বৃহস্পতিবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০১৮

গল্পঃ পিছুটান ।। দ্বীপ সরকার


পিছুটান

মাজেদার বয়স ১৮ কিংবা ১৯ এর মধ্যেই হবে। বাবা ময়েন উদ্দিন লাঠি ধরে ধরে হাঁটার বয়সে পা দিয়েছে। পঁচাশি তো হবেই। সন্তান হয়না হয়না করে শেষ বয়সে এই মাজেদা সংসারে আসে। মা,টা তাকে কোনমতে দুধপান করাতে পেরেছে। তারপর স্তন ক্যান্সারে তার মা ছকিনা বিবিও পরলোক গমন করেন। ছকিনার মৃত্যুর সময় মাজেদার বয়স হয়েছিলো তিন বছর।

ময়েন উদ্দিন এখন সংসারে কলার গাছের মতো। এমনি দাঁড়িয়ে আছেন মাত্র। কুঁজো হয়ে লাঠি ধরে হাঁটেন। কোন মতে খাবারের সময় হলে একটু খান। গোসল টোসল ঠিকঠাকমতো করতে পারেননা। মাজেদা তির তির করে বড় হয়ে উঠলো। লেখা পড়া পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত করতে পেরেছে। এর পর টাকা পয়সার অভাবে স্কুলের গন্ডি পেরোতে পারেনি। একবেলা খেলে আরেক বেলার জন্য চিন্তা করতে হয়। তাই মাজেদা চিন্তা করলো তাকে একটা কিছু করতেই হবে। অন্তত বৃদ্ধ বাবার মুখে দু - মুঠো ভাত তুলে দিতে পারলেই হলো।পাশেই বড় চাতাল। বড় রাইসমিল।  যেখানে প্রতিদিন শত শত মন ধান ভাঙ্গা হয়। মাজেদা প্রায়শঃই দেখেন চাতালে আট দশজন মহিলা প্রতিদিন কাজ করে। পুরুষও আছে অনেক।


সেদিন শনিবার। মাজেদা সকালেই চাতালে গেলো। চাতালের একপাশে অফিস। মাজেদা একজন মহিলাকে জিজ্ঞেস করলো,
ঃ মালিক কোথায় আছেন?
অফিসের দিকে ঈশারা করে মহিলা বললেন,
ঃ ওই যে, ওই দিকে যান। ওহানেই উনি আছেন।

মাজেদা তাই করলো। সাহস করে চাতালের মালিকের অফিসে গিয়ে ঢুকলো। 
ঃ স্যার, একটা কথা কবার চাচিলাম।
ঃ কি কথা। বলুন। 
ঃ হামার মা নাই, বাপটা মরে মরে অবস্থা।
সংসারে এখন হামি ছাড়া কেউ নাই। তাই হামাক একটা কাজ দেন।
চাতালের মালিক একটু গম্ভীর স্বরে বললেন,
ঃ তা দেবো। তো, বাড়ি কই তোমার? 
ঃ হামার বাড়ি স্যার এহানেই। এই গ্রামেই।
ঃ কার মেয়ে?
ঃ ময়েন উদ্দিনের। 
ঃ ও। এর আগে মনে হয় তোমাকে দেখিনি।
ঃ আমি বাড়ির বাইর হইনা। কিন্ত এখন.....
কথাটা বলে মাজেদার চোকে সামান্য পানি আসলো। চাতালের মালিক স্বপন চৌধুরি মানুষ হিসেবে ভালো তবে ভেতরে ভেতরে চিজ একটা। স্বপন সাহেব বললেন,
ঃ টেনশন করোনা। কাল থেকে এসো। 
কথাটা বলে মাজেদার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকলো। মাজেদা লজ্জা পেয়ে সালাম দিয়ে উঠে চলে গেলো।

একমাসের মত হচ্ছে মাজেদা চাতালে কাজ করে। এখানে যারা কাজ করে  সেসব মহিলার থেকে মাজেদা বয়সে অল্প। অবিবাহিতা। রুপ লাবণ্যের ছোপ শরীরে বেশ লাগিয়ে আছে। ফর্সা নয়। তবে শ্যামলার চেয়ে আরো একটু উজ্জল। যেটা মাজেদার জন্যই হয়তো মানায়।
মুখয়বের একটা আর্ট আছে। গায়ের জামা কাপড় দামী নয় তবে পরিষ্কার পরিপাটিতে মাজেদা এক ও অদ্বিতীয়। চাতালের মালিক স্বপন চৌধুরী যখনি অফিসে এসে বসেন তখনি মাজেদাকে ডেকে পাঠায়। মাজেদাও প্রতিদিনের মতো এক গ্লাস পানি হাতে চলে যান অফিসে। আজকেও সেরকম ঘটলো। স্বপন সাহেব চাতালে আসলেন। 
ঃ এই, মাজেকে ডাকতোরে
ওখানে আরেক মহিলা কর্মি  মাজেদাকে বললো,
ঃ ওই ছুঁরি, তোক ডাকে যা..
মাজেদা অফিসে গেলো। স্বপন সাহেব বললেন,
ঃতোমাকে এই মাহিলাদের টিম লিডার বানাতে চাই। তোমার মত কি?
ঃ হামি যে নতুন। আর ওরা তো হামাক হিংসা করে খুব।
ঃকেনো হিংসা করে?
ঃ এই যে, কাউকে না ডেকে হামাক ডাকলেন ।
ঃ ও।  সমস্যা নাই। ওরা তোমার কিছু করতে পারবেনা। আরেকটা সুসংবাদ আছে।
ঃকি?
ঃ এই মাস থেকে তোমার বেতন হবে তিনশ টাকা দিন হাজুরা। অর্থাৎ নয় হাজার টাকা মাস।
কথাটা বলে স্বপন সাহেব মাজেদার ডান হাতটা ধরতে চাইলে মাজেদা দ্রুত স্থান ত্যাগ করলো।
মাজেদা সব বুঝে। জ্ঞান বুদ্ধিতে পাকা একটা। মালিক মশাই কি বলতে চায় সেটা মাজেদা ঠিকই বোঝে। অার আর মহিলারাও তাতে একটু মাইন্ড করে বসে। সেটাও মাজেদা বোঝে। সেকারনেই ওরা হিংসা করে। কিন্তু মাজেদার অার্থিক সাপোর্টটা বড় ব্যাপার এখন। তাই মাজেদা চুপচাপ ভাবছে একাকি। সেদিন সন্ধ্যার আগেই মাজেদার কাজ শেষ হলে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলো। চাতাল থেকে বাড়ি পায়ে হাঁটলে ছয় / সাত মিনিটের পথ। মাজেদা সময় কম তাই জোরেই হাঁটছে। পিছন থেকে এক যুবক ঢন ঢন করে সাইকেলে বেল দিতে দিতেই মাজেদার গায়ের সাথে বেজে গেলো। ছেলেটি পাশে পড়ে গেলো। তাতে ছেলেটির হাত পা অাঘাতে ছিলে গেলো। মাজেদা হতভম্ব হয়ে গেলো। মাজেদা ছেলেটিকে মাটি থেকে তুলতে চাইলে ছেলেটি বাধা দিয়ে বললো।
ঃ সাইকেলের বেল শোনেননা?  কান কি ঠসা?মাজেদা একবার শুধু "সরি,, বলে  চলে গেলো।

পরের দিন সকালে মাজেদা তার কর্মস্থলে আসার জন্য সড়ক দিয়ে হাঁটা শুরু করেছে। আবারও ওই ছেলেটি সাইকেল নিয়ে বেল দিচ্ছেন আর হাঁকিয়ে পেডেল মারছেন। মাজেদাকে দেখে চিনতে পেয়ে ছেলেটি সাইকেল থেকে নেমে মাজেদার সাথে হাঁটা শুরু করলো। 
ঃ আপনার নাম কি?
মাজেদা মুচকি হেঁসে বললো
ঃ নাম শুনে কাম কি?
ছেলেটি তার হাতের ক্ষতদাগ দেখিয়ে বললো
ঃ দেখেছেন, কি হচে হামার?
মাজেদা নিজেকে অপরাধী মনে করে। তাই একটু সহানুভূতি দেখানো দরকার। একটু ভেবে আস্তে বললো
ঃ নাম হামার মাজেদা। মাইনসে মাজে করে কয়।
ঃ নামটাও সুন্দর। আপনিও সুন্দর। রাতে ঘুম হয়নি। বড় জ্বালা করেছে হাতে।
মাজেদা লজ্জা পেলো।
ঃ সরি। আর বলেননা।
বলে মাজেদা সটকে পড়লো চাতালের দিকে। ছেলেটি সাইকেলে চেপে ঢন ঢন করে বেল দিতে দিতে চলে গেলো।

চাতালে এসে মাজেদার মনটা কেমন করছে। এদিকে সব মহিলাদের লিডারশীপ। মাজেদা সবাইকে ধানে পা দিতে বলে এক ঢোক পানি মুখে দিলো। রোদ পড়েছে খুব। অনেক ধান। একশ মনের বেশিই হবে হয়তো। বিকেলে আবার ধান মেশিনে ঢুকবে। তাই মাজেদা হিসেব করে নেতৃত্ব দিচ্ছে। চাতালের মালিক এসে বললো। 
ঃ এই মাজে, সকালে ভাত খেয়েছো?
ঃ হ। 
ঃ বুড়ো বাপরে খাওয়াইছো?
ঃ হ। 
এতটুকু খোঁজ নিয়ে স্বপন সাহেব শহরে চলে গেলো আর বললো। "ভালো করে সকলে কাজ করো,,।

দূপুরে খেয়ে দেয়ে সবাই ছায়ায় বসে আছে। মাজেদা বয়সে সবার ছোট। তবে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া থাকায় পড়তে ও লিখতে পারে সুরুতহালেই । মাজেদা আরেকজন সহকর্মীকে নিয়ে রাস্তার উত্তরপাশে হাঁটতে যায়। এক মাসের বেশি হয়ে গেলো এদিকে আসেনি। মাজেদা ডান দিকে তাকাতেই চোখে পড়ে গেলো সেই ছেলেটি আরেক চাতালে কাজ করছে। ছেলেটিও দেখছে মাজেদাকে। দুই জন চোখে চোখ রাখলো সামান্যক্ষণের জন্য। অতঃপর মাজেদা তার সহকর্মীকে সাথে নিয়ে নিজ চাতালে আসলো। তার সহকর্মী হাজেরা কিছুই টের পেলেননা। 

ছেলেটির নাম নয়ন শেখ। ডাক নাম নয়ন। গত দুদিন হলে কেমন যেনো আনমনা। মাজেদার প্রতি একটা গোপন টান। কিছুক্ষণ পর নয়ন কাজের ফাঁকে একটু "গাও জুড়ায়ে আসি " বলে সরদারকে সিগনাল দিয়ে এ দিকে আসলো। আসার সময় পাশের মুদি দোকান থেকে দশটি চকলেট নিয়ে আসলো। এসে দেখে নয়নের পরিচিত দুইজন পুরুষ এখানে কাজ করে।
ঃ এ, নছের ভাই, আাপনি এটি কদ্দিন হলে?
ঃ হয়েই তো গেলো ছয় সাত মাস।
ঃ ও। ভালোই তো।
কথাটা বলে নয়ন তার পকেট থেকে চকলেট বের করে সবাইকে একটি করে দিলো। কিন্ত মাজেদার এখানে  এসে ওকে দিলো দুটি । যদিও সবগুলি দেয়ার ইচ্ছা ছিলো। কিন্ত পরিবেশ সেরকম ছিলোনা। তাতেই মাজেদা মনে মনে খুব খুশি হলো। মাজেদা চকলেট নিয়ে ওর দিকে চেয়ে একবার ছোট্র করে মুচকি হাঁসলো। নয়ন দ্রুত তার নিজ কর্মস্থলে চলে গেলো।

এরি মধ্যে চাতালের মালিক স্বপন চৌধুরি এসে উপস্থিত হলো। এসে মাজেদার খোঁজ আগে।
ঃ কি খবর মাজে?  কাজ কর্ম কেমন হচ্ছে?
ঃ ভালো। আজকে তো এখনো রোদের চিকাস বারাইনি। এতগুলো ধান।
ঃ খুব শীত পড়েছে। রোদের চিকাস বের হয়তো ।
স্বপন সাহেব এতটুকু বলে অফিসে ঢুকলো সাথে মাজেদাকেও আসতে বললো।
মাজেদা  নিয়মমত এক গ্লাস পানি নিয়ে অফিসে ঢুকলো। স্বপন সাহেব একটু দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ চিত্তে বললো।
ঃ তোমাকে একটা কথা বলবো
ঃ কি কথা।
স্বপন সাহেব ইতস্তত স্বরে আস্তে বললো।
ঃ ইয়ে মানে। তোমাকে বি, বিয়ে করতে চাই। তুমি কি তাতে রাজি?
মাজেদার চোখ মুখ লাল হয়ে গেলো। লজ্জা এবং ভয়। সব মিলিয়ে মাজেদা চিন্তায় পড়ে গেলো । স্বরটা এলোমেলো হয়ে গেলো তার।
ঃ আপনার না বউ ছোল আছে?
ঃ ধুত্তুরি। না থাকে। তোমার জন্য আলাদা বাড়ি করে দেবো।
মাজেদা এতটুকু বলে মুখে চাদর গুঁজে চলে যেতে লাগলে স্বপন সাহেব তার হাত ধরে ফেলে। হাত ধরে নিচের চেয়ারের পাশে বসালো এবং কপালে ছোট্র করে কিস দিলো। মাজেদা নির্বিকার। এখানে তার করার কিছুই নাই। গরীবের খুব বেশি ইচ্ছা থাকতে নেই। কোটিপতি লাখোপতিদের এগুলো ব্যাপার নয়। তারা জানেই গরীবরা পেটের দায়ে মুখে কূলুপ দেয়। মাজেদা ভয়ে লাল হয়ে গেলো। বললো।
ঃ হামাক যেতে দিন। মানসে দেখলে ক্যালেঙ্কারি বের করবি। 
স্বপন বললো।
ঃ ও সব চিন্তা করোনা। আমি তো বিয়েই করবো।
মাজেদা কান্না স্বরে বললো।
ঃ হামি আজ কাজ করমোনা । হামাক ছুটি দিন,  বাড়ি যামো।
ঃ ঠিক আছে যাও। কাল সকালে এসো। আর সন্ধ্যায় তোমার বাড়িতে যেতে পারি।
ঃ না। বাড়িতে যাবেনা।
এই কথা বলে মাজেদা কোথাও না থেমে সোজা বাড়িতে চলে গেলো। চাতালের সবাই তার যাওয়া দেখলো। "ইদানিং স্যারের সাথে খুব ভাব দেখতাছি " হাজেরা মন্তব্য করলো। মেরিনা বললো " কি যে হচ্ছে আল্লা মাবুত জানে "।


মাজেদা বাড়ি গিয়ে বৃদ্ধ বাবার সাথেও কথা না বলে গায়ে লেপ দিয়ে  শুয়ে পড়লো। শরীরের ভেতর ভয়। টেনশন। জীবনে এই প্রথম একজন তাকে ছুঁয়েছে। ছোঁয়ার অনুভূতিটা উপলব্ধি করছে। তারা বড়লোক। কোটিপতি। বউ আছে ছোল আছে। এদিকে নয়ন তার মন কেড়ে বসে আছে গোপনে। কিন্ত তার পক্ষে স্বপনকে বিয়ে করার যুক্তিও অনেক। গরীবের জন্য সতীন বড় বিষয় নয়। বিষয় তার ভবিষ্যৎ অঢেল সম্পত্তি। তাই মাজেদা হাজারো কথা ভাবছে আর ভাবছে। চোখে ঘুম নেই।
সন্ধ্যার সময় স্বপন সাহেব মোটর সাইকেল নিয়ে হু হু করে মাজেদার বাড়িতে এসে হাজির । মাজেদা নিষেধ করেছিলো। তবু আসলো। 
ঃ মাজে কই তুমি?  
মাজেদা ঘর থেকে বেরিয়ে আসলো। তাকে বসার জন্য ভাঙ্গা চেয়ারটা এগিয়ে দিয়ে বললো।
ঃ হামি না আপনারে নিষেধ করছিনু। 
স্বপন সাহেব বসতে বসতে বললো
ঃ একটা জরুরি কথা।
ঃ কি আবার জরুরি কথা?
ঃ শোনো, সময় নাই। আগামী কালকেই বিয়ে এবং রেষ্ট্রি।
মাজেদা হতভম্ব। 
ঃ কি কন আপনি?  হামার বাপরে ছাড়া হামি...
ঃ সমস্য নেই। ওনাকে আমি বলছি।
এই বলে স্বপন সাহেব ঘরের ভেতর গিয়ে মাজেদার বৃদ্ধ বাবাকে বিয়ের কথা জানালো। তিনি ঠিকমত শুনতে পান না। তবু যতটুকু বুঝলেন হাত নেড়ে সম্মতি জানালেন। 
এবার মাজেদার হাত ধরে স্বপন সাহেব বললো।
ঃ কালকে তুমি বউ হচ্চো। তোমার আর কজ করা লাগবেনা। তোমার এই কুঁড়ে বাড়িতেই বিয়ে হবে।  

স্বপন সাহেব এই বলে  চলে গেলো। তখন সন্ধ্যা পার। মাজেদা রাস্তার পাশে এসে দাঁড়ালো। একটা গাছের আড়ালে। কিছুক্ষণের মধ্যে নয়ন সাইকেলের ঢন ঢন বেল দিতে দিতে আসলো। মাজেদা তাকে সাইকেল থেকে নামতে বলবে। কিন্ত কি যেনো বাধা দিচ্ছে। আর বলতে পারলোনা। গাছের আড়ালে হওয়ায় নয়ন তাকে দেখতে পায়নি। মাজেদা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাড়িতে ফিরে আসলো। চোখের ধারে সামান্য পানি আসলেও সেটা অগোচরে মুছে ফেললো। নয়নকে মনে প্রানে ভালোবেসে ফেলেছে। কিন্ত নিজের চাতালের মালিক। মানুষে তাকে লুচ্চা বলে ডাকে।  না বলার জো নাই। না বললেও জোর করে বিয়ে করতে চাবে। তখন আরো বেশি বিপদ।

পরের দিন বিকেল হতে না হতেই স্বপন সাহেব মাইক্রো নিয়ে উপস্থিত। সাথে লোক বেশি নয়। এই দশ বারো জন। এক মাইক্রোতে যা ধরে। 
সন্ধ্যার আগেই বিয়ের কাজ শেষ হলো। একলক্ষ টাকা মোহরানা। নগদ একভরি গহনা। মাজেদা চোখ মুছতে মুছতে মাইক্রোতে উঠলো। একাই উঠে বসে পড়লো স্বপন সাহেবের পাশের সিটে। জানালাটা খুলে রাখলো যদি নয়নকে দেখা যায় এই ভেবে। কিছুক্ষণের মধ্যই বর কনে বিদায় আদায় নিয়ে গাড়ি ছেড়ে দিলো। গ্রাম থেকে চাতাল পর্যন্ত মাটির রাস্তা। তাই আস্তে আস্তে গাড়ি চলতে লাগলো। ততক্ষনাৎ নয়নও সাইকেল নিয়ে গাড়ির সামনে। কিন্ত নয়নের সাইকেলটা পাঞ্চার হয়ে যাওয়ায় টানতে পারলোনা। সাইকেল থেকে নামতে হলো।এদিকে মাইক্রো সাইড দেয়ার জন্য বার বার হর্ণ দিয়ে যাচ্ছে। মাজেদা যে পাশে বসে আছে নয়ন ঠিক ওই পাশ দিয়েই ক্রোস হয়ে গেলো। নয়নকে দেখে মাজেদার মনের ভেতর পৃথিবী সমান কান্না নেমে আসলো। মাজেদা ঘুঙুরের ভেতর খুব কাঁদছে। সাইকেলের চাকায় হাওয়া না থাকায় নয়ন হেঁটে হেঁটে কাঁচা রাস্তার এক পাশ দিয়ে যাচ্ছে। সামনে পরিচিত রুস্তুমের সাথে দেখা।
ঃ ক্যারে রুস্তম, কার বিয়ে হলোরে?
ঃ ক্যা জানিসনে?  ওই চাতালের মালিক স্বপন চদরী (চৌধুরী) মাজে,ক বিয়া কইরা নিয়া গেলো। লুচ্চাটা এই সহজ সরল মাইডারেও জীবন নিয়া ছিনিমিনি খেলবো 
নয়ন থমকে দাঁড়ালো।
ঃ কি কও রুস্তম ভাই। মাজে,র বিয়া হ,লো।
রুস্তমের কি যেনো তাড়া আছে তাই চলে গেলো।
নয়ন ওখানে সাইকেল রেখে অনেকক্ষণ বসে বসে মাটিকে কি কি সব আঁকছে আর দীর্ঘশ্বাস ফেলছে। 

লেখাঃ ৬/১/১৮ইং

1 টি মন্তব্য: