খন্ডকাল, শিল্পসম্বন্ধ।। প্রবন্ধ।। নির্মল রায় article by nirmal roy.kuasha

নির্মল রায়।। কবি।। ভারতের কবি


খন্ডকাল, শিল্পসম্বন্ধ 
নির্মল রায় 

         পার্থিব প্রকৃতিতে প্রত্যেকটি বস্তুই যেমন তার নিজস্ব প্রক্রিয়াগুলিকে বজায় রেখেও সে সবকিছুর মধ্যে একটি আন্তঃসম্পর্কে সম্পর্কিত থাকে, বাইরের দিক থেকে বিচ্ছিন্ন অথচ গূঢ় এক সংযোগসূত্রের সমতায় আকৃষ্ট থাকে, তেমনই শিল্পে সাহিত্য, সংগীত, ভাস্কর্য, চিত্রকলার পারস্পরিক প্রতিতুলনায় প্রত্যেকটি ধারার আভ্যন্তরীণ যোগাযোগ সমন্বিত একটি সাধারন কেন্দ্রীয় প্রকৃতি অনুধাবন করা যায়। 

        এক্ষেত্রে খণ্ডসময়কে স্থির করে শিল্পের অন্তঃপ্রকৃতির সাথে বৃহত্তর বহিঃপ্রকৃতির খন্ডিত সময়কালের পারস্পরিক সম্বন্ধ সংস্থাপনের ভিত্তিতে সমগ্রতার সাথে শিল্প একাত্মতা লাভ করে। 

         বস্তুবিশ্বের অধীনস্থ যাবতীয় বিষয়গুলি কালকে ভিত্তি করে পরিবর্তিত, রূপান্তরিত এবং বিভিন্ন আকারের গতিপ্রাপ্ত হয়। এই কাল খন্ডিত।খন্ডকালের সীমায়িত আকারকে অখন্ড মহাকাল আত্মস্থ করে।

     খন্ডিত সময়কালে দিবা প্রথম প্রহর অর্থাৎ প্রাতঃকালের পার্থিব জড়সত্তার চরিত্র সন্ধিপ্রকাশ। এর বর্ণ- তরুণাক। অর্থাৎ ভোরের সূর্যের মত লাল। এই বর্ণ কমলা- লাল। এটি মিশ্র বা সংকর বর্ণ এবং এর সংবেদন উষ্ণ।

       বিশেষত, বহিঃপ্রকৃতির গম্ভীর, শান্ত, বলিষ্ঠ উজ্জ্বলতা এ সময় শিল্পীর জৈবসত্তায় যে মন ও প্রাণময় আবহাওয়া তৈরি করে তার আবেদনে থাকে ক্রম- প্রসারণশীলতা। আত্ম- উন্মোচনের এ অবস্থায় প্রাতঃকালীন সন্ধিপ্রকাশের গাম্ভীর্য ও প্রসারণ কবির কবিতার উপাসনায় ‌  প্রকাশিত ---

   "magnificent 
    The morning rose in memorable pomp      Glorious as e'er I had beheld---"
                 (William Wordsworth)

    প্রকৃতির এই খন্ডিত সময়কালে বিকশিত অবস্থাগুলির সমানুপাতিক রস ও ভাবের গতিতে পঞ্চম রস বীর ও তার স্থায়ীভাব উৎসাহ জ্ঞাপিত হয়। বীররসের প্রকৃতি উত্তম এবং তার দেবতা মহেন্দ্র। মূলত দান, ধর্ম, যুদ্ধ ও দয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়ে এই রসের চার রকম ভেদ হয়। 

      মেঘদূতের কবি কালিদাসের লেখনীর রসানুগ্ৰহ ভাবের আন্দোলনে তুলনামূলক শিল্পধারার বর্ণমুদ্রায় সংবেদনের প্রকাশ ঘটায়। 

গম্ভীরায়াঃ পয়সি সরিতশ্চেতসীব প্রসন্নে  
ছায়াত্মাপি প্রকৃতিসুভগো লপ্স্যতে তে প্রবেশম।

বরং গম্ভীরা নদীর অন্তরে প্রবেশ কোরো তুমি, হে সুন্দর!
অমল হৃদয়ের মতো সে- জলধারা তোমার  ছায়ারূপে ধন্য হোক। 
(অনুবাদ- বুদ্ধদেব বসু) 

ঋতুভেদে শরতের ব্যঞ্জনাবাহী এই খন্ডিত সময় উদ্দীপন বিভাব অবলম্বনে সাত্ত্বিকভাবে যে রসনিষ্পত্তি ঘটায়, আধুনিক শব্দাবলীতে সেই অনুভবের ভাষা আশ্রয় পায়---

একবার শুধু আলোর হাতুড়ি 
      মেরেছো তীব্র ভোরে 
অন্ধচেতনা চূর্ণ চূর্ণ ক'রে---
প্রোজ্জ্বল সেই চেতনা তখন 
মৃত্যু পেরিয়ে আসে 
প্রাণের আলোকে হাসে। 

(মৃত্যুবাসর/অমিয় চক্রবর্তী) 

এ সময়ে আশ্রিত  রস ও ভাবের গঠনসূত্রে   গতিভঙ্গির পরিবর্তনে 'বীরা' গতিভেদে 'আবেগ' উৎসস্থল থেকে বহিঃপ্রকৃতিতে 'ললিতা' ভাবদৃষ্টির সঞ্চার হয়। সংগীতে ভৈরব,কালিংড়া,  যোগিয়া প্রভৃতি রাগগুলি এ খন্ডিত সময়কালে প্রকাশ উপযোগী। 

সংগীত, চিত্রকলা, ভাস্কর্য প্রভৃতি ধারাগুলির চিত্রময়তা, তুরীয় অবস্থা এবং প্রাণধর্মিতা, বর্ণাঘাত স্বর্ণাভ রং-এর উজ্জ্বলতায় সহবেদনশীল হয়ে ওঠে। এই উষ্ণ সংবেদী স্বর্ণোজ্জ্বল হলুদ্বর্ণ শৃঙ্গার রসাত্মক (মতান্তরে শান্তরস) বসন্তিকা বা বসন্তকালীন প্রাকৃতিক পরিবেশ রচিত করে। 

এ সময়ের সজীবতা, ভাবোচ্ছ্বাস, ঔজ্জ্বল্য এবং  আবেগের মূলসুর যেমনই 'নারদসংহিতা'য় ধ্বনি তোলে, তেমনই ভারতবর্ষের ভৌগোলিক সীমারেখা অতিক্রম ক'রে চীনের কবিতায় তা কথা পায়। চীনের আধুনিক কবি শিন তি'র কবিতা--- 

ঝলমলে রোদে, গমের ক্ষেতে 
মৃদু বাসন্তী বাতাস বয়ে যায়। 
পুরো নীল এক কাপড়ের 
উজ্জ্বল উত্তাপে 
আমার দেশের 
সমস্ত মানুষ ওঠে জেগে। 

(বসন্ত আসছে/শিন তি। অনুবাদ- লেখক) 

শিল্পধারায় বর্ণপ্রতীক, রং-এর বিচিত্র শোভা, গৌণ, উষ্ণ, শীতল-সংবেদী বর্ণচ্ছতা প্রাণময়, ছন্দোবদ্ধ, আবেগী সত্তা-পরিচয়কে প্রকট করে। 
যেমন--- 

প্রবন্ধ,উত্তরাধুনিক কাব্যধারার যাত্রাঃ মতিন বৈরাগী-এখানে
প্রবন্ধঃ রাজনীতি ও সাহিত্য পারস্পরিক সম্পর্ক পড়ুন এখানে
কবি মজিদ মাহমুদের গুচ্ছকবিতা পড়ুন এখানে
প্রবন্ধ,নজরুলের রহস্য,পড়ুন এখানে
লিসেল মুলারের অনুদিত কবিতা পড়ুন এখানে
ভিন্ন স্বাদের গল্প,কফি হাউজের ওয়েটার' পড়ুন এখানে
নজরুলের রহস্যময়তা নিয়ে প্রবন্ধ পড়ুন এখানে


"Yellow, and black, and pale and hectic red,
Pestilence-stricken multitudes;O thou, 
Who chariotist to their dark wintry bed 
The winged seeds, where they lie cold and low." 

(P.B. Shelley)

 রং-এর এই আনন্দঘন, হার্দিক, ছন্দোময় স্পর্শকাতর, সূক্ষ্ম মেজাজে ভারতীয় কবিতার আলাপচারিতার বিভিন্ন ভাবের আভাস, উপসম, উদয়,সন্ধি ও মিশ্রণে রসনিষ্পত্তি ঘটে। 

ঋতুভেদে বসন্তের ব্যঞ্জনাবাহী বর্ণের এই শোভাযাত্রা উদ্দীপন ও আলম্বন বিভাব হিসেবে রাজসিকভাবে রসনিষ্পত্তি ঘটায়। এই ভঙ্গি পরিবর্তন 'তরঙ্গিনী'ও 'ময়ূরী' এই গতিভেদে 'গ্লানি' ও 'উন্মাদ' এই দুই উৎসস্থল থেকে উৎসারিত বহিঃপ্রকৃতির 'ললিতা' ও 'অর্ধমুকুলা' এই সঞ্চারী ভাবদৃষ্টিযুগলে প্রতিষ্ঠা পায়। ভারতীয় শিল্পধারায় প্রত্যেক শিল্পীর নিজ নিজ রীতি অনুসারে বিশেষ বিষয়ের ধ্বনি, শব্দ, ভাষা, বর্ণ, পাথর প্রভৃতি বিভিন্ন আঙ্গিক, বাচিক, সাত্ত্বিক উপাদানের মাধ্যমে উপস্থাপিত অজস্র চিত্রকলা ও ভাস্কর্যের পাশাপাশি তারুণ্য ও যৌবনের বর্ণময় ভরাট প্রাণচাঞ্চল্য সংগীতেও 'হিন্দোল' রাগের প্রকাশময়তায় সমান ক্রীড়াশীল।

দিবা দ্বিতীয় প্রহরের খন্ডকালে প্রকাশ উপযোগী রাগ 'হিন্দোলে'র মতই বিদেশী কবিতায় বর্ণপ্রভাব---

"Like beauty's eye in rage, or roses white 
Lit by the glowing red.

(Charles Jeremiah Wells)

   কাব্য সাহিত্যের গীতি আর সংগীতের কাব্য মাধুর্যের সামঞ্জস্যে দিবস তৃতীয় প্রহরের সময়কালীন প্রকৃতির অবস্থান শিল্পীর অন্তঃপ্রকৃতিকে যে গতিদান করে 'তোড়ী' রাগিণীর চলনে তা প্রতিভাত হয়। 

লোচন শর্মার 'রাগতরঙ্গিণী'র কবিতায় 'তোড়ী'রাগিনী--- 

মলয়জ পরিমৃষ্টোৎকৃষ্ট কাশ্মীর রাগাৎ 
            পিহিত সিত তনুশ্রীঃ কাননে কঞ্জদামা। 
করকমল বিলুব্ধ ক্রোড় সম্বন্ধ বীণা 
            রনিত হৃৎকুরঙ্গী শাবকা কাপি টোড়ী।।

  'তোড়ী' ঠাট ও সম্পূর্ণ-সম্পূর্ণ জাতির (মতান্তরে খাড়ব সম্পূর্ণ ) মধ্যাহ্নে প্রকাশকালীন শৃংগার ও বীর রসে ক্রিয়াত্মক এ রাগিণীটির বর্ণচরিত্র শুভ্র।

    মধ্যাহ্নকালীন পার্থিব জড়সত্তার চরিত্র দিবসের শীর্ষ প্রকাশ। এর বর্ণ সিত বা শুক্ল। শব্দগত অর্থ শুভ্র বা সাদা। 

বিশেষত, বহিঃপ্রকৃতির গম্ভীর, উদার, উজ্জ্বল, প্রবল ও বিচিত্র লাবণ্য-যোজনা এ সময় শিল্পীর জৈবসত্তায় যে দেহ, মন ও প্রাণময় পরিবেশ রচিত করে তার আবেদনে থাকে শান্ত আনন্দময় গৌরবান্বিত প্রাকৃত মহিমা।

ইংরেজি কবিতার শব্দ চলাচল---
 
"The morn is up again, the dewy morn 
With breath all incense and with check all bloom, 
Laughing the clouds away with playful scorn, 
And living as if earth contained no tomb
And glowing into day we may resume 
The march of an existence." 
 
                           (Lord Byron)  

   সময়কালীন প্রকাশিত অবস্থাগুলির সমানুপাতিক রস ও ভাবের দিক পরিবর্তনে প্রথম বা আদিরস 'শৃঙ্গার' এবং পঞ্চম রস 'বীরে'র প্রকাশ ঘটে। শৃঙ্গারের বৈদিক ছন্দ যেমন 'পঙক্তি', বীররসের বৈদিক ছন্দও তেমনি 'অনুষ্টুপ'।

          ঋতুভেদে মূলত গ্ৰীষ্মের ব্যঞ্জনাবাহীএই খন্ডিত সময় আলম্বন বিভাব হিসেবে রাজসিকভাবে রসনিষ্পত্তি ঘটায়। গঠনসূত্রে রসানুগ্রহে নাট্যশাস্ত্রের মতে যেমন ভয়ানক,শান্ত, শৃঙ্গার রসের বিরোধী মূল বীররসে, তেমনই সাথে সাথে করুণ, বীভৎস, রৌদ্র, বীর ও ভয়ানক রসের বিরোধী মূলরস শৃঙ্গারে আশ্রিত সাহিত্য, সংগীত, চিত্রকলা, ভাস্কর্যে  তুলনামূলক বর্ণমুদ্রায় মর্মর সমবেদনের প্রকাশ ঘটে। 

এই খন্ডকালের নেশাচ্ছন্ন প্রাকৃত ভঙ্গির চলনে 'ময়ূরী' ও 'ভুজঙ্গী' এই গতিভেদে 'স্বপ্ন' ও 'বিবোধ' এই দুই উৎস সঞ্জাত 'মুকুলা' ও 'বিতর্কিতা' সঞ্চারী ভাবদৃষ্টিতে বহিঃপ্রকৃতি মন্দ্রিত হয়। 

ভারতীয় শিল্পের ছায়াপথে অজস্র চিত্রকলা ও ভাস্কর্যের পাশাপাশি সংগীতে 'গৌরসারংগ', 'ভীম পলসী', বা 'ভীমপলশ্রী', 'বৃন্দাবনী সারং' এবং 'পিলু' প্রভৃতিতে এই সময়কাল তরঙ্গিত। 

        দিবা চতুর্থ প্রহরে অতিবাহিত রাগিণী পূর্বী বা  পুরবী। সম্পূর্ণ- সম্পূর্ণ জাতি, পুরবী ঠাট ও 'মাল্লার' থেকে উৎপন্ন পুরবী সন্ধিপ্রকাশ রাগিনী। দিবসের শেষ ও সন্ধ্যার সূচনার সময়কাল গম্ভীর, ধূসর, বেদনার্ত,  নীলাভ, ছাইসাদা বর্ণের অনুষঙ্গ মনে করিয়ে দেয়। এ সময়কালীন হৈমন্তিক ঋতুধর্মী পরিবেশ 'মলিনা'ও 'বিষন্না' এই দুই ভাবদৃষ্টিকে সঞ্চারিত করে। 

সাংগীতিক পরিকাঠামোয় একটি বিশিষ্ট সময়ের মাপে যখন একটি নির্দিষ্ট আয়তন সীমানায় শিল্প রূপলাভ করে তখন সেই রূপের রসাশ্রিত আবেদনই ভিন্ন ভিন্ন শিল্পমাধ্যমের ভিন্ন ভিন্ন শিল্পভাষায় মূর্ত হয়ে ওঠে। 

সংগীতের রাত্রি প্রথম প্রহরের সাংগীতিক পরিবেশে 'পুরিয়া' রাগিণীর সাথে ভাস্কর্যের সমভঙ্গ, আভঙ্গ, ত্রিভঙ্গ, অতিভঙ্গ সংস্থান; নৃত্যের নাগবন্ধ, নিষধ বা চন্দ্রকলার সংযুক্ত কিংবা অসংযুক্ত হস্তমুদ্রা ভাষা লাভ করে।  রাগিণীসূত্রের শব্দস্পন্দনে পুনঃসৃজিত হয়  সুইনবার্ণের কবিতা--- 

Here, where the world is quiet; 
Here, where all trouble seems 
Dead winds' and spent waves' riot
In doubtful dreams of dreams; 

      সংগীতে রাগিণীমূর্তির শ্রবণ অনুভূতি পৌঁছে দেয় ভাস্কর্য প্রতিমার দর্শন অনুভূতিতে, যে অনুভূতি দর্শন, শ্রবণ অতিক্রম ক'রে চেতনার এমন স্তরে উপনীত হয় যেখানে কবির 
কবিতার প্রতিমা সৌন্দর্য- সৌকর্যের অঙ্গহারে দেহলাভ করে। 

রাত্রি দ্বিতীয়  প্রহরের ষাড়ব- সম্পূর্ণ জাতি ও খাম্বাজ ঠাটের রাগিণী খাম্বাজ,খমবাজ বা খমবাবতীর প্রকৃতির যে চঞ্চলতা তা যেমন  চিত্রকলায় প্রকাশ পায়, তেমনই তা সংগীতের পর্দা, তন্ত্রী বা কর্ড-এ প্রকাশিত আবর্ত চংক্রমণ, নৃত্যের 'মৃগী' ও 'তরঙ্গিণী'র গতিলাভ করে। 

ঔড়ব ঔড়ব জাতি ও ভৈরবী ঠাটের মালকোশ, মালকৌশ, মালকোষ বা মালবকৈশিক রাগিণীর প্রকাশকাল রাত্রি তৃতীয় প্রহরের খন্ড সময়কালে। এই রাগিণীটি বীর রসাত্মক ও পাটলবর্ণবিশিষ্ট। 

মালকোশে পরিবৃত খন্ডকালীন চিত্রপ্রকৃতির চঞ্চল, প্রাণধর্মী ও ইন্দ্রিয়পরায়ণ দেহলীন এই বৈশিষ্ট্যগুলি তার আবেগী, উৎসাহী ও কামোদ্দীপক প্রাণাধারে আমাদের প্রোথিত করে। মনে পড়ে বাহাদুর শা' জাফরের একটি শের-এর সেই 'শমা'র আগুনের কথা--- 

মুঝকো মৎ রোকো মুঝে ইয়ারকে ঘর জানে দো, 
মিসলে পরওয়ানহ  মুঝে শমহপে জল জানে দো।

আমাকে রুখোনা, প্রিয়ার ঘরে আমাকে যেতে দাও। 
পতঙ্গ যেমন শমার আগুনে পুড়ে মরে, আমাকেও 
তেমনি করে মরতে দাও।

                          ( অনুবাদ- সত্য গঙ্গোপাধ্যায়) 

পাশাপাশি মির্জা গালিব---
 
রগে সাঙ্গ সে টপকতা উয়ো 
লহুকে ফির নহ থামতা
জিসসে গম সমঝ রহে হো উয়ো অগর শরার হোতা।

রক্ত পাথর- শিরার থেকে ঝরতো এবং থামতো না আর 
তোমরা যাকে দুঃখ বলো, তা যদি হয় আগুন- পাথার।
 
(অনুবাদ - শক্তি চট্টোপাধ্যায়/ আয়ান রশিদ) 

টেনিসনে অনুরণন--- 

I'd sleep another hundred years, 
O love, for such another kiss;
'O wake for ever, love, she hears, 
'O love, 'twas such as this and this.' 


     রাত্রি চতুর্থ প্রহরের খন্ডসময়ে বহমান ললিতা, ললিত বা ললত রাগিণীর নায়িকার সুখাবেশ--- 

প্রফুল্ল  সপ্তচ্ছদ পুষ্পগুচ্ছৈঃ
সচ্ছায়কায়ঃ সুবিলাসিবেশঃ।। 
যস্যাঃ পতিঃ প্রাতরপৈতি গেহা---
দ্বিনিদ্র চক্ষুরললিতাতুসৈব।।

                (রাগ তরঙ্গিণী/ লোচন শর্মা )

    এ সময়ের সোচ্চার, গতিবান অথচ পরিমিত আন্দোলনের ধ্বনিময়তা কখনো কখনো   জীবনরহস্য উন্মোচনে জাপানের কবিতার অভিজ্ঞান--- 

আমি দেখি তোমাকে সিন্ধুচিল ; 
আমি দেখি তরঙ্গমালার মাঝে একা এক ফুল 
যেন এক অশনি- ঝলক, 
জানো বা এক পশলা হাসি ; 
আমি দেখি তোমাকে নিঃসঙ্গ, নিঃসঙ্গ উড্ডীন
হে সময়, 
হে অনন্ত।

 (সিন্ধুচিল/ কায়োশি ফুকুহারা। অনুবাদ- লেখক) 

  এই অভিজ্ঞান কখনো কখনো প্রাণিক আনন্দ আর প্রকৃতির ভাবানুষঙ্গে  অমল অনুভাবী---



'........the lark 
Soars up and up, shivering for very joy ;
........and God renews 
His ancient rapture.'
 
          (Robert Browning) 

গীতের আস্থায়ী, অন্তরা, আভোগের সঞ্চারবৃত্ত; বাদ্যের কাল, মার্গ,অঙ্গ, ক্রিয়া, গ্রহ, যতি, প্রস্তার, লয়, কলা, জাতি; নৃত্যের অলপদ্ম, উর্ণনাভ, হংসপক্ষ, বরদাভয় মুদ্রার লহর; শিল্পীর তুলির নিঃশব্দ, অভিমানী বর্ণ সম্মেলন; কবিতার ভাবের মাধুর্য, ভাষার শুদ্ধতা, গীতিরীতির গাম্ভীর্য, ছন্দের বৈচিত্র; ভাস্কর্যের রূপভেদ, প্রমাণ, ভাব, সাদৃশ্য, বর্ণিকাভঙ্গি, লাবণ্যযোজনা----- এই ষড়ঙ্গ--- এই সব ভিন্ন ভিন্ন শিল্পভাষার অন্তর্বর্তী একটি সম শিল্পপ্রতিমা মূর্ত
 হয়ে ওঠে, অনন্ত মহাকালের কাছে উৎসর্গের নিমিত্ত খন্ডকাল নিজেকে নিয়ত যে প্রতিমার পায়ে সমর্পণ করে চলেছে তার সমর্পণে মৃত্যুশীল খন্ড প্রেম, সৌন্দর্য আর সুখ অন্বেষণ এক অখন্ড অমৃত আনন্দের মহিমায় তাদের যথোপযুক্ত সংজ্ঞার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা লাভের অভিলাষী।

Beauty is his footprint showing us where  he has passed,
Love is his heart-beats' rhythm in mortal breasts,
Happiness the smile on his adorable face.

(SAVITRI/Sri Aurobindo) 


সহায়িকা গ্রন্থপঞ্জিঃ-

১. Aesthetic Theory And Art- Ranjan K. Ghosh 
২. গালিবের কবিতা-অনুবাদ- শক্তি চট্টোপাধ্যায়/ আয়ান রশীদ
৩. বাহাদুর শা' জাফরের কবিতা-অনুবাদ সত্য গঙ্গোপাধ্যায় 
৪. কবিতা সংগ্রহ-অমিয় চক্রবর্তী 
৫. কালিদাসের মেঘদূত-অনুবাদ- বুদ্ধদেব বসু 
৬. History of English Literature-Arthur Compton Rickett
৭. লোচন শর্মা বিরচিত রাগতরঙ্গিণী- সম্পাদনা ও ভাষান্তর- রাজ্যেশ্বর মিত্র
৮. নৃত্যশাস্ত্র- গায়ত্রী চট্টোপাধ্যায় 
৯. সঙ্গীতের ইতিবৃত্ত-শম্ভুনাথ ঘোষ
১০. Light and Shadow Along a Great Road- Compiled and Translated by Rewi Alley
১১. SAVITRI-Sri Aurobindo 

1 মন্তব্যসমূহ

Thanks

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thanks

নবীনতর পূর্বতন