গুচ্ছকবিতা।। তাপস চক্রবর্তী।। poems by tapos chakrabarti--kuasha



গুচ্ছকবিতা
তাপস চক্রবর্তী


প্রযত্নে প্র-পিতামহ

ভীষণ ইচ্ছে শুধু একবার— একবার
পাখির জন্ম চেয়ে নিতে
যে দোল খেয়ে একনিমিষেই পেরিয়ে যেতো—
ধূলো মাটি আকাশ।
আচ্ছা
পাখিও কি মানুষের জন্ম চেয়েছে—
চেয়েছে কখনো?
কিংবা হতে চেয়েছে গাছ বাঁশ নদী?
প্রশ্ন এমন— পাখির স্বরে কেনো বিহ্বল হই— 
কেনো হয়েছি বারংবার...
তবুও হাজারবার জিজ্ঞেস করেছি 
পাখির জন্মকথা।
প্রশ্ন শুনে ঠাকুরমা কোনো উত্তর না দিয়ে
ঠাকুরদার কাছে রাখা বাক্স খুলে দেখায়—
যেখানে ছিল ধবধবে সাদা দুপাটি দাঁত
বাবা বলেছিল জেনো প্রযত্নে প্র-পিতামহ।

কৃষ্ণ

ভবিষ্যৎ-টা চোখের নীচের ডার্ক সার্কেলের মতো
যেমনটা কৃষ্ণাঅষ্টমী
যমুনার ঢেউ।
তবুও পয়গাম করি সত্যের
কৃষ্ণ
হে কৃষ্ণ
তমসা ঘিরে ধরে আষাঢ় কদমে।
শ্রাবণে নিয়তি নিশ্চয়ই তবুও ফিরে এসো...
আগামী
নিশ্চিত আশ্বিনে মেঘাভ্র উদারতায়—
কৃষ্ণ— হে কৃষ্ণ গান ধরো
বংশী বাজাও
বিহবল পথের সঙ্গোপনে।

কে বেশি পাগল

কে বেশি পাগল— আমি না রবীন্দ্রনাথ
নাকি চুপ করে থাকা বিড়াল— 
না পায়ের কাছে বসা কুকুর?
মদ খেয়ে কে পাগল হতো— আমি না শক্তি
অরণ্যে হেমন্ত পেরিয়ে যেতেই থেমে যেতো রোদ
কাস্তের ছবি পুড়িয়ে দিয়ে উল্লাস করতো সাফেদা বনে
সে আমি নাকি পাড়ার বেয়ারা ছেলেটি?
কে?
কে?
কার পা দুটো টলোমলো হতো সাত পেগ শেষে
কার ঠোঁটের কোণে ভাসাতো প্রলাপ— হেন করেংগা তেন করেংগা
আবার বেহালার শেষরাগে
কে ফিরতো তমাল রাতে ভীষণ ভীষণ দুঃখ নিয়ে
বলো আমি না হাফিজ? 
শ্রাবণে প্লাবণ এনে কে তোমায় রাঙিয়ে দিতো 
ধূলোমাখা চরণ
কে তোমায় বলতো, তোমার জন্য বৃষ্টি এনেছি— 
আমি না হাবিব।
গণতন্ত্রের চাপা ষড়যন্ত্রের মিছিলে সমাজতন্ত্র ভুলে
কে বলতো কদম তুলেছি শুধু তোমার জন্য
ক্ষুধা আর দারিদ্রের হাজার রকমের স্লোগান ভুলে
কে বলতো সব ভুলে এসো— রিনিঝিনি বর্ষায় এসো
এসো
এসো...
আচ্ছা কে বেশি পাগল— আমি না সুকান্ত
নাকি খুকুপিসি?
নাকি গোলির মোড়ের জুতা সারানোর সেই ছেলেটি...
যার চোখে ছিল না-পড়া লেলিন সাম্যের গান।
যে দেখেছে মধ্যবয়েসের রাত?
যে দেখেছে ক্ষুধার্ত ফুটপাত?
যে দেখেছে রাতের আকাশে পোড়া চাঁদ?

বিনয় মজুদারকে উৎসর্গিত পিয়াস মজিদের কবিতা পড়ুন এখানে
poem by p.francis click here
কবি আমিনুল ইসলাম মুল্যায়ন প্রবন্ধ পড়ুন এখানে 
ড. আলী রেজার প্রবন্ধ পড়ুন এখানে ক্লিক করে
মোহাম্মদ জসিমের ভিন্ন রঙের কবিতা পড়ুন এখানে


শোলা ফুল

ওরা ভেঙেছে 
ভাঙুক
আমরা জেগে আছি তোমার আমিতে...
অতএব উল্লাসে মাতুক নির্বোধ
পাষাণ্ড
যতোসব বদ্ধ মাতাল
অতঃপর আমি পায়ের ছাপ গুনি।
জানি পথ দীর্ঘ নয়
জানি
কাঠপেন্সিলের নিব কিম্বা শোলা ফুল ওরা।
তাই
এখনও জেগে আছি তখনও জেগে থাকবো 
দেখবো তোমার আমিকে
জানি তোমার ঠোঁটের স্থিতিতে সুদীর্ঘ বাংলাদেশ।

তৃতীয়ার চাঁদ

চিঠির ভাষাগুলো অসমাপ্ত 
অনেকটা গাণিতিক।
ধরো, ১ = আমি, ২ = তুমি, তৃতীয় সমীক্ষায়... 
জেগে থাকা√ একফালি চাঁদ
রূপোলী রঙ→ 

সাদা-কালোকে গিলে খায় গাঢ় লাল।
বক্ষবন্ধনীর হাতলে জোড়া শূন্যের সহবস্থান।

কুকুর বেড়াল

পাখি কি গায় অপ্রেমের গান
হলুদ ঠোঁটে?
যে ছিল আমার স্বপ্নচারিনী
বেহুদা
বেহুলার ভেলা ভিড়েছিলো যামিনী!
অসম্ভব অসংগতি 
বাক্যে
নিয়ম কষা মাংসের ভাগ আর ভাগ্য...
রুটি রুজি
নেই
তবু সুখি কুকুর বেড়াল।

বোঁটায় যেনো জীবনের জয়গান।
তবুও তৃতীয়ার চাঁদ, তৃতীয়পক্ষ
ভাঙো বাঁধ
জন্ম নিক তোমার আমার চিরচেনা শ্লোগান।

অমরত্বে দাবী নেই

আমার অমরত্বে দাবী নেই—
নেই 
নেই হাপিত্যেশ কিংবা বর্ণবাদীর স্লোগান।
এখন
লক্ষ্যভেদ শেষে 
ব্যারিকেড ভেঙে ফেলা অদম্য পাপী এক
মথুরামোহন কংস।
রাধা হয়ে
তুমিও চোখ বন্ধ করে
বলো
নব্বুই কতদূর!
যদিও আমি স্বৈরাচারী নই
রাষ্ট্রের কেউ নই
সংসারের সংসারী নই
নই
নই
কেবল পশুর আস্তাবলে উচ্ছিষ্ট মাত্র।
একা— একদিন ভাঙা চাঁদ ভেঙে
শেষ বর্ষা শেষে
ধুল পথ কাদা করে যেতে যেতে বলবো 
আমি রাষ্ট্রের কেউ নই
তোমারও কেউ নই।

ডুবসাঁতার

আজকাল অক্ষররা বেঁচে যায় 
তমালরাত্রির মতো—
হাজার হাজার দীর্ঘশ্বাসে।
অথচ আমি শব্দের মালভূমিতে 
একা হেঁটে যায়—
একা এক শূন্যতায়।
পথে পথে 
পানকৌড়ির ডুবসাঁতার শিখি...
শামুকের খোলসে।
ভাতশালিকের পাঠ চুকিয়ে গেছি
নীরবে নিভৃতে
শ্মশানের অগ্নিতপস্যায়...

জোয়ান জোয়ারি বাঁধ

বুকের জমানো ছাইগুলো উড়িয়ে দিয়েছি
পারতো কুড়িয়ে নিও
আমিও রাতের আঁধার কুড়িয়ে নিয়েছি
ভরিয়ে তুলেছে ফুলের সাঁজি।
মনে পড়ে, শরত রাতের চোখাচোখি
তখন তোমার হয়তো ষোল
এখন ভরা সংসার, আহ্লাদ লুটে বিছানার চাদর
আমার কাটে শুধু আঁধারের বোল।
এখন মধ্যাহ্ন— এখানে ওখানে ভাসে রাতের ছবি
চটজলদি নেমে আসে রুপোলি চাঁদ
রুপোলি জ্যোৎস্নায় আঁধার কুড়িয়ে দেখি
শঙ্খের বুকে জাগে জোয়ান জোয়ারি বাঁধ।

অবসন্ন শ্মশান

শহরের ইচ্ছেরা আজকাল দরোজা বন্দি
দেখি জানালায় বসেছে কাক।
জুঁই কিম্বা গোলাপের খুশবু— ঈর্ষার নদী
অনেকটা জোঁক, যীশুর গেঁথে দেওয়া শরীর।
ট্রাম কার্ডে রকমারি ডটকম
পিঁপড়ের সারি— গিরিগিটী 
ফসিলের আকার যেন ওয়ার্কএনহায়ার।
কাঠগোলাপে মুগ্ধতায় আরেকবার 
এসো
সেই উনিশের শেষ পত্রালাপে
কী লিখেছিলাম?
দেখো— রথের ঘোড়াগুলোর টঙের চারপাশে
নির্ঘুম ধর্মান্তরিত ঘাসফড়িং
দেখো— চরিদিকে এখন বিষন্ন শ্মশান
বাবার রেখে যাওয়া আধ পোড়া কাঠ।

জল

জল বাড়ছে→ লোকাল বাসের মতো।
দু'পায়া মানুষ আসে এবং ভাসে
জল ও প্রেমে।
জল কমে যায়
হাসিফুল বাসি হয় ছেঁড়া জামাটার আদলে...
ধারাপাত খুলি— 
দেখি 
তোমার শূন্যতা অষ্টপ্রহর।
প্রেমের মতোই ধর্মহীনতা 
যেন চুনবালি আর জোড়া শালিকের কীর্তন।
অথচ গুনিন সংখ্যার পেছনে আমি 
আমাদের বিষাদ ছুঁয়ে যায়— 
প্রান্তিক যোগানে।

সাংবিধানিক কলাকৈবল্যবাদ

ধরুণ গনপতি থেকে গণতন্ত্র
তারপর রাষ্ট্র
বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদের উত্থানে 
স্বয়ং বিষ্ণু
রজোদোষ রাজ্যের লক্ষ্মী
গাধার পিটে সরস্বতী
ইঁদুর দৌড়ে 
উল্লাসিত করমচার যোগান রেখা।
মুখ্য নয় এখানে সূর্যের সাম্যতা— বৃষ্টির সরলতা
বিচুলি পাতায় খুসখুস জীবন
তবুও এসো মুখের লাগাম খুলে বলি
পাখিদের সাংবিধানিক কলাকৈবল্যবাদ।

এই শহরে আঁধার নামে

মুয়াজ্জিনের শেষ ধ্বণিতে আকাশে হেসেছিল চাঁদ
তারপর 
ইতিহাস সাক্ষী তুমি আমি দেখেছি অনেক রাত
যেমন পিয়াল শাখায় নতুন মঞ্জুরী আবার।
রাত এমনি যেমনি অন্যস্বরে ডাকে হুতোমপেঁচা
জানো— এই শহরে আঁধার নামে
আমিও চেয়ে দেখি— আমিও বেঁচে আছি একা।

Post a Comment

Thanks

নবীনতর পূর্বতন