প্রথম বাঙালি কবি হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১ খ্রি.) নোবেল পুরস্কার লাভ করেন ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে। একজন বাঙালির জন্য সময়টা ছিল কঠিন। বঙ্গভঙ্গবিরোধী উত্তাল আন্দোলনের কাছে নতি স্বীকার করে ব্রিটিশ সরকার বঙ্গভঙ্গ রদ করে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে। এর আগে ব্রিটিশ সরকারের কোন আইনের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতি এমনভাবে দুর্বার আন্দোলন করতে পারেনি। ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে গঠিত হলেও কংগ্রেস তখন পর্যন্ত ব্রিটিশবিরোধী কোন রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করেনি। মুসলিম লীগও গঠিত হয়েছিল (১৯০৬) ব্রিটিশ সরকারের নিকট থেকে মুসলমানদের জন্য রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যে। ফলে মুসলমানগণ বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেয়নি। বঙ্গভঙ্গের ফলে অভিজাত ও লব্ধপ্রতিষ্ঠ হিন্দুদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল বলে হিন্দুরা বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করেছিল। ব্রিটিশবিরোধী এ আন্দোলন সফল করার জন্য অনেক রক্ত ও ঘাম ঝরাতে হয়েছিল। রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে সেদিন যোগ দিয়েছিলেন কবি-সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। স্বদেশী চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে একটি গ্রুপ বিপ্লবী কর্মকা-ে মেতে উঠেছিলেন। তারা গোপনে ব্রিটিশবিরোধী সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাতেন। আন্দোলনকে উজ্জীবিত রাখার জন্য কবি-সাহিত্যিকগণ স্বদেশী কবিতা ও গান রচনা করেছিলেন যা আজও মানুষের মনে দেশপ্রেম জাগ্রত করে। এই বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন রবীন্দ্রনাথও। রবীন্দ্রনাথের স্বদেশী গান ও কবিতা সেদিন চরমপন্থি ও নরমপন্থি উভয় ধারার রাজনৈতিক কর্মীদের উজ্জীবিত করেছিল। বিষয়টি ব্রিটিশ সরকারের নজর এড়ায়নি। তবু বঙ্গভঙ্গ রদের দুই বছর পরেই পশ্চিমা বিশ্ব রবীন্দ্রনাথকে নোবেল পুরস্কার দিলেন। পুঁজিবাদী পশ্চিমা বিশ্ব ভাববাদী রবীন্দ্রনাথকে যে গ্রন্থের জন্য নোবেল পুরস্কার দিলেন (গীতাঞ্জলির ইংরেজি অনুবাদ) সে গ্রন্থে পুঁজিবাদের ছোঁয়াও নেই; বরং পুঁজিবাদী ভাবধারার বিপরীতধর্মী অধ্যাত্মবাদী চেতনা ছিল গীতাঞ্জলিতে। নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর রবীন্দ্রনাথ আরও বেশি রাজনীতিমনষ্ক হয়েছিলেন। ‘সভ্যতার সংকট’সহ অনেক প্রবন্ধে তিনি রাজনীতিকে বিশ্লেষণ করেছেন নানাভাবে। জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকা-ের (১৯১৯) প্রতিবাদে ইংরেজ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত নাইট উপাধি বর্জন করেছেন।
ভারতবর্ষসহ বিশ্বব্যাপী রবীন্দ্রনাথের অসংখ্য ভক্ত ছিল। সাহিত্যক্ষেত্রে তাঁর ভক্তের সংখ্যা অসংখ্য এবং তারাই রবীন্দ্রনাথকে কবিগুরু হিসেবে মান্য করে আসছেন। শুধু সাহিত্যক্ষেত্রে নয়; ভারতবর্ষে কবিগুরুকে ভক্তি করতেন- এমন রাজনীতিবিদের সংখ্যাও কম ছিল না। গান্ধী, নেহেরু, সুভাষ বোসের মতো সর্বভারতীয় নেতারাও কবিগুরুকে ভক্তি করতেন। তাঁর কাছ থেকে দীক্ষা নিতেন। এটা শুধু আবেগনির্ভর ছিল না। ব্রিটিশ ভারতের রাজনীতিতে কবিগুরুকে সঠিক সময়ে সঠিক ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে সব সময়ে। কংগ্রেসের নিয়মতান্দ্রিক আন্দোলনের বিরোধী ছিলেন না রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথ সর্বভারতীয় প্রতিভা হলেও একজন বাঙালি হিসেবে বাংলার প্রতি তাঁর দরদ ছিল অপরিসীম। পশ্চিমবঙ্গে আবাসভূমি হলেও জমিদারী তদারকির কাজে পূর্ববাংলায় তিনি এসেছেন, বসবাস করেছেন। পূর্ববঙ্গের নদীবিধৌত অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে সাহিত্যরচনা করেছেন। কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, নওগাঁর পতিসর ও সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর আজও তাঁর স্মৃতি বহন করে আছে। বাংলা বলতে রবীন্দ্রনাথ যুক্তবাংলাকেই বুঝতেন। তাই বঙ্গভঙ্গের ফলে তিনি ব্যথিত হয়েছিলেন। বঙ্গভঙ্গকে তিনি ‘বঙ্গমাতার অঙ্গচ্ছেদ’ হিসেবে বিবেচনা করেছেন। তাই বঙ্গভঙ্গবিরোধী স্বদেশী ও বয়কট আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন। রাখিবন্ধন কর্মসূচি পালন করেছিলেন। রাজনৈতিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের যখন এই অবস্থান তখন কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬ খ্রি.) প্রথম বিশ^যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে কলম ধরলেন।
কাজী নজরুল ইসলাম প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ের কবি। এ সময় ব্রিটিশের বিরুদ্ধে ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলন দানা বেঁধে উঠেছে। স্বাধীনতার চেতনায় ভারতমানস তৈরি হচ্ছে ক্রমশ। খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলন চলছে। যুদ্ধের পর ৪৯নং বাঙালি পল্টন ভেঙে দেওয়া হলো। নজরুল ফিরে এলেন সৈনিক জীবনের অবসান ঘটিয়ে। কলকাতায় এসে স্থায়ী হলেন। শুরু হলো পুরোদমে সাহিত্যসাধনা। অনেকের সাথে নজরুলও জড়িত হলেন সান্ধ্য দৈনিক পত্রিকা ‘নবযুগ’ (১৯২০)- এর সাথে। নবযুগ পত্রিকায় দেশাত্ববোধ ও বিপ্লবাত্মক সম্পাদকীয় ও কবিতা লিখলেন। সাম্রাজ্যবাদী রাজশক্তি পত্রিকাটির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিল। নবযুগের প্রকাশনা স্থগিত হয়ে গেল। কিন্তু নজরুল দমে গেলেন না। নতুন উদ্যোম নিয়ে প্রকাশ করলেন অর্ধ সাপ্তাহিক ‘ধূমকেতু' (আগস্ট ১৯২২)। ‘ধূমকেতু' নিয়ে ধূমকেতুর মতো আবির্ভূত হলেন সাহিত্যাকাশে। সেই সাথে প্রকাশ করলেন ‘অগ্নিবীণা’ কাব্য (অক্টোবর ১৯২২)। রবীন্দ্রনাথ আশীর্বাদবাণী পাঠলেন ধূমকেতু’র জন্য। সে আশীর্বাদবাণীর শেষ দুই লাইনে রবীন্দ্রনাথ বললেন, ‘জাগিয়ে দেরে চমক মেরে/ আছে যারা অর্ধচেতন।’
‘ধূমকেতু’ অর্ধচেতনদের জাগাতে পেরেছিল। শুধু অর্ধচেতনদের নয়, পুরো জাতিকেই জাগিয়ে তুলেছিল। এই জাতীয় জাগরণের ধাক্কা সইতে পারেনি ব্রিটিশ সরকার। তাই ধূমকেতুর মামলায় কবি নজরুলকে কারাবন্দি করা হলো (১৯২৩)। জেলখানায় বসেই লিখলেন পরাধীনতার বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ও মুক্তির গান- ‘কারার ঐ লৌহকপাট/ ভেঙে ফেল কররে লোপাট’ কিংবা ‘শিকল পরা ছল মোদের এই শিকল ছল/ এই শিকল পরেই শিকল তোদের করবো রে বিকল।’ সেই শেকলভাঙ্গার গানে ক্ষুব্ধ হলো ব্রিটিশ সরকার। জেলে কয়েদীদের উপর জুলুম-নির্যাতন বেড়ে গেল। নিপীড়নের বিরুদ্ধে নজরুল অনশন করলেন। বাংলার কবি-সাহিত্যিকগণ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন। এ সময় এগিয়ে এলেন কবিগুরু। তখন কবিগুরু খ্যাতির শীর্ষে। আর নজরুল চব্বিশ বছরের যুদ্ধফেরত বিদ্রোহী যুবক। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ নজরুলকে উৎসর্গ করে বই লিখলেন (‘বসন্ত’ নামক নাটিকা)। বই পাঠানো হলো জেলে। জেলের কর্মকর্তারা অবাক হলেন। একজন কয়েদীকে বই উৎসর্গ করেছেন কবি রবীন্দ্রনাথ! নজরুলের অনশন ভাঙার কথা বলে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে তারবার্তা পাঠিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তারবার্তায় কবিগুরু লিখেছিলেন ‘অনশন ভাঙো। আমাদের সাহিত্য তোমাকে চায়’ (গিভ আপ হাঙ্গার স্ট্রাইক। আওয়ার লিটারেচার ক্লেমস ইউ)। জেল থেকে মুক্ত হয়ে নজরুল ততোধিক উদ্দীপনা নিয়ে কলম ধরলেন। সাম্যবাদী চেতনায় সকল প্রকার বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠলেন। বিপ্লবীরা উজ্জীবিত হয়ে ওঠলো তাঁর কবিতা ও গানে। বিপ্লবীদের উজ্জীবিত করতে কবিতার পাশাপাশি লিখলেন ‘মৃত্যুক্ষুধা’ (১৯৩০) ও ‘কুহেলিকা’ (১৯৩১) উপন্যাস। আনসার (মৃত্যুক্ষুধা) ও জাহাঙ্গীর (কুহেলিকা) হয়ে উঠলো বিপ্লবীদের আদর্শ।
নজরুলের বিদ্রোহী চেতনার মূলে ছিল পরাধীনতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম। ইংরেজ শাসন তিনি কোনভাবেই মেনে নিতে পারেননি। তাঁর ধূমকেতু তাই সর্বপ্রথম ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা চেয়েছিল। কংগ্রেসের স্বরাজ লাভের আন্দোলন নজরুলের মনে ধরেনি। তাই তিনি বলতেন ‘স্বরাজ টরাজ বুঝি না’। পূর্ণ স্বাধীনতাই ছিল নজরুলের কাম্য। ‘আমি আপনারে ছাড়া করি না কাহারে কুর্ণিশ’ এই মন্ত্রেই দীক্ষা নিয়েছিলেন নজরুল। সকল স্বাধীনতাকামী বিপ্লবীরা, সকল সাম্যবাদী লেখককুল, সকল নিপীড়িত গণমানুষ যেমন নজরুলের বিদ্রোহী চেতনায় উজ্জীবিত হয়েছিলেন তেমনি সকল কায়েমী স্বার্থবাদী, রাজভক্ত সামন্তশ্রেণি, সুবিধাবাদী মধ্যসত্ত্বভোগী, ধর্মান্ধ ও ধর্মব্যবসায়ীর দল উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়েছিলেন। নজরুল ‘মৌ লোভী সব মৌলভী’দের মুখোশ যেমন খুলে দিয়েছেন তেমনি যারা ‘জাতের নামে বজ্জাতি’ করে তাদের বিপক্ষেও ছিল নজরুলের অবস্থান। নজরুল ছিলেন পুরোপুরি বাঙালি জাতীয়তাবাদী। ‘বাঙালির বাংলা’ প্রবন্ধে নজরুল দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘বাঙালি যেদিন ঐক্যবদ্ধ হয়ে বলতে পারবে ‘বাঙালির বাংলা’ সেদিন তারা অসাধ্য সাধন করবে।’ রবীন্দ্রযুগেই রবীন্দ্রানুসারাী না হয়ে ভিন্ন এক কাব্যভাষায় বাঙালি জাতিকে উজ্জীবিত করেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। সাহিত্যচর্চার জন্য দুই যুগেরও কম সময় পেয়েছিলেন তিনি। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ১০ জুলাই (মতান্তরে ৭ জুলাই) তিনি বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন। তারপর আর সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি। প্রবলভাবে সাহিত্যচর্চা শুরু করেছিলেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে ফিরে এসে। সেই হিসেবে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী কালপর্বটিই নজরুলের সাহিত্যসাধনার কালপর্ব। এ সময় তিরিশের কবিরা রবীন্দ্রবলয় থেকে বের হয়ে নতুন কাব্যধারা সৃজনে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। নজরুল তিরিশের কবিদের ভাষায় কথা বলেননি। আবার রবীন্দ্রনাথের ভাষায়ও কথা বলেননি। নজরুল এমন এক নতুন ভাষাকাঠামো নিয়ে আসেন, যে ভাষায় বাঙালি জাতি পরাধীনতার বিরুদ্ধে, শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে, সকল প্রকার বৈষম্যের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ হয়ে ওঠেন। নজরুল স্বাধীনতা ও মুক্তির কবি। নজরুলসাহিত্যের স্বরূপ সন্ধান করতে গেলে সেখানে স্বাধীনতা ও মুক্তির আকাক্সক্ষাই প্রবলভাবে দেখা যায়। নজরুলের ‘ধূমকেতু’ সর্বপ্রথম ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা চেয়েছিল। চেয়েছিল বৃটিশ শাসন ও শোষণের অবসান। এ কারণে নজরুলকে কারাভোগ করতে হয়েছিল। কিন্তু নজরুল থামেননি। বিপ্লবী কবি নজরুল ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সকল বিপ্লবীদের উজ্জীবিত করে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন।
নজরুলযুগে বাংলায় হিন্দু-মুসলমান বিরোধ ছিল। সাম্প্রদায়িক এই বিরোধে নজরুল কোন পক্ষ নিলেন না। সর্বমানবের কবি হিসেবে নজরুল হিন্দুর কথা বললেন। মুসলমানের কথা বললেন। সকল জাতির কথা বললেন। হিন্দু ও মুসলমানের হ্যান্ডশেক করাতে চাইলেন। সর্বভারতীয় অনেক নেতাও তখন হিন্দু-মুসলমানের ঐক্য চেয়েছিলেন। কিন্তু সাম্প্রদায়িক মহল নজরুলকে ক্ষমা করেনি। সাম্প্রদায়িক মনোভাবের মুসলমানরা তাকে কাফের বলা শুরু করলো। সাম্প্রদায়িক মনোভাবের হিন্দুরা তাকে যবন (নিম্নশ্রেণির মুসলমান) বলা শুরু করলো। তবু নজরুল এক মোহনায় দাঁড়িয়ে এক মিলনের বাঁশি বাজাতে থাকলেন (এক মোহনায় দাঁড়াইয়া শোন এক মিলনের বাঁশী)। নজরুলের এই অসাম্প্রদায়িক চেতনায় মুগ্ধ হয়ে অন্নদাশঙ্কর রায় বলেছিলেন- ‘ভুল হয়ে গেছে বিলকুল/ আর সব কিছু ভাগ হয়ে গেছে/ ভাগ হয়নিকো নজরুল।’
এই হলো বাঙালির কবি নজরুল। সর্বভারতীয় অনেক নেতাকে কবি নজরুল যেমন ভক্তি করতেন তেমনি কবি নজরুলকেও অনেক নেতা শ্রদ্ধার আসনে বসিয়েছিলেন। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু বলতেন, ‘আমরা যখন যুদ্ধে যাবো, তখন সেখানে নজরুলের যুদ্ধের গান গাওয়া হবে। আমরা যখন কারাগারে যাবো, তখনও তাঁর গান গাইবো।’ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে কবি নজরুলের দেশাত্ববোধক ও গণজাগরণী গান মুক্তিকামী জনতার প্রাণে অসীম প্রেরণার উৎস হয়েছিল। নজরুল যদি বাকশক্তি না হারাতেন, আবার যদি সুস্থ হয়ে লিখতে পারতেন তাহলে হয়তো পাকিস্তানি শোষণের বিরুদ্ধে তাঁর কলম গর্জে উঠতো। যেমন গর্জে উঠেছিল ব্রিটিশ শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে। নজরুল বাংলাদেশের জাতীয় কবি। বাংলাদেশের রণসংগীতের রচয়িতা। ‘বাঙলা বাঙালির হোক! বাঙলার জয় হোক! বাঙালির জয় হোক’- বলে স্বাধীন বাংলার স্বপ্ন তিনিই প্রথম দেখেছিলেন বলা যায়।
রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের ভাব-সম্পর্কের যোগসূত্রটি আমরা পূর্বে কিছুটা জেনেছি। এবার সাহিত্যক্ষেত্রে তাঁদের চেতনার সাদৃশ্য সন্ধান করা যায়। মানবপ্রকৃতির প্রধান দুটি প্রবণতা হলো প্রেম ও দ্রোহের প্রবণতা। সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, ক্রোধ-ঘৃণা ইত্যাদি মনের অসংখ্য মৌলিক অনুভূতি বা প্রবণতার মধ্যে প্রেম ও দ্রোহ বা বিদ্রোহ এতোটাই শক্তিশালী যে এই প্রবণতার দ্বারা মানুষ নিমিষে বদলে যেতে পারে, এমনকি জীবনকেও উৎসর্গ করতে পারে। মানব প্রকৃতির স্বরূপ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মানবমনে প্রেমের আবির্ভাব স্বতস্ফূর্ত। এই স্বতস্ফূর্ত প্রেম মূর্ত বিষয়ের প্রতিও হতে পারে আবার বিমূর্ত বিষয়ের প্রতিও হতে পারে। ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য কিংবা অতীন্দ্রিয়, প্রাকৃতিক কিংবা অতিপ্রাকৃতিক, বাস্তব কিংবা পৌরাণিক, মানবিক কিংবা অতিমানবিক- প্রত্যেকটি বিষয়ই ক্ষেত্রবিশেষে মানবমনকে আলোড়িত করে, আন্দোলিত করে। সুতরাং মানব প্রকৃতি সব সময় একরূপ নয়, এ প্রকৃতি বৈচিত্র্যপূর্ণ ও বহুমুখী। কাব্য নির্মাণের অন্যতম প্রধান উপাদান প্রেম। এই প্রেম হতে পারে বিশেষ মানব-মানবীর জৈবিক প্রেষণাপ্রসূত, হতে পারে সামগ্রিক মানবপ্রেমকেন্দ্রিক। দেশাত্ববোধ থেকেও মানবমনে দেশপ্রেম জেগে ওঠে। আবার প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে অনেকে প্রকৃতিপ্রেমিক হয়ে যান। বাবা-মা, ভাই-বোন ও সন্তানের প্রতি ভালবাসা প্রেমেরই নামান্তর। একজন কবি এই নানামাত্রিক প্রেমের বহিঃপ্রকাশ ঘটান তাঁর কাব্যে। কোন কবিই প্রেমকে পরিহার করে কাব্য নির্মাণের দীর্ঘপথ অতিক্রম করতে পারে না।
প্রেমের মতো দ্রোহও হয়ে উঠতে পারে কাব্য নির্মাণের প্রধান উপাদান। তবে কাব্যে দ্রোহ চেতনার প্রতিফলন ঘটে বিশেষ পরিপ্রেক্ষিতে। প্রেম ও দ্রোহ পরস্পরবিরোধী হলেও পরস্পর বিচ্ছিন্ন নয়। কারণ প্রেমের অনুপস্থিতি কিংবা প্রেমে ব্যর্থতাই দ্রোহ চেতনার জন্ম দেয়। প্রেমে ব্যর্থতা একজন কবিকেও দ্রোহী করে তুলতে পারে। তখন কবি তার দ্রোহের বহিঃপ্রকাশ ঘটান দ্রোহের কাব্য নির্মাণ করে। একজন কবির প্রেম, বিরহ, আবেগ, উচ্ছ্বাস, বিনয়, বিদ্রোহ- এ সব কিছু প্রকাশের একমাত্র মাধ্যম হলো কবিতা। তাই কবি কোন দুঃখ পেলে তা ছড়িয়ে দেন কবিতার অবয়বে। আবার সুখ পেলেও কবি আশ্রয় নেন কবিতার ভুবনে। দ্রোহী হলেও কবি তাঁর দ্রোহ চেতনার প্রকাশ ঘটান কবিতায়। প্রেম, দ্রোহ, শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও গণজাগরণ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম উভয়ের কাব্য নির্মাণের প্রধান উপাদান। তাই দুজনই প্রেমের কবি, দ্রোহের কবি।
রবীন্দ্রনাথের মধ্যে প্রেম ও দ্রোহ চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে ভাবের গভীরতায়। রবীন্দ্রনাথ যখন বলেন ‘আমি ঢালিব করুণাধারা / আমি ভাঙিব পাষাণ কারা’ (নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ) তখন নজরুলের ‘মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী, আর হাতে রণ-তুর্য’র (বিদ্রোহী) সাথে চেতনাগত কোন পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় না। রবীন্দ্রনাথ ১৯১৩ সালে যখন নোবেল পুরস্কার পেয়ে বিশ্বসাহিত্যে খ্যাতির আসনে অধিষ্ঠিত কাজী নজরুল তখন ১৪ বছরে পদার্পণ করা শিশু। অনেকে আবেগের বসে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে নজরুলের বিরোধের কথা ফলাও করেন। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের মধ্যে ছিল এক অনাবিল ভালবাসার সম্পর্ক। রবীন্দ্রনাথ ভালবেসে নজরুলকে উৎসর্গ করেছিলেন বসন্ত নাটক। আর নজরুল শ্রদ্ধার নিদর্শন স্বরূপ রবীন্দ্রনাথকে উৎসর্গ করেছিলেন সঞ্চিতা কাব্য সংকলন গ্রন্থটি। নজরুল ধুমকেতু পত্রিকা প্রকাশ উপলক্ষে রবীন্দ্রনাথের কাছে আশীর্বাদ বাণী চেয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ নজরুল মানসের স্বরূপ উপলব্ধি করে যে আশীর্বাদ বাণী পাঠিয়েছিলেন তা ছিল এ রকম : ‘আয় চলে আয় রে ধুমকেতু / আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু / দূর্দিনের এই দুর্গশিরে / উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন। / অলক্ষণের তিলক রেখা / রাতের ভালে হোক না লেখা / জাগিয়ে দে রে চমক মেরে / আছে যারা অর্ধচেতন।’ রবীন্দ্রনাথের আশীর্বাদ বাণীর বাস্তবায়ন ঘটেছিল। ধুমকেতু অর্ধচেতনদের জাগাতে পেরেছিল। রবীন্দ্রনাথ বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের রচয়িতা। আর নজরুল বাংলাদেশের জাতীয় কবি। বাংলা সাহিত্যের এই দুই প্রতিভাকে বাঙালি জাতি এক মোহনায় মিলিত করেছেন। এটা সম্ভব হয়েছে দুজনের চেতনার সাদশ্য থাকার কারণে। নজরুলকে বলা হয় জাতীয় জাগরণের কবি। কারণ তিনি তাঁর সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে সারা জীবন জাগরণের গান গেয়েছেন। ‘ভোর হলো দোর খোল, খুকুমনি উঠরে’ (ভোর হলো) বলে নজরুল শিশুদের জাগিয়েছেন। ‘থাকবো নাকো বদ্ধ ঘরে /দেখবো এবার জগৎটাকে’ (সংকল্প) বলে কিশোরদের মানসকে জাগ্রত করেছেন। আর ‘বল বীর, চির উন্নত মম শির’ (বিদ্রোহী) বলে বীরজনতাকে উজ্জীবিত করেছেন। এই জাগরণ বা যৌবনবন্দনা বরীন্দ্রনাথের চেতনায়ও বহমান। রবীন্দ্রনাথও বলেছেন ‘মেঘের কোলে রোদ হেসেছে / বাদল গেছে টুটি’ (ছুটি) কিংবা ‘ ওরে নবীন, ওরে আমার কাঁচা / ওর সবুজ, ওরে অবুঝ / আধ-মরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা’ (সবুজের অভিযান) কিংবা ‘এই-সব মুঢ় ম্লান মূক মুখে / দিতে হবে ভাষা; এই সব শ্রান্ত শুষ্ক ভগ্ন বুকে/ ধ্বনিয়া তুলিতে হবে আশা’ (এবার ফিরাও মোরে)- এ সব কাব্যাংশে রবীন্দ্রনাথ মানবমুক্তির আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করেছেন। তাই মানবমুক্তি ও মানবতাবাদী চেতনায় রবীন্দ্র-নজরুল সমকণ্ঠ শিল্পীমানস। রবীন্দ্রনাথের প্রেম ও দ্রোহ চেতনার সন্ধান করতে হলে পাঠককেও চেতনার গভীরে লীন হতে হয়। ভাববাদী রবীন্দ্রনাথ শেকড়ের সন্ধান করেন। অতল গভীর থেকে তুলে আনেন মনিমুক্তা। সর্বগ্রাসী সাহিত্যপ্রতিভার বিকাশে যে রবীন্দ্র বলয় সৃষ্টি হয়েছিল এবং যার দ্যুতি আজও সাহিত্যক্ষেত্রে বিচ্ছুরিত তা থেকে মুক্ত হতে পারেননি সমকালীন সাহিত্যকর্মীরাও। নজরুল কোনো বলয় তৈরি করতে পারেননি। নজরুলের উদয় ধুমকেতুর মতো। মাত্র দুই দশকের সাহিত্যজীবনে সাহিত্যকর্ম ছাড়াও রাজনীতি, সমাজনীতি, সাংবাদিকতা ও সংগীতচর্চা করেছেন নজরুল। তবু নজরুল নিজেকে ‘যুগের নয়তো, হুজুগের কবি’ বলেছেন। কিংবা ‘বর্তমানের কবি আমি, ভবিষ্যতের নই নবী’ বলে অমরত্বকে দূরে ঠেলেছেন। অমরত্বের আকাক্সক্ষা করেননি বলেই নজরুল বলতে পেরেছেন ‘বড় কথা বড় ভাব আসে নাকো মাথায়, বন্ধু, বড় দুঃখে/ অমর কাব্য তোমরা লিখিও, বন্ধু, যাহারা আছ সুখে’। বোঝা যায় নজরুলের মনে সুখ ছিল না। নজরুল ব্যথিত ছিলেন পরাধীনতার বেদনায়। স্বাধীনতার সুখ নজরুল চেয়েছিলেন। তাই তাঁর কাব্য পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙার হাতুড়ি, শাবল, গাইতিসম। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যজগতে অমরত্ব আকাক্সক্ষা করেছেন। ‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে/ মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই’ (প্রাণ) বলে আকুতি প্রকাশ করেছেন। আবার আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন শতবর্ষ পড়ে কেউ তাঁর কবিতা পড়বে কিনা। তাঁর কাব্যভাষায় : ‘আজিকার কোনো ফুল, বিহঙ্গের কোনো গান/ আজিকার কোনো রক্তরাগ/ অনুরাগে সিক্ত করি পারিব কি পাঠাইতে/ তোমাদের করে/ আজি হতে শতবর্ষ পরে?’ (১৪০০ সাল)।
চেতনায় রবীন্দ্রনাথ ভাববাদী। গীতাঞ্জলি’র প্রথম পংক্তিতেই রবীন্দ্রনাথ বলেছেন ‘ আমার মাথা নত করে দাও হে/ তোমার চরনধূলার তলে’। কিন্তু নজরুল বলেছেন, ‘চির উন্নত মম শির’। একজন উপর থেকে নিচে, আর একজন নিচে থেকে উপরে। যেন দুজনেই মিলিত হতে চান একই চেতনায়। শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন দুজনই। একজন জমিদার আর একজন প্রজা। অথচ অন্তর্গত চেতনায় দুজনই একই সমান্তরালে। রবীন্দ্রনাথের কাব্যভাষায় : ‘এ জগতে হায় সেই বেশি চায় আছে যার ভুড়ি ভুড়ি / রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।’
এখানে রবীন্দ্রনাথ শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার। শ্রেণিচেতনা এখানে রবীন্দ্রনাথকে দ্রোহী করে তুলেছে। রবীন্দ্রনাথ শ্রমজীবী মানুষের কথাও বলেছেন এবং খেটে খাওয়া শ্রমজীবী সাধারণ মানুষের দলভুক্ত ভেবেছেন নিজেকে। ‘মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক/ আমি তোমাদেরই লোক’ বলে দলপতি নয়; দলভুক্ত হতে চেয়েছেন। এই চাওয়া শোষণের বিরুদ্ধে নিজের অবস্থানকে নির্দেশ করে। শ্রমজীবী মানুষের স্বরূপ সন্ধান করেছেন রবীন্দ্রনাথ এভাবে : ‘ওরা চিরকাল/ টানে দার, ধরে থাকে হাল/ ওরা মাঠে মাঠে/ বীজ বোনে, পাকা ধান কাটে/ ওরা কাজ করে নগরে প্রান্তরে।’ শোষিত, বঞ্চিত ও নির্যাতিত মানুষের প্রতি নজরুলেরও ছিল অসীম দরদ। উচু তলার বাবুরা নিচু তলার কুলি মজুরদের অমানুষ ভাবে, সামান্য মানবিক মর্যাদা দিতে চায় না। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের এই চিত্র ফুটে উঠেছে নজরুলের কাব্যভাষায় : ‘দেখিনু সেদিন রেলে কুলি বলে এক বাবু সাব তারে/ ঠেলে দিল নিচে ফেলে/ চোখ ফেটে এলো জল/ এমনি করে কি জগত জুড়িয়া মার খাবে দুর্বল।’
প্রেম ও দ্রোহ চেতনায় রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের ভিন্নতা ভাষাগত; অন্তর্গত চেতনায় উভয়ের অবস্থান অভিন্ন। উভয়েই প্রেমের পুজারী। কিন্তু শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে দ্রোহী। ভাষার উৎকর্ষে রবীন্দ্রসাহিত্যের শিল্পমান অতুলনীয়। আর সময়ের সংকট উপস্থাপনার ক্ষেত্রে নজরুলসাহিত্য নন্দিত। রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল- উভয়ের মধ্যেই সৃষ্টি সুখের উল্লাস ছিল। সৃষ্টির তাড়নায় অস্থির নজরুল যেমন বলেছেন : ‘আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে-/ মোর মুখ হাসে মোর চোখ হাসে মোর টগবগিয়ে খুন হাসে’ তেমনি রবীন্দ্রনাথও সৃষ্টি সুখে চিত্তের নাচন অনুভব করেছেন এভাবে : ‘মম চিত্তে নিতি নিত্যে, কে যে নাচে, তা তা থৈ থৈ, তা তা থৈ থৈ, তা তা থৈ থৈ।’ তাই রবীন্দ্রচেতনায় আমরা নজরুলকে খুঁজে পাই। রবীন্দ্রনাথের জন্ম ২৫ বৈশাখ, নজরুলের জন্ম ১১ জ্যেষ্ঠ। বৈশাখ থেকে জ্যেষ্ঠ। আবার রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু ২২ শ্রাবণ, নজরুলের মৃত্যু ১২ ভাদ্র। শ্রাবণ থেকে ভাদ্র। এই জন্ম-মৃত্যুর পরম্পরা কাকতালীয় হলেও বিষয়টি ভেবে আমরা কৌতুহলী হই। রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল বাংলা সাহিত্যের শেকড় সন্ধানী প্রতিভা। সাম্প্রদায়িকতার ধ্বজাধারীরা নজরুলকে ভাগ করতে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু নজরুল প্রমাণ করে গেছেন তিনি সকল কালের, সকল দেশের, সকল মানুষের। ভারতবর্ষের হিন্দু-মুসলমানকে নজরুল ঐক্যবদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। এই চাওয়া থেকেই প্রমাণিত হয় নজরুল অখ- ভারতের পক্ষে ছিলেন। আর রবীন্দ্রনাথ তো ‘এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে’ বিশ্বমানবের মহামিলন চেয়েছেন। সুতরাং অন্তর্গত চেতনায় রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল একই জীবনবোধ লালন করেছেন। আর সেই জীবনবোধের মূলকথা হলো মানুষ, মানবমুক্তি ও মানবতাবোধ।
ড. আলী রেজা
প্রাবন্ধিক ও সাহিত্যচিন্তক
| |||||||||||||||
| |||||||||||||||
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন