গুচ্ছকবিতা
আবু জাফর দিলু
তুমি অবিনাশী শ্লোগানে গানে
তোমার সে সুর-ধ্বনি নদী জল হয়ে খুঁজে ফিরে প্রাণ,
স্বপ্নাকাশের সোনালি ফাগুন গেয়ে ওঠে মিহি গান।
এই দেশ, মাটি, বিমোহিত করে আপনার কলস্বরে,
সবুজের মোহ উতরোল হাসি কেবলি মাতাল করে।
প্রেম-ভালোবাসা, বিরহ-বেদনা বাদপ্রতিবাদ বুকে,
রণহুংকার জয়জয়কার দিয়েছো ভীষণ রুখে।
যেদিকে চাই নাই আর নাই রঙের বাহার হাসে,
তুমি অবিনাশী শ্লোগানে গানে ভুলগুলো তাই নাশে।
এই ধরাতলে শুধুই একটি নাম উড়ছে আকাশে,
ভুবন ব্যাপিয়া মেলেছে পালক পুতঃ সুবাস বাতাসে।
তুমি সোঁদাময় প্রাণের মাটি মোহন গানে গানে প্রাণে,
নদী জল ঢেউ সাগর অতল বিহাগের মিহি তানে।
সোঁদা মাটিমাখা মানুষের প্রাণে খোশবু গোলাপ তুমি,
সুকোমল সুরে দু'হাতে ফুটিয়ে জাগাও পুণ্যভূমি।
শিশুপ্রাণ মনে ধ্রুব তাল লয়ে নিত্য নতুন বাঁকে,
রঙিন পালকে রঙধনু রঙে কতো কী যে ছবি আঁকে !
স্বাধীন পতাকা পতপত ওড়ে মনোমুগ্ধকর সুরে,
ভালো লাগা সব সুরের ডানায় রাঙায় জগৎ জুড়ে,
তোমার শ্যামল সবুজ মমতা হৃদয় আবেশে ছুটে,
জ্বলজ্বল জ্বলে সুজলা সুফলা বকুল চামেলি ফুটে।
স্বপ্ন দোলানো বাঁশের বাঁশরি মাঝির মুখের গান,
চাঁদ ছোঁয়া ঢেউ সুরেলা নূপুরে ভেঙে করে খানখান।
কী নেই তোমার গীত মহিমায় আকুল করে না বিন্দু,
যে হাত ছুঁয়েছে পরমেশ্বর তাই তুমি মহাসিন্ধু।
যেদিকে তাকাই শুধু তুমি আর তুমি
ডান বলি বাম বলি সবদিক তাঁর
আমি কি আমার কভু ? করুণা অপার।
গুটি পায়ে হাঁটাহাঁটি সারাদিন ভর
কোষে কোষে ধমনীতে তাঁর বাঁধা ঘর।
যেখানেই চোখ রাখি তাঁকে দেখি শুধু
তুমি বিনা কিছু নেই আছে মরু ধুধু,
চোখের পলক নড়ে চোখ ভরা জল
অপরূপ রূপ খেলে সব অবিকল।
মুখ জিভ নড়েচড়ে হাওয়ার পরে
সবকিছু নতোমুখি থাকে থরে থরে,
আযানের ধ্বনি শুনি মধু মাখা সুরে
সবখানে শুধু তুমি থাকো বুক জুড়ে।
বিলঝিল নদী জল করে খল-বল
কোথা থেকে ওঠে ঢেউ কিবা তার বল ?
সাগরের শত ধারা নদী বয়ে চলে
গাছ-পাতা-ফুল-পাখি জপে দলে দলে।
আকাশ বাতাস মেঘ ভাসে ঘুরে ফিরে
কালের ধারায় রাখে ঝড়-বৃষ্টি ঘিরে,
জীবন যৌবন জ্বলে খুঁজে ফিরে ভূমি,
যেদিকে তাকাই শুধু তুমি আর তুমি!
আকাশের নক্ষত্ররূপে তুমি
নিরালায় চোখের পলকে একী চাঁদ ছোঁয়াছুঁয়ি,
সবগুলো ঘুমন্ত কুঠুরি যেন
আড়মোড়া ভেঙে জেগে ওঠে,
আমি আকাশের নক্ষত্ররূপে তোমাকে খুঁজে পাই
মিটিমিটি হাস্য জ্বলজ্বল অবয়বে।
অথচ, একদিন পিছু ফিরে ভুলেও একটিবারও তাকাও নি তুমি...
সেদিনের সেই বাবলা তলার হাতের মধ্যে হাত,
অবলা কত কি কথা চোখে মুখে
নিলাজ চিমটি কেটেছিল !
আকাশ, বাতাস, ঘাসফুলগুলো ফ্যালফ্যাল করে যেন দেখছিল;
হাত ছোঁয়া উষ্ণতা সেকী ঢেউ তুলছিলো বুকে,
কেউ কি তা দেখেছে, নাকি কিঞ্চিৎ বুঝেছে ?
মননে, স্বপ্নে তোমাকে ছুঁলে পুরো পৃথিবী
যেন খলখলিয়ে হেসে উঠে।
তোমার বুকেও কি এমন ঢেউ উঠেছিলো কখনো ?
এর-ই নাম যে পাগলপারা প্রেম তা আগে বুঝিনি।
গলির মোড়ে আড়চোখে চোখাচোখি হলে
লজ্জায় লাজুক ঠোঁট দুটো কেঁপে ওঠে,
এলোকেশী চুলের ঘ্রাণ যেন এক টুকরো রোদ,
দেহ, মনে এলোমেলো উষ্ণ শিহরণ জাগে !
ফাগুনের আগুন জ্বলে দাউ দাউ দুটি প্রাণে,
অবাধ্য আগুন দু'হাতে ওড়ায় অন্ধকার!
হিসেব হীন শব্দের ফুলঝুরি হাওয়ায় ছুটে ফিরে,
উতলে ওঠা যৌবনিক স্বপ্ন বাঁধাহীন পথে ভিড়ে।
এরই নাম যে পাগলপারা প্রেম তা আগে বুঝিনি !
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thanks