গুচ্ছকবিতা।। জন্মান্তরের গান।। প্রেমাংশু শ্রাবণ
১
দৃশ্যের উত্তাপে এসে দাঁড়িয়েছি আমি।
দূরে জলের শব্দে কুমারীর শবদেহ ভেসে যাচ্ছে।
অর্ধগলিত শবদেহের ওপারে রঙ পালটে ভেলছে ক্ষুধার্ত কুকুরের দাঁত। মাংস শেষ, কুকুর শেষ।
আমার তীব্র দাঁত থেকে মাংসের আঁশ বের করতেই
দৃশ্যের দাহগন্ধ লাগল তোমার অন্নপাত্রের ব্যথায়। ছাইরঙা কুকুরের চোখ কামড়ে ধরল আমাদের অতল ঈশ্বরচিহ্নকে ।
দৃশ্যের উত্তর - আকাশে দু'টি তারা ফুটে উঠল।
২
শূন্যতার নীচে দু'টি রঙের পাখি উড়ছে।
আমাদের গল্প থামিয়ে প্রসববেদনায় উজ্জ্বল হল পুবের আকাশ।
তোমার ভ্রুণ থেকে পিছল সিঁড়িতে চমকে উঠল মহাকাল। মৃত শিশুর গানে আটকে গেল বক্ষবন্ধনী। উতল জাহ্নবীজীবনের স্মৃতিহীনতায় আমরা লুকিয়ে পড়লাম।
অনেক শতাব্দী পরে
মৃত নদীতে শুশুকের কঙ্কাল দেখে চমকে উঠল
আমাদের পায়ের ছাপ।
৩
সন্তানভুক এক পিতার পায়ের শব্দে
খসে পড়ল তোমার রক্তবস্ত্র।
ধ্বংসস্তুপ থেকে উদ্ধার হল একটি ফলের যন্ত্রণা। অথচ সহস্রযুগ পেরিয়ে যাচ্ছে,
দূর নক্ষত্রের ফার্নেস জ্বলছে -নিভছে, আমরা কোন যন্ত্রণায় ভাঙতে পারছি না
ঘুম কিম্বা অবিকৃত দেহবোধ।
আলোকিত কাঁচের ওপারে ছটফট করছে পতঙ্গের আঁকা একটা বিন্দু। ভোর হয়েই
চলছে তোমার প্রসবনালীতে।
৪
পাখিরা ফিরে চলছে অর্ধপথে। বহুযুগ পরে
আমরা নামছি ছায়া - শিকারের শরীর নিয়ে।
আলোকবর্ষ দূর থেকে অনন্ত বসন্তের একটা
পৃথিবীর শব্দগুলোকে সাজাতে সাজাতে
একই দুরত্বে ফেরা হচ্ছে না আর।
আরো অনেক দূর থেকে দেখছি,
দীর্ঘ অনভ্যাস বদলে নির্মম হয়ে উঠছে
এক একটি পাখি দৃশ্যের আস্তরণ।
দৃশ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে একটা ঢেউ।
৫
দৃশ্যভুক পাখিরা কয়েক ফোঁটা অন্ধকারকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে আলোয়।
সেই আলোয় আমরা অন্ধ হয়ে উঠছি।
শূন্য অন্নপাত্রের ক্ষতচিহ্নে লেগে যাচ্ছে সামান্য
আলো।
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে
ক্ষতবিক্ষত হতে পারছি না আমরা।
নিঃশেষিত একটা মেঘলা দিনের পাশে
অন্ন ফেলে রেখে
হঠাৎ পালিয়ে যাচ্ছে দু'টি ঈশাবাস্য পাখি।
দৃশ্যেদোষে দরবারি বেজেই চলেছে।
--
| |||||||||||||||
| |||||||||||||||
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন