গুচ্ছকবিতা
মোহাম্মদ জসিম
আগুনের ঘোরারোগ
ঘো ড়া রো গে ভুগছে যে রাতপোষাক...
উবু উবু ভঙ্গির পাখি ঘাস থেকে ফুল খুটে নিচ্ছ নাও, কিন্তু যে সহিসমন ঘোড়া হতে চায়, তার সামনে নুয়ে থাকা সমস্ত গাছালিই অশ্বের আদল নিয়ে আসে।
মুখভর্তি বুকভর্তি সুখ সুখ হ্রেষা...
দোলনায় দুলছে যে মাঝরাত...তার পাশে সুখি এক ঘোড়সওয়ার, দীর্ঘ দীর্ঘ দোলনকাল জমাতে গিয়ে ঘাম নিয়ে ফিরছে।
সা সা সা সা হ্রেষা উড়ছে...চৌষট্টি ভঙ্গির রেসিপি ভেঙে শরীরের রসুইঘরে রান্না হচ্ছে আশ্চর্য ব্যাঞ্জন। (মনে মনে)। এমন কামরঙা রাত্তিরে তুমি ঘোড়ারোগির মুখের সামনে, প্লিজ, উবু হয়ো না...
উপপাদ্য-০১: রুবিক্স কিউব
সঙ্গে সূর্যমুখী। এবারও মি স ক্যা রে জ! আবারও ব্যর্থকে ছুঁলাম...
শ্যম যে, শ্যামাও সে? রম্যগল্পেরও একটি অন্ধকার কোণ আছে, যেখানে জানালা আঁকা হয়নি। ফলে, দাঁড়িয়ে থাকা চরিত্রটি পিত্ত রঙের কামিজে ঝুলছে—বিষণ্ন অথচ সুন্দর বলে যত ব্যাখ্যা ও টিকা-টিপ্পনি সর্বত্র পায়চারি করছে ঘুণ!
কৃষ্ণ যে, কৃষ্ণাও সে; হয়তো তাই, হয়তো নয়! গাছের বন্ধু গাছ—কোনদিন আলিঙ্গন করেনি বলে প্রেম নেই, এমন কিছু আরোপিত অভিযোগ ছিলো। তা হলে—তারা কেন একটাই উপপাদ্যে শুয়ে মনোপলি খেলবে!
[সাধু কহিলেন—প্রেম হৈতে দেহ কিংবা দেহ হৈতে প্রেম, কস্মিনকালেও আলাদা করিতে পারো না। বৃক্ষের প্রেম দ্যাখো—কেউ কাউকে শরীর (মস্তক ও গোপনাঙ্গসহ) পাঠাইতেছে না, ঘ্রাণ ও পরাগ পাঠাইতেছে উপহারস্বরূপ! উহাদের প্রেম কি ব্যর্থ কহিবে তুমি!]
উ প সং হা র এই—প্রেম হলো রুবিক্স কিউব, জবরদস্তি মেলানো যায় না...
উপপাদ্য—০৩ঃ ক্যানিবাল হলোকাস্ট
[মাসকাবারি রোদের পর] বর্ষা যেখানে গাছেদের গোসলখানা! আমি বিব্রত হচ্ছি। ক্যালেণ্ডারের খামখেয়াল, পরপর ১২টি জানুয়ারী—নোপথ্যে ক্যানিবাল হলোকাস্ট!
আপনি মানুষ খান? মানুষের উপাদেয় অঙ্গের নামটি বলুন...
ইরাদা বদলে ফেলছে স্যাপিওসেক্সুয়াল ডাস্টবিন! আবর্জনার গন্ধে (স্বামী পরিত্যক্তা) সুইপারটিও উত্তেজিত হচ্ছিলো।
এই উপপাদ্যটি মাংসের ফুল থেকে পঁচা পরাগের গন্ধ ও দূর্গন্ধের মাঝামাঝি ঝুলে আছে। বুক তার ফুলবাগান, প্রকৃত নির্জনতার দিকে একাকী শাঁখ ও শঙ্খের ঠোঁটে হলুদ গানের পর—প্রমানিত হোক, মানুষ নিঃসন্দেহে একটি মাংসাসী প্রাণী...
লেটস স্টার্ট উইথ দ্য ব্রেইন; চোখ, কান, স্তন ও ফুসফুস পর্যায়ক্রমে আসুক। রক্তের মতো পানীয়...
[সাধু কহিলেন—চর্ব্য চোষ্য লেহ্য পেয় যাহা কিছু রসনা লইয়া বসিলে, তাহারা তৃপ্তি দেয়নাই জানিয়া দুঃখিত হইলাম। বৎস তুমি হৃদয় খাইয়াছো কভু?]
ডাস্টবিন ডাকলো তাই, সুইপারটি বাড়ি ফিরছে না। তার স্বামী রাতভর মাংস খেতে পছন্দ করে...
আততায়ী
এখানে বিরামহীন বিমর্ষ সন্ধ্যার উচ্চকিত কণ্ঠস্বর; তেঁতে উঠছে জোৎস্নার মতো তীব্র যত শোক—শত শত তারা থেকে বিগত রাত্রির ঘ্রাণ পুনরায় ছড়িয়েছে বাসনাবিস্তারি কোমল কুহক! দৃঢ় হও বেঁচে থাকা—তোমার পুষ্প ও পুলকে অনিবার্য যাদুবাস্তবতা; ঘুম নেই—রাতভর জুতোসেলাইয়ের মতো বিরক্তিকর কায়িক শ্রম দিয়েছো, সেলাই করেছো ফাটা পাৎলুন, নোংরা রুমাল আর ছেঁড়া কামিজ! জিইয়ে রেখোছো জখমের মতো প্রেম আর (মিথ্যে) প্রচারনা।
দৃশ্য থেকে দশ বিয়োগের পর—তুমি এক বৃদ্ধ ফুলদানি; ঈর্ষান্বিত প্রতিবিম্বের সাথে কিছুক্ষণ ছেলেখেলা করো—এই তোমার দূরারোগ্য ব্যধি আর বাস্তবতা।
অথচ—আয়নায় তখনও চমকাচ্ছে তোমার সমবয়সী সৌম্য আততায়ী!
বিনয় মজুদারকে উৎসর্গিত পিয়াস মজিদের কবিতা পড়ুন এখানে
poem by p.francis click here
ড. আলী রেজার প্রবন্ধ পড়ুন এখানে ক্লিক করে
একটি নরম অভিযোগ
একটু কি অশ্লীল আমি?—মেঘ দিয়ে স্তন বানাই! শঙ্খ দিয়ে যোনি!
যত আলো; কথাগনগনে হাঁপড়ের সামনে বসে থাকা সরল আগুন, তপ্ত-উত্তপ্ত ফুঁ ও ফুৎকারে আমারও যাবজ্জীবন হোক। এই নাম শরীরের। শব্দগুলো; পবিত্র প্রথার মতো যা কিছু সঙ্গমে থাকে, ছোঁয়াচে—শহরব্যপী ছড়িয়ে পড়া মহামড়ক, সমস্ত চাকরি, যে কোন রঙের পরিধেয়, ক্ষুধার প্রেরণা—দেখলাম, শরীর ছাড়া প্রত্যেকে নাই হয়ে যায়।
আমি—একটু কি অশ্লীল নাকি? আমার সমস্ত কবিতা কি করে প্রসাধন হয়ে যাচ্ছে তোমার! উপমাটি কানের দুল হলে, নীল চিত্রকল্পটি উড়ে গিয়ে হয়ে যাচ্ছে মুগ্ধ ব্রেশিয়ার!
উপপাদ্য-০৪ঃ মনজ তোমার মনসাঁই
ছ' নম্বর তারিখটি গদ্যস্বভাবী, ওইদিন কবিতা হয় না। ওড়নাটি বারবার লুকোতে ব্যর্থ—একবার গাছ হয়, একবার সড়কবাতি!
তাকে খুঁজে পেলে—
কবিতা শোনাবেন
বাজারের ফর্দ
আত্মকলহ আর কেলেঙ্কারির কথা
উপপাদ্য-০৪ তার সমূহ অণুসিদ্ধান্ত ও অস্থিরতাসহ নিলাম হবে, আপনি সেখানে প্রমাণ করে দেখাবেন, লেবুর শরীরে ঠোঁট না আঁকলে স্রোত কিংবা শ্রাবণ-প্লাবন সবটাই অধরা থাকছে।
ড্রামসেটে দ্রিমি-দ্রামা উল্লাস পিষছে কেউ; টেলিভিশন নষ্ট, ফলে খবর নিজেই নিখোঁজ! যাকে খুঁজছেন, আয়না তাকে দুজন করে নির্জনে চুম্বন শেখাচ্ছে!
[সাধু কহিলেন—পদ্যে যাহাকে পাইলে না, গদ্যেও যদি না রহে, নিজেকে উসকাইয়া দ্যাখো—সে কিনা তোমারই ওড়না ও অন্তর্বাস পরিয়া নগর ঘুরিয়া আসিলো!]
বনজ হে—নিজেকে চুরমার করে দেখো, নিজেরই বনসাই মরছে ভেতরে, বড় হতে পারছে না!
উপপাদ্য-০৭ঃ হেলেন অব ট্রয়
ভাবের নাম অব্যয়ী—সাথে কিছু পরহত্যাপ্রবনতা জড়িয়ে গেলে ইচ্ছের ভেতরে ছদ্মবেশী প্রজাপতি ওড়ে। তখন—হত্যা ও (আত্ম)হত্যা সমভাবাপন্ন হয়ে উঠলে আয়না একটি দেয়াল, ভেতরে বাইরে আমি আর আমি, একজনই!
....রাতের পাশে, রাখলাম জল খুশি ব্লেড বর্তন ও বাস্তবমুখী রোদ!
পৃষ্ঠার দখল নিয়ে মার্জিনের এপারে-ওপারে দুইজন তার্কিক কথা ও ব্যথার কাটাকাটি খেলছে; উভয়ে সমবয়সী হলে প্রমান করো যে, তাদের পৃষ্ঠপোষকের প্রকৃত ডাকনাম "আমি"!
...রাতের পাশে, রাখলাম জুতো হাসি সংখ্যা সত্য ও বাস্তবমুখী মেঘ!
সাধু কহিলেনঃ সে তাহাকে হত্যাই করিয়াছে যদি, রূপ ও রক্তের দাগও মিটাইয়া দিয়াছে, অতএব—সে ও সে দুজনেই সাব্যস্ত হউক দোষে, তাহাদের মৃত আত্মার নামে আরোপিত হোক চিরকালীন মৃত্যু—অনন্ত অশান্তি বর্ষিত হউক।
দুঃখগুলো সম্প্রদানে সপ্তমী; একজন নারী সমস্ত দায় ও দেনাসহ সুস্পষ্ট প্রেমটিকে গছিয়ে দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলো খুনের পেছনে!
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thanks