মঙ্গলবার, ১২ জুন, ২০১৮

ডোম সিরিজ ও কবি গিরিশ গৈরিক গৈরিক ।। মাসুদ চয়ন

ডোম সিরিজ ও কবি গিরিশ গৈরিক গৈরিক


             আমি এমন একটা সিরিজ কাব্যগ্রন্থ নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি,যা পড়ে প্রতিবারি আমাকে হারিয়ে যেতে হয়েছে জীবন বোধের একেবারে অতল গহীণ সীমান্তে।
সময়ের আলোচিত কবি গিরিশ গৈরিক দাদার 'ডোম'গ্রন্থটা তিনবার পাঠ করা হয়ে গেছে।এমন গভীর বোধ পেয়েছি যা অন্য কোনো সিরিজ কাব্যগ্রন্থে কখনো খুঁজে পাইনি।প্রথম বার, দ্বিতীয় বার এরপর তৃতীয় বার।একেক বারের উপলব্ধির বোধ একেক রকম ঠেকেছিলো।ডোম ঘুরে ফিরে প্রতিবারি গভীর জীবন বোধের কথা বলেছে।কখনো অতীত স্মৃতিচারনায় ভারাকান্ত করে দিয়েছে,কখনো বা ভবিষ্যৎ কাল্পনিকতার প্রতিচ্ছবি এঁকে দিয়েছে।প্রতিটা মানুষই যে জীবন্ত লাশের মতন বেঁচে আছেন 'ডোমে 'সেই কথাই গভীর থেকে গভীরে গিয়ে অনুধাবন করে নিপুণ শৈলিতে উপস্থাপন করা হয়েছে।
''তাই মৃত দেহ সম্মুখে রেখে প্রশ্ন করি_আমি কে?
কি গভীর বোধ তাই না?মুগ্ধ না হয়ে কি পারা যায়! আপনি একবার মৃত দেহ সামনে রেখে নিজেকে প্রশ্ন করে দেখবেন কি উত্তর মেলে?কোনো উত্তর খুঁজে পাবেন না।কেবল গভীর বোধের অতলে হারিয়ে যেতে থাকবেন।এক সময় নিজেকে ডোম হিসেবে আবিস্কার করবেন।হৃদয় ক্ষরনে দগ্ধ হয়ে অশ্রুঝরা হবেন।সব স্বপ্ন অভিলাষ ভেঙে চুরমার হয়ে যেতে শুরু করবে।কেবল আপনার ভিতরের মানবিক স্বত্তাটাই খুঁজে পাবেন।সে আপনাকে প্রশ্ন করবে আবারো,তুমি কতোটা মানবিক?তুমি কি সত্যিই মানুষ হতে পেরেছো!তোমার বিবেক তোমাকে দংশন করবে,তোমার শরীর থর থর করে কাঁপবে।মস্তক বেয়ে অবিরাম ঘাম ঝরবে।শিরা উপশিরা দিয়ে প্রবাহিত রক্তে ওম ছড়িয়ে পরবে,আর তুমি চিৎকার করে বলবে,আমি মানুষ হতে পারিনি।কোন এক গোত্রের অধীন্যস্থ কৃতদাস/দাসী হয়েছে মাত্র।কেবল তারই অনুসারী,তারই জিকির করি,আর তার অনুসারীদের জন্য নিজেকে নিবেদন করি।ভিন্ন গোত্রদের ধার ধারিনা আমি।আমি কেবল নিজের পরিবার আর রক্তের সম্পর্কজাত দের জন্য নিজেকে সপে দিয়ে যাচ্ছি। এর বাহিরের জনেরা আমার কেহ নয়।আমি মুসলিম হয়ে হিন্দুকে কটাক্ষ করি,হিন্দু হয়ে মুসলিম কে,খ্রিষ্টীয় হয়ে বৌদ্ধ কে।আমি তাহলে কেমন মানুষ! আমার মনুষ্যত্ব কোথায়!
''সময় হারিয়ে গেছে_গভীর কোনো বীজের অন্ধকারে,তুমি হারিয়েছ শিকড়ে কিংবা তীরবিদ্ধ আলোর জঠরে"
কি গভীর বোধ! এই বোধের আড়ালে লুকিয়ে আছে কত্তো কত্তো নির্মম বাস্তবিক সত্যসিদ্ধ চিত্রনাট্য!
আমরা কতোটা পারি সময়ের আলোর দিশারী হয়ে পথ চলতে?আমরা তো স্বেচ্ছায় সময়কে প্রবাহিত করি অন্ধকারের দিকে।তাই অজান্তেই একদিন জীবন আলোহীন হয়ে যায়, জীবনের জৌলুস হারিয়ে যায়, প্রিয়জন প্রেয়সীর কাছে উপেক্ষিত হতে হয়।এক সময় সত্যি সত্যি তারাও হারিয়ে যায়।
কোনো এক অন্ধকারের বীজে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখি।আর খুঁজি তোমারে সকল প্রিয় কিংবা প্রেয়সীরে তীরবিদ্ধ আলোর জঠরে দিশাহীন উন্মাদ নীরব পথিক হয়ে।
"অশ্রু চোখে যেদিকে তাকাই সেদিকে দেখি নদী,নদীর কাছেই শ্মশানঘাট,তারপরে ডোমের বসতি,আমি যাব শ্মশানঘাটে,জীবন তুমি আসো যদি''
এই লাইন গুলি যতবার পরি ততবারি গভীর বোধ জাগ্রত হয়ে নিয়ে গেছে আমায় অসীমের বহুদূর সীমান্তে।কারন এই ছোট্ট উক্তিতার বিস্তৃত রেখা সেই অসীমের মতই।প্রতিটা পঙক্তি দিয়ে যেনো রচনা করে ফেলি একেকটা কবিতা কিংবা প্রবন্ধ।
কেউ কি আর আসে সেই সময়ে?কেবল নদীর প্রবাহিত ধারার পানে চেয়ে থেকে অশ্রুসিক্ত হতে হয়।ভুলে যায় সবাই,এমন কি নিয়তিও।আমি অসহায় হয়ে কেবল চেয়ে থাকি।নিজের শুণ্যতায় জ্বলে পুড়ে অংকার হই।নদীর ছলাত ছলাত স্রোতের মতন হৃদয় অন্তকোণে জোয়ার আসে।সেই জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে আমার শেষ সম্বলটুকু,আমি কেবল তাহাঁ কল্পনার নয়নের প্রতিচ্ছবিতে দেখে যাই। আর বেদনার অশ্রুসিক্ত শীতল নদীর মতন নিথর হয়ে কেঁদে যাই। অতীতের সহুস্র স্বপ্নহারা দিনগুলির কথা ভেবে যাই।
''মৃত্যু এক আশ্চর্য শীতলতা।সে এলে নীরব হয়ে যায় জীবনের সব রন্ধনশালা"
"প্রাণ _সে কি বাতাসের দেবতা_অনন্ত আকাশ?যে আকাশে পাখি হয়ে বিচরন করে মানুষের মন"
"আমি দাঁড়িয়ে থাকা ভালুকজ্বর_তুমি ডোমসtকার"
মরনের পরে কি করে উপলব্ধি থাকতে পারে!না থাকে ইচ্ছের চাওয়া পাওয়া,অবসাদের নিঠুর সময়ক্রম,স্মৃতি খুড়ে বিদগ্ধ হওয়ার আবহ, সব কিছুতেই নিশ্চুপ হয়ে যাওয়া অস্তিত্ব,আর বেঁচে থাকাকালিন সময়ে চলে মৃত্যুর দিনলিপি গননা,কবে আসছে সে ধেয়ে?বাতাসের স্পন্দন এই বুঝি থেমে যায়, প্রাণ পাখি এই বুঝি যায় যায়। আকাশ কি জানে তাহা?মানুষ যে বলতে পারেনা।
কবির গভীর বোধের সীমা কেবল অদূর দিগন্তেই টেনে নিয়ে যায় অহর্নিশ।আমি এখন একজন ডোমের মতন ভাবছি।কি পেলুম এ জগতে!কতো যে হতাশার দল পেয়ে বসেছিলো আমায়!ওরা পিছু ধেয়ে আসছে এখনো।জীবন্ত লাশকে কুড়ে কুড়ে ছিড়ে খাওয়ার জন্য সে আপ্রাণ ছুটে আসছে।সে হচ্ছে মৃত্যু।তাবৎ বেদনা আর হতাশার সম্মিলিত রুপ মৃত্যু।আর তাতেই নেমে আসবে শুনশান শীতলতা, এ দেহের মননের এ মানবিক অস্তিত্বের।আমি মানবিক হয়ে ভেবেছি বলে বুঝেছি একজন কবি কি কারনে ডোম হতে পারেন।তিনি ডোম না হয়ে কখনই পাড়তেন না ডোমের ভিতরের অজানার বোধ কে এমন নিবির নিমগ্ন অনুভবে বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে।না জানি তিনি কতো সহস্রবার নিজেকে ডোম রুপে আবিস্কার করেছেন।আমার মন বলে তিনি মনে হয় পৃথিবীর সমস্থ জীবন্ত লাশের অনুভূতি ডোম হয়ে হৃদয়ে গেঁথে নিয়েছেন।
"হায় মানুষের মন_ভেবে দেখেছো কি?তোমার মৃত্যু হলে_মৃতদেহের কী পরিনতি হয়!
একে একে তুমি কতোজনের মৃত্যুর সাক্ষী হলে?কিন্তু জানতে চাইলেনা একবারো সে এখন কেমন আছে?সে কতোটা পঁচে গেছে!।সে কি আদৌ ভালো আছে!তুমিও একদিন সে হয়ে যাবে। তোমাকে কেউ কি মনে রাখবে? সেভাবে মনে রাখবেনা। ধীরে ধীরে সকলের স্মৃতিতে তুমি হালকা হয়ে যাবে। তোমার ঝাঁপসা তৈলচিত্র ভেবে কেউ আর অশ্রুসিক্ত হবেনা সময়ের সেই অদূরতম পরিক্রমায়।প্রিয় ডোম কবির গ্রন্থ পঠনে আজ বুঝে গেছি জীবনের মানে।জ্বলতে জ্বলতে জেনে গেলাম জীবনের মানে জীবন দমকা ঝড়ে। আর এই ঝড়ো থেমে যাবে শ্রীঘ্রই।আমি তুমি কিংবা আমরা সবাই মৃত লাশ হওয়ার দাড়প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি মাত্র।


"গভীর অন্ধকারে মোমবাতি হাতে ঘোলা নদীর অস্পষ্ট জীবন নিয়ে বয়ে চলি_ চোখের জলে"
"আমার এ মৃতদেহ আমিই আবার ডোম হয়ে কাটি"
জীবন যে গভীর বেদনার চাদরে আবৃত।কে বা তাহাঁ উপেক্ষা করে চাদরবিহীন নিজেরে ভাবতে পারে।চারদিকে দেখি কেবল ঘোলাটে আবহ।কে যে কখন এসে কারনে অকারনে স্বপ্ন ভাঙে!তাই নিজেরে আমরা অহর্নিশ কল্পনায় মৃত লাশের অস্তিত্ব রুপে বেঁচে থাকার কান্ডারী ভেবে যাই। কতোবার যে নিজেরে মারি বা মরা ভাবি!ভাবতে ভাবতে একদিন সত্যিকারের মৃত হয়ে যাই।এর আগে আর কখনো কোনো গ্রন্থ নিয়ে এভাবে গবেষণা করিনি।কিন্তু ডোম আমাকে বাধ্য করেছে।তাই আমি খুঁজে পাওয়ার জন্য আপ্রাণ প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছি এর ভিতরের গভীর বোধের রহস্য। মাত্র ৩০এর এপার ওপার বয়সী একজন তরুণ কবি এই বয়সে যা করে দেখালেন সত্যি আমি বিস্মিত এবং মুগ্ধ!সময়ের পরিক্রমায় এই গভীর বোধের সীমারেখা কতো দূর দিগন্তে ওনাকে নিয়ে যায়, সেটার সাক্ষী হবে মহাকাল।খুব কম কালজয়ী নিজেকে মৃত হওয়ার আগে কালজয়ী রুপে দেখে যেতে পারেন।
"একজন কবি তার কবিতায় চিতার কাঠ জ্বালাতেই হঠাt অনুভব হলো চিতার কাঠ যেন তার শরীরের হাড়।চিতার কাঠ যখন কবিতায় দাউ দাউ করে জ্বলছে তখন কবিও পুড়ে যাচ্ছে"
"অথচ আমার রক্ত ও মাংসে পোড়া কোনো গন্ধ নেই"
এই গভীর বোধকে বিশেষিত করার জন্য আমিও কল্পনায় নিজের শরীরে আগুন দিলাম।দেখি কতোটা জ্বলা যায়। কবি বা লেখক কে গল্প কবিতা লিখে প্রতিবারি হৃদয় ক্ষরণ যন্ত্রণায় জ্বলতে হয়।পারিপার্শ্বিক সমাজের চিত্রনাট্য যে খুব একটা সুখকর নয়।অগনিত জনে হৃদয়ে তীর নিক্ষেপ করার জন্যে ওত পেতে বসে আছে।কবি/লেখকের হৃদয়ে তীর ছুড়ে মেড়ে এরা পৈশাচিক আনন্দ পায়।তারা মনে করে কবি লেখক বুঝি মজাদার কোনো রেসিপি।তারা লিখবে আর আমরা লুকিয়ে লুকিয়ে পাঠ করে এড়িয়ে যাবো।তাদের সময় শ্রমকে সন্মান দিতে লেখাটার গঠনমূলক আলোচনা করতে আমার বয়ে গেছে!আমাদের দেশে আজকাল নীরব মানুষ স্বরব মানুষ অপেক্ষা অধিকতর বেশি।কিছু নীরব মানুষ নীরবতায় একাকীত্বের শান্তি খোঁজে,আর বাকিরা নীরব থেকে শিল্প শিল্পিকে লাঞ্ছিত করে।অথচ তাদের অনেকেই সেই শিল্পকে উপভোগ করে। কেউবা দেখেও না দেখার ভান করে এড়িয়ে চলে যায়।নিজের সামনে একটা কাল্পনিক তৈলচিত্র একে নেন,খুব সহজেই বুঝে যাবেন। আপনাকে যখন দুর্দিন গ্রাস করে তীব্র প্রলয়ী আলিঙ্গনে,তখন চেনা মানুষগুলিও পাশ কেটে চলে যায়।কিছু মিছে শান্তনা জোটে এই আর কি!সেই নির্মম নিপীড়ণকে কি আপনি একা জয় করছেন না!কজনে বুঝেছে আপনার মানসিক ভেঙে তছনছ হয়ে যাওয়ার কাব্য কথন।তাই আমি বলছি,কবি লেখকের কোনো স্থায়ী লেবাস বলে কিছু নেই।প্রতিটা মানবের হৃদয় অন্তকোনে একজন কবি আর একজন লেখক স্বত্ত্বার বসবাস।যে বহিঃপ্রকাশ ঘটায় সে কবি বা লেখক।এখানে বড় ছোটোর প্রশ্ন বেমানান।একেক দৃস্টিতে একেকজন মহান।কে বলেছে কবি কবিতা লেখে স্বেচ্ছায়!উহারা কবিতা লিখতে বাধ্য হয়,কিছু অমানবিক মানবের আচরণ তাদের মানবিক কবিতা লেখায়।
প্রতিটা মানুষই জীবনের বেশির ভাগ সময়েই নিজেকে অগ্নি দহনে দাউ দাউ করে জ্বালায়।বেশিরভাগ জ্বলারই কোনো সাক্ষী থাকেনা,নতুবা কেউ সাক্ষী হতে চায়না।সকলে মনে করে সে জ্বলছে তাতে আমার কি!অথচ নিজে যখন জ্বলে পাগলের মতো ঠিক তার কাছেই ছুটে যায়,খানিক শান্তনা খানিক আলিঙ্গনে সিক্ত শীতল হতে চায়।জগতের অধিকাংশ মানুষই নীরবে জ্বলে পুড়ে অলংকার হচ্ছে অহর্নিশ। আমরা কখনো তার খোঁজ রাখিনি।কেবল নিজে জ্বলার সময় বুঝেছি এই জ্বলা কতোটা ক্ষত-বিক্ষত করে হৃদয়কে!
"আপনারা কেউ কি আমাকে বলবেন?
কোনো মৃতশিশুর মুখের দিকে তাকিয়ে তার মা মনে মনে কী কী ভাবে?"
কি ভাবেন একবার ভেবে দেখুন তো?
কবি ভেবেছিলেন গভীর বোধে,তাই তিনি উত্তর খুঁজে পেয়েছিলেন।
এই ভাবনাটা কতোযে গভীর বেদনাময়! কতো যে স্বচ্ছ ক্রন্দন্ময় দগ্ধতা!কতোযে নিখাঁত পবিত্র সেই নির্মমতা,!তাই আমি হৃদয় ক্ষরণে দগ্ধ হয়ে বলি,বিধি এ তুমি কি করলে!তুমি এমন করতে পারোনা!আমি 'মা'আমার কলিজা,হৃদয়,এমন কি নিশ্বাস তোমায় উপহার হিসেবে পাঠাচ্ছি,তুমি শুধু আমার সন্তান কে জীবন্ত করে দাও।
এ জন্যই আমি বলি মায়ের মতন পবিত্র চেতনার উদয় খুব দরকার এই অমানবিক প্রজন্ম কে পথ দেখানোর জন্য।চোখের সামনে পড়ছে কতো যে অমানবিক মুখ!মানুষ হয়ে মানুষের সাজানো গোছানো বাগানে আগুন জালাচ্ছে অহর্নিশ। আর মাথায় টুপি দিয়ে জায়নামাজে বসে পবিত্র সাধু বনে যাচ্ছে, মন্দিরে নিবিড় আরাধনায় ধ্যানমগ্ন হয়ে নিজের মুক্তির ফড়িয়াদ করে যাচ্ছে। তুমি কতোটা মানুষ মানবিক যে কেবল নিজের জন্য ভাবো!বাকিদের মুক্তির ফড়িয়াদ করোনা কখনো! কেবল মানব জাতিকে বিচ্ছিন্ন করতে উঠে পরে লেগেছো!
"মৃত্যু যাদের ভুলে যায় সেই কান্নার শহরে"পোড়ানো হচ্ছে আমার কবিতার পান্ডুলিপি"
তখন কবির হৃদয় ক্ষরণ হয়েছিলো কোনো এক বা ততোধিক নির্মম লাঞ্ছনায়।নিজের হৃদয় খুড়ে খুড়ে গড়ে তোলা কবিতার পান্ডুলিপিকে কবিরা সূচনা লগ্নে বারংবার উপেক্ষিত হতে দেখেন।আমি খুব ভালোভাবে অনুভব করতে পারছি।খুব কাছের প্রিয়জনেরাও উপেক্ষা করেন।মানুষ তুমি এমন কেনো!তোমার মতন বাকি দুপেয়েদের উথান দেখলে এভাবে জ্বলো কেনো!তুমি বুঝি স্মৃস্টির সেরা জীব হয়ে তাদেরোই জ্বালিয়ে সুখ পাও!
অথচ মৃত্যু তোমার এই পৈশাচিক সুখ একদিন কেড়ে নিবে।তুমি মাটির সাথে নিথর হয়ে মিশে যাবে।যদি মানবতার জন্য কিছু করে না গেলে কে মনে রাখবে তোমায়!ভেবোনা জগতের তাবৎ মানব অস্তিত্ব অমানবিক,এইতো আশে পাশে কতো মানব মানবিক।কিন্তু সংখ্যাটা নেহাতই অল্প।অমানবিক মানবের দল ধরে নিয়েছে তাবৎ ক্ষমতার বেগময়তা।এ জন্য চারদিক বেদনাময় বিপন্ন মানবতা।মরার আগে মানবিক না হলে মনে রাখবেনা তোমায় মহাকাল তুমি কি জানো তাহা?
এই অমানবিক মানবের দলো তোমার শুন্যতায় তোমায় নিয়ে কু প্রচারে মেতে উঠবে,যদিওবা তুমি নিবেদিত ছিলে তাদের জন্য।আর মানবতার জন্য নিবেদিত হলে মহাকাল তোমায় মনে রাখবে আজন্ম।মহাকাল কখনো মানবিকদের স্মৃতি মুছে যেতে দেয়না।
মৃত্যুর পর বড়জোর এক সপ্তাহ মানুষ বেদনাদগ্ধ থাকে প্রিয়জনদের জন্য।তার পর ধীরে ধীরে ভুলে যায় তারে।শুরু হয়ে যায় তারে ছাড়াই কত্তো কত্তো মনোরঞ্জন আর উপভোগ্যতা।কোনো মানুষই এর বাহিরে নয়।অথচ আমরা প্রতিনিয়ত অঢেল সম্পদ ইমারত আর নিজের পরিবারের নেশায় পরে আছি।কখনো ভাবছিনা পথের ধারে খালি গায়ে খালি পেটে শুয়ে থাকা মানুষগুলির কথা।

"হে মৃত্যু,হে সাব্যস্থকারী অন্ধকার,তুমি আমায় উটপাখির মতো ডানা দিলে বটে। তবে কেনো দিলেনা অসীম আকাশে উড়বার বেদনা"
ধীরে ধীরে সবাই চলে যাচ্ছে আমায় ছেড়ে,প্রিয় বন্ধু প্রেয়সীও মেতেছে তাতে।আমি বেদনাদগ্ধ বলে ওরা আমায় ছেড়ে চলে যাচ্ছে।আমি নাকি আজ অচল হয়ে গেছি।খাওয়াতে পারছিনা, দামী গিফট কিনে দিতে পারছিনা,কেবল নিজের বেদনাগুলি নিবেদন করে যাচ্ছি।তুমি যদি আমায় ডানা দিতে,আমি নিঃস্ব চীলের সঙী হয়ে নীলাকাশে উড়াল দিতাম।আর কখনো ফিরে আসতাম না এই নির্মম অমানবিকতার ভূলোকে।নীলাকাশে
র ওই নীলত্বে,মহাশুন্যের উড়ন্ত আবাহনে কেউ আমায় স্পর্শ করতোনা।আমি হয়ে যেতাম মুক্ত বিহঙ্গিকা।
"জীবন এক ছায়াবাজি_জন্ম ও মৃত্যুর আড়ালে কুয়াশা খেলা।এই খেলা আমিও খেলে যাচ্ছি রহস্যময়ী ছায়া ঘিরে"
আমরা মানুষ _আমাদের অস্তিত্ব আমাদের বেশির ভাগ ঘটনায় ছায়ার মতন ঢেকে রাখে।আমরা যার বহিঃপ্রকাশ ঘটাই বা আমার ভিতরের আমি প্রকৃতপক্ষে যেটা, তার সিংহভাগই বাকিদের অজানা থেকে যায়। আমি স্বেচ্ছায় তাদের কে ইহা জানতে দেইনা।বেশিরভাগ কামনা আকাঙ্ক্ষার কথা আমরা গুছিয়ে বলতে পারিনা,কিংবা প্রকাশে অনিচ্ছুক।অথচ তা কখনই একলা সম্পাদন করা সম্ভব নয়।তাই সেই ইচ্ছেগুলিকে আমরা অহর্নিশ বেদনাদগ্ধ হয়ে হৃদয় বাগানে মাটি চাঁপা দিয়ে দিচ্ছে।খুব কম সময়েই নিজের প্রকৃত স্বত্তার বিকাশ ঘটাতে পারছি,কোনো এক অদৃশ্য ছায়া এসে বার বার অন্ধকারে আচ্ছন্ন করে ঢেকে দিয়ে যাচ্ছে আমাদের ইচ্ছে আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশগুলিকে।আমরা যা তার পুরোটাই আমরা স্বেচ্ছায় আরালে ঢেকে রেখে দিচ্ছি।বহুবিদ সম্ভাবনাকে স্বেচ্ছায় মাটি চাঁপা দিয়ে দিচ্ছে মন।সময় ফুড়িয়ে যাচ্ছে আর মৃত্যুও অতি সন্নিকটে হাত ছানি দিয়ে যাচ্ছে। আমরা তেমন কিছুই করে যেতে পারছিনা সভ্যতার জন্য।
"হে মানব জাতি তোমরা আমাকে ক্ষমা করো,তোমাদের পরস্পরের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করার জন্য"
জগতের মানুষগুলি তো সভ্যতা স্মৃস্টির সূচনা লগ্ন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।জাতিগত,গোত্র
গত,বিশ্বাসগত,আরো কতো বিচ্ছিন্নতা!এই বিচ্ছিন্নতার কারনেই মানুষ হয়ে মানুষ স্বজাতি অজতির রক্ত দিয়ে হলি খেলেছে এবং খেলেও যাচ্ছে অহর্নিশ। বিধাতা কেনো তুমি মানুষকে এক জাতি এক গোত্রে এক বিশ্বাসে একত্রিত করলেনা!কেনো মানুষ হয়ে মানুষ রক্তের নদীতে মাংসল স্তুপে ভস্মীভূত করে দিচ্ছে একে অপরকে!অবুঝ শিশুও নিস্তার পাচ্ছেনা যেই নির্মম পাষন্ডতায়।এর পর তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ধেয়ে আসছে।মানুষ হত্যা করবে মানুষ রে!এর চেয়ে জঘন্য অমানবিকতা আর কিই বা হতে পারে!যতদিন চলবে এই বিচ্ছিন্নতা ততোদিন চলবে এই নির্মম নিপীড়ন।মনুষ্যত্ব বাহক মানবের কাছে সভ্যতা ইহা কামনা করেনা।সভ্যতা চায় সকল মানবের একত্রিত মিলবন্ধন।এর নামই শান্তি।কেবল নিজেরে, নিজের জাত,নিজের গোত্রের পক্ষে অবস্থান নেয়ারে শান্তি বলেনা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন