সিদ্দিক প্রামাণিক
পাখিপ্রেম
আমরা যারা ভালোবেসে পাখি পুষতে চাই —
তারা
পাখি কেনার আগেই খাঁচা কিনে আনি।
নিরাপত্তার কথা ভেবে—
কখনো ডানা ছেঁটে দিই। কখনো অলংকারে
বেঁধে রাখি পা।
খাঁচার মধ্যে খাবার দিই,
জলও দিয়ে থাকি চাহিদা মাফিক।
ধীরে ধীরে
তার কণ্ঠে গুঁজে দিতে চাই আমাদের মাতৃভাষা।
ভালোবেসে মানুষেরা যা যা করে,
আমিও সেভাবে তাই তাই করি—
পাখি কেনার আগেই খাঁচা কিনে আনি,
সেই খাঁচার পাশে গোলাপ ,
সেই গোলাপের পাশে ছুরি-কাচি,
মারণাস্ত্র,
কৌশলে রেখে আসি বিবিধ অলংকার
এখানে কোনো বিরামচিহ্ন নাই
ঘুম ঘোরে দেখি
তুমি নাই
ভুল করে
রেখে যাওয়া তোমার স্তন
গতিময়
একজোড়া
বুলেটের মতো
ছুটে আসছে আমার দিকে
আমিও পালিয়ে যাচ্ছি দ্রুত
কোথায় যাচ্ছি জানি না
যেতে যেতে স্বপ্নে
পুলিশের দেখা পেলে
যেরকম হয়
সেরকম
উঠেও উঠছে না পা
বৃষ্টি অথবা বিব্রত
মেঘলা মেঘলা দিন।
ধরো আজ আষাঢ়স্য প্রথম দিবস
অথবা শ্রাবনের কোন তারিখ।
একটা ফোল্ডার ছাতা হাতে
ফুরফুরে মেজাজে আপনি হাঁটছেন,
হেঁটে যাচ্ছেন একা
চুতিয়া মার্কা এই পৃথিবীর পথে পথে
বৃষ্টির সম্ভাবনা প্রবল হলে
ট্রিগারে আঙুল রেখে আশাবাদী ভঙ্গিতে
খুলতে চাইলেন আজ কিন্তু
কিছুতেই খুললো না ছাতা
এরকম বিব্রতকর মুহূর্ত
মানুষের জীবনে দু'একবার আসে
কোথাও বাজ পড়ার শব্দে কেঁপে কেঁপে
হঠাৎ বৃষ্টি নামলো, আপনি ভিজে গেলেন
পলিটিক্স
এখানে-ওখানে
সবখানে
তারা,
লোকে বলে-
কি যেনো কিসের বাচ্চা!
এটুকু লেখার পরে
তেড়ে এসে
হঠাৎ বললো-
সময় আসুক
একদিন দেখে নেবো আচ্ছা।
জেন্ডার
ছেলেটি আঁকছে আরবীয় ঘোড়া,
আত্মরতির সুর, প্রিয় পানশালা,
আর সতেরো বছর বয়স
মেয়েটি আঁকছে লিপস্টিকে ঠোঁট,
রান্নাবান্না খেলা, পুতুলের বিয়ে আর
চৌদ্দ বছর বয়স
ছেলেটির ঘোড়া দারুণ চৌকস, গতিময়-
দেয়াল ডিঙিয়ে একদিন
ঢুকে গেল রান্নাঘরের ভেতর।
তারপর থেকেই সব তছনছ, ভাঙচুর—
রান্নাবান্না আর পুতুলের বিয়ে
মন খারপের দিন
সকালের মুখে গুচ্ছ গুচ্ছ বোমার মতো-
অসংখ্য পাতা ঝরে পড়লো—
আমি দেখলাম।
আসছি বলে-কচুক্ষেত পার হয়ে
একটা শুয়োরের হাত ধরে শর্মিষ্ঠা
পালিয়ে গেল খোঁয়াড়ের দিকে
তারও আগে,
যে পিঁপড়েটা নিজের চেয়ে কয়েকগুণ
ওজন নিয়ে চলে গিয়েছিল,
সেই পিঁপড়েটাই মরে ভেসে থাকলো
আমার গ্লাস ভর্তি জলে।
ইত্যাদি তুচ্ছ কারণে আজকাল আমার
খুব মন খারাপ হয়,
এইসব মন খারাপের উপর দিয়ে
কয়েকহাজার ট্যাংক, ঝাঁকে ঝাঁকে যুদ্ধবিমান
সুসজ্জিত
চলে যায় যুদ্ধের দিকে।
নারী ও শিশুর কথা ভাবতে ভাবতে আমার মন
আরও খারাপ হয়ে যায়
রূপান্তর
একজোড়া বাচ্চা রেখে
প্রসবকালীন ওদের মা মরে গেল।
সেই থেকে
আমি রান্না করি,
বাচ্চা সামলাই।
দৌড়ের ওপর থাকি।
নবীর হাদিস মোতাবেক-
এক দুই তিনের ভেতর বাবা নাই,
এই আমি চতুর্থ নম্বর—
মহামূর্খ পিতা।
ওদের মা’র চরিত্রে অভিনয় করি।
শিশুরা আমার বুকে হাত দেয়,
খাদ্য খোঁজে।
দুধের বদলে নেমে আসে বিন্দু বিন্দু ঘাম ।
বাবা হতে হতে একদিন
আমিও মা হয়ে যাই।
শান্তিকামী
যেভাবে মেলাতে চাও
সেভাবে মিলছেনা পা
উদারা থেকে তারায়
যেতে যেতে গড়মিল
জীবনের সারেগামা।
তুমি চাইছো সবাই
তোমার মতোই হোক
আনন্দে আনন্দ পাক
শোকে মুহ্যমান শোক
মনটাও হোক জুতসই
উপভোগ্য চমৎকার
এমন হয় না জানি
যেভাবে চেয়েছো তুমি
সর্বদাই ঘটে উল্টো
মনের বিরুদ্ধে মন
নিজের বিরুদ্ধে ছায়া
সম্মুখ সমরে দেখি—
উদ্যত কুপাণ হাতে
তড়িঘড়ি ছুটে আসে
আমাদের শান্তিকামী।
পানি ও জল
শ্যামা আর আমি পাড়াতো ভাই-বোন।
আমার মতো শ্যামাও আকাশকে আকাশ
নদীকে নদী
পাহাড়কে পাহাড় নামে ডাকে।
ধানক্ষেত
বাতাবীলেবু
গাজর, টমেটো, ফুলকপিকেও
আমরা একই নামে চিনি।
এই যে রেলস্টেশন,
আন্দোলন,
সংগ্রাম
সমাজতন্ত্র
ফুল, পাখি, বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি বাতাসও
আমাদের কাছে একই।
শ্যামা শুধু পানিকে জল
আর
আমি জলকে পানি বলে থাকি।
পানি ও জলের এই পার্থক্য সত্ত্ওে
আমাদের প্রেম হলো, বিয়ে হলো না
শরনার্থী
আমি হিন্দু আর আমার বউ মুসলমান,
ক্ষুধা আর যৌনতাময় পৃথিবীতে—
আমরা পরস্পর কে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম।
আমাদের সন্তানাদিও ছিলো
মত্যুর পরে আমি ভগবানের সামনে
আর আমার বউ আল্লাহর সামনে বিচারাধীন হলেÑ
সীমালঙ্ঘনের অভিযোগে আমি নরকে
আর বউ চলে গেলো দোজখের দিকে
আমাদের প্রিয় সন্তানেরা—
একবার ভগবান, একবার আল্লাহ;
একবার নরক, একবার দোজখ-করতে করতে
শরনার্থীর মতো ঘুমিয়ে গেলো—যেখানে নোম্যান্সল্যান্ড
চাঁদ বৃত্তান্ত
চাঁদের শরীরে মাঝেমধ্যে কাতুকুতু ওঠে
কাতুকুতু উঠলে তার খুব হাসি পায়
হাসতে হাসতে বেসামাল হয়ে গড়িয়ে পড়ে সে।
এরকম হাসতে হাসতে একদিন
অতর্কিত
আকাশ থেকে ছিঁটকে এসে
পড়ে গেলো হাতেম তা'য়ের ছাদে
ছাদ থেকেও গড়াতে গড়াতে হারিয়ে গেল
পৃথিবীর অন্ধকারের ভেতর,
খুঁজে খুঁজে ব্যর্থ হলো ছয় ব্যাটারির টর্চ
ঘর পালানো মেয়ের মত কোনোএক পূর্ণিমার রাতে
ফিরে এসে বললো,
এতদিন আটকে ছিলাম ইঁদুর মারা কলে
আমরা যারা ভালোবেসে পাখি পুষতে চাই —
তারা
পাখি কেনার আগেই খাঁচা কিনে আনি।
নিরাপত্তার কথা ভেবে—
কখনো ডানা ছেঁটে দিই। কখনো অলংকারে
বেঁধে রাখি পা।
খাঁচার মধ্যে খাবার দিই,
জলও দিয়ে থাকি চাহিদা মাফিক।
ধীরে ধীরে
তার কণ্ঠে গুঁজে দিতে চাই আমাদের মাতৃভাষা।
ভালোবেসে মানুষেরা যা যা করে,
আমিও সেভাবে তাই তাই করি—
পাখি কেনার আগেই খাঁচা কিনে আনি,
সেই খাঁচার পাশে গোলাপ ,
সেই গোলাপের পাশে ছুরি-কাচি,
মারণাস্ত্র,
কৌশলে রেখে আসি বিবিধ অলংকার
এখানে কোনো বিরামচিহ্ন নাই
ঘুম ঘোরে দেখি
তুমি নাই
ভুল করে
রেখে যাওয়া তোমার স্তন
গতিময়
একজোড়া
বুলেটের মতো
ছুটে আসছে আমার দিকে
আমিও পালিয়ে যাচ্ছি দ্রুত
কোথায় যাচ্ছি জানি না
যেতে যেতে স্বপ্নে
পুলিশের দেখা পেলে
যেরকম হয়
সেরকম
উঠেও উঠছে না পা
বৃষ্টি অথবা বিব্রত
মেঘলা মেঘলা দিন।
ধরো আজ আষাঢ়স্য প্রথম দিবস
অথবা শ্রাবনের কোন তারিখ।
একটা ফোল্ডার ছাতা হাতে
ফুরফুরে মেজাজে আপনি হাঁটছেন,
হেঁটে যাচ্ছেন একা
চুতিয়া মার্কা এই পৃথিবীর পথে পথে
বৃষ্টির সম্ভাবনা প্রবল হলে
ট্রিগারে আঙুল রেখে আশাবাদী ভঙ্গিতে
খুলতে চাইলেন আজ কিন্তু
কিছুতেই খুললো না ছাতা
এরকম বিব্রতকর মুহূর্ত
মানুষের জীবনে দু'একবার আসে
কোথাও বাজ পড়ার শব্দে কেঁপে কেঁপে
হঠাৎ বৃষ্টি নামলো, আপনি ভিজে গেলেন
পলিটিক্স
এখানে-ওখানে
সবখানে
তারা,
লোকে বলে-
কি যেনো কিসের বাচ্চা!
এটুকু লেখার পরে
তেড়ে এসে
হঠাৎ বললো-
সময় আসুক
একদিন দেখে নেবো আচ্ছা।
জেন্ডার
ছেলেটি আঁকছে আরবীয় ঘোড়া,
আত্মরতির সুর, প্রিয় পানশালা,
আর সতেরো বছর বয়স
মেয়েটি আঁকছে লিপস্টিকে ঠোঁট,
রান্নাবান্না খেলা, পুতুলের বিয়ে আর
চৌদ্দ বছর বয়স
ছেলেটির ঘোড়া দারুণ চৌকস, গতিময়-
দেয়াল ডিঙিয়ে একদিন
ঢুকে গেল রান্নাঘরের ভেতর।
তারপর থেকেই সব তছনছ, ভাঙচুর—
রান্নাবান্না আর পুতুলের বিয়ে
মন খারপের দিন
সকালের মুখে গুচ্ছ গুচ্ছ বোমার মতো-
অসংখ্য পাতা ঝরে পড়লো—
আমি দেখলাম।
আসছি বলে-কচুক্ষেত পার হয়ে
একটা শুয়োরের হাত ধরে শর্মিষ্ঠা
পালিয়ে গেল খোঁয়াড়ের দিকে
তারও আগে,
যে পিঁপড়েটা নিজের চেয়ে কয়েকগুণ
ওজন নিয়ে চলে গিয়েছিল,
সেই পিঁপড়েটাই মরে ভেসে থাকলো
আমার গ্লাস ভর্তি জলে।
ইত্যাদি তুচ্ছ কারণে আজকাল আমার
খুব মন খারাপ হয়,
এইসব মন খারাপের উপর দিয়ে
কয়েকহাজার ট্যাংক, ঝাঁকে ঝাঁকে যুদ্ধবিমান
সুসজ্জিত
চলে যায় যুদ্ধের দিকে।
নারী ও শিশুর কথা ভাবতে ভাবতে আমার মন
আরও খারাপ হয়ে যায়
