রাজেশকান্তি দাশ এর কবিতাগুচ্ছ।। poems by rajeshkanti das.kuasha

 

রাজেশকান্তি দাশ 
  এর কবিতাগুচ্ছ


    দীপিত শিল্পস্বাদ

বৃষ্টির গল্প শ্রাবণমেয়ে জানে
জানে ঋতুর তারতম্য। সাড় ও অসাড় এর পার্থক্য
আমি চ্যাটজিপিটির শব্দশস্য গুঁজে দেব তার জল বারতায়
চুল ছেড়ে খোলা মাঠ হবে শ্রাবণমেয়ে। শস্যবীজ, ফুল, ফল, বৃক্ষ, পাখির...
ঘাসফড়িং উড়বে শস্যধুপে। ফিনিক ধুপহাওয়ায় উভচর দুঃখ পর্যন্ত
অধুনা বৃষ্টিবীক্ষার সুতো ছিঁড়বে সে
মেঘঘরে রোপন করবে বৃষ্টির টেক্সটট্রি
বুকফাটা তাপদাহে বইবালক, ব্যস্ত কৃষক ও চঞ্চল নাগরিকের হাতে তুলে দেবে
বৃষ্টিতরুর প্রকল্প।
মাতৃগাছ হয়ে ওঠবে তার জরায়ু। শস্যবীজ, ফুল, ফল, বৃক্ষ, পাখির...
আমরা নেব এর দীপিত শিল্পস্বাদ প্রাণভরে...


মা

কত মানুষ দিয়েছে দুঃখ—কষ্ট
কতজন করেছে অবহেলা
তুমিই ধ্রুব,
তোমাকে ছাড়া সব বেলাই
আমার অবেলা।


স্বপ্ন—৩

চোখ মুছলে
       চোখপালক রোদ হয়ে ওঠে
অশ্রুকণা থেকে বের হয়
চাঁদ সওদাগরের সপ্ত ডিঙা
সমতলের ঝড়ে ভেসে ওঠে জানালার পাশে
অর্ণব নগরে
তার অলৌকিক নৃত্য...
উজানি বনে দেহতত্ত্বের ঘন্টাধ্বনি বুনতে থাকে রং
আমার পাথুরে জীবন
তোমার কাছে ফিরতে চায়।


চলো লিখি এসব

চলো লিখি দমন গীতি
চলো লিখি বঞ্চিত সুর
চলো লিখি বর্গীর পাঁচালি
চলো লিখি গুপ্ত সঙ্গীত
চলো লিখি আগন্তুকনামা
চলো লিখি অবহেলাসমূহ
চলো আরও বর্গী হই!


চাপতন্ত্র

সান্নিধ্যকে দূরত্বের স্কেলে ফেলে দেয় চাপতন্ত্র
সান্নিধ্য দূরত্বের স্কেলে পড়ে গেলে সম্পর্কের নিবিড়তা ভেঙে যায়।

আমাদের চাকবদ্ধ স্বপ্ন গলতে থাকে। জন্ম নেয় খণ্ড খণ্ড বেদনা।
সৃষ্টি হয় দীর্ঘশ্বাস। রাশি রাশি  দীর্ঘশ্বাস ।

এর ফিউশনে রাঙা আকাশ ভারী হয়ে ওঠে।

চাপতন্ত্র: সমগ্রের ব্যবচ্ছেদ
যেমন বাড়িকে ভেঙে ঘর দেশকে অঞ্চল

অথচ আমি চেয়েছিলাম বাড়িটা বাড়িই থাকুক দেশটা দেশ।


আমার জতুগৃহ

আমাকে ছাড়ে না
অসীম নীল, সবুজের মায়া।
আমাকে ছাড়ে না
রংধনু রং, সপ্তসুরের ছায়া।

আমাকে ধরে আছে
কিছু রক্তবীজ, বাজখাঁইয়ের ঝাঁক।
আমাকে ধরে আছে
ভূশন্ডির দীর্ঘশ্বাস, মহাকালের বাঁক।

চিন্তা নেই
তবুও আমি এ জতুগৃহেই থাকবো!


দুপুরের রোদের মতো

কে তুমি আমাকে ডাক নির্জন বটছায়ায়?
কে তুমি
নিশীথে সাইরেন বাজাও আমার হৃদয়ে?
এর তানে
মনের অলিগলি হয়ে ওঠে গোলাপের মাঠ
কে তুমি আমার আত্মদহনের ঔষধিপাত্র হও?
আমার দীর্ঘশ্বাস কেড়ে নাও
আমার দীর্ঘশ্বাস হয়ে ওঠে সুরধ্বনি ঘাট
কে তুমি হও আমার বিষণ্ণতার শেষ আশ্রয়?
নীরবে শুধু
বাবুই পাখির মতো মনে ঘর বাঁধো!
কে তুমি? কী তোমার পরিচয়?
তুমি যে-ই হও সে ঈশ্বরী কিংবা মানবী
আর দূরে থেকো না                                                                  
নীরবতা ভেঙে এবার হাত দুটো বাড়াও
দুপুরের রোদের মতো
                হয়ে ওঠো বেহেশতের নাও।


মোনালিসা

তুলি
দিয়ে আর্ট পেপারের ওপর কিছু হাবিজাবি আঁকে
একটি কৃমি
কয়েক ঘন্টা পর
আঁকাগুলি নতুন জামাকাপড় পরে
রেখামানব হয়ে ওঠে;
ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে
মোনালিসা।


তফাত বিষয়ক

কত তফাত তফাতের মধ্যে
পায়ে পায়ে আঙুলে আঙুলে
পুঁজির মেরুকরণ সকাল—বিকেল
কোথাও জোয়ার কোথাও ভাটা
মলিন দেখায় উজালা চাঁদ
কত তফাত তফাতের মধ্যে!
আঙুলে আঙুলে পায়ে পায়ে
বৈষম্যের আঁধার বইছে পৃথিবী!

রুপোলি রঙের ছাই

দু হাতের ওপর বেলা গড়ায়। মুখ ফিরিয়ে ডানপাশে তাকাই
দেখি, রুপোলি রং ছাইয়ে ঢাকা; গীতালির শিশিরভেজা প্রপাত
কবিতাপুরী, আমার স্মৃতির কনকলতা। শৈশব। কৈশোর। বেণু
দু হাতের বেলা গড়ায় আবার ভাসে। ক্যানভাসে বাউল অঙ্গ
এ বেদ জানে অজুর্ন গাছের ছায়ামাল্য; রসজট হয়নি পট ও পাঠ
ডায়েরি, বই, কলমের উচ্ছলতা ঢের; সমান্তরাল বিভাস ও খাদ
অপেক্ষায় অপেক্ষায় বসন্ত আসে। সঙ্গে পূর্ণিমা কায়া। মৃৎ সম্বিত
সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য শিসের ছাইদানি; শ্বাসের কুঠুরি; রক্ত বৃন্ত
প্রচেষ্টা ও ভুলের মাঝামাঝি আমার স্বপ্ন। অনুপদে মন সাঁতরায়
একদিন ধ্যানপাখি উড়বে। রুপোলি রঙের ছাইয়ে পড়বে পুষ্পবৃষ্টি
তুমি বলেছিলে, পুষ্পবৃষ্টি মাখতে মাখতে... বাউল হওয়া যায়।

Post a Comment

Thanks

নবীনতর পূর্বতন