প্রেমাংশু শ্রাবণ এর গুচ্ছ কবিতা
দেহের আয়না ও আলোয়
আমার দেহতত্ত্বে ক্রমশ হালকা হচ্ছে গগনেন্দ্রনাথের নীল রঙে।
বারবার আমাকে ছুঁয়ে ফেলছে তোমার মৃত্যুর বুদবুদ। বহু বহু আলোকবর্ষ দূরে
দু'টি তীব্র ছায়াপথে দু'টি ক্ষীণ নক্ষত্র খসে পড়েছে। অদৃশ্য এক বর্শাফলকের শব্দ আস্তে আস্তে ফুটো করে দিচ্ছে আমার অন্ধকার।
অন্ধকারের অনেক নিচে বাতাসের অভাবে ছটফট করছে আদিম প্রাণীর পায়ের শব্দ।
তোমার ঘুমন্ত মুখের সামনে চুপচাপ এসে দাঁড়িয়েছে রামকিঙ্কর। রাধারাণীর বুকে ভারি হচ্ছে আলো।
তোমার স্বপ্নের ভিতর রক্ত চেটে তোমারই মৃত্যুগুহায় ফিরে যাচ্ছে সাপ।
সাপের লেজ থেকে অদৃশ্য এক সুখ ঘুমিয়ে পড়ছে জীবনে। উরু থেকে মাংস নিয়ে যাচ্ছে এক অদৃশ্য জাদুকর। জাদু শুরু হচ্ছে দেহের
আয়না ও আলোয়।
ছবি
সাদা রঙের ভেতর হলুদ এক আলো খুঁজছেন ভিনসেণ্ট ভ্যানগগ।
জলের ভিতরে নড়াচড়া করছে শীতঘুম ও নিকোলাস বোয়েরিখের চোখ।
শীতল খাদ্যের সামনে তুমি ও আমি দ্বিধাগ্রস্ত।
জলস্তর থেকে হু- হু করে নেমে যাচ্ছে আমাদের স্মৃতি ও বিস্মৃতি।
তোমার জিভ ও জন্মরহস্যের ছবি আঁকছেন অন্ধ বিনোদবিহারী।
স্মৃতিহীনতার নীচে প্রগাঢ় হচ্ছে আমাদের ক্ষুধা।
রক্তের গন্ধে বারবার সতর্ক হয়ে উঠছে শ্বাপদের দল।
এসবের ভেতরেই ঘুম আসছে।
আর ঘুমের ভেতর থেকে তীব্র ধানের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে আমাদের অভিনয়ে।
প্রত্নতাত্ত্বিক
স্খলিত ঈশ্বরের শরীরে আরো একটু মাংস দিলেন আগুন্তে রেনোয়া।
আয়নার ভিতরে নিচু হয়ে বসলো তোমার রক্তের গন্ধ। সাদা একটি সাপের চোখ থেকে অভিনয় দৃশ্য সরতে লাগলো। ততক্ষণে আঙুলের হাড়ে কাঁটা বিঁধে গিয়েছে । তার অনেক নীচে উপকথার জন্মান্ধ এক গাছ আবার পূর্ণতার গল্প বলছে। পাতা চিরে রোদ পড়ছে তোমার কপালে।
কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম থেকে একটা রঙ সরে যাচ্ছে স্মৃতিহীনতার দিকে।
রোনোয়ার অসাড় আঙুল থেকে চমকে উঠছে রেইনডিয়ার মানুষের রক্তাক্ত হাত। ক্রিস্টা থেরেটের আপেল আস্তে আস্তে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
সময়ের পাশে তুমি উজ্জ্বল ছুরি রেখে দিচ্ছো।
দর্শকের পাশ থেকে উড়ে যাচ্ছে সাদা মথ।
হত্যার পরিকল্পনা থেকে তুমি অনেকটা সরে এসেছো। সতীর ঠোঁট থেকে অদ্ভুত কমলা একটা রঙ টেনে এনে তোমার কণ্ঠনালিতে রেখেছেন নন্দলাল বসু।
দেহখন্ডগুলো নিয়ে বোবা এক প্রেম কাহিনি লিখছো তুমি।
মাংসের ভিতরে আমাকে একা দাঁড় করিয়ে রেখেছেন প্রত্নতাত্ত্বিক।
--
| |||||||||||||||
| |||||||||||||||
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন