কবিতাগুচ্ছ
মিলন ইমদাদুল
একজন কবির যেদিন মৃত্যু হয়—
আকাশে বাতাসে সেদিন অন্ধকার নেমে আসে
ঘনকুয়াশায় ছুঁয়ে যায় পুরো শহর!
শহরের চৌরাস্তায় মোড়ে জমে ওঠে—
লক্ষ লক্ষ মানুষের ভীড়,
মুখে মুখে উচ্চারিত হয় কেবল শোকবার্তা!
একজন কবির যেদিন মৃত্যু হয়—
আকাশজুড়ে সেদিন মেঘের ভেলা ভেসে যায়!
কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ চমকায়—ঘনবর্ষণে প্লাবিত হয়।
সমস্ত দেশজুড়ে—মানুষের অশ্রুশাণিত
চোখেমুখে ভেসে ওঠে কেবল কবির স্মৃতিচারণ!
সেইদিন রাষ্ট্রের সমস্ত নাগরিক বুঝতে পারেন—
একজন কবিহীন রাষ্ট্র কতোটা মলিন!
নীলাম্বরী চাঁদ
মৃত্যুর খুব কাছে থেকে ফিরে এসে দেখি—
পৃথিবীটা কতো সুন্দর, সজীব আর রহস্যময়!
ভোরের শিশির স্নিগ্ধ হাওয়া—কাশফুলের প্রেম
দীঘির জলে ভেসে বেড়ানো বালিহাসের দল—
মাছরাঙা, শালিক,দোয়েল,কোকিলের সুমধুর ডাক
মেঘে-মেঘে ভেসে বেড়ায় নীলাম্বরী চাঁদ
প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি—
রাখাল ছেলেদের সন্ধ্যাবেলার ঘরে ফেরার দৃশ্য
মুগ্ধ হয়ে দেখি; তীব্র বাঁচার আকুতি জানাই
হাজার বছর বেঁচে থাকার স্বাদ জাগে বাংলায়!
সাদাভাতের ঘ্রাণ
স্বচ্ছ জীবন খুঁজতে গিয়ে
হারিয়ে ফেলি নিজেকে—
দেখি নাকের ডগায়
ভেসে আসে সাদাভাতের ঘ্রাণ।
মহুয়ার বন শিমুলের তুলা
তুলতুলে নরম বিছানা
ফার্নিচারে সাজানো ঘর;
বিলাসিতার নামান্তর।
দূর গহীন চরাচর কিংবা
সবুজমাঠ প্রান্তর থেকে
ভেসে আসে কানে
ক্ষুধার্ত পথিকের আত্মচিৎকার!
কোনো বিলাসিতাকে নয়;
ভালোবাসি একমুঠো সাদাভাত—
পাটশাক ভাঁজার সাথে
পাতলা জলের মসুর ডাউল।
চালহীন, চুলোহীন অভাবী সংসারে
হারিয়ে ফেলি নিজেকে—
দেখি নাকের ডগায়
ভেসে আসে সাদাভাতের ঘ্রাণ।
মহুয়ার বন শিমুলের তুলা
তুলতুলে নরম বিছানা
ফার্নিচারে সাজানো ঘর;
বিলাসিতার নামান্তর।
দূর গহীন চরাচর কিংবা
সবুজমাঠ প্রান্তর থেকে
ভেসে আসে কানে
ক্ষুধার্ত পথিকের আত্মচিৎকার!
কোনো বিলাসিতাকে নয়;
ভালোবাসি একমুঠো সাদাভাত—
পাটশাক ভাঁজার সাথে
পাতলা জলের মসুর ডাউল।
জিল্লুর রহমান শুভ্র'র ভিন্ন স্বাদের কবিতা পড়ুন এখানে
ওপার বাংলার বিখ্যাত কবি রবীন বসুর কবিতা পড়ুন ক্লিক
ওপারের কবি তৈমুর খানের কবিতা পড়ুন এখানে
চালহীন, চুলোহীন অভাবী সংসারে
জীর্ণ শরীরের ভাঁজে কাঠঠোকরার ঠোকাঠুকি—
একমাঠ মহিষের পালে রাখালের প্রাণপণ ছোটাছুটি
চৈত্রের এই কাঠমাঠা রৌদ্দুরে আর
উপচে পরা গরমের তেজে
দুমড়ে যায় কৃষকের শরীরের ঘ্রাণ ;
নুয়ে পড়ে পথচারী তপ্ত বালুর মরুময় চরে
জীবন তবু হেঁটে চলে—কোনো এক গরিব পিতার
চালহীন, চুলোহীন অভাবী সংসারে!
অন্ধভ্রমর
তুমি আমাকে ভুলে গেলে
আমি অভিমানে চাঁদ হয়ে যাই
দেখি তোমার ছায়া
ঝলমলে হয়ে ওঠা মৃতমুখ;
তোমার মৃতদেহকে কেন জানি
আমার একান্ত আপন মনে হয়!
আমি চমকে উঠি প্রতিটি রাতে
আমাদের আলিঙ্গন হয় কল্পনায়, ঘুমের ঘোরে
কেউ আমাকে স্বর্গের লোভ দেখায়—
স্বর্গের সিঁড়ি বেয়ে মাটিতে নেমে আসে যে অন্ধভ্রমর,
এই ভরদুপুরে—মেঘের ওপারে
এতো খুঁজে বেড়াই তাকে পাই না কোথাও আর!
বৃষ্টিমুখ
এতো খুঁজে বেড়াই তাকে পাই না কোথাও আর!
বৃষ্টিমুখ
কাঠগোলাপের
যোনিপথ বেয়ে—
নেমে এলো মনে
এ কোন আলোকহীন
স্মৃতিগম্ভীর বৃষ্টিমুখ—
মেঘ আকাশের গর্জনে
জন্ম নিলো যে অশ্রুজল—
অন্তরে তার অথৈই সাগর
বুকজুড়ে কেন এতো হাহাকার!
রোদচশমার আড়ালে
উদভ্রান্ত শরীর—
মাতাল করা ঠোঁটের স্পর্শ
বয়ে চলে দিগ্বিদিক
মনের গহীনে অমৃত পদাবলী
রঙিন আলখাল্লার ভাঁজে ভাঁজে
উতলে ওঠে যে কিচমিচের দান—
মৌমাছিরা উড়ে আসে জুড়ে বসে
খুঁজে বেড়ায় অমৃত প্রেম;
নাম না জানা এক সুখের ঠিকানা
সুগভীর নাভীমূলে হেঁটে চলে অনর্গল—
পিপাসিত বিদগ্ধ নগরের একপশলা বৃষ্টি
রোদচশমার আড়ালে সূর্য বেলা অবেলার গান
হৃদয়ে মিশে রয় একগুচ্ছ গোলাপরাঙা সকাল।
জলের ঝলকানিতে
জলের ঝলকানিতে
লাফিয়ে ওঠে ইলিশের দল—
শরীরে যার জলের স্পর্শ
জলই তার একমাত্র প্রেম।
আষাঢ় মাসে গাঙে থইথই উঠোন ভরা পানি—
কারেন্ট জলের ফাঁকে ফাঁকে ইলিশের ফালি
আবুল মাঝি বেজায় খুশি—মন করে উচাটন
আম্বিয়া বিবির উঁকিঝুকিতে কমলার হাততালি।
ঘুম
প্রথম সঙ্গমের
সমগ্র স্মৃতি ভুলে
যে পুরুষ চলে গেলো তীর্থসাধনে;
ছায়াহীন নিরেট
সংসারের দায়ভার
তার কি কিছুই পড়েনা মনে
স্মৃতির মলাটে
পূর্ণেরা কেঁদে ওঠে
পাপপুণ্যের হিসাবে
কেবা কারে টানে
প্রহর কেটে যায় ঘুমে, নির্ঘুমে—
ঘুম সত্যিই পালিয়ে যায় মৃত্যুর গর্বে?
জাতকুল
এই নিমগ্ন চাঁদ নিঃস্তব্দ আকাশ
শুভ্রতার কোমল চাদরে মোড়ানো মেঘফুল—
ছুটে এসো এই ছোট্ট গোলাপবাগানে
দেখে যাও হে ঈশ্বরী ; দেখে যাও
কতোটা স্নিগ্ধ সতেজ নির্মল হৃদয়ে
ফুটে আছে বাহারি রঙের মন্থমুগ্ধকর প্রেমফুল
যদি ছুঁয়ে দিতে স্বাদ জাগে ঠোঁটের পাপড়ি
প্রেম সাগরে ভাসাতে চাও অর্ন্তকুল—
বাসনা তোমার হতেই পারে হে মহান ঈশ্বরী
সেখানেই তুমি করিবে মস্তভুল!
প্রেমকে বাঁচিয়ে রাখতে হয় ভক্তি ও মমতায়—
আলিঙ্গনে হারায় তার জাতকুল!
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thanks