অমিত চক্রবর্তী এর দশটি কবিতা।।10poems by amit cakrabarti.kuasha

অমিত চক্রবর্তী এর দশটি কবিতা


অমিত চক্রবর্তী এর দশটি কবিতা

আপনার নিকটতম প্রস্থানপথ আপনার পেছনে

‘হরিণী তরসে’ এখানে আর পাপিষ্ঠ সড়ক আর আমি জরাসন্ধ
দু’জনেই টুকরো হয়ে যাই। একদিন সামনে ছিল,
খুঁজে খুঁজে মজবুত সেই হৃদয়, সেতুবন্ধ অথবা পাশে থাকা
আরামদায়ক জলবায়ু,
আজ আমিও ভীত, কাঁচা ভয় উড়ে আসে দিবাস্বপ্নে,
রক্তদাগে ছুপে দেয় আতঙ্ক।
ছিটাইয়া, ছিটাইয়া আমার জামাদাগ, পাঞ্জাবিদাগ,
কথা বলা শেষ, গিটার কি বদলা নেবে এবার
ঝঙ্কারে, রিদমে, কর্ডে, দাবি করবে মনোযোগ, বলবে
এতো শুধু প্রাথমিক ছোবল, এরপর আরো পূর্বরাগ আছে,
আলাপ আছে, বিস্তার এবং বিরহ।
 
এই সব শব্দের লুকোনো দা-ভিঞ্চি কোড
 
পাটভাঙা শাড়ির মত, প্লিটের মধ্যে অতিশয় প্লিট,
এলোমেলো ছড়িয়ে আছে ঘরময়
ডাঁসা শব্দগুলি,
যার যেখানে বসার কথা বসেনি, ছটফটে হয়ে
ঝামেলা পাকিয়েছে, অদ্ভুত ভাবে ঝুলে আছে
ছাদ থেকে, ছুঁয়ে আছে একে অপরকে –
পাখনা উঠেছে এই সব বাঁদরকুলের, দিদিমণি
বলেছেন কাল স্কুলে।
 
মাঝপথে আমিও গুণতে গুণতে বোঝার ভান করি –
নম্বর দিয়ে বুদ্ধি মাপা, কাজটা অনেকাংশে সহজ
কারণ যে জিনিস মাপা যায় তারই তল পাওয়া,
আসলে সব রাস্তা বেঁকে গেছে কবে, তুমি পাশের পথে একা
দৌড়ে বেড়াচ্ছ।
কে দাঁড়াবে এখন আমার পাশে, কে খুঁজে বেড়াবে
গ্রামনগর, বস্তির নিকোনো দাওয়া, কে এসে উদ্ধার করবে
এই সব শব্দের লুকোনো দা-ভিঞ্চি কোড।

এই সব রাত-চীৎকারের কথা
 
দৃশ্য ক্রমশ ঝাপসা থেকে নেগেটিভ হয়, ধৃতিমান বাবা হারাচ্ছেন
সেই সব পুরোনো সংকেত সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে, আমি
আকাশের দিকে তাকাতে তাকাতে ভুলে গেছি ক্ষত এবং
চাবুকের অন্ধকার চিহ্ন। তোমাকে হয়তো বলা যায়
এই সব রাত-চীৎকারের কথা, পাতলা ঘুমে কোঁকানির
শব্দ, আমি কি ভগ্ন হব? বিপাশা বল আমাকে, আমি কি…
 
অথবা ভগ্ন বলতে তুমি কি অহংকারী ভাবো, বাইরে ভাষণ?
আমি কি তাহলে ভয়ংভাবে শুদ্ধ হব? শুদ্ধাচারী?
কত সহজেই বদল আসে, তাই না? আমাকে তুমি
সম্মতি দাও বিপাশা, শীতল হতে, উষ্ণ হতে, কোত্থাও
খুঁজে পাচ্ছি না সেই সব পুরোনো স্থিরতা,
একাগ্রতাও দেখছি টলমলে শিশু এখন, অনিশ্চিত পা।

আয়নার সামনে কালো বেড়াল
 
কী করা উচিত ছিল আমাদের? আমরা গোপনে কেঁদেছি,
পুরোনো স্মৃতির মত, অভিমানের মত আমরা সন্ধানে
বেরিয়েছি উৎসের, উপশমের,
দিগ্বিদিগ থেকে এদিকে ছুটে আসছে তথ্য, ভাষণ,
তাৎক্ষণিকের রমরমা হাট, আমরা মানে বোঝার আগেই
বিপত্তি, মানে বোঝার আগেই বিতৃষ্ণা।
তারপর তারা আজীবন পিছু পিছু ঘোরে, তাড়িয়ে বেড়ায়।
 
একে কি অস্থায়িতা বলব, বলব অনুতাপ? আপাতত
প্রশংসা করছি, শান্ত হও, ভীরু অঙ্কুর আসছে, নিশ্চয়
কোথাও শুনেছে আমাদের প্রশ্নবোধক চিহ্ন, দীর্ঘ
নিশ্চুপ একবার, তারপর পুনরায় সান্ত্বনা, আঙুলে
আঙুল স্পর্শ, এ নিশ্চয় অনিশ্চয়তার ঝিঁঝিডাক,
আয়নার সামনে কালো বেড়াল
ফুঁসে মরে, নিজেই ধ্বংস করে নিজেকে,
বাইরে এদিকে কালো সন্ধে, তুমি তাতে তুলি দিয়ে
সযত্নে রঙ করে যাচ্ছ।

সিদ্ধান্ত
 
যদিও একে সংক্রমণ বলা যায় না, এক চেতনা,
দুই চেতনা অবধিই এর পরিধি,
তবুও ভালবাসা তার আশঙ্কা ছিল, না
আশঙ্কাই সে ভালবাসত, এ নিয়ে অনেক
সময় নষ্ট হয়েছে। আমি সেই পাংশু
ছেলেটার কথা ভাবি, সাহসী যে
দিগ্বিদিগে, অন্তর্ভাবুক, অথচ যে পুড়ে মরে
পূর্বরাগে, ভুল দেখে, ভুল মাপে সময়ের দৈর্ঘ্য,
ট্রেন ছাড়ার আগের শব্দ। আজ কিন্তু তার
উপচে পড়ার দিন, ভুলে থাকার দিন, আজ সে
একবারও খোঁজ নেয়নি তুমি কি শেষে “হ্যাঁ’’ বলেছ,
তুমি কি শেষে “না’’।

ডি-ফোকাস
 
‘দ্যাখো কত ভাল আছি’ জানাবার মত
স্পর্ধা ছিল না তার, আজীবন মৃদু মৌরলা মাছ
সেই শান্ত, মুগ্ধ প্রাণ, গ্যালারিতে গিয়ে
ডি-ফোকাস ছবি তুলত সে।
কোলাহলে কৌতূহলে তাপিত হওয়ার নয়।
সাতমাত্রার তাল, সে বলেছিল একবার, ভাবনার
একমাত্র সৎ প্রকাশ, একটু স্প্রিং ভাব শ্রোণীতে
কিন্তু নাচ নয়
তুমি একটু অসংযত হলেই
সর্বত্র ঘিরে ধরবে কালো মেঘ, ফিগার নষ্ট।
আমরা এ নিয়ে সেদিন অনেক তর্ক করেছি,
আমাদের কৃতজ্ঞতা বোধ কম ছিল, উন্নাসিক
নদীর বরফগলা জল আমরা,
সে বলেছিল, ঝোড়ো হাওয়া, অঙ্গীকার কর একবার,
আমার কুটির উড়িয়ে দেবে ঝটকায়
কিন্তু বিষণ্ণ হবে না।
 
ইকো চেম্বার
 
অপরিচিত হওয়ার আপ্রাণ কসরৎ করি। দেখা হলেই বলি,
ও কিছুই না, নিঃস্বঙ্গতার সন্ধানে বেড়াচ্ছি, দ্যাখো ঘাস কেমন
অজস্র, অপরিচিত, ছদ্মনামী, অনেকের ভিড়ে উপকথা হয়ে
লুকিয়ে আছে, তুমি প্রাণভোমরা খুঁজতে যাও, দেখবে
এক বিষাক্ত ব্যাঙের ছাতা পাহারায়। অবহেলা রোধ করার মতো
ক্ষমতা বাড়ছে এদিকে প্রতিদিন, সেকেন্ড-হ্যান্ড মতামত নিয়ে
পোস্টার সাঁটার মতন জমকালো, কোনো কোনো দিন
আমি তাদের কথাই পুনরাবৃত্তি করি, মাঠে ঘাটে দোকানে
আড়তে বলি দৃষ্টিকোণ, উচ্ছিষ্ট মতামত যেন রুপোর থালায়
পঞ্চব্যঞ্জন, তেতো দিয়ে শুরু, তেতো দিয়েই শেষ।
খালি ঘরে দেখবেন শূন্যই সফল, শূন্যতারই প্রতিধ্বনি,
ইকো চেম্বার।

English article read here
english poem's here read
english article here
poem by timur khan here
article of law and literature : click here
nobel prizev:2025 on litterature here
poem by p.francis click here

পাংশুল
 
যে কবিতা লিখবে না সে, তার শিরোনাম এনে জড়ো করে।
‘যদি’ লিখে শুরু করে প্রথম বাক্য।
এক ধরনের আলোড়ন বা বাঁকবদল দেখি
এবারেও রয়ে গেছে
তার মোলায়েম ভিজে ভিজে বাক্যরচনায়।
আমি কিন্তু আরো লক্ষ্য করি
চেতনা উপচে পড়ছে কোথাও,
কোথাও বা অবিনীত, উদ্ধত স্বভাব
সাদা কালোর অস্থি মজ্জায়
ছেয়ে গেছে ইশারার রঙিন চিত্র।
কি ঘটেছে বা পুরো ঘটেনি
সবই তো তাকে মনে রাখতে হবে, ধরে রাখতে হবে
ভিসুভিয়াসের যত ছাই, পাংশুল জীবনের ধোঁয়া,
ছয় ঋতু।

বড় ও বিখ্যাত কবির কবিতা পড়ুন এখানে
জিয়াবুল ইবন এর কবিতা পড়ুন এখানে
কাজুও ইশিরোগুরের উপন্যাস বিশ্লেষন প্রবন্ধ পড়ুন এখানে
শূন্য ও আকাশের প্রতি পড়ুন এখানে
অনলাইন সাহিত্যের গুরুত্ব পর্যালোচনা পড়ুন এখানে
এমরান হাসানের কবি পড়ুন এখানে
পোয়াতি ধানের কবিতা পড়ুন এখানে
দুরুত্বের অদেখা প্রাচীর পড়ুন এখানে
শারদুল সজল এর কবিতা পড়ুন এখানে
নকিব মুকশি'র কবিতা পড়ুন এখানে
ভাবুক মাস্টারের পাথর পড়ুন এখানে
কবিতার বরপুত্র আসাদ চৌধুরি এখানে পড়ুন
বাস্তুহারা তারার ইশতেহার পড়ুন এখানে
সুশান্ত হালদারের কবিতা পড়ুন এখানে
কেন যে তা সে-ই কি জানে
 
পলাতকা এবং হঠাৎ ফিরে আসা ফের, এইটুকু সান্নিধ্য নিয়েই
আমি অনেক ছবি তুলে রাখি। এও এক বিশেষ ধাঁচের
কোমলতা, অনেক দূরে হাঁটা যায় আনমনে বা এই সব
চিন্তা বুকে নিয়েও, খেয়াল কমে হাঁটা যায়, ঘোর ভাঙলে
ফেরত আবার বসত বাড়িতে।
স্মৃতির এই যে সবথেকে রহস্যময়
সময় পেরোনো, ল্যান্ডস্কেপ পেরোনো, অনেক সময়
অনাবশ্যক, অনেক সময় উজ্জীবিত, ধুঁকতে ধুঁকতেও
একটা গা জুড়োনো ঠান্ডা হাওয়া যেন, হঠাৎ খুশি,
সমুদ্রে নেমে যাব এবার, না সৈকতেই সারাদিন
মিঠে রোদ্দু্রে শুষে নেব ঝিম কাতরতা।
 
স্মৃতির এই যে লুকোনো আত্মপরিচয়,
এমনিতে গুটিসুটি মেরে ভুলে থাকা কিন্তু একবার আলো পড়লেই
জেল্লা, চতুর্দিকে ছিটকে রঙবিলাপ,
এই কথাটাই তোমাদের বলতে বসেছি।

রবে শুধু মানুষের স্বপ্ন তখন
 
স্বাচ্ছন্দ্য, মসৃণতা বনাম দক্ষতা, চাতুরী।
কনট্যুর ম্যাপ। সত্যের। সত্যের না হলেও
অনুসন্ধানের নিশ্চয়, হয়তো বা ভালবাসারও
যেভাবে অসমান চলা পথে, এখানে শেকড়
ওখানে শেকড়, জাম গাছের, আঁশফল গাছের,
মাটির ওপরে দ্যাখো কৌতূহল তাদের, দূরে ঝোপে
দ্যাখো বুনো শিয়াল, সেও কি কৌতূহলে অথবা
তার ভীরু ছায়া, তরসে হয়তো,
এইভাবে ধরা দেয় ভালবাসা একবার, পরক্ষণেই
হাত ছাড়িয়ে দৌড়, সময় পাল্টাচ্ছে,                                              
জগৎ পাল্টাচ্ছে, কিছু মনে থাকে তার,
কিছু মুছে যায়। পেছনে ঘুরে হাঁফিয়ে পড়ি।
নিশ্চয় আছে কোথাও সেই লুকোচুরির রানি,
পেছনের টিলায় পোজ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে
সূর্যাস্তের মতন, অথবা সামনে কোথাও
তৎপর হাতছানি –
আছে কোথাও সে, কিছুদিন আমার বুকে
কাটিয়েছিল, বাকি দিন তারই রূপকথা।

Post a Comment

Thanks

নবীনতর পূর্বতন