোনো মূল্যে

মূল্য দিয়ে যায় আমজনতা সাধের বাড়িটা

ধ্বংস হতে দিয়ে, জীবন তো যেতেই থাকে 

শিল ও পাটার ঘষাঘষি গুঁড়ো করে মরিচের দেহ


কবোষ্ণ বিদায় প্রিয় গৃষ্ম

 

কী রকম ছিলো এবারের গৃষ্মকাল?

বসন্ত শেষের প্রখর রোদ্দুর 

কেমন চৌচির হয়েছে চাষের মাঠ?

প্রচণ্ড উত্তাপে জলে কত মাছ মারা গেলো?

মারা গেলো কত শত কচি বৃক্ষচারা?

লু হাওয়া গায়ে ফোস্কা দিয়েছে কতক?

 

পূর্বাকাশ কালো হয়ে এলে 

প্রত্যাশার ইতি ঘটার ইঙ্গিত স্বস্তি দেয় বেশ

শরীর ঘর্মাক্ত হলেও কিছুটা শীতল বাতাস

স্পর্শ দেয় প্রিয় মানুষের মতো

মেঘের ভেলায় আকাশ অসিত হতে থেকে

হঠাৎ টাপুরটুপুর বৃষ্টিতে কী দারুণ স্বস্তি! 

 

এই বৃষ্টি এই রোদে, কখনো রোদের 

উঠানে গড়িয়ে টুপটুপ বৃষ্টির অপূর্ব নিনাদ

মাঝে মধ্যে ঝড়ো হাওয়ার রণবাদ্য 

কাঁপন ধরায় কুঁড়ে ঘরে থাকা মানুষের মনে

তুমুল তুফান বয়ে গেলে 

ঘরের চালের সাথে উড়ে গাছের ডালও ভেঙে 

 

ফাটা জমি ভিজে গেলে কৃষকের 

মনে বয়ে যায় আনন্দের ঝর্ণা অনিবার

লাঙলের ফালে ধার দিয়ে জোয়ালের

পুরাতন কলকব্জা পাল্টায় পুরো

শীতলতা পেয়ে মাছেরা উল্লাসে মুখরিত হয়ে

নৃত্য করতে থাকে জলের উপরে

 

এভাবে নিঃশেষ হতে থাকলে গৃষ্মের আয়ুর

খালে বিলে পানি এসে স্বাগত জানায় বর্ষাকে

প্রকৃতি বিদায় জানিয়ে গৃষ্মকে 

সহাস্যে প্রস্তুতি নেয় বর্ষাকাল বরণের

গৃষ্ম, তুমি তপ্ত শরীর করেছো শীতল বৃষ্টির 

কোমল ছোঁয়ায়। তোমার ফেরার প্রতীক্ষায় রইলাম।


প্রকৃতি যেনো নিসর্গের টুকরো 

 

নীলাকাশে পেঁজা তূলা মেঘ উড়তে থাকা সাদা কবুতর

ডানা মেলে উড়ে, কখনোবা থির রেখে উড়ে

মৃদুমন্দ বায়ু চলে ইউনিকর্ণের পিঠে ভর করে

প্রতাপের সূর্য হেরে কোমল উত্তাপে পূর্ণ চন্দ্র 

 

বৃক্ষগুলো সবুজ মিনার হয়ে নড়ে ধীর লয়ে

পাতাগুলো যেনো বাবুই পাখির ঝাক মিনারের গাত্রে

মেঘের ছায়ায় বৃক্ষের শরীরে বরফ শীতল স্পর্শ 

সেই বৃক্ষতলে পরিশ্রান্ত পথিক ঘুমায় নিশ্চিন্তে

 

একটা বেঞ্চ আছে কারো প্রতীক্ষায় মাঠের কিনারে 

আমি তাতে বসে উপভোগ করতাম নদীর পাগলামি 

উত্তাল উর্মীর পাড়ে আছরে পড়া শব্দ ঝুমুর ঢোলক

ভেজা নদীতটে শালিকের হাঁটা কবিতার ছন্দ

 

আমার ইচ্ছের গতি ফ্যালকনের চেয়েও অধিক

তবুও পৌঁছাতে পারি না কখনো, কখনো না

কতদূরে আছি ধরা পড়ে না রাডারে 

আমি কি পৃথিবী ছেড়ে আছি অন্য কোনো গ্রহে?

 

শুধু মনে আছে একদিন বসেছিলাম দ্রুত গতির ট্রেনে

হঠাৎ বিকট শব্দে ট্রেনের কামরাগুলো হয়ে যায় তূলো

কৌটোর ভেতরে কয়েনের মতো উড়তে থাকি সকলেই

এখন পৃথিবী থেকে ছিন্ন হয়ে দেখে যাই পৃথিবী। 


দমে যাবো এমন নই তো আমি 

 

আয়রন ডোমের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে

ভেবেছিলে কেটে যাবে দস্তাবেজ 

পৈশাচিক খুশি নিয়ে ড্রোন উড়াও

গাজার অভুক্ত শিশুদের উপরে

ফাঁদে আটকে থাকা সিংহের কেশরে 

মর্দাঙ্গি দেখাও মাঝেমধ্যে বোমা মেরে

একে একে সব কেশর গেলেও ঝরে

হুংকার কখনো কমে না সিংহের 

 

নিজেকে দানব ভেবে কামড়ে দিলে আমার পা

ভেবেছিলে এক সিংহ ফাঁদে রেখে

সকল সিংহের কেশরে চালাবে দক্ষযজ্ঞ 

আমার সিজ্জিল আর হোভেইজ মিসাইল 

গুড়িয়ে দিয়েছে তোমার আয়রন ডোম

হাইপারসনিক মিসাইলে ভর্তা হয়ে গেছে

বারাক-৮ আর অ্যারো-৩ এয়ার ডিফেন্স

 

তোমার ডেভিডস স্লিং-এর বারোটা বাজিয়ে

দিয়েছে হায়দার মিসাইল এক নিমেষে

অনেক আনন্দ তেল আভিভের জনতাকে

লেঙ্গুড় গুটিয়ে ভাগতে দেখে, আহ!

হাইফা শহর দেখে মনে হচ্ছে গাজা দেখছি

গাজায় লাশের মিছিল দেখে অট্টহাসি করো

একালের ফেরাউন তুমি নেতানিয়াহু 

পারো নি মানুষ হতে ভেবে আফসোস হয় না

অমোঘ পুস্তক বলে ইহুদিরা শেষে হবে এমনই

আল্লাহর অভিশপ্ত জাতির রবে না শান্তি মনে।


একাকীত্ব 

 

ক্ষুধা অনবদ্য হয়ে গেছে কবে আতস কাঁচের 

নিচে করিনি তো যাঞ্চা 

খাদ্যের সন্ধ্যানে মাঠের চোয়াল ভেঙে মিলেছে

ভাংগা চুরা খালি খাঞ্চা

 

যেখানে গিয়েছি কায়িক শ্রমের করুণ আকুতি 

ডুবেছে মদের গ্লাসে

শপথের শব্দ মালা গিলে খেয়ে বলি প্রতি বর্ষে

প্রথম হয়েছি ক্লাশে

 

বেকারের বমি উগড়ে দিতে গিয়ে গিলেছি সর্বদা

রোবোট অস্তিত্ব লব্ধে

আত্মীয় জনের অবজ্ঞার ঢেঁকি মগজের মূলে

আঘাতে রয়েছি স্তব্ধে

 

বৈষম্যের ফাল অক্ষমতা চষে দেখায় ক্যান্ভাসে

লুপ্ত প্রায় এক ডিঙি 

দৈনিক ঘোষণা কানে সিসা ঢেলে বলে প্রতিক্ষণে

ঘরে দুটো দেহ ধিঙি 

 

ঘরের খাবারে বকুনির দলা অরুচির কাক

অহরহ ডাকে কা কা

নির্ঘুমে রাত্রিও প্যাঁচার দোসর দৌড়ায় নাগাড়ে

পেট রেখে পুরো ফাঁকা 

 

কোথায় এসেছি বাঁধন কাটিয়া বোধে আসে না তো

উজান ভাটির চিত্র 

হাতে গুঁজে দেয় বহু জনে কত কিছু কিংবা খাদ্য

একাকীত্ব আজ মিত্র।


দুর্ভেদ্য খোলসে এতো যে শূয়র


সন্তর্পণে ঢুকি তোমার অন্দরে হিমোগ্লোবিনের 

হিমাঙ্ক মাপার সৎসাহস নিয়ে

দুর্ভেদ্য খোলসে এতো শূয়রের কামড়াকামড়ি 

চুলের উকুন ঝরে যায় চটজলদি 

তোমার উমেদ জোস্নামাখা রাতে 

Post a Comment

Thanks

নবীনতর পূর্বতন