গুচ্ছকবিতা
চরু হক
স্বপ্ন
বেহাগ রাগের মতো ফিনিক্সের একটি পালক
ভেসে এলো আমার উঠোনে।
আত্মকথা
বসে আছো
বাতাসে ভর করে
কিছু খুঁজছো?
অনুসন্ধান
এই থামো, শোনো
হাত রাখো বাতাসের হাতে
কান পাতো, শোনো
শোনো তোমাকেই।
রূপান্তর
ধ্যানের গভীরে আছে
আরও একটা ধ্যান
সেই জল পান করি
মৃত্যুকে পরম বন্ধু মেনে।
ঘর
ঘর বানাচ্ছে ছোট পাখি
লতাপাতা,খড়কুটো দিয়ে
এক বসন্ত ওড়াওড়ি, ডানায় বেঁধে আনা তৃণমূল
ভুলে যায় আহারেরও দাবি
ভুলে যায় চোখও চায় কিছু।
পাশে তার সমর্থ পুরুষ
ডানা দিয়ে আগলিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বহুদূর।
বসন্ত চলে যায় পাতা গজিয়ে, ফুল ফুটিয়ে,
পাতা ঝরিয়ে, ফুল ছড়িয়ে
সুবাস টুপ টুপ করে বাতাস মাতায়।
তৈরি হয় ঘর,তুলতুলে-
নরম এবং গরম
কিন্তু কেন জানি ছোট পাখি,
হিসাব রাখেনি কেবল
কালবোশেখির কথা।
মায়া
পুকুরের জল স্থির এখন
মাছরাঙাটাও নড়ছে না
স্থির তোমার দুই চোখের তারা
যদিও আমি নড়ে উঠছি
আমাকে বেঁধে রাখছে বাতাসের শেকল।
জল চুপ মেরে আছে,
জলের উপর ঘর
সেই ঘরে পা রাখতে গেলে
চুর চুর করে ভেঙে পড়ে যায়।
আহা হৃদয় কি টলমল
কেমন যেন সুরেলা তুমি শুনতে ভালো লাগে
হৃদয় হরা গীতল তুমি গাইতে ভালো লাগে
সুর উঠেছে সুর ফুটেছে গোলাপ কলি যেন
কান্না হাসির কোরক খুলে আপনাকে আজ চেনো
চিনতে গেলেই য়ায় কি চেনা ফুলের ভেতর জল?
উজাড় করে দেই নিজেকে, হৃদয় কি টলমল?
আহা হৃদয় কি টলমল?
যাই
মোমকে প্রদক্ষিণ করে যাই
এতো আগুন জ্বলে তার
ভাঁজে ভাঁজে, পরতে পরতে
মোমের গভীরে ঢুকে যাই
এত মায়া,নম্র উচ্চারণে বিছিয়ে রেখেছে
সে যে
জীবনের অচিন বালুতটে।
ঝোরার সামনে দাঁড়িয়ে
আমি খুব ভালো আছি বলে গেল নীলকন্ঠ পাখি
সবুজ দোলনায় বসে,তাই
আমিও নিলাম ভেবে আমি খুব ভালো আছি রৌদ্রে কোলাহলে
মার্বেলের মতো আজ সময়ের গোলা শুধু পশ্চিমে গড়ায়
ফোঁটায় ফোঁটায় নামে শীতের চুম্বন
ভেসে যাওয়া পাহাড়ি ঢলের সাথে আমি এক বেনামী পাথর ,জীবনের তরল আগুনে ডুবে যেতে যেতে যেতে
সুখে আছি সুখে আছি বলে চিৎকারে মাতাই ভূভাগ।
আমিতো সুখেই আছি কটিবন্ধে বিষের পয়গাম
অমসৃণ পথ তাতে আমি শুধু গড়াই গভীরে
আমিতো সুখেই আছি তবে কেন অনর্থক আজ
পাখির কন্ঠের কাছে বিষাদলহরী বেজে ওঠে?
এমন নিদাঘদিনে
মাইলস্টোন স্কুল ভবনের কার্নিশে দাঁড়িয়ে থাকা যে ছেলেটিকে আপনি দেখছেন, তার নাম সূর্য।
ঝুলছে, দেখুন,কী দীপ্ত দু:সাহসে।
হ্যাঁ সূর্যই বটে
আপন দেহে ধারণ করেছো সর্বগ্রাসী আগুনের হলকা
আর কার্নিশে দাঁড়িয়ে দু'হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে
অর্ধমৃত বন্ধুর দিকে।
একের পর এক বাড়িয়ে দিচ্ছ হাত
ওরে অবুঝ মাণিক হাত পুড়ে যায় তোর
বুক পুড়ে যায় ,নিদারুণ আর্তনাদে,বোবা কান্নায়।
এ দৃশ্য আমি আঁকতে চাইনি
তবু কোন অভিশাপে হাতে নিতে হলো রংপেন্সিল
আঁকতে আজ পোড়া ফুলের গন্ধ।
টিফিনবক্স থেকে টিফিন ছিটকে পড়ে
ছিটকে পড়ে বাহুতে বেঁধে দেওয়া মায়ের রক্ষাকবচ।
ঝলসে যায় সাদা ইউনিফর্ম, ইশকুল ব্যাগ,পেলব মুখে আঁকা নরম আলো
এ কেমন শ্রাবণদিন,এ কেমন বাদলধারা
প্রবল বর্ষায়ও পুড়ে খাক হয়ে যায় নিষ্পাপ ফুল
গলে পড়া কালো রঙ ছিটকে পড়ে বিভৎস আর্তনাদে।
সূর্য আমি তোকে পেটে ধরিনি,তা সত্যি
কিন্তু এই নিদাঘ বেলায় চারদিকে যখন কেবল আগুন,ধোঁয়া, উন্মাদপ্রায় ভয়ার্ত মানুষের দিগভ্রান্ত ছোটাছুটি, আর
পুড়ে যাওয়া শরীর নিয়ে,হা ঈশ্বর, আমার সন্তানগণ ছুটে যাচ্ছে বেঁচে থাকার সূতীব্র আর্তনাদে
ঠিক তখনই অস্ফুট ভ্রুণের মতো আমার
সমস্ত অস্তিত্বকে নাড়িয়ে দিয়ে
তুই প্রবেশ করলি
আমার জরায়ুতে,
কলিযুগের কৃষ্ণ যেনো।
নতুন যুগে, এই নতুন আগত ভোরে যদি বেঁচে থাকি
তবে জন্ম দেবো তোর মতো আরেকটি সূর্য
আর যদি চলে যাই সব ছেড়ে দুর্ভাগ্যের ফেরে,
তবে আমি হবো তোর আরেক মা, মমতার উষ্ণধারা
মেহরীন যার নাম।
আমার উত্তরসূরী কেউ তবে থাকুক এখানে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thanks