মারুফ আহমেদ নয়ন এর গুচ্ছ কবিতা
কামরূপ কামাখ্যা
তুমি ছিলে রক্তজবার সখী। আমি মধুকর।
উড়েছি হিমালয়ের পাদদেশে। আশ্চর্য ক্লান্তি
নিয়ে নুয়ে পড়েছি তোমার গেরুয়া পোশাকে।
মধুচাকে ফিরে যাব। মধু সংগ্রহের চাকরি।
কামনায় পারদ জমে। কোহিনূর বনে যাই না।
জহুরির চোখ ছিল, তোমাকে উপহার দিয়েছি।
সঙ্গম-অপেক্ষা! মিলন-ঋতুতে রানী মৌমাছিটি
ডেকে নেবেন শূন্যে। ধর্মসভা ফেলে ছুটে যাব।
কিভাবে লুকাব পতঙ্গে স্বভাব? আগুনে ঝাঁপ
দিই। তোমাকে থাজিয়ান হিমবাহ ভেবে ভুল
করি। তোমাকে কামরূপ-কামাখ্যা ভেবে ভুল
করি।
হিউয়েন সাঙ
প্রিয়তমা পাখির ঠোঁট মনে পড়ে। বিস্ময়কর
রজনীতে মহুয়া অরণ্যে টুরিস্ট আমি। মদের
সাগরে সাঁতার কাটি, রচনা করি ফুগুর আয়ু।
বলো, কী লাভ হয়েছে মানুষজন্ম পেয়ে? মন
সাদা হাঙর হয়ে হেসে ওঠে। আমার পাখিজন্ম
সারসের ভঙ্গিমায় জলে শিকার খোঁজে। মাছের
পোনা চঞ্চুতে নিয়ে ফিরে যাবে ঘরে। তোমাকে
হৃদয়ে আশ্রয় দিয়ে সেজেছি এক পরিব্রাজক।
বামিয়ান বুদ্ধমূর্তির পাশে স্থির দাঁড়িয়ে থাকি।
পামির মালভূমিতে দেখছি হিন্দুকুশ পর্বতমালা।
মনে পড়ে, বন্ধু হিউয়েন সাঙ তাম্রলিপ্তির পথে
চলে গেছেন। আমি কোথায় যাব? পুন্ড্রনগর।
আমার শরীর মাটিতে মিশে গেছে।
চর্যাপদ
জোনাকিজন্ম, মৃত আগ্নেয়গিরির বুকে নীল
আলোক। তোমার দেহে ম্যান্ডারিনের মতো
সোনালি আভা। বুঝি, তুমি মৎস্যকন্যা। সমুদ্র-
জলসায় মেলে ধরেছ চর্যাপদ। হননবিদ্যা
তোমার নিশ্চয়ই জানা। ফোটাচ্ছ গোলাপ ছানা।
অপূর্ব আলোকধারায় তোমাকে ভালোবেসে খুন
হই। পিঁপড়েরা চিনির দানার খোঁজে স্থানান্তরিত
হয়। বিড়াল তুঁতের বনে পাহারা দেয় রেজালা।
মন যেন রামধনুর রং। তোমার চোখে জলোচ্ছ্বাস,
ঘূর্ণাবর্তে সাইক্লোনে রূপ নেয়। নিভে যায় নক্ষত্র।
আকাশে বজ্রের ঘোড়া, হ্রেষাধ্বনি জাগে বাতাসে।
দুঃস্বপ্ন শেষে, তোমাকে সমুদ্রের মতো শান্ত আর
বন্দরের আলোর মতো লাবণ্যময়ী মনে হয়।
মৃত সাগরের ঘ্রাণ
তোমাকে সম্মান প্রদর্শন করি। আমার পর্বতসম
অহংকার ধূলিসাৎ হয়েছে। করাতে কাটা বৃক্ষের
দুঃখ নিয়ে বেঁচে আছি। কালাহারি মরুভূমি হতে
এনেছি জেব্রার হাসি। শরীরে মাউন্ট মেরাপির
মতো আগ্নেয়গিরি। জেলিফিশের রঙ পরিবর্তনের
স্বভাব। আমার বাদশাহি শেষ হয়ে গেছে। গ্রহণ
করো অলঙ্কারের সাজ। চুরি করে নেব রূপসী,
অপূর্ব বাসনা। নিভে যাক হেরেমের শেষ প্রদীপ।
তোমার নামে করব স্থাপত্য-ভাস্কর্য, বিজয়ধ্বনি
হবে। দুঃস্বপ্নে খুভসগুল হ্রদের ঢেউয়ে তোমার
মুখশ্রী দেখি। জিরাফের ছায়ার মতো দীর্ঘ রাত
ফুরিয়ে আসে। জন্মান্ধের পৃথিবী দেখার ইচ্ছার
মতো তোমাকে দেখি। তোমার নাভিতে উত্তাল
সমুদ্রের গর্জন থিতু হয়েছে। তোমার কেশ হতে
মৃত সাগরের ঘ্রাণ ভেসে আসছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন