‎জননী আমার সংক্ষুব্ধ পতাকাতলে ও অন্যান্য।। সুশান্ত হালদার।। poems by sushanto halder..kuasha

গুচ্ছকবিতা
‎সু শা ন্ত  হা ল দা র 
তোমাকেই বলছি

‎তোমাকেই বলছি 
‎কুণ্ঠিত গগনে কেন যে রেখেছিলে জোছনা ভাবিত রাত? 
‎দেখো, নীলবর্ণা আকাশ 
‎সঙ্গম অনলে পুড়ে যাচ্ছে এখন দাবানল বাতাস 

‎কথা ত ছিল 
‎দুর্যোধন চত্বরে লিখে যাব 'কৃত্তিবাস' ইতিহাস 
‎কে শোনে কার কথা? 
‎বোদলেয়ার ভোলা দিনে লিখা হলো অ্যালবিনাস আর ব্রুটাস 

‎তোমাকেই বলছি 
‎লাল-বৃত্ত ধারে কেন যে সবুজ রেখেছিলে বাহান্ন মনে করে? 
‎এখন দেখো 
‎নজরুল সহাবস্থানে সুকান্ত আর আসে না দাবানল মিছিলে!


অভিলাষ

‎দীর্ঘশ্বাস গভীর হলে 
‎বেদনারা ঝনঝন করে উঠে বুকে,
‎কাকে যে কি বলি আর কে-ইবা শুনে?   
‎'পাথরে ফুটিলে ফুল অঘ্রাণিতই থাকে কলি'
‎এরকম বিল্লপত্রে দেখেছি
‎শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে গ্যাছে জল না ভেজা পদ্ম-দল

‎যে অভিলাষ বুকে নিয়ে ঘুরেছি পৃথিবী 
‎তারই গর্ভস্থ বুকে এখন দেখি পুজিত পুষ্পের আফোটা যোনি,
‎কি করে বলি 
‎শত পদ্মে ঘিরে আছে আমার-ই বঙ্কিম পৃথিবী?  


‎ভষ্ম প্রলয়

‎শরতের মেঘ ঝরেছে অভিমানে 
‎কনককান্তি সূর্য্য বলেছিল, আগুন ধর্ম নিয়মে 
‎পুড়েছে বুক আলোহীন চন্দ্র কিরণে 

‎যে জীবন গড়েছে 'ফানুস' দেয়ালে দেয়ালে 
‎সে-ও পোড়ে রতি ধূপ গন্ধ বিলায়ে 
‎আমি কি পুড়েছি অনলদগ্ধ কুসুম ফাগুনে? 
‎ওগো প্রেম!
‎ওগো জবা কুসুম সন্ধ্যা মালতী 
‎জ্বলেছে আগুন প্রলয় গীতিতে আষাঢ়ে মেঘ শ্রাবণ প্রীতিতে 
‎আমি কি জ্বলেছি খাঁখাঁ চৈত্রে দগ্ধ শ্রাবণ অগ্নিতে?  

‎এখানে জ্বলে যাওয়া আগুন নিভে যায় বিকেলে, 
‎সমাধিস্থ যারা আজও জ্বলছে মিনারে 
‎তাঁদের জন্য রেখে গেলাম.....
‎আমার এই ভষ্ম প্রলয় পলাশডাঙার বাধন ছেঁড়া মিছিলে! 

গল্প বরফের ছুরি পড়ুন এখানে
প্রবন্ধ,উত্তরাধুনিক কাব্যধারার যাত্রাঃ মতিন বৈরাগী-এখানে
প্রবন্ধঃ রাজনীতি ও সাহিত্য পারস্পরিক সম্পর্ক পড়ুন এখানে
কবি মজিদ মাহমুদের গুচ্ছকবিতা পড়ুন এখানে
প্রবন্ধ,নজরুলের রহস্য,পড়ুন এখানে

‎জননী আমার সংক্ষুব্ধ পতাকাতলে 

‎এই যে প্রীতিসম্ভাষণ 
‎বিরহ বিষাদ 
‎যন্ত্রণাময় শোক সন্তাপ
‎দুঃখ নিনাদ
‎কার কাছে রেখে যাব 
‎কার্তিক ঘেরা দেশে হেমন্ত বিস্তৃত জননী নিগৃহ যেখানে?  

‎ফিরেছে যারা ঘরে 
‎রক্তাক্ত সবাই সদলে 
‎ক্ষতগুলো সব চৌচির 
‎চৈত্র আঁকা বসন্ত ফাটলে, 
‎কাকে যে কি বলি এই ঘোর লাগা অঘোর বিকেলে
‎জানি না বলেই কি জননী আমার সংক্ষুব্ধ পতাকাতলে?  

‎এখানে প্রেম 
‎লিখেছে ইতিহাস 
পলাশ শিমুল ‎রক্তজবার আখরে, 
‎সে কথা যদি ভুলে যাই জননী দুর্দিনে 
‎পঙ্কিলতায় আকণ্ঠ নিমজ্জিত হবো পিতৃপুরুষ অভিশাপে! 

ইমদাদুল হক মিলনের নুরজাহান উপন্যাস নিয়ে প্রবন্ধঃ পড়ুন
চানক্য বাড়ৈ এর কবিতা পড়ুন এই লিংক এ
বিনয় মজুদারকে উৎসর্গিত পিয়াস মজিদের কবিতা পড়ুন এখানে
poem by p.francis click here
কবি আমিনুল ইসলাম মুল্যায়ন প্রবন্ধ পড়ুন এখানে 

‎এসেছে ঝড় চৈত্র ক্রুদ্ধ হুঙ্কারে 

‎অতটা বিচক্ষণ নই যে 
‎ইশারা ইঙ্গিতেই বুঝে নেব 
‎অনুরক্ত ঠোঁটে বিবাহ বিচ্ছেদ ভর করেছে,
‎এই যে পাহাড়ি মেঘ
‎কতটা ক্ষুব্ধ আষাঢ় যাপনে(?)
‎তা যদি জানতাম ঋতুবতী বসন্ত'র পূর্বরাগ শিৎকারে
‎তবে কি আর অনুর্বর মাঠে গিয়ে 
‎খনন কসরতে ঘাম ঝরাতাম প্রস্তরিত লাঙ্গল কোদালে?  

‎এতটাই বেকুব আমি 
‎বাতাসের শনশন শব্দ শুনেই 
‎আলিঙ্গনে ব্যস্ত হলাম ধানকাটা হেমন্ত যাপনে, 
‎এখন দেখি অলক্ষুণে ঝড় এসেছে চৈত্র ক্রুদ্ধ হুঙ্কারে
‎যা হবার তাই হলো 
‎গোলপাতার ছাউনি সমেত উড়ে গেল চাতাল দক্ষিণ পূর্ব বঙ্গোপসাগরে! 

‎জপ তপ শুধু জননী জন্মভূমি 

‎ঘুম থেকে উঠেই যদি দেখি 
‎পথে পথে হলুদ সরষের ঘুড়ি টানা চৈত্র মিছিল 
‎নদী সব পিঙ্গল সাদা 
‎বৃক্ষের অবযবে চেয়ে আছে আমারই শোক সন্তপ্ত পোড়া ভিটার মাটি 

‎যদি এমন হয় 
‎পৃথিবীর সব কাকতাড়ুয়া বিদ্রোহে গিলেছে প্লেগ ভর্তি ভাটিকান সিটি 
‎যদি প্রেমিক ছোঁয়া যুবতী বলে উঠে
‎'সব ম্লান, যদিওবা করেছে বাঁশি আগুন পোড়া আহুতি' 

‎সব যদি পুড়ে যায় দৈন্য হবো একাকী?  
‎এমনই দিন 
‎সব ভুলে এখন জপ তপ শুধু জননী জন্মভূমি! 

‎তবুও এসেছি মৃত্যুর পাদদেশে 

‎তোমাকে তো বলা হয় নাই 
‎শীত আসার আগেই
‎পিঁপড়ের দল ধর্মঘট ডেকেছে এখানে  
‎যে পাখি বাড়ি ফিরছিল ভেজা পালক ঝাপটিয়ে 
‎তারও পথ রুদ্ধ হলো দিনের শেষ তীরন্দাজ ব্লকেডে 

‎আমাদের দিন কাটে ভয় ডরে, ফোঁসফোঁস শঙ্কাতে 
‎মৃত্যুর পাদদেশ বলে 
‎যে সন্ত্রাস জেঁকে বসেছে ভাগাড়ে 
‎তারই রহস্যভেদ অনুসন্ধানে নেমে এসেছি ঘুটঘুটে অন্ধকার কবরে 

‎তোমাকে তো বলা হয় নাই 
‎রাবণ ফ্যাসাদে যুদ্ধ এখন নেপালে 
‎'সুমিত্রা' বলে এতদিন বেসেছিলাম ভালো যারে 
‎সে-ও দেখি 'হালুম' বলে ব্যাঘ্র চিৎকারে,
‎বড় লজ্জার এই 'প্রেম' সুনিপুণ বিরহকালে 
‎তবুও এসেছি এই মৃত্যুর পাদদেশে 
‎যদি কিন্নর স্বরে কেউ ভালোবেসে কাছে ডাকে! 


‎সবাই বিপ্লবী হবে না 

‎সবাই বিপ্লবী হবে না 
‎কেউ কেউ গীর্জার পথেও হেঁটে যাবে সোজা, 
‎মিছিল উড়িয়ে ভাঙা সাঁকোয় ধুলো এনেছিল যারা 
‎পাঁজরার আগুনে সবাই পুড়ে গেছে তাঁরা 
‎এখন ধূধূ মাঠ, মহাশূন্যতা 
‎মরণ বিলের পাশেই পড়ে আছে কাতরতাশূন্য চিল শকুনের ডানা 

‎এই যে প্রেমশূন্য বেঁচে থাকা, ভালোবাসাহীন কবিতা
‎একেই যদি জীবন বলে তাহলে মনে রেখ 'সবিতা'
‎রক্তেভেজা তলোয়ারেও একদিন নেমে আসবে মরিচা,
‎কি করে বলি 
‎এখনও অশ্বখুর কাঁপিয়ে যুদ্ধের ময়দান প্রকম্পিত করে আরঙ্গজেবের ঘোড়া? 

‎সবাই বিপ্লবী হবে না 
‎কেউ কেউ ভাবলেশহীন চোখে চেয়ে দেখবে রামধনু রঙে আঁকা অস্তগামী সূর্য্য-ডোবা
‎আবার কেউ
‎অন্ধকার হাতড়ে খুঁজে নেবে নতুন দিনের প্রত্যাশা, 
‎তবুও যদি সাইরেন বাজিয়ে ঘোষিত হয় ডমরু দামামা 
‎কেউ কেউ মন্ত্রমুগ্ধ শ্লোক উচ্চারিতে ভুলে যাবে অকালবোধনে দেবী বন্দনা 

‎এই যে নির্মাল্য রবি নজরুল আকুলতা 
‎পোড় খাওয়া জীবন তবুও আশা করে ভালোবাসা, 
‎কি করে বলি 
‎পাঁজর পোড়া আগুনে জ্বলবে না আর কবিতার মতো সুকান্ত সবিতা? 


‎ডেফোডিল সমাধি 

‎স্বভাবে ক্ষত্রিয় হলেও অনার্য ভিক্ষুক আমি 
‎রক্তচন্দন চাইতে আসিনি
‎এসেছি চাঁদ ধোয়া জলে ভরে উঠুক নীলক্ষা নদী 
‎ফলিত বীজ যেন জননী তুষ্টিতে ভরে উঠে কৃষকের মাটি 
‎আত্মবিহনে আমিও যেন বৃক্ষধ্যানে হরিতকী মিষ্টতায় অশ্বত্থ হতে পারি

‎তেমন কিছু চাইতে আসিনি  
‎যদি প্রেম দাও
‎ভুলে যাব বল্কলে খোদাই করা কুড়াল কাহিনী 
‎ব্যথা জর্জরিত মনে সুখাসনে বিরাজমান হবে সূর্য্যমুখী হাসি, 
‎ক্ষত্রিয় হলেও ভুলে যাইনি 
‎নিরস্ত্র প্রেমে গোলাপ বুকে ডেফোডিল সমাধি! 


‎তোমাকেই বলছি 

‎তোমাকেই বলছি 
‎কুণ্ঠিত গগনে কেন যে রেখেছিলে জোছনা ভাবিত রাত? 
‎দেখো, নীলবর্ণা আকাশ 
‎সঙ্গম অনলে পুড়ে যাচ্ছে এখন দাবানল বাতাস 

‎কথা ত ছিল 
‎দুর্যোধন চত্বরে লিখে যাব 'কৃত্তিবাস' ইতিহাস 
‎কে শোনে কার কথা? 
‎বোদলেয়ার ভোলা দিনে লিখা হলো অ্যালবিনাস আর ব্রুটাস 

‎তোমাকেই বলছি 
‎লাল-বৃত্ত ধারে কেন যে সবুজ রেখেছিলে বাহান্ন মনে করে? 
‎এখন দেখো 
‎নজরুল সহাবস্থানে সুকান্ত আর আসে না দাবানল মিছিলে!

Post a Comment

Thanks

নবীনতর পূর্বতন