শেলী সেনগুপ্তার গুচ্ছকবিতা
চালচিত্রে শীত
এবাড়ি ওবাড়ি উলের কাটার ব্যস্ততা
বলে দেয়-
শীত আসছে,
উঠোনে নেপথলিন-গন্ধ লেপের আনাগোনায়
মাটিতে পা রাখে শীত
শুকনো ঘাসপাতার আগুন ঘেরা হৈহুল্লোর বলে
শহর আবদ্ধ এখন শীতের বাহুতে
এই সব দৃশ্য দেখতে দেখতে বেড়ে ওঠা
আমি
কখনোই মৃত্যু চাই না শীতের রাতে,
চাই না
কারো জীবনে রেখে যেতে পরিযায়ী আবেশ
শুধু,
সারা রাত কাঁথামুড়ি ঘুমোতে চাই
শীতকাতর চাঁদ বুকে নিয়ে
শুনেছি
কুয়াশায় মুখঢাকা অযাচিত ভয়
কেড়ে নিতে চায় পূর্ণিমার জোছনা,
আমি শুধু
চাঁদ বুকে নিয়েই ঘুমোতে চাই ...
এসেছিলে কাশরেনু ছড়িয়ে
মনে করো,
শরৎ একটি চিঠি -
এসেছিলো নীল খামে ,
লিখেছিলে তুমি
জানালায় ডাক দিয়েছিলে
কাশরেনু ছড়িয়ে
মনে করো
তুমি আমার গোপন খেলা
শরতের আকাশ হয়ে
প্রবেশ করেছো আমার ভেতর,
শারদীয় বাতাসে দুলিয়ে দিয়েছো
সকল সংস্কার
মনে করো
এসেছিলে শৈশবের গল্প হয়ে
ভালোবাসার নিস্তরঙ্গে
প্রেমের একাঙ্কিকায়-
'আমরা হেঁটে যাচ্ছি
শরতের হাত ধরে শিউলি বিছানো পথে..
কাশফুলও বলে গেল-
কাশবনের চিঠি
কাশবন দেখানোর ছলে
কেউ
ছুঁয়েছিলো অনাঘ্রাতা মন
সেই থেকে নির্জনে
খুব একলা হতে ইচ্ছে করে ,
ইচ্ছে করে খেয়ালি বাতাসে উড়াই
শ্লথ বসন
কোনো এক
চাঁদ-গলা আলোয় রুপোর কাঠির ছোঁয়ায়
স্বপ্নগুলো শুভ্র হলো
যে আমাকে
কালপুরুষ থেকে সপ্তর্ষি মন্ডল ভ্রমণের
স্বপ্ন দেখিয়েছিল
তার হাতে এখন কাশবন পোড়া ছাই
নাকের ওপর জমা ঘাম-ছোঁয়া হাত
এখন অজগর পোষে
সেই থেকে
দেবীপক্ষের নীল খামে আর আসে না
কাশবনের চিঠি ...
আগুনপোড়া প্রস্থান
ফিরে যাচ্ছি নিজের কাছ থেকে
ফিরে যাচ্ছি তার কাছ থেকে
আসা এবং যাওয়ার ফাঁকটুকু
পূরণ করতে
যা কিছুই আঁকি
সে ই চলে আসে,
আসে কবিতার মতো
আসে নদীর মতো
ফেরার জন্য
একটি রাজপথ আঁকতেই
মিছিলের তান্ডবে সামনে এলো
এবার
কফিন এঁকে
নির্ঘুম রাতের সাথে
নিজেকেই বিছিয়ে দিলাম
ফিরে যাচ্ছি নিজের কাছ থেকেও...
| |||||||||||||||
| |||||||||||||||
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন