গুচ্ছকবিতা
দুলাল সরকার
ক্লিষ্ট প্রজাপতি
বৃক্ষ ও নক্ষত্রের দিকে তাকিয়ে ভাবি----
এই নীরবতার সৌন্দর্য মানুষের জন্য
কতটুকু কল্যান বয়ে আনতে পারে?
বৈষম্যহীন সমাজ নির্মানে এ নীরবতা
কতটা কার্যকর ভূমিকা নিয়ে বলবে যে,অন্তর্গত
হৃদয়ের অনুবভূতিগুলো সম্পর্ক স্হপনে
একদিন প্রেরণা হবেই; বলবে যে, এই নীরবতা
ফুলের বিকল্প হিসেবে অন্তর্নিহিত শক্তির
উৎস হয়ে ক্লিষ্ট প্রজাপতির জন্য
রচনা করতে পারে মুগ্ধ আকর্ষণ।
কেউ একজন গেলেই
কেউ একজন গেলেই জিজ্ঞেস কর---
"কোথায় আছি,কেমন আছি, একা ঘুমাতে
পারি কিনা,রাতে কি কেউ সাথে থাকে---
পাখি কিংবা মেঘ? ইত্যাদি আরো কত কি---
ঘুম না এলে হাত পাখা দিয়ে বাতাস
করে কি কেউ?" "আরো বলো, একবার
যেন এসে দেখা করে যাই,পাহাড়ের পাদদেশেই
তোমাদের নির্জন বাড়ি,পাশে ঝর্ণার
একটানা গান , তবে কি তোমার মুখোমুখি
হতে ভয়? বলো,কিছুই চাইবে তুমি।নিরুদ্দেশ
হতে চাইলেও জানতে চাইবেনা ঠিকানা,
সে যতদূরেই হোক, কোনো রহস্যময় উপত্যকা
কিংবা কোনো গন মিছিলের অগ্রবর্তী ঢেউ"।
কাঙ্ক্ষিত চেতনা
বৃক্ষের নিজস্ব ব্যাকরণ আছে, মনে রাখে একাত্তর ----- হৃদ্যতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে
তুমি তাই বৃক্ষের স্মরণাপন্য হবে,
সে তোমাকে স্ব- স্ব দূরত্বে থেকে অবিকৃত
রৌদ্র শেখাবে,ঈপ্সিত চেতনার
প্রয়োগ শেখাবে, বৈরাগ্য বুঝাবে;
নিজের এবং অন্যের ক্ষতি না করে
সহাবস্থানে বিশ্বাসি হয়ে স্বাধীনতা
অর্থবহ করতে প্রকৃত জীবন শেখাবে,
আমরা যেখানে আমাদের আঁধার চিনিনা
বৃক্ষ সেখানে আমাদের ধ্রুব নক্ষত্র চেনাবে।
ভালোবাসা হেঁটে যায়
ভালোবাসা হেঁটে যায় একা
পালকেরা থাকে ---- উৎসবে
পাথরেরা রাত জাগে, ঝিঁঝিঁর
কিয়দংশ জ্বলে পোড়ে
বিমূর্ত মাঠের আত্মায় নিরাকার
সময়ের যাঁতাকলে রক্তাক্ত গীটারে,
ঘুঘুরা ডানা ঝাপটায় অনুবাদহীন
ব্যথার বিবরে পাথুরে ডানায়----
নীল অশ্রুর কাছে করে আত্মসমর্পণ
নিরাবয়ব চৈতন্যের কাঁচের সংসারে।
কথা দিয়ে যখন
কথা দিয়ে যখন বাঁধতে পারোনি
নীরবতা দিয়ে বাঁধো---- হাত দিয়ে যখন
আঁকতে পারোনি মন দিয়ে মন কাড়ো;
লতাকে বলতে পারো,বৃক্ষ জড়িয়ে
সর্ব অঙ্গে পদাবলী সুর তোলো,
আকাশ যখন স্পর্শ অতীত
অনুভূতিকে সব বলো-----
অলখ অদৃশ্য বহতা সময় নদীকে বুঝিয়ে
অভিমান দ্বারা খোলো,
অধর যখন নীরব তখন
প্রজাপতিকে ডেকে এনো
রুদ্ধ যখন সকল দুয়ার
ঝোড়ো বাতাসকে খুলে বলো।
অরুন্ধতী কোথাও যাবেনা
তুমি স্পষ্ট কর,কোন দিকে যাবে?
অরুন্ধতী কোথাও যাবেনা -----
মৃত্যুর লিরিক পেড়িয়ে সে বাঁশ বাগানের
মাথার উপর স্ব- রচিত আকাশ হতে চেয়েছিল,
মা' র কোলে ঘুমাতে চেয়েছিল
অদম্য স্নেহ শীতল স্পর্শ হয়ে বাঁচতে চেয়েছিল
টিফিন বক্মের এক কোনো লুকানো
মায়ের নিরাবয়ব চিহ্ন শুকতে চেয়েছিল;
অরুন্ধতী কোথাও যাবেনা ----
নির্লজ্জ গহীন অন্ধকার থেকে বেড়িয়ে
মা' র দেওয়া টিফিন বক্মের
মেধাবী গুঞ্জন শুনে বাবার কোল বেয়ে
সমাজের একজন ভালো মানুষ হিসেবে
শরতের শিউলি সকাল হতে চেয়েছিল।
মনে পড়ে কইছিলা কাইল
মনে পড়ে কইছিলা কাইল
সূর্য ডোবা দেখতে নিবা পদ্মবিলে
যহন দূরে আমন থোড়ের সুডৌল গালে
সূর্য লাভা বাইয়া পড়ে
জলময়ুরী ছানা খুশি -----
তহন তুমি আনমনা অও
চাইয়া দ্যাহো অলস বাতাস
পানা ছুঁইয়া যায় কোতাও,
তহন তুমি জিগাও মোরে
" কওতো পাখি,জীবন এতো ছোডো ক্যানো
মহাকালের প্রেক্ষাপটে উদাস বাঁশি
বাজে ক্যানো মন যমুনায়"?
জেনে যেতে পারো
জেনে যেতে পারো আমি পৃথিবীর সৌন্দর্যে
কতটা অভিভূত হয়ে পৃথিবীকে ভালোবেসেছিলাম---- মাটিতে উৎপাদিত শস্যের দৃশ্যে মানুষের মনোজগৎ কতটা
ইতিবাচক হতে পারে, পাল্টে গিয়ে
চোখের গনিত মানুষ ভাবতে পারে সেও
সৃজনশীল প্রকৃতির অংশ ;অসহায় মানুষের
পাশে বসে উপায় খুঁজে বলতে শেখা
পীঠের পবিত্র নোনা ঘামই সভ্যতার নিয়ামক;
জেনে যেতে পারো,এই হাত বাগানে ফুুল গাছে জল দিতে আনন্দ পায়, এই মুখাবয়ব সঙ্গিতে
সুন্দর হয়ে মানুষকে ভালোবাসার জন্য
কাতর হতে পারে,দৃশ্যতো গোলাপ হতে পারে।
| |||||||||||||||
| |||||||||||||||
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thanks