কবিতাগুচ্ছ
চরু হক
জিজ্ঞাসা
আমরা কোথায় যাচ্ছি, কোন পথে?
কী গভীর নির্জন এ পথ
কী গভীর একা!
ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে
দোষটা তোমার নয়, দোষটা সময়ের।
নারীরা জঙ্ঘা দেখাচ্ছে তোমাকে
আর আমি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছি
ঈষাণ কোণে ঝড় উঠেছে
আমি উড়ে যাচ্ছি বাতাসে বাতাসে।
আমি ছড়িয়ে যাচ্ছি, গুড়িয়ে যাচ্ছি
ঝড়ের ঝাপটায়।
আমি মাতা,আমি নারী
আমার যৌবন একযুগ কস্তুরিমৃগের মতো সুগন্ধ ছড়িয়ে
আজ এক ক্ষীণধারা নদী
আমার সমস্ত রূপ অজগরের মতো গিলে খেয়েছে সংসার, সন্তান আর তোমারই প্রেমের আরাধনায়।
জায়া আমি,স্বর্ণালি দিনগুলো ঢেলে দিয়েছি,
অন্ধ বাউলের মতো, কেবল ভালোবাসায়।
প্রেম কি তবে ঝরা বকুল,ঝড়ের রাতেই আসে?
হায় উন্মত্ত যৌবনের হাতছানি টানছে তোমাকে
আর আমি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে কেবল দেখছি তোমাকে
কেবল সুতো ছেড়ে দিচ্ছি,
সুতো ছেড়ে দিচ্ছি,
আর
সুতো ছেড়ে দিচ্ছি।
মূল্যহ্রাস
কত অশ্রু দিয়ে সাজাবো পৃথিবী
অশ্রুর এখন মূল্যহ্রাস।
এখন বড্ড দাম বাড়বাড়ি রকমের বিশ্বাসের
আহ দাম কমে গেছে ভীষণ রকম শুধু নি:শ্বাসের
আহা আমরা ভুলে গেছি সাজাতে শিশুর খেলাঘর।
আপনার কাছে আজ হয়ে গেছি কতটা না পর
কত মুগ্ধতা দিয়ে সাজানো ছিলো আমাদের এই বাতিঘর।
মূল্যহ্রাসের এই টানাপোড়েনে পড়ে হয়ে গেছি আজ যাযাবর।
এখন বড্ড মূল্যহ্রাস
মূল্যহ্রা
স্বপ্নের বাজারে আগুন লেগে গেলে হাসুলি ফিরিয়ে দেয় আজ
পুরোনো প্রেমিকের লাশ।
অর্ফিয়াস
এ চোখে যে চোখ রেখেছে
তার কি সম্ভব হায় অন্য কোনো চোখে চোখ রাখা
এ আমার সরল উচ্চারণ
আমি পান করছি অমৃত তোমার নয়ন সমুদ্রে
আমি কাঁপছি থরোথরো তোমার ভালোবাসায়
আমি ডুবে যাচ্ছি ভেসে উঠছি তোমার নিঠুর ছলাকলায়।
বঁধু এ আমার সরল সমর্পণ
এ কি পুড়ছি অহর্নিশ আমি তোমার প্রেমের আগুনে
আমি কাঁপছি অহর্নিশ তোমার নিবিড় আহবানে।
শোনো আমার কথা
আগলে রাখো আমাকে,তোমার বীণার তারে
আমিই বিবি হাওয়া, মাতা মেরী, আমিই সুজাতা।
চিত্রপট
তার চোখের দ্যুতি ঝলসে দিল আমার সমস্ত শরীর
আমি এলিয়ে পড়লাম মাটিতে
আর সে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো তার পদ্মনেত্রে
নদীর হাওয়া আর শাখাদের ফাঁক গলে
ডাকাতের মতো ঢুকে পড়লো বৃষ্টি।
কানেকশন
যখন দূরে থাকো
তখন বিদীর্ণ করে ঢুকে যাও
আমার ভেতরে।
আজ,এই হিম হিম শীতে
প্রত্যেকটা মুহূর্ত কেবল তোমার দিকে উচ্চারিত
কেবল তোমার দিকে ফেরানো।
এখন এই ঝরা পাতার আবর্তে
পাখি খুঁজে ফেরে তার গোপন ওম
আর আমি খুঁজে ফিরি আমার মনের মুকুর
জানি, জগতের সে এক দুর্লভ ফুল।
গানগুলো
মৌবনের রোদ নিঃশব্দে ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরছে
তোমার আসার খবরটুকু তাও
রোদের হাওয়ায় ভাসছে।
না জানি আজ কার মুখে পদ্মেরা
দেখেছিল অবাক সূর্যোদয়
তাইতো এত সোনালি আগুন
তার ভেতরে মিঠা বৃষ্টি ঝরছে
মধ্যরাতের গান
সমস্ত রাতটাই ছিল একখণ্ড ধ্যান
যার রেশ এখনো কাটেনি
এমন চন্দ্রপ্রভা রাতে
এমন নিবিড় কোমল জ্যোৎস্নার প্লাবনস্নাত রাতে
সে বুঝি ছিল আমার পাশে
গহীন গান হয়ে।
রাতকে সে বানিয়েছিল এস্রাজ
আর সমস্ত রাত স্তব্ধ হলো নিবিড় মূর্ছনায়।
অঞ্জলি
এসেছে সুযাত্র দিন
বরণ করতে হবে তাকে
অমূল্য মণিতে
তাই-
এনেছি আঁচল ভরে ঘাসফুল,লাল বটফল দুটো, মাটির পুতুল বউ
আপন শৈশবখানি সেঁচে।
অস্তিত্ব
বসে আছে সে যেনো ছোট্ট চড়ুই পাখি
নির্জনতা মেলে দিয়ে একা।
পড়লাম। কবিতাগুলো সহজ ভাষায় লেখা৷ আরেকটু করে " ঘোর " যোগ করা হলে আরও ভালো লাগবে৷ অবশ্য " চিত্রপট " নামক কবিতাটি বেশ ভালো লেগেছে।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ আপনাকে
মুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thanks