মুস্তফা হাবীব এর একগুচ্ছ কবিতা
------------------------------ ----------------------
আমার সংসার, ধুলোখেলা
স্বপ্নীল মানুষ প্রতিটি কাজে পূর্ণ প্রতিদান পেতে চায়
অনুসরণ করে সুনির্দিষ্ট সিলেবাস, দুরদর্শন যন্ত্র
গাণিতিক সূত্র ঝুলিয়ে রাখে চোখের আরশিতে
মানুষ জানে, স্বপ্নদর্শন ছাড়া সাধন মেলেনা,
জীবন নোঙরবিহীন নৌকোর মতো বিকল্প কিছু নয়।
এইসব সূত্রাবলি জেনেও আমি
লাগামহীন ঘোড়ায় চড়ে কাটিয়েছি চল্লিশটি বছর,
পা পিছলে খানাখন্দে পড়ে যাবার কথা ছিল
সৌভাগ্য, পাথর ভেঙে গড়েছি মায়াবী প্রাসাদ,
সিলেবাস ছাড়াই ছিঁড়ে ফেলেছি কুসুমের কাঁটা ।
কবিতার পৌরানিক কাঠামো অগ্রাহ্য করে
পাড়ি দিয়েছি পাড়হীন কবিতার অচীন সমুদ্র
হাঙরের গ্রাস থেকে সরে এসে গড়েছি স্বতন্ত্রধারা
ইতিহাস ঐতিহ্য লালন করে ভাঙছি সনাতন সুর।
বৃত্তের ভেতর থেকে পাবেনা আমাকে ধুসর জনপদে
সান্নিধ্য পেতে চাইলে এসো বন্ধু অন্য কবিতার দেশে
পূর্ণযৌবনা ,হিজল ঝাউবীথি তমাল বৃক্ষের ছায়ায়
যেখানে আমার সংসার, ধুলোখেলা।
এখনও আমি
তিলোত্তমা, কোনো দোষই তুমি অভিসিক্ত নও
পথের দুষ্টু কাঁটাগুলো উগ্রতা ছড়িয়ে ছিল বলে
আমি ভেষজ লতাগুল্মের মতো পিষে যাচ্ছিলাম
দাঁড়াতে পারিনি।
ভালোই করেছো, শরীরে মাখোনি কলঙ্কের দাগ
অপেক্ষার সিঁড়ি বেয়ে চোখ রাখলে নিয়তির দিকে
পরাবাস্তব জীবনের দাঁড় টেনে চলে গেলে তেপান্তর।
আমি স্বপ্নের পথে ছিলাম ঝরাপালক অগ্রাহ্য করে
স্বপ্নের কাজল তোমার দুচোখে পরাবো বলে
ছেড়েছিলাম সনাতন গৃহস্থালি,
এখনও আমি আমার ঠিকানা ভুলে বিষন্ন মননে
ছুটে যাই একা স্মৃতির নদী- আড়িয়াল খাঁর পাড়ে।
পড়ন্তবেলা, তবু পথ হারাইনি পথে জীবনের টানে
ভালোবাসার মরণ হবে ভেবে এখনও আমি
কবিতার শুভ্র আলোয়ে তোমাকে ভাসাই অনিমেষ।
বিদায়ের রিংটোন
স্বপ্নের কোষগুলো শুভ্র সতেজ বলেই
পাখিরা গান গায়, নদীরা ছুটে চলে আপন তালে
বংশবিস্তারে স্বপ্নীল বৃক্ষেরা জানান দেয়
শাখায় প্রশাখায় ফুল ও ফলের দৃষ্টিমুগ্ধ সমাবেশ।
কোষ মরে গেলে অবশিষ্ট কিছুই থাকেনা
লাইনচ্যুত ট্রেনের বগির মতো বিধ্বস্ত স্বপ্ন,
মনে হয়, স্বপ্নের কোষগুলো ক্রমাগত মরে যাচ্ছে
নতুন কোষ জন্মানোর কলা শ্বেত কুয়াশায় আবৃত।
ক্ষমা কর পৃথিবী,
কাছের মানুষগুলো সাবলীল অস্তিত্ব অস্বীকার করে
নানা অযুহাতে টেনে নেয় কাঠগড়ায়
যেদিকে তাকাই-- দেখি শুধু জলশূণ্য দুর্গম পাহাড়।
হয়তো সময় ফুরিয়ে আসছে
নিকটবর্তী সময়ে বেজে উঠবে বিদায়ের রিংটোন।
পাথরেও ফুল ফোটে
বন্ধু, সুদিন এলে মরা নদীতে বান ডাকে
শীতের শেষে বসন্তে মৃত্যুপ্রায় বৃক্ষে ফোটে ফুল
সতেরো বছর প্রতিবাদী থাকার পর ভাবছিলাম
স্রোতের অনুকূলে ভাসবে সার্বজনীন সৃষ্টি।
বাড়ছে দলাদলি, উড়োচিঠি কড়া নাড়ছে বাতাসে
বাড়ছে বহুমাত্রিক বৈষম্য ও কোটার শাখা প্রশাখা
সময়ের টানে বাড়ছে আদিমতা, অনাকাঙ্খিত মৃত্যু
কুসুম বনে খেলছে পোশাকি অজগর।
বন্ধু, আর কিছুদিন অপেক্ষা কর
রৌদ্রের ছোঁয়া পেলে কুয়াশা কেটে যাবে সহসাই
তারাভরা রাতে হাসবে ঝিকিমিকি জোসনা
ফুটবে গুচ্ছ গুচ্ছ বাসন্তী গোলাপ স্বপ্নের বাংলায়।
এখন সর্বত্র মাঘের কুহেলিকা,
তবু শীতবস্ত্র জড়িয়ে আছি সত্যের পথে অবিচল
বিশ্বাস রেখো, রাত পোহালে পাথরেও ফুল ফোটে।
| |||||||||||||||
| |||||||||||||||
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন