সমসাময়িক কবিতা ।। ইসলাম মুহাম্মদ তৌহিদ modern poem by islam muhammad towhid

সমসাময়িক কবিতা ।। ইসলাম মুহাম্মদ তৌহিদ modern poem by islam muhammad towhid



ইসলাম মুহাম্মদ তৌহিদ এর গুচ্ছকবিতা

স্বর্গে দাঁড়ানো নরকের কাক

এক কাক উঠেছিল স্বর্গের সিঁড়িতে,
পেছনে নরক হাঁপাচ্ছিল।
স্বর্গ তাকে জিজ্ঞেস করল,
“তুমি এত কালো কেন?”
কাক বলল,
"আমি একবার আলোকে বিশ্বাস করেছিলাম।”


অস্পৃশ্য

ঘাসেরা কাঁপে, তারা জানে—
পদচিহ্ন শুধু স্মৃতিকে আঘাত করে।

ঘড়ির কাঁটা এখন বর্ণান্ধ,
সময় দেখে না,
শুধু অনুভব করে ব্যথার রং।

জলের নিচে হাঁটি, শব্দ সাঁতার জানে না;
তবুও পিছু ডাকে।
ছুঁতে গেলেই নিজেকে মনেহয়—অস্পৃশ্য!


নিজেকে গিলে ফেলা সরীসৃপ 

পৃথিবী ছিল একটি উল্টো ধান্দার কুয়া, যার পানিতে ডুবে গেলে নাম খসে পড়ে,
মাংস খুলে বেরিয়ে আসে লুকানো গন্ধের বিষবাষ্প। 

আমার ছায়াকে খুঁজি,
ছায়া তখন কাচের মতো ভেঙে ভেঙে পড়ছে মাটির অন্তর্গত পিপাসায়।
মাটির গর্ভে গুম হয়ে গেছে সময়ের কঙ্কাল,
তাদের প্রত্যেকটি হাড়ের মধ্যে জন্ম নিচ্ছে অদেখা শহর।

রাত্রি আসলে এক বিবর্ণ ডানা,
আমি তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে জড়িয়ে আছি সূর্যের মৃত্যুদাগ নিয়ে।
জীবন?
সে ছিল ফাটা পালকের শ্বাস, উল্টোপিঠের ঘূর্ণি,
যেখানে আমার হৃদয়—একটি সরীসৃপ,
নিজেকে গিলে খায় প্রতিটি জন্মে।


পুড়ে যায় শান্তির মানচিত্র

স্মৃতিতে ড্রোন ঘোরে,
বারুদের গন্ধে আল্পনা আঁকেন মা।
বাবার শূন্য পকেটে দরিদ্রতার মিসাইল।
অভাবের অঙ্ক কষা শিশুটি
ক্ষুধার তীব্রতায় খেয়ে ফেলে আস্ত এটম বোম!

মানচিত্র গলে যাচ্ছে,
নদী এখন শিরদাঁড়া ভাঙা শহরের শোকগীতি।
গর্জে ওঠে সভ্যতা—
মাইক্রোফোনে, মিছিলে, মিথ্যে মূর্ছনায়।

ট্যাংক আসে, ফুল পিষে যায়—
ঘাসের ডিএনএ ভেঙে ফেলে বুটজোড়া।
আকাশ রিকনফিগার—
দেশে দেশে যুদ্ধের দামামা,
মৃত্যু এখন ওপেন সোর্স।

পাখিরা মাইনফিল্ডে ওয়ার্ডপ্রেস বসায়,
ঝড়ের শরীরে ন্যাটোর ট্যাটু।
মানবতা পিক্সেলড,
থার্মাল ভিউতে কাঁদে...


মুছে যাওয়া মানচিত্রে ঘর

একদিন আমি স্বপ্নের নুড়ি কুড়িয়ে কুড়িয়ে হাঁটছিলাম, চাঁদের গুহায় ঢুকে পড়েছিলাম ভুল করে।
চাঁদ ছিল পাকা কমলার মতো, নিখোঁজ সংবাদে ছেয়ে গিয়েছিল কমলার আবরণী খোসা ।

সমুদ্র তখন এক চিলতে নীল পকেট, যেখানে ঠেসে রাখা স্মৃতিগুলো সাপের মত ফোঁসফোঁস করত।
আমি একটি চিন্তার গাছ লাগালাম, তার পাতাগুলো ছিল আয়নার টুকরো,
প্রতিটি পাতায় আমার চেহারা ছিল অন্য কারো মুখ পানে দাঁড়িয়ে।

নক্ষত্রেরা মাথার উপর ঘুরছিল শুকনো পাতা হয়ে,
মহাকাশ ছিল এক অপঠিত চিঠির ভাঁজ।
আমি কাঁধে বয়ে নিয়ে চললাম ঘুমন্ত শহরের মৃত শরীর। 
আমি শব্দের ঘাস ছেঁটে ছেঁটে পাহাড় বানালাম,
আর পাহাড়ের গায়ে লিখলাম—

"আমি যা হারাই, তা-ই আমার ঠিকানা।" 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন