শেলী সেনগুপ্তা
কতবার!
কতবার পোশাক বদলের মতো
কতবার স্মৃতির তোরঙ্গ ঘেটে
সুখগুলো ধারণ করেছি নতুন পোশাকের আমেজে
তবুও ঢাকতে পারি নি আত্মার শরীরে লেগে থাকা
অন্যরকম সব কষ্টের দাগ
এ যেন প্রুফ রিডারের লাল কালির নিচে
ভুল বানানের পান্ডুলিপি
অথচ
কতবার শরীর থেকে খুলে ফেলেছি
দাঁড় করিয়ে রাখবো সদর দরজায় ওপাশে
যেখানে কখনো দাঁড়িয়েছিলো আমার স্বপ্নরা
তোমার পেছনে
তুমি এসেছো
তারা ফিরে গেছে
মিশে গেছে সর্বহারার দলে
তুমি ফিরে গেছো
ওরা পথ ভুলেছে
আমার স্বপ্নরা এখন মিছিল করে
ব্যর্থতার রাজপথে..
জুড়ে দিলেই এক হয়ে যাব
সুখের জোড়া শালিক
এমনটি নয়
তবুও
বিয়োগ নয়
যেমন
কপালজোড়া সিঁদুরে টিপ
জোড়া শালিকে জয়
বিজোড় বলতে
সানন্দ সংসারে তৃতীয় পক্ষ
তিন শালিকে দুঃখ
জুড়ে দিলেই এক হবে এমনটি বলে নি কেউ
তবুও
একক বিজোড় ভেঙে বারবার জুড়তে চেয়েছি
তুমি ও আমিতে আমরা
অর্থাৎ
সুখের জোড়া শালিক ...
অপ্রাপ্তির প্রাপ্তিযোগ
বদ্ধ দরজার ওপারে তুমি
আর
এপারে আমি
মাঝখানে মাথা কুটে মরছে দুরারোগ্য প্রেম
কাঠের দরজা ভেদে কে কি পেলাম
জানা হলো না
তবুও আমরা বরাবর ভরপুর
পরম জীবনানন্দে...
নদীর মতন মেয়েটি
তবুও ছুটে যাচ্ছো নদীর কাছে
মেঠো পথের আঁকাবাঁকা বাঁক নিয়ে
যে মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে
সন্তের মতো আলোও
হাঁটু গেড়ে বসে তার সামনে
বাতাস ছুঁয়ে যায় দেহের বাঁকগুলো
কেবল তুমিই
অনুভূতির পায়ে শেকল পরিয়ে
নিজেকে নিয়ে যাও
দেহহীন নদী সঙ্গমে...
যতদূর জানা যায়
নদীতো কখনো সঙ্গমাকাঙ্ক্ষী নয়..
অনাকাঙ্ক্ষিত সঞ্চয়
কতদিন?
কতদিন বুক পকেটে জমিয়ে রাখবো
শোক এবং সন্তাপ?
কতদিন মুগ্ধ আলোয় আঁকবো
শ্মশানবাসী ডোমের নিষ্ঠুর পোট্রেট?
যেদিন আমার জরায়ু ফুঁড়ে জন্ম নেবে ঈশ্বর
তুমুল বিরহে পুড়িয়ে দেবো
ন্যাপথোলিনে জমিয়ে রাখা কান্নার বীজ ধান...
নিঃশব্দ শোকের উৎসব
যাপনের জীবন নয়
প্রেম কিংবা দ্রোহও নয় নিঃশব্দ শোকের উৎসব
বনসাই জীবন
ধোঁয়ার কুন্ডুলী কিংবা
জলের আয়নায় রঙধনু নয়-
ব্যর্থতার আগুনে পোড়া ফিল্টারহীন সিগারেটও নয়
আলোর সরণি পেরোলেই
দাহ্য হতে হয় অমানবীয় ঠোঁটে
কুল ভাঙলে শুধু নদীরই গতি মেলে
মানুষ হয়ে ওঠে
বালুময় দ্বীপ..
চাইলেই হওয়া যায় জল
জলের কোনো পোশাক থাকে না
মুক্তির আকাশে
জল জানে নিরন্তর ঢেউ
শেখেনি পাথর হওয়ার মন্ত্র ...
এসো ঠোঁটের আলিঙ্গনে
নিরন্তর জপ করি
জলের মন্ত্র...
এবং জুড়ে যাওয়ার আগে
আর্তনাদ করে ওঠে
কান্নার নাভিতে ফোটে
উর্ধ্বমুখী দীর্ঘশ্বাস
একাকীত্বের গায়ে পরিয়ে দেয় বেদনার অন্তর্বাস
খন্ডিত ক্ষণগুলো
বিলুপ্ত নদীর আদলে আঁকা থাকে
জীবনের মানচিত্রে
কেউ কেউ
খন্ডিত ও অখন্ডিত ক্ষণের ভাঙচুর ছায়ায় খোঁজে
ঘোর লাগা দিনগুলো...
জুড়ে যাওয়ার আগে খন্ডিত সম্পর্কও মিশে যায় আর্তনাদের বৈভবে...
শরীরী আকাশ
রাত এক আশ্চর্য সময়-
শরীরে একটি আকাশ নিয়ে পাড়ি দিতে হয়
অলৌকিক পথ
শীতকুড়ানোর শব্দে
পাখিরাও নীড়ে ফেরে
বুঝে নেয় পারস্পরিক গ্রহণ-প্রণালী
ব্যাত্যয় শুধু
মানবীয় অবোধ জীবনে,
হু হু কান্নায়
গৃহহীন ছুটে যায় নগরের দ্বারে দ্বারে
নিরেট আলোর সন্ধানে,
বিনম্র মাধুকরী
বাঘের নখে খোঁজে বসন্ত-সুবাস
ঢেউ কুড়ানোর শব্দে
ছুটে যায় গতির উৎসে
রাত যে এক আশ্চর্য ঘনঘটা
নিষিদ্ধ ঘুম শেষে আরো এক দিনের অপেক্ষার..
পাখি তাড়ানোর মতো ঘুম তাড়িয়ে-
ভুলে গেছি সুর করে পড়া দুইয়ের নামতা,
শিখছি
ভুলের গাজন,
কান পাতলেই শুনি জলপড়ার শব্দ
কান্নার অর্থবাহী,
স্বপ্ন হেঁটে যায় বেড়াল পায়ে...
ঘুম তাড়ানিয়া চোখের আঙ্গিনার
জীবনের জলসাঘর
কবির অন্তরের সুখ দুঃখ, আনন্দ বেদনার চমৎকার সম্মিলন ঘটেছে কবিতাগুলির ছত্রে ছত্রে। ভালো লাগলো।
উত্তরমুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thanks