গুচ্ছকবিতা।। আনোয়ার রশীদ সাগর।।poems by Anwar rashid Sagor..kuasha

গুচ্ছকবিতা
আনোয়ার রশীদ সাগর
 
আনোয়ার রশীদ সাগর।। কবি
    ভুলে যায়,ভুলে গেছে!

দরজা খুলে জানালা পেরুতে পারি না
রাতভর অপেক্ষায় থেকে থেকে ঘুমঘোর স্বপ্ন দেখি
ডানা ঝাপটানো দেখতে দেখতে,
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পতঙ্গ এর পতন দেখি।
দেখি হাজারো হায়েনা, পতঙ্গভুক পাখির ঝরে পড়া;
কতো কতো বছর দাঁড়িয়ে রয়েছে বাঁশ খুটি, ঝুলছে ছাওনি। শুধু ছাওনিরই শিকড়হীন চলা এদেশের আকাশে। মা মাটির ছোঁয়া মেলেনি কোনোদিন।

দরজা খুলে জানালা পেরুতে পারি না-
ঝড়বৃষ্টি শেষে, শীতল ছায়ার মনোরম পরিবেশে
মুক্ত বিহঙ্গের উড়ার অপেক্ষায় তাকিয়ে থাকি,
চোখ ঝাপসা হয়,নিঃশব্দে গুমরিয়ে ওঠে বুক
রক্তঝরা রাজপথের সব লাল, কৃষ্ণচূড়া গাছ
হতে ঝরে ঝরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিয়েছে শকুনেরা। 
কী এক অদ্ভুত সাথী ছিলো তারা, হয়ে গেলো বাজপাখি! ভুলে গেলো স্লোগান!  ভুলে গেলো শপথ! 
এভাবেই চলছে হাজারো বছর,হাজারো প্রত্যাশার আত্মাহুতি হচ্ছে। 
জানালা পেরুতে পারি না,পেরুনোর ইচ্ছেটাও মরে গেছে গো! মরে গেছে গাছের গোছানো স্বপ্ন।

গল্প বরফের ছুরি পড়ুন এখানে
প্রবন্ধ,উত্তরাধুনিক কাব্যধারার যাত্রাঃ মতিন বৈরাগী-এখানে
প্রবন্ধঃ রাজনীতি ও সাহিত্য পারস্পরিক সম্পর্ক পড়ুন এখানে

নির্মাতারা

দুপুরগুলো মুঠোয় আটকিয়ে রাখি,আটকিয়ে রাখি ছড়ানো রৌদ্রকেও;
আঙ্গুলের ফাঁকে ফাঁকে দেখি চুয়িয়ে চুয়িয়ে পানি পড়ে,ভিজে যায় মন ও মনন।
কেন উত্তাপ সৃষ্টি হয়,কেন উথলে পড়ে আবেগ,
কেন যে দুপুর কাঁদে অভিমানে তাও তো জানি না;
বোঝার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছি সমুদ্রজলে।
এখন শুধু ফ্যাল ফ্যাল চেয়ে থাকা, স্ব পলক আকাশ দেখা এবং পোড়ামাটির গন্ধ শোঁকা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই, তবুও ভিজে যায় ভিতরটা এবং বাহিরটাতেও ঘাম ঝরে অনবরত।
ঝরতে ঝরতে ঝুঁকিতে ঝুলে থাকে প্রজন্ম, শূন্যে চেয়ে চেয়ে দাবড়ে বেড়ায় দাপটের সাথে আঙুলের আগাই;
আটকিয়ে আঁকেই ছবি, ছায়া ছুঁয়ে  বিপ্লবী, ব্যর্থ বোঝে না সে, ফাঁকে ফাঁকে রক্তাভ তরল।

মনে মনে মুগ্ধ হয়ে আগুন দেখি,দেখে দেখে দুয়ারে দাড়িয়ে মশাল জালি, জ্বেলে জ্বেলে জ্বলি নিজেই নির্জনে। অভিমানে, অভিযোগ যোগ করি আঙ্গুলের ডগায় ; নিস্পাপ নিস্তব্ধতা থেকে কীভাবে পাপের পরিচয়ে পা বাড়ায় সন্তানেরা!- বুঝি না হায়,হায়েনা হয় 
হতে সময় নেয় না নন্দিত নির্মাতা।

পালক

পালক পাখিহীন পিলপিল করে উড়ছে,
পালক  গুলো এখন হালকা বাতাসেও সড়সড় শব্দ করছে।
দুদিন আগেও পালকগুলো প্রাণ নিয়ে আকাশে বাতাসে বিদ্রোহের দামামা বাজিয়েছিল।
উড়িয়েছিল, দিগন্ত থেকে দিগন্ত ছুঁয়ে ছুঁয়ে বিপ্লবী পতাকা; 
অথচ ছিটকে পড়ে,
টুকরো টুকরো হওয়ার চিহ্ন ওরা দেখেনি। 
ঝরে পড়বে অথবা পড়েছে তা পালক গুলো  এখনো বোঝেনি অথবা বুঝতে চেষ্টাও করেনি।
হয়তোবা মাঠেঘাটে বা রাজপথে তাদের শুকনো পাতার সাথে দেখা যাবে,
দেখা যাবে হাঙরের মুখে খাবার হিসেবে
হিসহিস শব্দ করে গুড়িয়ে যেতে। 
কী এক দূর্ভাগা পালকের জাতটা!- 
মনে রাখে না অতীত ইতিহাস। 
পাখির পাখায় থেকে থেকে বাজপাখির ছোঁ শিখেছে, দেখেনি বা সয়নি কোনোদিন
পালক থেকে খসে পড়ার যন্ত্রণাটা।
দূর্ভাগ্যবশত পালক গুলো কালবৈশাখী ঝড়ে পড়েনি,দেখেনি আগুনের সাইক্লোন। 
আবেগের কবি অথবা বিনয়ের বিনিময়ে বিনিয়োগ হয় বাংলাদেশের জলধারা;
সে জলধারায় ভাসতে ভাসতে ভেঙেচুরে ভেসে গেছে 
কতো কতো বিপ্লব!
অথচ খরাবন্যার নির্যাতন, নির্বিঘ্নে নীরবে রয়ে গেছে কৃষক শ্রমিক মেহনতী মানুষের দুয়ারে দুয়ার।

ভিন্ন স্বাদের গল্প,কফি হাউজের ওয়েটার' পড়ুন এখানে
নজরুলের রহস্যময়তা নিয়ে প্রবন্ধ পড়ুন এখানে
চৌধুরী মো.তারিকের কবিতা পড়ুন এখানে
শিশির আজমের দীর্ঘ কবিতা পড়ুন এখানে

শ্রাবণবেলা

বৃষ্টিময় গোধূলির রঙমাখা ব্যাঙের দুপাশে রোমাঞ্চকর প্রেম ঝড় তোলে জীবনের গল্পের খোঁজে; শীত নিদ্রা থেকে বেরিয়ে  সাথীদের সাথে বৃষ্টি বৃষ্টি খেলায় বংশবিস্তার করে মেঘের জার্নালে। সোনালি ব্যাঙের গাল ফোলানো অভিমানে লাফালাফি  করে সঙ্গমগন্ধের দেহভরা আকর্ষণে। কতো ব্যথা, কতো অভিমান জমা ছিলো, সবুজ ধানের মাঠে মৃদু স্রোতে অনাদিকালের হৃদয় জুড়ে ছুঁয়ে যায়, ভেসে যায় সে ব্যথা সে অভিমান।
প্রণয়ের পাশাখেলা চলে, চলে পুঞ্জীভূত রাত্রির লেনদেন, ; ব্যাঙাচিরা জেগে ওঠে জমাটবদ্ধ ডিম্বাণু ভেঙে অঙ্কুরিত হয় বর্ষার মাধবী স্রোতে।  ব্যাঙাচির নন্দনকানন পানিময় নির্ঘুম শ্যাওলা জড়িয়ে মেতে থাকে  শ্রাবণ বর্ষায়।

জলছাপ

জলজ বিষন্নতা স্বপ্নময় জানালায়
অসাঢ় অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে দেখি মেঘমালা।
উদাস নিঃশ্বাস ভেসে ভেসে ভেঙে ফেলে গোধূলি ছায়া, সন্ধ্যা হারিয়ে আঁধারের অলিখিত কারুকাজ সাজানো 
দেখে আঁতকে ওঠে জনতা। বিস্ময়কর ছাপচিত্র রেখে যায় পাথরহৃদয়।  প্রশ্নবিদ্ধ শাসকের পিরিতি মার্কা বয়ান। কৃষ্ণগহ্বরে হারাতে বসেছে দীর্ঘ সংগ্রামের চেতনা। আলোছায়ায় জেগে ওঠে আরেকটা বিষন্নতার 
আদিম চেতনা।  কুসংস্কার আর অন্ধত্বের দখলে চলে যাবে কী গোধূলির রঙমাখা মুক্ত হাওয়া? থেমে যাবে কী আকাশময় নীলছায়া? পাথরহৃদয় যদি পাথরই থেকে যায় তবে ক্ষয়ে যাবে মুক্তির অন্বেষণ।

সজিনা সুজন ও কংক্রিট জীবন

মাল্টিকালার অন্তর্বাস খুলে যারা মিথ্যাচার করে তারা আর যায়হোক মানুষ হয় না। দুর্বোধ্যতায় তাদের মন ও মস্তিষ্ক ভরা থাকে। শরণার্থী শিবিরেও তাদের ঠাই হয় না। বিচিত্র ঢঙে নর্তকী সেজে নাচতে নাচতে পতিতায় পরিণত হয়।
গর্ভবতী হওয়ার নেশায় কানামাছি ভোঁভোঁ খেলে বেড়ায়। কুৎসিত কুয়াশায় স্তন ঝুলিয়ে আকর্ষণ করার কৌতুকে কৃঞ্চকলি সাজতে চায়। নিজেকে সংসারপনা দেখাতে গিয়ে দিনশেষে ঝিঁঝিঁর মতো আত্মহত্যা করে।
মধ্যরাতে নেশাখোরের ডাকে নগ্ন হয়ে শুয়ে পরনিন্দায় মত্ত থাকে। 
ঘাসে ঘাসে বনবাসী হয়ে শুয়ে থাকে ছড়ানো ছিটানো মলের মধ্যে।  একটি অসত্যকে সত্য বানাতে গিয়ে বিভীষণ পরিচয়ে ম্যাও ম্যাও ডাকে।
অদৃশ্য ঈশ্বর হয় তার দুরভিসন্ধির হাতিয়ার। তার নষ্টামিতে পচে বেশকিছু উঠতি যুবক। মিথ্যাচারীর চৈতন্যে ফিরুক  নির্ভেজাল প্রেমিক।

সমুদ্রমেঘ

সমুদ্রমেঘ ন্যানোগতিতে  আঁধারের অস্তিত্বে ভিজে ভিজে ব্লাকহোলের দিকে ধাবমান।  আকাশের বুকে মায়ামমতাহীন শাসক চুষে চুষে কবরের ঝিনুক কুড়িয়ে বৃথাই মুক্তা জমায়।
মানচিত্রের সূর্যালো স্থবির ও বিদ্ধকরণে বিদ্ধকরণে
নির্জীব ও নিস্ক্রিয় হয়ে পড়ছে। স্বগতোক্তির দরজায় প্রসাব করে দেয় জনতা, ঘৃণায় থুতু ফেলে মসনদে। 
বাঁকা ও নিঃশেষিত শিল্পের ভেঙে পড়া প্রত্যাশায় 
কী আর চায় তাঁরা? 
শ্রাবণ ধারায় নিকষ আঁধারের গলিতে ডুবে যায়
দীর্ঘদিনের সংগ্রামী ঐতিহ্য! নিশ্চিত, নিঃশব্দে নিঃশেষ হবে না, নুয়ে পড়বে না সমুদ্রমেঘ। ব্লাকহোল থেকে বেরিয়ে আসবে আবার জনতার কাতারে, ক্ষতচিহ্ন শুধু রেখে যাবে থেঁতো মেরুদণ্ডহীন পরগাছা।



--

with thanks & regards____

image

দ্বীপ সরকার

editor of kuasha

+88001719751792

kuasha.mag@gamil.com

https://mkuasha.blogspot.com/

facebook

twitter

linkedin



Post a Comment

Thanks

নবীনতর পূর্বতন