রূপান্তর
একজোড়া বাচ্চা রেখে
প্রসবকালীন ওদের মা মরে গেল।
সেই থেকে
আমি রান্না করি,
বাচ্চা সামলাই।
দৌড়ের ওপর থাকি।
নবীর হাদিস মোতাবেক-
এক দুই তিনের ভেতর বাবা নাই,
এই আমি চতুর্থ নম্বর—
মহামূর্খ পিতা।
ওদের মা’র চরিত্রে অভিনয় করি।
শিশুরা আমার বুকে হাত দেয়,
খাদ্য খোঁজে।
দুধের বদলে নেমে আসে বিন্দু বিন্দু ঘাম ।
বাবা হতে হতে একদিন
আমিও মা হয়ে যাই।
শান্তিকামী
যেভাবে মেলাতে চাও
সেভাবে মিলছেনা পা
উদারা থেকে তারায়
যেতে যেতে গড়মিল
জীবনের সারেগামা।
তুমি চাইছো সবাই
তোমার মতোই হোক
আনন্দে আনন্দ পাক
শোকে মুহ্যমান শোক
মনটাও হোক জুতসই
উপভোগ্য চমৎকার
এমন হয় না জানি
যেভাবে চেয়েছো তুমি
সর্বদাই ঘটে উল্টো
মনের বিরুদ্ধে মন
নিজের বিরুদ্ধে ছায়া
সম্মুখ সমরে দেখি—
উদ্যত কুপাণ হাতে
তড়িঘড়ি ছুটে আসে
আমাদের শান্তিকামী।
পানি ও জল
শ্যামা আর আমি পাড়াতো ভাই-বোন।
আমার মতো শ্যামাও আকাশকে আকাশ
নদীকে নদী
পাহাড়কে পাহাড় নামে ডাকে।
ধানক্ষেত
বাতাবীলেবু
গাজর, টমেটো, ফুলকপিকেও
আমরা একই নামে চিনি।
এই যে রেলস্টেশন,
আন্দোলন,
সংগ্রাম
সমাজতন্ত্র
ফুল, পাখি, বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি বাতাসও
আমাদের কাছে একই।
শ্যামা শুধু পানিকে জল
আর
আমি জলকে পানি বলে থাকি।
পানি ও জলের এই পার্থক্য সত্ত্ওে
আমাদের প্রেম হলো, বিয়ে হলো না
শরনার্থী
আমি হিন্দু আর আমার বউ মুসলমান,
ক্ষুধা আর যৌনতাময় পৃথিবীতে—
আমরা পরস্পর কে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম।
আমাদের সন্তানাদিও ছিলো
মত্যুর পরে আমি ভগবানের সামনে
আর আমার বউ আল্লাহর সামনে বিচারাধীন হলেÑ
সীমালঙ্ঘনের অভিযোগে আমি নরকে
আর বউ চলে গেলো দোজখের দিকে
আমাদের প্রিয় সন্তানেরা—
একবার ভগবান, একবার আল্লাহ;
একবার নরক, একবার দোজখ-করতে করতে
শরনার্থীর মতো ঘুমিয়ে গেলো—যেখানে নোম্যান্সল্যান্ড
চাঁদ বৃত্তান্ত
চাঁদের শরীরে মাঝেমধ্যে কাতুকুতু ওঠে
কাতুকুতু উঠলে তার খুব হাসি পায়
হাসতে হাসতে বেসামাল হয়ে গড়িয়ে পড়ে সে।
এরকম হাসতে হাসতে একদিন
অতর্কিত
আকাশ থেকে ছিঁটকে এসে
পড়ে গেলো হাতেম তা'য়ের ছাদে
ছাদ থেকেও গড়াতে গড়াতে হারিয়ে গেল
পৃথিবীর অন্ধকারের ভেতর,
খুঁজে খুঁজে ব্যর্থ হলো ছয় ব্যাটারির টর্চ
ঘর পালানো মেয়ের মত কোনোএক পূর্ণিমার রাতে
ফিরে এসে বললো,
এতদিন আটকে ছিলাম ইঁদুর মারা কলে
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thanks