গুচ্ছকবিতা।। শেখর দেব।।poems by shekhar dev



গুচ্ছকবিতা
শেখর দেব


অলক্ষ্যের লক্ষ্যে

পথ যদি ডেকে নিয়ে যায়
যাবে না কে তুমি অবোধ সন্তান?
চোখের আঁধারে আলো নিয়ে ছুটে যাই দিন রাত
কোথায় কীভাবে কেন ঘুরে আসি 
কার কাছে যাই 
কালো রূপে ডুবে যেতে আলোর দেখা পাই
পায়ে পায়ে ছন্দ সে তো কে জানি মিলিয়ে যায়!
গোধূলির রমণীয় শিল্পে অতিথি কে আছে 
কে আছে দর্শক দেখে যায় অরূপের খেলা
কালোর মায়ায় ডুবে উদ্ভাসিত আলো 
না-যেতে চেয়েও তবু কেন চলে যায়।
মায়ের অরূপ কালো রূপের আলোয় ধায়
কে তুমি না-চিনে পথ লক্ষ্যে পৌঁছে যাও?
গন্তব্যে না-বেঁধে পথ পেয়ে যাও দিশা
অলক্ষ্যের অশ্রুতে ভেসে কেটে যায় লক্ষ্যের অমানিশা।

অলিন্দের খেলা

নদীর প্রবাহে ভেসে ভেসে যাই
অনন্ত সময় হতে কী যে পাই বা হারাই
তার সুনিপুণ হিসেব নিকেশ কার কাছে জমা
অপচয়ের ফিরিস্তি খুলে কে চেয়েছে ক্ষমা?
সাগর কখন কবে নদী কে করেছে প্রশ্ন
কোথায় তোমার জল দিয়েছো বা কত ঘনফুট
নদী চাইলেই কি পারে রাখবে ধরে, সে যে লিলিপুট!
সময় জলের খেলা সময়ে বা অসময়ে যায়
কে তারে যতন করে রাখে ধরে, কী আছে উপায়?
ব্রহ্মান্ডর চক্রগতি আর যতো জাগতিক রতি
কে আছে কাটায় তার আনন্দ আরতি
সাগর কখনো জানে নদীরও ঘটে যায় যতি! 
অলিন্দ নিলয়ে খেলে লোহিত সাগর
এমন খেলায় ডুবে কে বোঝে এসব নীতি
মুহূর্তেই রধ হতে পারে আরাধ্য প্রাণের গতি।  

কংক্রিট ও ফুল-পিঁপড়ে

কংক্রিটের টুকরোটা 
চোখ মুখ খুলে অকস্মাৎ বলে ওঠে-
দেখেছো জীবন?
                 স্থির ও কঠিন 
                               প্রাণহীন!
তুমি কেন প্রাণ নিয়ে স্থির হয়ে আছো?
ঝরে পড়া ফুল সহস্র পাপড়ি মেলে
মাটির অন্তরে মিশে যেতে যেতে
মধু ও প্রজাপতির স্মৃতি মনে করে
হাসি হাসি মুখে বলে-
জীবনের অর্থ নিজেকে বিলিয়ে দেয়া।
ব্যতিব্যস্ত পিঁপড়ের দল
ফুলের মধুতে মজে 
                   যেই ঘরে ফিরে যাবে
হঠাৎ কংক্রিট টুকরোটা
গড়িয়ে গড়িয়ে পিঁপড়ের গায়ে এসে পড়ে
মৃত্যু পথযাত্রী পিঁপড়েরা ইতিউতি ভেবে বলে-
জীবনের লক্ষ্য বুঝি জড়ের দিকেই হাঁটা
কবি নড়েচড়ে টেনে বসে গোটানো পা টা!

ইমদাদুল হক মিলনের নুরজাহান উপন্যাস নিয়ে প্রবন্ধঃ পড়ুন
চানক্য বাড়ৈ এর কবিতা পড়ুন এই লিংক এ
বিনয় মজুদারকে উৎসর্গিত পিয়াস মজিদের কবিতা পড়ুন এখানে


বিলুপ্ত চৌকাঠ

কার চোখ দেখে দেখে বৃষ্টি আসে নগর আকাশে
কে যে দূর থেকে আমূল টেনেছে অতীতের পটে
কার ঘটে খেলা করে মিছেমিছি বাস্তব দৃশ্যরা
এমন দূরত্ব বেড়ে নিমেষে সুদূর সরে যায়...
ঘর থেকে বের হয় ঘর অথবা ঘরের মাঝে
ঢুকে যায় নতুন ঘরের ছায়া, নতুন প্রয়োগ! 
দরজা চৌকাঠ টেনে নেয় আয়তাকার শরীরে
তখন চৌহদ্দি যায় ভেঙে, নতুন ঘরের খোঁজে। 
বরষা এসেছে যার ঘরে সে ঘরে কে থাকে বলো? 
কারা যেন কোথা থেকে এসে গড়ে সুখের পরিখা 
কার বর্ষা তবে হাহাকার, কার বর্ষা হর্ষ ধ্বনি
কার ঘরে তুমুল আমেজ, বেদনা জেগেছে কার?

চাবি

দূর কোন মায়াপুর ডেকেছে নীরবে
পার্সোনাল অলসতা নড়তে দেয় না আজ
শুয়ে বসে ভাবি মায়াপুর যদি
কাছে নিয়ে আসা যায় 
হতো কিছু দারুণ ম্যাজিক!
অথচ নিজের কাছে প্যান্ডোরার বাক্স নিয়ে
চাবিহীন বসে আছি। 
বায়ুর আধারে ধরে আছি তোমাকে ঈশ্বর
কে আমি জেনেছি বলে বুঝেছি দারুণ করে
কেউ না কিছু না এই জগতের আমি!
কে তুমি ব্যথা-সুখ দিতে পারো আজ
পরমের শেষে সমান হয়েছে শীত আর গ্রীষ্ম। 
অথচ চৌদিকে অরাজক পরিস্থিতি 
কাঙ্খিত চাবির খোঁজ প্যান্ডোরা কি জানে?
যে বাক্সে দেবতাদের উপহার বলে
জমা রাখা আছে সমগ্র মন্দের কিরা!

চতুর্দশীর কবিতা

ভেষজ ঘ্রাণের ঘোরে
                  চতুর্দশীর রজনী জেগে থাকে
কী যেন হারিয়ে গেছে 
কোলাহলে কারা যেন করে ওঠে হাহাকার ধ্বনি
পাহাড়ের পাদদেশে বসে থাকা তাদের হয়তো চিনি
দূর দেশ হতে ভেসে আসা অগুনতি আত্মার বহরে
দলে দলে ছুটে যায় লক্ষ্যহীন কোন নীরব অলক্ষে

কোথাও পাই না যারে তার কাছে কেন ছুটে যাই
মুখরিত প্রান্তরের কাছে মৌনতার দেখা পাই
কে আসে অদূরে হেঁটে পিপাসার জিহবা নিয়ে
অনন্ত তৃষ্ণায় কার চুলে জটা ধরে যায়
কার চোখ বন্ধ করে অরূপের খেলা দেখে
কে তার তামস ঘোরে 
গোরের নিকট হেঁটে যায়
পথের প্রার্থীত পদে মিলে যদি তার দেখা
কে তুমি অনন্ত ধ্যানে শবের মহিমা পাও?
পাহাড়ে আঁধারে অনন্ত গভীরে বসে থেকে
তুমি শূন্যে ভেসে ভেসে ওঠো হে তৃতীয় চোখ! 

গাছেদের হাহাকার

পাখিদের উড়ে যাওয়া দেখি
তাদের নির্জীব খাঁচা পড়ে থাকে
সেসব খাঁচায় বন্দি করে রাখি কিছু অমানুষ।
তারা খাঁচা নিয়ে ব্যবসা করতে চায়
অথচ গাছের ডাল অসহায় হাহাকার করে!
গাছেদের স্বপ্নগুলো পাতা হয়ে ঝরে যায়
সেসব স্বপ্নকে হাসি ও তামাশা ভেবে
তারা কাজু বাদাম ও মাল্টা জুস খায়!
এসব দৃশ্যের মাঝে পাখিগুলো হাসে
আকুলি বিকুলি করে উড়ে যায়
দূরে বহুদূরে শূন্যের সীমায়...
তারা পাখি আর গাছ কারো কথা ভাবেও না
গাছেদের হাহাকারে ভারী হয়ে যায় হাওয়া!

বাঁধন

কী সব ভেবে ভেবে রাতের দিনলিপি আঁকি
দিনের যতো শতো নিকেশ সবকিছু ফাঁকি।
এ ধরা মিছেমিছি ঘুরবে চারপাশে তুমি
দিবস শেষে তাই খুঁজেছি অন্তর ভূমি।
মায়ার বাঁধনের রয়েছে হাতকড়া জানি
তবুও বাঁধা আছি তোমাকে বানিয়েছি রাণী 
তোমার মায়াময় মনের অন্দরে ঘুরি
এই তো সুখবোধ দারুণ অনন্ত পুরী।
ভেবেছি কতকাল নিজের খোঁজে যাবো আমি
কে জানে ভুল করে কোথায় চলে গেছি স্বামী!
 
চোখের তারাগুলো ভুরুর মাঝখানে আসে
মনের যতো রঙ পড়েছে বাঁধা আজ শ্বাসে।
এভাবে ঘুরে যাই তোমার চারপাশে শুধু
কে জানে কার মনে ঝরছে খুব করে মধু।


বসন্ত কেন আসে

তবে কী আমাদের বেদনা গেছে চলে
ফাগুনে সমাগত আমের কলিফুল
তীব্র রোদ নিয়ে গুমট হয়ে রয়।
কোমল গাঁদাফুল হয়েছে বিশুষ্ক 
তাই তো বসন্ত কখনো হাহাকার!
কোকিল কখন যে ডেকেছে সুরে সুরে
কখন প্রভাতের সুরুজ উঁকি দেয়
পাখিরা গান গেয়ে নিয়ত চঞ্চল?
আশার সামিয়ানা টাঙানো চারপাশে 
কী হবে না-জেনে তা ভাসাই মোহতরী
নিলয়ে বেঁধে রাখি দারুণ সুখঘুড়ি
নাটাই উড়ে যায় আকাশে আনমনে 
জানি না সে ঠিকানা কোথায় কোনখানে
কে জানে বসন্ত কেন যে আসে যায়!

বিকৃত ধুলো

প্রতিদিন ধুলোবালি ওড়াই আমরা
ছুড়ে মারি রাজপথে 
                কার কী হয়েছে তাতে?
ধুলোই ওড়াই শুধু
মন্দির ও মসজিদ হতে অন্ধত্বের ধুলো
ঘরবাড়ি থেকে যে ধুলো ঘৃণার
দ্রব্যের দোকান থেকে ছলনার
পণ্যের গুদাম হতে লালসার 
রাজনীতি মাঠে হিংসা ও স্বার্থের ধুলো
ব্যক্তি মন থেকে সাম্প্রদায়িক ধুলোয় অন্ধ আজ
অহর্নিশ ওড়াই যে যার মতো ধুলো
আমজনতার বুকে ব্যাধির আকর 
রোগী হয়ে হাসপাতালে দৌড়ায়
ডাক্তার ছুরির রক্তমাখা ধুলো ঝাড়ে
রক্তলাল ধুলো দেখে ভাবি বিজয় এনেছি কোনকালে 
আমরা স্বাধীন
বিকৃত ইতিহাসের ধুলো ঝাড়ি চরাচর জুড়ে!

Post a Comment

Thanks

নবীনতর পূর্বতন