সিনথিয়া রহমান এর গুচ্ছকবিতা।। poems by sinthiya rahman-- kuasha

সিনথিয়া রহমান এর গুচ্ছকবিতা।। poems by sinthiya rahman-- kuasha



সিনথিয়া রহমান এর 

গুচ্ছকবিতা

অরুপ ঋতুর অভিসার 


অরণ্য-গর্ভে যখন অস্তরাগ ছুঁয়ে যাচ্ছিল সবুজ পাতার আবরণ,
দুই যুগল নয়ন নতজানু হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল একে অপরের অনুভবের প্রবেশপথে।
নির্বাক সময়ের মাঝে, নিঃশব্দ এক দৃষ্টি-সংলাপে
ভিজে যাচ্ছিল চোখের ভাষাহীন অপেক্ষারা।

হঠাৎ প্রাকৃতিক সংবরণ ভেদ করে
ঝরঝর বৃষ্টির মিছিল এসে ছিন্ন করলো গহীন নীরবতার জাল,
চুঁইয়ে পড়লো তপ্ত স্নিগ্ধতা অধরের ওপর,
যেন স্বয়ং আকাশ তার ভারমুক্তি চাইলো আমাদের সাক্ষাতে।

আমরা ছুটে পালাইনি,
কারণ এমন কোনো সন্ধ্যা ছিল, যা অজস্র যুগ ধরে হৃদয়ের অলিন্দে প্রতীক্ষিত,
একসাথে ভিজে যাওয়া, একসাথে নিঃশ্বাস ফেলা,
আর প্রহরের গহনে আশ্রয় নেওয়া এক তীব্র প্রশান্তির যাপন।

সেদিন প্রকৃতি তার স্পর্শে আমাদের শরীর নয়,
অস্তিত্ব ভিজিয়ে দিয়েছিল।
পাঁজরের গোপন অলিন্দে যে শান্তি নেমেছিল,
তা কোনো শব্দে না বলা যায়, না পুনরাবৃত্তি ঘটে।

তারপর বহুকাল আর সন্ধ্যা নামে না,
বৃষ্টি আসে না সেই প্রথম ভেজায়,
আর দুটো চোখ নিষ্পলক দাঁড়িয়ে থাকে
এক অজানা ঋতুর প্রতীক্ষায়।



নিভৃত নিবেদন 


যদি হঠাৎ অকারণ তাপদাহে কুঞ্চিত হয় তোমার অবচেতন,
জীবনের অনুত্তাপ এসে যদি গেঁথে দেয় বিষাদ-তুলিকা,
যদি অনুরণন থেমে যায় হৃদয়ের চোরা চত্বরে,
তবে তুমি আসো, প্রলম্বিত নীরবতা ভেঙে
এই অনির্বচনীয় অনুভবের প্রাঙ্গণে।

ধূলিমলিন ক্লান্তি এসে যদি ঢেকে দেয় আত্মার অভিজ্ঞান,
তুমি গমন করো যদি বৈরী ব্যর্থতার প্রান্তদেশে,
আমি আমার আবিল আকাশে ছুঁড়ে দেবো দীপ্ত দ্যুতিময়তা,
যেখানে তোমার নামে রেখেছি অন্তরীক্ষের সমর্পণ।

শব্দহীন ঝড় এলে আমি হবো নিঃশব্দে উচ্চারণযোগ্য,
হবো তব গুঞ্জরিণী নিরালায়, কুন্ঠাহীন আশ্রয়স্থল।
তুমি নির্বিচারে ঢলে পড়ো আমার আত্মার অলিন্দে,
আমি তোমায় গঠন করবো নিভৃত স্নেহচ্ছায়ায়।

দেহের প্রাচুর্য নয়,আমি তোমার বায়বীয় অনুভবের যত্নে থাকবো।
তুমি নিঃস্ব হলে আমি হবো তোমার সম্পূর্ণ,
তুমি হারালে আমি হবো তোমার একমাত্র খোঁজ।

তুমি শুধু একবার অন্তর্হীন দৃষ্টিতে বলো,
থেকে যাও!
আমি আমার সমস্ত আবর্তনে, সমস্ত অনুপমতায়
তোমায় রাখবো নিবেদনের উচ্চতায়।



স্মৃতির একক কাব্য


তোমার কবিতা পড়েছি বহুবার,
দিকভ্রান্ত এক যাযাবরের মতো ছুটে চলা অলীক শব্দমালা।
এখন আর স্পর্শ করি না সে সব এলোমেলো উপমা,
যে পুকুর তুমি এঁকেছিলে,
সেখানে আমার খোঁপাভাঙা চুলের একটিও রেখা সিক্ত হয় না।

তবুও,
তোমার কাব্য স্থাপিত বুকশেল্ফের নিবিড় মধ্যবিন্দুতে,
ওই যে একবার এসেছিলে নিকষ অন্ধকারে,
ভুলিনি আমি…আর কখনো ভুলবো না।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন