সোমবার, ১১ জুন, ২০১৮

রুবাই ।। নুশরাত রুমু


রুবাই


টিভিতে মা দিবসের খবর শুনে আনমনা হয়ে গেল ঐশী। বিয়ের চারবছর পার হয়ে গেলো এখনো মা হতে পারেনি সে।

কয়েকমাস আগেই সুখবরটা হতে পারতো। খুব আনন্দে কেটেছিলো তখনকার সময়গুলো। টেস্টে রিপোর্ট পজিটিভ দেখে মহাখুশি ভর করেছিলো ঐশীর ঘরে। স্বপ্নের মতো পেরিয়ে যাচ্ছিলো প্রতিটা দিন।
ঐশীর স্বামী মাহাবুব তার প্রতি যথেষ্ট যত্নশীল হয়ে গেলো। সংসারের কিছু কাজে নিজেও হাত লাগালো। ঐশীর রান্না নিয়ে ভীষণ খুঁত ধরতো, এখন আর সেসব করে না।  অফিস থেকে ফিরলে অনিন্দ্য আবেগ নিয়ে সন্তানের জন্য নানা পরিকল্পনা আঁকে। বাচ্চার জন্য দোলনা কিনবে, সেটা কোথায় রাখবে সেটা নিয়ে কতরকম ভাবনা..
এদিকে মনে মনে সন্তানের নামও ঠিক করে ফেলেছিল ঐশী।
কবিতা ভীষণ ভালোবাসে তাই 
"রুবাই "নামটাই তার কাছে সেরা।


১০ সপ্তাহ পার হতে চলেছে।
বিকেলে অফিস থেকে ফিরেই ফল কাটলো মাহাবুব। ফলের প্লেট নিয়ে বেডরুমে এসে দেখলো তলপেট চেপে ধরে বাথরুম থেকে বেরুচ্ছে ঐশী। ব্যথার চোটে ওর মাথাটা ঘুরে গেল। 
মাহাবুব দ্রুত গিয়ে তাকে ধরে খাটে নিয়ে এলো। ব্লিডিং এর কথা শুনে আর দেরি করলো না, ট্যাক্সি ডেকে ডাক্তারের  চেম্বারে নিয়ে গেল। 
গাইনি ডাক্তার অনেকক্ষণ ধরে দেখে কিছু টেস্ট করাতে দিলেন।

পরদিন মাহাবুব রিপোর্ট আনতে গেল। ডাক্তারের কথায় তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। ঐশীও জানতে পেরে জ্ঞান হারালো, কোনমতেই কারো বিশ্বাস হচ্ছিলো না যে বাচ্চাটা জীবিত নেই! জ্ঞান ফেরার পরও সহজ হতে পারলো না ঐশী। তার স্বামী তখন আরো একটি খবর চেপে গেছে-- এশীর  আবার মা হওয়াটা খুব রিস্কি। একটা টিউমার দেখা গেছে জরায়ুর পাশে,  আগে সেই চিকিৎসা করাতে হবে।
কোনমতেই শান্ত করতে পারছিল না বলে মাহাবুব ঐশীকে তার মায়ের বাড়ি নিয়ে এলো।
শাশুড়ি মাকে সমস্ত জানাতে গিয়ে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল। ঐশীর মা সান্ত্বনা দিলেন-
ধৈর্য হারিয়ো না বাবা, হয়ত ভালো কিছু হবে, এটা খোদার একটা পরীক্ষা।
বিকেল থেকে কেঁদেই চলেছে ঐশী।  মা কতরকম বুঝিয়ে চলেছেন।  কোন ব্যাখ্যাতেই ঐশীকে থামাতে পারছেন না।সেতো অনেক ভালোবেসেছিল রুবাইকে, তাহলে কেন মা হতে পারলো না? সে কখনো কারো ক্ষতি করেনি তাহলে কেন খোদা এমন করলেন?

এমনি করে আক্ষেপে বেশ কিছুদিন কাটলো।
একা হলেই রুবাইকে নিয়ে ভাবনাগুলো ঘিরে ধরে। 
মা হবার তীব্র আকাঙ্ক্ষা জেগে ওঠে তার।
চোখের জলে সব ঝাপসা হয়ে আসে।

নিয়তির কাছে পরাজিত হতে চায় না ঐশী। সবকিছু পজিটিভ ভাবতে হবে এবার। বড় করে শ্বাস নিয়ে উঠে দাঁড়ায় সে।কবিতার ডায়েরি হাতে লেখার জগতে ফিরে গেলো ঐশী। অনেক কবিতা লিখেছিলো একসময়, আবারো কবিতা লেখা শুরু করলো সে। গর্ভজাত সন্তান পৃথিবীতে না আনতে পারলেওমস্তিষ্কজাত অনেক সন্তানের মা হয়েছে সে। কবিতারাই তার রুবাই নামের সন্তান। তাদের লালন করেই মা হিসাবে বেঁচে থাকতে চায় ঐশী।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন